রবিবার, ১০ জানুয়ারী ২০২১, ০৬:১০ অপরাহ্ন
ঐতিহ্যবাহী শাহ কবির (রহঃ) মাজার নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বিশেষ প্রতিবেদন
হযরত শাহ কবির (রহঃ) (কাবির খান্দেশ) ভারতবর্ষের উত্রেখান প্রদেশ হইতে ১৬০১ সালে এখানে আগমন করেন এবং এই উত্তরখানে এসে বসতি ও ধর্ম প্রচার শুরু করেন। যেহেতু উনি উত্রেরখান হইতে এখানে এসেছেন সেই কারনে অত্র এলাকার নামকরণ করা হয় উত্তরখান। এই ধর্মভীরু আধ্যাত্মিক সাধক হযরত শাহ্ কবির (রহ:) (কাবির খান্দেশ) ওনার মৃত্যুর পর এই স্থানে ভক্তরা তার মাজার শরিফ তৈরি করেন। ২০১টি তফসিলভুক্ত দরগাহ্ বা মাজারসমূহের মধ্যে হযরত শাহ্ কবির (রহঃ) (কাবির খান্দেশ) মাজারের অবস্থান ১৮নং, এবং ওয়াকফ্ প্রশাসকের তালিকা ভুক্তি নম্বর: ৬৫৯। হযরত শাহ কবির (রহ:) (কাবির খান্দেশ) এর মৃত্যুকালে দুই পুত্র সন্তান ছিল- একজন হযরত পাহাড়শাহ/পাগলাশাহ যিনি বাবার মতই আধ্যাত্মিক সাধক ছিলেন। তিনি কোন সংসার জীবনযাপন করেন নাই। অন্য ছেলের নাম হযরত কায়সার খান/বাহারশাহ, তিনি সংসার জীবন যাপন করেন। পরবর্তীকালে (কাবির খান্দেশ) পরলোকগমন করার পর ভাওয়াল জমিদারগণ কায়সার গংদের এই জায়গা থেকে অন্যায়ভাবে উৎখাত করতে চাইলেন। কায়সার গং জনাব আনোয়ার রশিদকে অবহিত করলেন যে, বাদশাহ আকবর এই মৌজা পূর্বেই হযরত শাহ্ কবির (রহ:) (কাবির খান্দেশ) কে লাখেরাজ হিসাবে দান করেছিলেন। এই বিষয়টি মুক্তাগাছায় নিযুক্ত আমিন যাচাই বাছাই করে এই সিদ্ধান্ত দিলেন যে, এই জমি পূর্ব থেকেই ঐ প্রতিনিধির (কায়সারের) দখলে ছিল, যা লাখেরাজ হিসাবে চিহ্নিত। এই ব্যাপারে ১০৬৬ (হিজরি) ১৬৫৬ খ্রি: তাকে সরকারিভাবে চিঠি দেয়া হয়, চিঠির ফায়সালার নির্দেশ মতে শাসকেরা,কর্মচারীরা ও জমিদাররা এই পরগণার ও মৌজার ব্যাপারে এই নির্দেশ মান্য করবেন। পরবর্তীতে বাদশাহ আকবরে মৃত্যুর পর সম্রাট শাহজাহান এর দ্বিতীয় পুত্র শাহজাদা মোঃ শাহ সুজা অত্র এলাকার শাসক ছিলেন। যখন খাজনা নির্ধারনের জন্য বলা হয় তখন আল মামালিকের মন্ত্রী এতেমাদুদৌল্লা কামারুদ্দিন খান বাহাদুর এই খাজনা সংক্রান্ত দেওয়ানী মামলায় নিযুক্ত হন। সরফরাজ খান বাহাদুর, ১১৩১ হিজরী, (১৭১৯ খ্রি:) সুজারুদ্দৌলা এই অঞ্চলের সুবেদার ছিলেন এর সময়কালে (বাদশা মাগফুর শাহ রেদোয়ান) দৈনিক ২০ রুপি খাজনা দিতে বলেন, কিন্তু দেওয়ানী মামলার বিচারকগন এই জমি খাজনাকে দৈনিক ২০ রুপি পরবর্তীতে দৈনিক ৩০ রুপি হারে খাজনা নির্ধারণ করেন এবং সেই মতে একটি চিঠি কাবির খান্দেশের পুত্র কায়সার গংদের প্রেরণ করেন।
হযরত শাহ্ কবির (রহঃ) (কাবির খান্দেশ) পরলোক গমনের পর ১৯১৬ থেকে ২০০৪ ইং তারিখ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে তাঁর বংশধরগন উক্ত মাজার এস্টেট্টি পরিচালনা করেন। সি,এস (ঈঝ) জরিপের সময় বংশধরদেরই একজন সুফিয়া বানু’র নাম সেবায়েত (মোতাওয়াল্লী) হিসাবে রেকর্ডভুক্ত হয়। তবে যেহেতু সুফিয়া বানু ধর্মপ্রাণ একজন মহিলা মাজার রক্ষণাবেক্ষন করা কষ্টসাধ্য বিধায় তিনি তারই চাচা আব্দুল লতিফ খানকে মাজার রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য সম্মতি দেন। তবে ২০০৪ সালে বংশীয় লোকজন থেকে মাজার পরিচালনার বিষয়টি বহিরাগতরা ছিনিয়ে নেয়।
