রাজধানীর উত্তরায় শত বছরের প্রাচীন কবরস্থানের ৮৪টি কবর জুড়েই তৈরি হচ্ছে নৌ-প্রতিমন্ত্রীর বাড়ি। আইনের তোয়াক্কা না করে ওয়াকফকৃত কবরস্থানেই গড়ে তোলা হচ্ছে সুরম্য অট্টালিকা। রাজউকের বহুমুখী তেলেসমাতি আর জাল জালিয়াতির মাধ্যমেই কবরস্থানকে প্লটে পরিনত করে তা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরীকে। প্লট হিসেবে বরাদ্দ পেয়ে মন্ত্রীরও আর তর সয়নি, তিনি তৎক্ষনাত প্লটটি আম মোক্তারনামার বলে তুলে দিয়েছেন রানার প্রপার্টিজ নামের এক ডেভেলপার কোম্পানির অনুকুলে। ওই কোম্পানিও তড়িঘড়ি করে মন্ত্রীর নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েই শুরু করেছে পাইলিং। পাশেই ঝুলছে বহুতল ভবনের দর্শনীয় নকশা। সেখানে চলছে কর্মযজ্ঞের হৈহৈরৈরৈ। কবরস্থানকে অট্টালিকায় পরিনত করার উচ্ছ্বাস আনন্দ যখন মন্ত্রী পরিবারে, তখন কবরস্থানের মোতওয়াল্লী রফিকুলের কান্নার রোল থামছেই না….ক্ষুব্ধ হয়েছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। তারা বলছেন, কবরখেকো মন্ত্রীর আর কী খাওয়া বাকি??
রাজধানীর উত্তরা ১৩ নং সেক্টরের ১৩ নং সড়কের ১৯ নং প্লটটি দীর্ঘ প্রায় শত বছর যাবত পারিবারিক কবরস্থান হিসেবে ব্যাবহিত হয়ে আসা ওয়াকফ কৃত কবরস্থান বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসি। ওয়াকফ কৃত কবর উচ্ছেদ পুর্বক দখল করে প্লট বানিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বলে অভিযোগ করেছেন মো.রফিকুল ইসলাম। সরেজমিনে সেই কবরস্থানে ‘জমির মালিক বাংলাদেশ নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী,আমোক্তারঃ রানার প্রপার্টিজ লিমিটেড’ নামে সাইনবোর্ড লাগিয়ে বহুতল ভবন নির্মনের প্রস্তুতি চলতে দেখা গেছে। রফিকুল ইসলাম জানান, এটি আমাদের পূর্ব পুরুষগন কবরস্থান হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন, এখানে আমার দাদার বাবা,দাদা,আমার দুই বোন এবং আমার মা কেও কবর দেয়া হয়েছে।১৯৯২ সালের ৭ ই মার্চ এটি ওয়াকফ করা হয়,যার ইসি নাম্বার ১৭০৯৮। ঢাকা সিটি জরিপের ৫৪৪৩, ৫৪৪৪ নাম্বারেও এটি কবরস্থান হিসেবে রয়েছে। রাজউকের ম্যাপেও এটি কবরস্থান হিসেবেই রয়েছে, ১৯৯৭ সালের নিন্ম আদালতের দেওয়ানী মোকাদ্দমা ৮৬/১৯৯৭ মামলার রায়ে ১৯৯৮ সসালের ২৮ ফেব্রুয়ারী এ্যাডভোকেট কমিশনের রিপোর্টে ততকালিন ৮৪ টি কবর থাকার সীকৃতি লাভ করে আদালতের মাধ্যমে। ২০০৫ সালে রাজউকের সাধারন সভায় ৭ কাঠা কবরস্থান রেখে বাকি জমিতে প্লট হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া যাইতে পারে বলেও সিদ্ধান্ত হয়ে ছিলো। ২০০৯ সালের ১৩ ই ডিসেম্বর ততকালিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সদ্য প্রয়াত এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনও এই কবরস্থানের বিষয়ে সুপারিশ করে ছিলেন রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর। বর্তমানে এটি ওয়াকফ এষ্ট্রেট এর ওয়াকফ কৃত কবরস্থান থাকা সত্যেও রাজউকের কিছু অসাধু কুচক্রী মহল এটিকে অবৈধ উচ্ছেদ করে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর নামে বরাদ্দ দিয়েছেন। বরাদ্দ দেয়া রাজউকের লিজ দলিওে বেশ কিছু অসমজ্ঞস্বতা খেতে পাওয়া যায়, বরাদ্দ কৃত প্লটটি রাজউকের দ্বিতীয় প্রকল্পের এলাকায় হলেও লিজ দলিলে তৃতীয় প্রকল্প উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার নথি থেকে জানাযায়,২০০৫ সালে জায়গাটি কবরস্থান হিসেবে আদালতের মাধ্যমে রায় পেলে রাজউক এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন,২০১২ সালে রাজউক মামলায় হেরে গেলে পুনরায় আবারো আপিল