মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
সুষ্ঠু নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে ইসি শেখ হাসিনার জন্মদিন বিশেষ ভাবে পালন করলেন মনোনয়ন প্রত্যাশী—হাসিব আলম তালুকদার বিএনপি মাহুত ছাড়া পাগলা হাতিতে পরিনত হয়েছে—জাহাঙ্গীর কবির নানক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর শ্রীপুর কুছাইছাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতভাগ ভালো কাজ হচ্ছে জানালেন এলাকাবাসী ত্রিশালে চরিত্রহীন শিক্ষককে মাদ্রাসায় ফিরিয়ে আনতে ইমামকে লাঞ্চিত করলো কমিটি! আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) কোনো স্যাংশনকে ভয় পাই না: প্রধানমন্ত্রী ভাষানটেকে কার্পেটিং রাস্তা নির্মাণ কাজের উদ্বোধন নিয়োগকালেও বয়স জালিয়াতি: বিআইডব্লিউটিএর হিসাব সহকারীর কোটি-কোটি টাকার সম্পদ! জাতির পিতার ছবি অবমাননাকারী পেলেন জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার!
চট্টগ্রামে ১৫ হাজার হেক্টর অনাবাদি জমি

চট্টগ্রামে ১৫ হাজার হেক্টর অনাবাদি জমি

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

দুদিন আগে মন্ত্রী পরিষদ সচিবকে দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনাবাদি জমি খুঁজে বের করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামকে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় সেসব অনাবাদি জমিকে আবাদযোগ্য করে গড়ে তোলেন সেই নির্দেশও দেন সরকারপ্রধান। সেই নির্দেশনার পর অনাবাদি জমিগুলোকে আবাদযোগ্য করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৩ বছরের অধিক কোন জমি অনাবাদি রাখলে খাস করে নেওয়ার আইন জানিয়ে ‘গণবিজ্ঞপ্তি’ জারি করা হচ্ছে বিভিন্ন উপজেলায়।
চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে জেলার মধ্যে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ২ লাখ ২৮ হাজার ৯৬৬ হেক্টর। আর এর মধ্যে প্রকৃত আবাদি জমি রয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৮১০ হেক্টর। আর বাকি চাষযোগ্য ১৪ হাজার ১৫৬ হেক্টর জমি বছরব্যাপী পতিত থাকে।
তবে দেশের সাধারণত ঋতু ছয়টি হলেও কৃষির মৌসুম তিনটি। সেগুলো হলো— খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি। উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে যদিও কৃষি মৌসুমকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং প্রয়োজনের তাগিদে প্রতি মাসের প্রতিটি দিনই কিছু না কিছু কৃষি কাজ করতে হয়। চাষিরা নিজস্ব চিন্তা ধারা, চাহিদা ও আর্থিক দিক বিবেচনা করে নিজের মতো প্রতিদিনের কাজগুলোকে সাজান।
তাই কৃষির তিন মৌসুমে চাষযোগ্য পতিত জমির পরিমাণ বাড়ে-কমে। খরিফ-১ মৌসুমে প্রধান ফসল হলো আউশ ধান এবং গ্রীষ্মকালিন সবজি। এ মৌসুমে আবাদী জমির পরিমাণ ৯৩ হাজার ৮৮২ হেক্টর। বাকি ১ লাখ ২০ হাজার ৯২৮ হেক্টর জমি পতিত থাকে।
অন্যদিকে খরিপ-২ মৌসুমে প্রধান ফসল হলো আমন ধান এবং শরৎকালীন সবজি। এ মৌসুমে ২ লাখ ১৩ হাজার ৯৫৪ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। বাকি পতিত জমির পরিমাণ থাকে ৮৫৬ হেক্টর। এছাড়া রবি মৌসুমে প্রধান ফনল হলো বোরো ধান, শীতকালীন সবজি, তেল ফসল, ডাল ফসল, গম ও ভূট্টা। এই মৌসুমে আবাদ করা হয় ১ লাখ ৫৭ হাজার ৩৫৮ হেক্টর জমিতে। বাকি ৫৭ হাজার ৪৫২ হেক্টর জমি পতিত থেকে যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, চট্টগ্রাম জেলায় বছরব্যাপী মৌসুমী পতিত জমির পরিমাণ ১৪ হাজার ১৫৬ হেক্টর। প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের অনাবাদী জমি খুঁজে বের করে আবাদযোগ্য করে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন। চট্টগ্রামে যে পতিত জমিগুলো রয়েছে; সেগুলো আবাদযোগ্য করে তোলা হবে।
চট্টগ্রামে বছরব্যাপী পতিত জমি নির্ধারণ থাকলেও মৌসুম ঘুরে আসতেই সে পতিত জমির পরিমাণ কমে এবং বাড়ে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, কৃষির তিন মৌসুমে ভিন্ন ভিন্ন জমি পতিত থাকে। এক মৌসুমে বেশি হলে অন্য মৌসুমে কমে যায়। তবে খরিপ-১ মৌসুমে পতিত জমির পরিমাণ বেশি থাকে বলে জানান তিনি।