শাহ কবিরের সম্পদ যেভাবে
ওয়াকফ এস্টেটের হয়
পরবর্তীতে ১৯৩৪ সালের বঙ্গীয় ওয়াকফ্ আইনে ১৯৩৪/৪৪ ধারা সৃষ্টি হইলে হযরত শাহ্ কবির (রহঃ) (কাবির খান্দেশ) এর পরবর্তী বংশধর আবদুল রকিব খান বিগত ৪/৬/১৯৩৫ইং সালে কলিকাতা ওয়াকফ্ কার্যালয়ে এই সম্পত্তি ওয়াকফ্ এর অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি দরখাস্ত করেন যাহার পরিপ্রেক্ষিতে এই এস্টেটটি ওয়াকফ হয় যার ইসি নং-৬৫৯ এবং তখনকার আমলে এই এস্টেট এর মোতায়াল্লী ছিলেন আব্দুল রকিব খান, পিতা : আব্দুল লতিফ খান, উক্ত দরখাস্তটিতে স্পষ্ট লিপিবদ্ধ আছে যে আমার অবর্তমানে যিনি এই বংশে উপযুক্ত থাকিবেন এবং যাহার এই সম্পত্তি পরিচালনার ক্ষমতা ও পারদর্শিতা থাকিবে তিনি মোতাওয়াল্লী থাকিবেন। পরবর্তীতে এস.এ (ঝঅ) রেকর্ড এর সময় মোতাওয়াল্লী হিসাবে আবদুল রকিব খান এর নাম রেকর্ড ভূক্ত হয়। আর,এস (জঝ) রেকর্ড এর সময় মোতাওয়াল্লী হিসাবে আবদুল রকিব খান এর নাম রেকর্ড ভূক্ত হয়। আব্দুল রকিব খান এর পর উক্ত এই এস্টেট এর মোতাওয়াল্লী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন তাহার ভ্রাতা পুত্র আব্দুল রাজ্জাক খান। এখানে দেখা যায় যে, সরকারী জরিপ অনুযায়ী সি,এস (ঈঝ) রেকর্ড হইতে (১৯১৬ সালে হইতে ২০০৪ সাল) অনুমানিক ৯০ বছর এই দীর্ঘ সময়ে হয়রত শাহ কবির শাহ্ (কবির খান্দেশ) ওনার বংশীয় লোকেরা পর্যায়ক্রমে উক্ত ওয়াকফ্ এস্টেট এর মোতাওয়াল্লী (সেবায়েত) এর দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
শাহ কবিরের বংশধর সিআইপি সহিদের ক্ষোভ, প্রতিবাদ
স্টাফ রিপোর্টার
বিগত ১৪ নভেম্বর একদল উগ্রবাদী ধর্মান্ধদের দ্বারা হযরত শাহ কবির (রহঃ) এর সহধর্মিনী বিবি সাহেবার কবর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় চরম ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী এনামুল হাসান খান শহিদ সিআইপি। প্রমি গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে সমধিক পরিচিত সিআইপি সহিদ মূলত: হযরত শাহ কবিরের বংশধর। তিনি বলেন, বিবি সাহেবার কবর গুড়িয়ে দিয়ে চক্রটি আমাদের হৃদয় গুড়িয়ে দিয়েছে, লাখো ভক্তকে কাদিয়ে ছেড়েছে। তিনি মাজার কেন্দ্রীক সব ধরনের হুমকি-বিশৃঙ্খলা নিরসনের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সকল মহলের সার্বিক সহায়তা কামনা করেন।