করেন,বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টে চলমান রয়েছে। রফিক বলেন আমাদের পক্ষে দুইটি রায় থাকার পরেও রাজউক পুনরায় আপিল করেছেন,মামলা চলমান থাকা অবস্থায় রায় বিহিন জমি দখল কতটুকু বৈধ বলে প্রতিকের কাছে প্রশ্ন রাখেন তিনি। তিনি বলেন, এক দিকে আমার মায়ের কবরের উপর ভবন নির্মানের প্রস্তুতি চলছে, অন্য দিকে এসব বিষয় নিয়ে আমাকে রাজউকের সাথে কথা বলতে বলেন,নাহয় আগামী ৩ মাসের মধ্যে কবরস্থানের বাকি টুকুও নিয়ে নিবে রাজউক বলে জানিয়েছেন ৫১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শরিফুর রহমান। রফিক আরো বলেন,টাকার অভাবে যেতে পারছিনা আদালতে,থানায় আমার একটা জিডিও নিচ্ছেনা,এখন চার পুরুষ সহ মায়ের কবরের উপরে মন্ত্রীর বাড়ি দেখা ছাড়া আমার যেন আর কিছুই করার নেই, বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। রানার প্রপ্রারটিজের হটলাইনে যোগাযোগ করা হলে উত্তরা ১৩ নং সেক্টরে তাদেও কোন প্রজেক্ট নেই বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়। তবে সাইটের সাইট ইঞ্জিনিয়ার সম্রাট এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাইটটি তাতের বলে শিকার করেন, এবং কোন প্রকার লিখিত নয় মৌখিক অনুমোদনেই তারা কাজ করছেন বলেও প্রতিবেদকের কাছে শিকার করেছেন তিনি।
এই বিষয়ে ৫১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শরিফুর রহমান দৈনিক জনতাকে বলেন,এটা রাজউকের বিষয়, আপনি রাজউককেই জিজ্ঞেস করেন,আর তারা আমাদের আত্মীয় স্বজন তারা ক্ষতিগ্রস্ত,আমিও চাই তারা খতিপুরন পাক।
এই বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক ২) এর সহকারি পরিচালক (ডিডি) মো. নাদিমুল ইসলামেন নিকট জানতে চাইলে তিনি দৈনিক জনতাকে বলেন,প্লটটি একজন প্রতি মন্ত্রীর নামে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে,উচ্ছেদ পুর্বক জমি উনাকে বুঝিয়েও দেয়া হয়েছে,আমি এখানে নতুন এসেছি,কবরস্থান বা মামলা চলমান কিনা এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
কবরস্থানে প্লট বরাদ্দের বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর ষ্ট্রেট বিভাগের পরিচালক শেখ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, এই প্লটির বিষয়ে চেয়ারম্যান স্যার বরাবর আপত্তি জানিয়ে একাধিক আবেদনের প্রেক্ষিতে কবরস্থানে বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে কবে নাগাদ এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে সেই বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাতে পারেন নি তিনি।
কবরখেকো মন্ত্রী ঘিরেই যতো আলোচনা
উত্তরা মডেল টাউনে শত বছরের পুরনো কবর¯’ানকে প্লট আকারে বরাদ্দ নেয়ার পর থেকেই নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরীকে ঘিরে সর্বত্রই নেতিবাচক আলোচনা চলছে আর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। বর্তমান প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী দেশের বেশিরভাগ এলাকাতেই ছিলেন অজানা অচেনা। মন্ত্রীত্ব লাভের পরই কেবল তার নাম জানতে পারেন কেউ কেউ। খালেদ মাহমুদের দাবি অনুযায়ী ‘স্কুল ছাত্রলীগ’ থেকে উঠে আসা এ রাজনীতিক পারিবারিক ভাবেও ধনাঢ্য শ্রেণীর। এরপরও রাজধানীতে কবর¯’ান বরাদ্দ নিয়ে সেখানেই কেন তার অট্টালিকা গড়ে তুলতে হবে-সে প্রশ্নের জবাব মেলাতে পারছেন না তার ঘনিষ্ঠজনেরাও।
বাপ-দাদা পূর্ব পুরুষ সূত্রে পাওয়া এ জমির মালিক মো. রফিকুল ইসলাম দাঁড়িয়ে আছেন রাস্তার উপর, অথচ তার জায়গার উপর ঝুলছে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর সাইনবোর্ড।