ওই মৌসুমে কেন পতিত জমির পরিমাণ বেশি থাকে সেই বিষয়ে জানতে চাইলে মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, খরিপ-১’কে আউশ ধানের মৌসুমও বলা হয়। এ মৌসুমে সেচ সুবিধার অভাব এবং বোরো ধান দেরিতে রোপন ও কাটার কারণে এ সমস্যা হয়ে থাকে। রবি মৌসুমেও বেশিরভাগ জমি সেচ সুবিধার অভাবে পতিত থাকে। তবে খরিপ-২ অর্থাৎ আমন ধানের মৌসুমে সবচেয়ে কম জমি পতিত থাকে। এসময় ২ লাখ ১৩ হাজার ৯৫৪ হেক্টর জমিতেই আবাদ হয়। আর মাত্র ৮৫৬ হেক্টর জমি পতিত থাকে।
সেচ সুবিধা বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সেচ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় সৌরচালিত সেচ ব্যবস্থা স্থাপন এবং সেচের জন্য ফিতা পাই প্রযুক্তির মাধ্যমে সেচ কাজ পরিচালনা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
উপ-পরিচালক আরও বলেন, সাময়িক পতিত জমিগেুলোকে চাষের আওতায় আনার জন্য আউশ ধান, সরিষা, ফেলন, ভূট্টা চাষাবাদে কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করা হচ্ছে এবং এসব ফসলের প্রদর্শনী স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে তহবিল সংগ্রহ এবং বীজ প্রদানের মাধ্যমে মৌসুমী পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনার জন্য কাজ চলমান রয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেছেন, ‘সরকারি আইন অনুযায়ী, কৃষি জমি কেউ যদি পর পর তিন বছর পতিত রাখে এবং চাষাবাদ না করে তাহলে সেটা খাস হয়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে নিয়ে কয়েকটি উপজেলায় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। আগামী রবিবার একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে— ‘ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি কেউ যদি পরপর তিন বছর পতিত রাখে; তাহলে সেটা সরকারি খাস জমি করে দেওয়া হবে।’
চট্টগ্রামের পতিত ১৫ হাজার হেক্টর জমি যদি চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসা যায় তাহলে এটা বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনে বিরাট ভূমিকা রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি উপজেলাতেই ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি রয়েছে; যেগুলো বছরের পর বছর অনাবাদী (পতিত) রয়েছে। তাই চট্টগ্রামের জেলার সকল বিভাগীয় প্রধান, ইউএনও, এ্যাসিল্যান্ড এবং জনিপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলার যে সকল অনবাদী জমি রয়েছে এবং যে সকল এক ফসলি জমি রয়েছে; সেগুলোকে দুই ফসলি এবং দুই ফসলি জমিগুলোকে তিন ফসলি জমিতে রুপান্তর করা হবে। বিশেষ করে তৈলবীজ উৎপাদন যেটি সরিষা, তীল, বাদাম এ জাতীয় ফসলের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। সরকার প্রণোদনা দিয়েছে; তৈলবীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া তাদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘একইসঙ্গে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে সমস্ত পতিত জায়গা রয়েছে; সেই প্রত্যেক পতিত জায়গাকে সবজি এবং ফল চাষের আওতায় নিয়ে আসার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আগামী শুক্র এবং শনিবার সরকারি-বেসরকারি সকল দপ্তরগুলোতে থাকা পতিত জায়গাগুলো প্রস্তুত করা হবে। এর পরের সপ্তাহ অর্থাৎ শুক্র-শনিবার সেই পতিত জায়গায় সবজির চারা এবং ফলের চারা রোপন করা হবে। চট্টগ্রাম থেকেই সেই বিপ্লব শুরু করে অনাবাদী জমিগুলোকে আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে সবুজ ফসল, শাক-সবজি ও ফলমূলের চারায় সুশোভিত করবো।’
উল্লেখ্য, গত রবিবার (৮ নভেম্বর) বাংলাদেশ কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে থাকা অনাবাদি জমি খুঁজে বের করতে কেবিনেট সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিসিদের সহায়তা নিয়ে এসব অনাবাদী জমি খুঁজে বের করে আবাদযোগ্য করে তোলার নির্দেশও দেন তিনি।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.




© All rights reserved 2018-2022 khoborbangladesh.com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com