নিজস্ব প্রতিবেদক :
পল্টন থানায় করা মামলায় অবশেষে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিচারপতি মো. সেলিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে ওই মামলায় চার দফায় বিচারিক আদালতে জামিন নামঞ্জুর হয়। পরে গতকাল সোমবার উচ্চ আদালতে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আবেদন করেন তারা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। তিনি জানান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য মির্জা আব্বাসকে ছয় মাসের জামিনের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
গতকাল সোমবার আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী জয়নুল আবেদীন জানিয়েছিলেন, মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আজ আবেদন করা হয়েছে। এখনো জামিন শুনানির তারিখ ধার্য করেননি আদালত। আগামীকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে জানা যেতে পারে।
এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর বিচারিক আদালতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ। কিন্তু ওই আদেশের সার্টিফাইট কপি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনজীবীর হাতে না পাওয়ায় এতদিন উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করতে পারেননি বিএনপির এ দুই শীর্ষ নেতা।
গত রোববার ওই আদেশের সার্টিফাইট কপি হাতে পাওয়ার পর আজ উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করলেন ফখরুল ও আব্বাসের আইনজীবী।
পুলিশের করা মামলায় গ্রেপ্তারের পর গত ৯ ডিসেম্বর মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির পুলিশ পরিদর্শক মো. তরীকুল ইসলাম। এ সময় আসামিপক্ষে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর গত ১২ ও ১৫ ডিসেম্বর আরও দুই দফায় তাদের জামিন আবেদন খারিজ করেন বিচারিক আদালত।
গত ৮ ডিসেম্বর দিনগত রাতে নিজ বাসা থেকে ফখরুল ও আব্বাসকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। পরদিন ৯ ডিসেম্বর পুলিশ তাদের আদালতে হাজির করে। এ সময় মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত গ্রেপ্তার বিএনপি নেতাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম।
অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ৭ ডিসেম্বর বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। আহত হন অনেকে। এ সময় বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে চাল-ডাল, পানি, নগদ টাকা ও বিস্ফোরক দ্রব্য পাওয়া যায় বলে দাবি করে পুলিশ।
এ ঘটনায় ৪৭৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় দেড় থেকে দুই হাজার বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়। পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক মিজানুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। তবে এ মামলার এজাহারে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের নাম ছিল না।
মামলার উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন-বিএনপি জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপাসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ। এদের মধ্যে আমান উল্লাহ আমান ও আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল জামিনে আছেন।