রোস্তম মল্লিক
এ দিকে দুদক সুত্রে আরো জানা যায়, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা,মানিলন্ডারিং, জাল টাকার ব্যবসা করে শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেন সৈয়দ আবিদুল ইসলাম। অভিযোগটি সুনির্দিষ্ট হওয়ায় গত ০১/০৪/২০১৯ তারিখে দুদকের স্মারক নং ০৪.০১.০০০০.৫০৩.২৬.১৩২.১৯/১২৬৯৫/১(৬) এর আলোকে দুদকের যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়কে অনুসন্ধান পুর্ব্বক প্রতিবেদন প্রেরণ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। আদিষ্ট হয়ে যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয় অনুসন্ধান কার্যক্রম সমাপ্ত করে গত নভেম্বর ২০২০ তারিখে প্রধান কার্যালয়ে মামলা দায়েরের অনুমোদন চেয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জ্ঞাত আয় বর্হিভুত বিপুল পরিমান সম্পদের তথ্য প্রমান প্াওয়া যায়। উক্ত নথির ভাষ্যে বলা হয় যে, নড়াইল জেলার একজন সচেতন ব্যাক্তি কর্তৃক মাননীয় কমিশনার (অনুসন্ধান) বরাবরে প্রেরিত অভিযোগ কমিশনার (অনুসন্ধান) এর দপ্তরের ক্রমিক নং ৭৩ তারিখ ২৭/০২/২০১৭ ) দয়া করে দেখা যেতে পারে। উক্ত অভিযোগ (পত্র পাতা -১-১৯) পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, সৈয়দ আবিদুল ইসলাম,পিতা মৃত সৈয়দ আকবর আলী,গ্রাম-পাইকড়া, বকুলতলা-উপজেলা ও জেলা নড়াইল এর বিরুদ্ধে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা করে ১২০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকিসহ হুন্ডি ও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎপুর্ব্বক (ক) বাড়ী নং -১৩,রোড নং -৭, গুলশান -১,ঢাকায় ১০/বি নং ফ্ল্যাট ক্রয় (খ) বাড়ী নং ১৫৪,রোড নং ৯,মিরপুর ,ঢাকায় ফ্ল্যাট ক্রয় ,(গ) নড়াইল পৌরসভার পুলিশ লাইন রোডে ৪তলা বাড়ী নির্মাণ,৯ঘ) নড়াইল পৌরসভার দক্ষিণ নড়াইল গ্রামে ১০ কাঠা জমি ক্রয়, (ঙ) নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের পাইকড়া গ্রামে ১টি দ্বিতল ও ১টি একতলা বাড়ী নির্মাণ,(চ) খুলনার সোনা ডাংগা থানার টুটপাড়ায় ২টি ফ্ল্যাট ক্রয়,(ছ) স্ত্রী ইসরত জাহান সোহেলীর নামে ৫০/৬০ কোটি টাকার এফডিআর ক্রয় এবং (জ) ৩ খানা দামি গাড়ী ক্রয়সহ জ্ঞাত আয় বর্হিভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগটি অনুসন্ধানে সত্যতা মেলে। অত:পর যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয় গত দীর্ঘ ৩ বছর পর অবশেষে নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা গ্রমের হঠাৎ কোটিপতি সৈয়দ আবিদুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা হয়েছে। গত ০৮/১১/২০২১ ইং তারিখ বিকেলে দুদকের যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে ওই মামলা হয়। সৈয়দ আবিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুদক মামলা নং ০৪ তারিখ ০৮/১১/২০২১ ইং । এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা নং ০৩ তারিখ: ০৮/১১/২০২১ ইং। দুদকের সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। এ দুটি মামলার বয়স প্রায় ৩ মাস অতিবাহিত হলেও আজঅব্দি তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়নি।
সৈয়দ আবিদুল ইসলামের (৫০) বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৪৫ লাখ ৫৬ হাজার ৬২২ টাকা এবং তাঁর স্ত্রী ইসরাত জাহানের (৫০) বিরুদ্ধে ৮০ লাখ ৯৬ হাজার ২৭১ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, একটি অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই দম্পতির সম্পদের অনুসন্ধান করে। এতে দেখা যায়, আবিদুল ইসলামের ঢাকার গুলশানে একটি বাড়ি, মিরপুরে একটি ফ্ল্যাট ও আরেকটি প্লট আছে। এ ছাড়া ওই সময়ের মধ্যে তাঁর ৪ কোটি ৮২ লাখ ৩০ হাজার ১৬৩ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়, যার মধ্যে রয়েছে গাড়ি, পিস্তল, গুলি, আসবাব ও গৃহস্থালির অন্য মালামাল। তিনি দুদকে যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন, তা যাচাই করে ৫ কোটি ৪৫ লাখ ৫৬ হাজার ৬২২ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর স্ত্রী ইসরাত জাহানের ৮০ লাখ ৯৬ হাজার ২৭১ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। দুদকের যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত মামলার খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার রাজম্ব ফাকির একটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এই মামলায় তিন দীর্ঘদিন জেল হাজতে ছিলেন।
এ বিষয়ে কথা বললে সৈয়দ আবিদুল জানান, মামলার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমি এখন এলাকায় রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত আছি। আপনার সাথে আমার লোক কথা বলবেন।