ঢাকা ০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ জুলাই ২০২৪, ৬ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
কোটা সংস্কার আন্দোলন: সান্তাহারে ৩ ঘন্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ সিরাজদিখানে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে হেনস্থার শিকার সাংবাদিক রাবি ছাত্রলীগ সভাপতির কক্ষে মিলল পিস্তল, সম্পাদকের কক্ষে ফেন্সিডিল আবু সাঈদের ধারণা ছিলো পুলিশ আমাকে গুলি করবে না মীরপুর গার্লস আইডিয়াল স্কুল থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাট ভাঙ্গায় চেয়ারম্যান গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত  যমুনার পানিতে কালিহাতীতে ৩০ হাজার পানিবন্দি মানুষ, নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত পদ্মায় অবৈধ বালি উত্তোলনে নদীগর্ভে বিলিন ১০টি বাড়িঘর, হুমকিতে শহর রক্ষা বাঁধ স্পীকারের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী সাক্ষাৎ সিরাজদিখানে পুলিশের হামলার আহত সাংবাদিক সালমানকে দেখতে গেলেন ওসি

‘যদি ভাইকে বাঁচাতে চান, ২ কোটি টাকা রেডি করেন’

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘এ মুহূর্তে আপনার ভাই কোন অফিসে আছে তা বলা যাবে না। তাকে ক্রসফায়ারও দেওয়া হতে পারে। যদি আপনার ভাইকে বাঁচাতে চান তাহলে দুই কোটি টাকা রেডি করেন।’ এভাবে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ৪ সদস্যকে হাতেনাতে আটক করেছে হাতিরঝিল থানা পুলিশ।

শুক্রবার সকালে তাদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা হয়েছে। তবে মামলায় কোন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি।অভিযোগে জানা যায়, বৃহস্পতিবার তামজিদ হোসেন (২৭) নামে এক যুবককে অপহরণের পর আটকে রাখা হয়। তারা তামজিদকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের সময় রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে র‌্যাব সদস্যদের হাতেনাতে আটক করে পুলিশ।

এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘অপহরণ করে মুক্তিপণ নেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাদের আটক করা হয়। এই অপহরণ চক্রে মোট ছয়জন ছিল। তাদের মধ্যে পাঁচজন র‌্যাব সদস্য আর একজন সাধারণ নাগরিক বা তাদের সোর্স। তারা তামজীদ হোসেন নামে যুবককে অপহরণ করে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে মুক্তিপণ দাবি করেন। অভিযোগ আসার পর অভিযান চালিয়ে তাদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক বিজিবি সদস্য ও সাধারণ নাগরিক এখনও পলাতক।’

 ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, ‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদের নিজ নিজ বাহিনীর কাছে তুলে দেওয়া হবে। বাহিনীর নিজস্ব আইন অনুযায়ী তাদের বিচার হবে।’ জানা গেছে, এরপরই র‌্যাব সদস্যদের নিজ বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করা হয়।

অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়কালে  চার সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মঈন হোসেন।

তিনি বলেন, ডিএমপি কমিশনার মহোদয়ের বক্তব্য ও হাতিরঝিল থানার মামলা থেকে আমরা যা জেনেছি সেটা হলো হাতিরঝিল থানা পুলিশ একটি ঘটনায় চারজনকে আটক করেছে। তারা র‌্যাবের সদস্য। ঘটনাটি র‌্যাবের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে অভিযুক্তদের কঠোর সাজার মুখোমুখি হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যেকোনো বাহিনীর সদস্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতেই পারেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।  তদন্তে কেউ অপরাধের সঙ্গে জড়িত হলে বিদ্যমান বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, র‌্যাবের কোনো সদস্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হলে তাকে বিধি অনুযায়ী কঠোর শাস্তি পেতে হয়। এ বিষয়ে র‌্যাব বরাবরই কঠোর।’

থানার আশপাশের বাসিন্দারা জানান, শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে হাতিরঝিল বিভিন্ন বাহিনীর একটির পর একটি গাড়ি আসতে থাকে। থানা ও আশপাশে হৈ চৈ পড়ে যায়। উৎসুক মানুষ জানতে চান কী হয়েছে। কেন এত গাড়ি আসছে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের কিছু বরিা হয়নি। সকালে আসা গাড়িগুলো শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে জুমার নামাজের পর চলে যায়।