মাজার ভাঙ্গা নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির মুখে গত ১৬ নভেম্বর মাজার প্রাঙ্গনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহবান জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এনামুল হাসান খান শহিদ জানান, ২০০৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তৎকালীন কামাল চেয়ারম্যান মসজিদের ইমাম বশির ও বশিরের ছোট ভাই নাজিরকে সাথে নিয়ে একচ্ছত্র কর্তৃত্বে শাহ্ কবির (রহঃ) ওয়াকফ এস্টেট পরিচালনা করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে মাজার শরীফকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা মসজিদ, মাদ্রাসা ও দোকানপাট থেকে উত্তোলনকৃত মোটা অংকের অর্থ অবৈধভাবে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ২০১৮ সালে এস্টেটের নতুন কমিটি হওয়ার পর এখন পর্যন্ত সকল ব্যয় নির্বাহ করে ব্যাংক একাউন্টে ৩৫ (পঁয়ত্রিশ) লাখ টাকা জমা আছে। যদি দুই বছরে এস্টেট একাউন্টে পঁয়ত্রিশ লাখ টাকা জমা হয়, তাহলে বিগত পনের বছরের হিসাব কোথায়? বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি। এই দীর্ঘসময় ধরে শাহ্ কবির (রহঃ) ওয়াকফ এস্টেট পরিচালনায় কোন হিসাব-নিকাশের বালাই ছিল না বলেও অভিযোগ করেন এনামুল হাসান খান শহিদ।
স্থানীয় মুরুব্বিয়ান ও মাজার আশেকানদের অনুরোধে ২০১৮ সাল থেকে নিজের ব্যক্তিগত তহবিলের টাকায় মাজারের উন্নয়ন সংস্কার কাজ শুরু করতেই সংঘবদ্ধ চক্রটি নানাভাবে তা বাধাগ্রস্ত করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।
কামালের ভাড়াটে দুর্বৃত্তরা এই হামলার সাথে জড়িত বলে দাবী করেন এনামুল হাসান খান শহিদ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো জানান, ওই কবরটি মূলত শাহ্ কবির (রহঃ) এর সহধর্মিনীর কবর। মসজিদ নির্মাণ প্রারম্ভকালীন সময়ে কবরটিকে আলাদা রেখে মসজিদ নির্মাণ করলেও বর্তমানে কবরটিকে সরানোর বিষয়ে আলোচনা চলছিল। তবে, কবরের পবিত্রতা রক্ষায় এটিকে ঘিরে দেয়াল নির্মাণ করায় পরদিনই একদল বহিরাগত দুর্বৃত্ত লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্রহাতে কবরের স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলে। ওই ঘটনার ভিডিও ধারণের সময় এক সাংবাদিককেও মারধর করা হয় বলে জানা যায়।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে এনামুল হাসান খান শহিদ বলেন, ‘শাহ্ কবির (রহঃ) ওয়াকফ এস্টেট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা তৎকালীন চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন ও মসজিদের ইমাম বশিরের কাছে বিগত বছরগুলোর হিসাব চাওয়ায় তারা বিভিন্ন স্থানে আমার নামে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।’
ষড়যন্ত্রের সূত্রপাত ১৯৯৪ থেকেই
স্টাফ রিপোর্টার: ১৯৯৪ সালে কিছু সংখ্যক কুচক্রী স্বার্থলোভী মহল এই এস্টেট সম্পত্তি ব্যবহার ও গ্রাস করার হীন মনমানসিকতা ও লোভ লালসার শিকার হয়ে একটি ষড়যন্ত্র তৈরি করেন এবং তখনকার মোতাওয়াল্লী ছিলেন মোঃ রাজ্জাক খান, তিনি দেশে ছিলেন না। তার আনুপস্থিতিতে তার ছোট ভাই আবদুল অদুদ খান কামালকে এই এস্টেট পরিচালনার জন্য দায়িত্বভার দিয়ে যান। সেই সময় থেকেই ষড়যন্ত্রের সূত্রপাত শুরু হয়। মজির উদ্দিন এর অভিযোগের ভিত্তিতে ওয়াকফ্ প্রশাসন বিগত ২২/০৩/১৯৯৪ইং তারিখে আদেশ শুনানী অন্তে মোতাওয়াল্লী আব্দুল রাজ্জাক খান