র‌্যাব সদস্যদের আটকের অভিযানে অংশ নেন হাতিরঝিল থানার এসআই সুব্রত দেবনাথ।

তাকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘ঘটনার বিস্তারিত বলতে পারব না। আসামিদের নিজ নিজ বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। পলাতকদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। আর কিছু জানতে চাইলে সিনিয়র স্যারদের সঙ্গে কথা বলেন।’

শুক্রবার দুপুরে হাতিরঝিল থানার বাসিন্দা ওই যুবকের আত্মীয়ার (২০) করা মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, তার বড় ভাই ও ব্যবসায়ী তামজিদ হোসেন (২৭) তাদের মগবাজারের মীরবাগের বাসা থেকে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় উত্তরায় যাওয়ার কথা বলে বের হন। গত বৃহস্পতিবার দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তাকে ফোন করে র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে জানান তার ভাই তামজিদ র‌্যাবের হেফাজতে আছেন। থানা পুলিশ বা ডিবি পুলিশকে জানালে তার ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে- একথা বলে ফোন কেটে দেন ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি।

অভিযোগে আরো বলা হয়, ‘আমি পরে অনেকবার ফোন করলে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি রিসিভ করেননি। পরে আনুমানিক দুপুর দেড়টায় ফোন রিসিভ করে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি জানান আমার ভাইকে র‌্যাবের সিনিয়র অফিসাররা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তার নামে অস্ত্র ও মাদক মামলা হবে।’

তরুণী অভিযোগে আরো বলেন, ‘আমার ভাইকে র‌্যাবের  কোন অফিসে, কোন সিনিয়র অফিসার জিজ্ঞাসাবাদ করছেন জানতে চাইলে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি বলেন, এই মুহূর্তে আপনার ভাই কোন অফিসে আছে তা বলা যাবে না। তাকে ক্রসফায়ারও দেওয়া হতে পারে। যদি আপনার ভাইকে বাঁচাতে চান তাহলে দুই কোটি টাকা রেডি করেন।’

‘এর কিছুক্ষণ পর র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া সেই ব্যক্তি মোবাইল ফোনে আমার ভাইকে তাদের সহযোগীদের দ্বারা মারধরের শব্দ শোনায় এবং আমার ভাইকে মোবাইল ফোন দিলে আমার ভাই কাঁদতে কাঁদতে জানায়, তাকে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে বেদম মারধর করছে। আমার ভাই কাঁদতে কাঁদতে বাঁচার আকুতি জানায়। পরবর্তীতে ওই নম্বর থেকে আরও অজ্ঞাত ২-৩ জন ফোন করে টাকা জোগাড় করতে পেরেছি কি না, আমার কাছে জানতে চায়। আমি তাদের বলি, আমরা গরিব মানুষ। এত টাকা কোথায় পাব? একপর্যায়ে র‌্যাবের  ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। আমাদের কাছে কোনো টাকা নেই জানালে সেই ব্যক্তি নগদ ১২ লাখ টাকা নিয়ে রাজধানীর একটি অভিজাত মার্কেটে যেতে বলেন। থানা পুলিশ বা ডিবি পুলিশকে জানালে আমার ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। আনুমানিক বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আমার ভাইয়ের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে কল করে আমার সঙ্গে ভাইয়ের কথা বলিয়ে দেওয়া হয়। আমার ভাই তখন তাকে খুব মারধর করছে বলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাদের দাবিকৃত টাকা দিয়ে দিতে বলে। আমরা তখন তার অবস্থান জানতে চাইলে সে পুনরায় জানায় তার হাত-পা ও চোখ বাঁধা। সে কোথায় আছে বলতে পারবে না।’

তিনি জানান, পরে তারা নিরুপায় অবস্থায় ৯৯৯ এ ফোন করে সহায়তা চান। সেখান থেকে হাতিরঝিল থানা পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। হাতিরঝিল থানা ঘটনার বিবরণ শুনে অভিযানের পরিকল্পনা সাজান।

হাতিরঝিল থানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য জানান, তারা প্রথমে ধারণা করে সেটা দুর্বৃত্তরা ওই যুবককে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করেছে। তারা অভিযান পরিকল্পনা সাজান। টাকা দেওয়ার কথা বলে ছদ্মেবেশে বিশেষ কৌশলে চারজনকে আটক করে। এ সময় দু’জন পালিয়ে যায়। উদ্ধার করা হয় ভুক্তভোগী যুবক তামজিদকে।

ডিএমপির কর্মকর্তারা তদন্তের স্বার্থে আটক র‌্যাব সদস্যদের নাম প্রকাশ করেননি।

হাতিরঝিল থানায় করা মামলায় র‌্যাব সদস্যদের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

কোটা সংস্কার আন্দোলন: সান্তাহারে ৩ ঘন্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ

‘যদি ভাইকে বাঁচাতে চান, ২ কোটি টাকা রেডি করেন’

আপডেট টাইম : ০৩:১৭:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ এপ্রিল ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘এ মুহূর্তে আপনার ভাই কোন অফিসে আছে তা বলা যাবে না। তাকে ক্রসফায়ারও দেওয়া হতে পারে। যদি আপনার ভাইকে বাঁচাতে চান তাহলে দুই কোটি টাকা রেডি করেন।’ এভাবে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ৪ সদস্যকে হাতেনাতে আটক করেছে হাতিরঝিল থানা পুলিশ।

শুক্রবার সকালে তাদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা হয়েছে। তবে মামলায় কোন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি।অভিযোগে জানা যায়, বৃহস্পতিবার তামজিদ হোসেন (২৭) নামে এক যুবককে অপহরণের পর আটকে রাখা হয়। তারা তামজিদকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের সময় রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে র‌্যাব সদস্যদের হাতেনাতে আটক করে পুলিশ।

এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘অপহরণ করে মুক্তিপণ নেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাদের আটক করা হয়। এই অপহরণ চক্রে মোট ছয়জন ছিল। তাদের মধ্যে পাঁচজন র‌্যাব সদস্য আর একজন সাধারণ নাগরিক বা তাদের সোর্স। তারা তামজীদ হোসেন নামে যুবককে অপহরণ করে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে মুক্তিপণ দাবি করেন। অভিযোগ আসার পর অভিযান চালিয়ে তাদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক বিজিবি সদস্য ও সাধারণ নাগরিক এখনও পলাতক।’

 ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, ‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদের নিজ নিজ বাহিনীর কাছে তুলে দেওয়া হবে। বাহিনীর নিজস্ব আইন অনুযায়ী তাদের বিচার হবে।’ জানা গেছে, এরপরই র‌্যাব সদস্যদের নিজ বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করা হয়।

অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়কালে  চার সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মঈন হোসেন।

তিনি বলেন, ডিএমপি কমিশনার মহোদয়ের বক্তব্য ও হাতিরঝিল থানার মামলা থেকে আমরা যা জেনেছি সেটা হলো হাতিরঝিল থানা পুলিশ একটি ঘটনায় চারজনকে আটক করেছে। তারা র‌্যাবের সদস্য। ঘটনাটি র‌্যাবের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে অভিযুক্তদের কঠোর সাজার মুখোমুখি হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যেকোনো বাহিনীর সদস্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতেই পারেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।  তদন্তে কেউ অপরাধের সঙ্গে জড়িত হলে বিদ্যমান বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, র‌্যাবের কোনো সদস্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হলে তাকে বিধি অনুযায়ী কঠোর শাস্তি পেতে হয়। এ বিষয়ে র‌্যাব বরাবরই কঠোর।’

থানার আশপাশের বাসিন্দারা জানান, শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে হাতিরঝিল বিভিন্ন বাহিনীর একটির পর একটি গাড়ি আসতে থাকে। থানা ও আশপাশে হৈ চৈ পড়ে যায়। উৎসুক মানুষ জানতে চান কী হয়েছে। কেন এত গাড়ি আসছে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের কিছু বরিা হয়নি। সকালে আসা গাড়িগুলো শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে জুমার নামাজের পর চলে যায়।

র‌্যাব সদস্যদের আটকের অভিযানে অংশ নেন হাতিরঝিল থানার এসআই সুব্রত দেবনাথ।

তাকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘ঘটনার বিস্তারিত বলতে পারব না। আসামিদের নিজ নিজ বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। পলাতকদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। আর কিছু জানতে চাইলে সিনিয়র স্যারদের সঙ্গে কথা বলেন।’