এর সকল কার্যক্রম স্থগিত করতঃ জেলা প্রশাসক ঢাকাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বলেন। পরবর্তীতে ০৫/০২/১৯৯৫ইং তারিখে মোতাওয়াল্লী অপসারনের মামলাটি চুড়ান্ত নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জেলা প্রশাসক ঢাকা কে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুমোদন প্রদান করেন। বিগত ১৬/০৩/১৯৯৭ তারিখের এক আদেশে মোঃ রাজ্জাক খানকে মোতাওয়াল্লী বহাল রেখে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ঢাকাকে সভাপতি, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে সহ-সভাপতি ও ইউপি মেম্বার সহ ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে ওয়াকফ্ এস্টেটটি পরিচালনার জন্য অনুমতি দেয়। পরবর্তীতে কুচক্রী মহলের অদৃশ্য ক্ষমতার বলে মোঃ রাজ্জাক খানকে ০৪/০১/২০০৪ ইং তারিখে মোতাওয়াল্লী পদ থেকে সুকৌশলে অপসারন করেন। তখন অত্র এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর উত্তরখান থানার সভাপতি পদে বহাল ছিলেন মোঃ কামাল উদ্দিন।
ওয়াকফ্ এস্টেট এর নতুন কমিটির কার্যক্রম চলছে যেভাবে
সর্বশেষ ওয়াকফ্ প্রশাসন ৭ (সাত) সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ২৯/১১/২০১৮ ইং হতে পরবর্তী ৩ (তিন) বছরের মেয়াদে অনুমোদন দেয়া হয়। যাহার ১। সভাপতি ও অফিসিয়াল মোতাওয়াল্লী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ২। সদস্য সচিব, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ক্যান্টনমেন্ট, ৩। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উত্তরখান থানা ৪। মোঃ কামাল উদ্দিন, ৫। হাজী আব্দুল ওয়াসেক ৬। প্রধান শিক্ষক, উত্তরখান সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, ৭। মাওলানা মোহাম্মদ বিল্লাল হাসান, চাঁনপাড়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসা, নতুন কমিটি গঠন করেন এমনকি বিতর্কিত মোঃ কামাল উদ্দিন কোন এ অদৃশ্য শক্তির ক্ষমতার বলে নতুন কমিটিতে ও নিজে সদস্য পদটি বহাল রাখেন। ২৯/১১/২০১৮ ইং তারিখে নতুন কমিটির সভাপতি মহোদয় (অফিসিয়াল মোতায়াল্লী) উক্ত ওয়াকফ্ এস্টেট -এর নামে ব্যাংক হিসাব খোলেন। দেখা যায় যে, বিগত ০২ (দুই) বছরে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর বেতন বোনাস, মাদ্রাসার ছাত্রদের খাওয়া খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ভার এর খরচ যার আনুমানিক (৪০ লক্ষ থেকে ৪৫ লক্ষ ) টাকা খরচ করার পরও আনুমানিক (৩৫ লক্ষ থেকে ৪০ লক্ষ) টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা আছে। কিন্তু এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে ০৪/১/২০০৪ ইং তারিখ হইতে ২৮/১১/২০১৮ ইং পর্যন্ত ১৪ বছরের অর্থের হিসাব কোথায় ? যা এখনও পর্যন্ত মোঃ কামাল উদ্দিন হিসাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি।
মাজারকে পুঁজি বানিয়ে যারা হলেন ধনপতি? জানতে চোখ রাখুন খবর বাংলাদেশ’এ
Leave a Reply