শুক্রবার দুপুরে হাতিরঝিল থানার বাসিন্দা ওই যুবকের আত্মীয়ার (২০) করা মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, তার বড় ভাই ও ব্যবসায়ী তামজিদ হোসেন (২৭) তাদের মগবাজারের মীরবাগের বাসা থেকে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় উত্তরায় যাওয়ার কথা বলে বের হন। গত বৃহস্পতিবার দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তাকে ফোন করে র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে জানান তার ভাই তামজিদ র‌্যাবের হেফাজতে আছেন। থানা পুলিশ বা ডিবি পুলিশকে জানালে তার ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে- একথা বলে ফোন কেটে দেন ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি।

অভিযোগে আরো বলা হয়, ‘আমি পরে অনেকবার ফোন করলে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি রিসিভ করেননি। পরে আনুমানিক দুপুর দেড়টায় ফোন রিসিভ করে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি জানান আমার ভাইকে র‌্যাবের সিনিয়র অফিসাররা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তার নামে অস্ত্র ও মাদক মামলা হবে।’

তরুণী অভিযোগে আরো বলেন, ‘আমার ভাইকে র‌্যাবের  কোন অফিসে, কোন সিনিয়র অফিসার জিজ্ঞাসাবাদ করছেন জানতে চাইলে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি বলেন, এই মুহূর্তে আপনার ভাই কোন অফিসে আছে তা বলা যাবে না। তাকে ক্রসফায়ারও দেওয়া হতে পারে। যদি আপনার ভাইকে বাঁচাতে চান তাহলে দুই কোটি টাকা রেডি করেন।’

‘এর কিছুক্ষণ পর র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া সেই ব্যক্তি মোবাইল ফোনে আমার ভাইকে তাদের সহযোগীদের দ্বারা মারধরের শব্দ শোনায় এবং আমার ভাইকে মোবাইল ফোন দিলে আমার ভাই কাঁদতে কাঁদতে জানায়, তাকে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে বেদম মারধর করছে। আমার ভাই কাঁদতে কাঁদতে বাঁচার আকুতি জানায়। পরবর্তীতে ওই নম্বর থেকে আরও অজ্ঞাত ২-৩ জন ফোন করে টাকা জোগাড় করতে পেরেছি কি না, আমার কাছে জানতে চায়। আমি তাদের বলি, আমরা গরিব মানুষ। এত টাকা কোথায় পাব? একপর্যায়ে র‌্যাবের  ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। আমাদের কাছে কোনো টাকা নেই জানালে সেই ব্যক্তি নগদ ১২ লাখ টাকা নিয়ে রাজধানীর একটি অভিজাত মার্কেটে যেতে বলেন। থানা পুলিশ বা ডিবি পুলিশকে জানালে আমার ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। আনুমানিক বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আমার ভাইয়ের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে কল করে আমার সঙ্গে ভাইয়ের কথা বলিয়ে দেওয়া হয়। আমার ভাই তখন তাকে খুব মারধর করছে বলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাদের দাবিকৃত টাকা দিয়ে দিতে বলে। আমরা তখন তার অবস্থান জানতে চাইলে সে পুনরায় জানায় তার হাত-পা ও চোখ বাঁধা। সে কোথায় আছে বলতে পারবে না।’

তিনি জানান, পরে তারা নিরুপায় অবস্থায় ৯৯৯ এ ফোন করে সহায়তা চান। সেখান থেকে হাতিরঝিল থানা পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। হাতিরঝিল থানা ঘটনার বিবরণ শুনে অভিযানের পরিকল্পনা সাজান।

হাতিরঝিল থানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য জানান, তারা প্রথমে ধারণা করে সেটা দুর্বৃত্তরা ওই যুবককে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করেছে। তারা অভিযান পরিকল্পনা সাজান। টাকা দেওয়ার কথা বলে ছদ্মেবেশে বিশেষ কৌশলে চারজনকে আটক করে। এ সময় দু’জন পালিয়ে যায়। উদ্ধার করা হয় ভুক্তভোগী যুবক তামজিদকে।

ডিএমপির কর্মকর্তারা তদন্তের স্বার্থে আটক র‌্যাব সদস্যদের নাম প্রকাশ করেননি।

হাতিরঝিল থানায় করা মামলায় র‌্যাব সদস্যদের নাম উল্লেখ করা হয়নি।