ঢাকা ০৯:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
সরকারি নথি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে: ভূমি উপদেষ্টা সিরাজদিখানে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিল মুন্সীগঞ্জে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি ও সাবেক নেত্রীবৃন্দের স্বরণে দোয়া ও আলোচনা সভা টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে মুক্তিযোদ্ধা দলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন গাজীপুরে চাঁদার দাবিতে বাড়ি ঘর ভাংচুরের অভিযোগ গোপালগঞ্জের হালিমের কথায় চলছে নন্দী পাড়া ভুমি অফিস গাজীপুরে StepUp অ্যাপ- এর প্রশিক্ষণ এবং কর্মশালা অনুষ্ঠিত আদমদীঘিতে মাদকসেবনের দায়ে চার জনকে ভ্রাম্যমাণ দিল ইউএনও আগরতলায় হাইকমিশনে হামলায় বাংলাদেশের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া গাজীপুরে অনুর্ধ ১৭ ফুটবল খেলায় বিকেএসপি ২-১ গোলে হারালো গাজীপুরকে

বিসিআইসির বাফার গোডাউন নির্মাণ প্রকল্পে লুটপাটের মহাযজ্ঞ!

রোস্তম মল্লিক
অনিয়ম ও দুর্নীতিতে চলছে শিল্প মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্টি্রজ কপোরেশনের ১৩ জেলায় সারের বাফার গোডাউন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। কৃষকের সার সংকট দুর করে বেশি ফলনের জন্য দেশের ১৩ জেলায় ৪৮২ কোটি টাকা বাজেটের এ প্রকল্পপটি লুটপাটের মহাযজ্ঞে পরিনত হয়েছে। অথচ: শিল্পমন্ত্রী নরসিংদী—৪ (বেলাব—মনোহরদী) থেকে নির্বাচিত সাংসদ এড. নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন কিছুদিন আগেও শিল্প মন্ত্রনালয়কে অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত রাখার ঘোষনা দেন। এ অনিয়ম ও লুটপাটে বিসিআইসির বাফার গোদাউন নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এ কে এম হাবিবুল্লাহ, সহকারী প্রধান হিসাব রক্ষক মোঃ আবুল কালাম, সহকারী প্রকৌশলী মোঃ ফরহাদ রায়হান ও অফিস সহকারী ও কাম কম্পিউটার অপারেটর আলমগীর হোসেন এবং মুস্তাফিজুর রহমানসহ আরও অনেকে জড়িত।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। টেন্ডার দেওয়া থেকে শুরু করে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে মরিয়া ছিলেন প্রকল্প পরিচালক নিজে। কাজ পাইয়ে দেওয়ার পর অফিসে বসে চলে বাকী সব কাগজপত্র ও ভাউচার মিলানোর কাজ। এসব কাজের সহযোগী হিসেবে প্রকল্প পরিচালকের সাথে সহযোগী হিসেবে রাখেন হিসাবরক্ষক, অফিস সহকারী ও কম্পিউটার অপারেটরকে। গাড়ী ভাড়ার টেন্ডার মেসার্স জয় এন্টারপ্রাাইজকে দেওয়া হয়। কিন্তু মেসার্স জয় এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে টেন্ডার পাইয়ে দিয়েছে পকল্প পরিচালক এমন তথ্যও পাওয়া যায়।
সরেজমিনে তদন্তে দেখা যায়, নির্ধারিত দোকান ছাড়া কোনো মালামাল কেনা হয়নি । আর এসব দোকান থেকে মালামালের ক্রয়ের সময় নেওয়া হয় অতিরিক্ত খালি ভাউচার। এসব খালি ভাউচার অফিসে বসে নিজেদের মত করে বিল লেখা হয়। বিসিআইসির প্রধান কার্যালয় মতিঝিল অফিসে পাওয়া যায় নাইমুল এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আলীমুল এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স শেখ জেনারেল ষ্টোর, ভাইটাল ফুড এন্ড বেভারেজ ইন্ডাস্টি্রজ, গ্রামীণ সুইটমিট বেকারী এন্ড ফুড লিমিটেড, টেক ভ্যালী, গেটওয়ে টেক, বিটস লিমিটেড সহ আরও বেশ কিছু কোম্পানীর পেইড সীল ও দোকান মালিকের স্বাক্ষর দেওয়া খালি ভাউচার। এ সকল ভাউচার নিজেদের মত করে দাম বসিয়ে প্রতিমাসে লূটে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
এ ছাড়াও মেসার্স জয় এন্টারপ্রাইজ, ইউনাইটেড মাল্টি সিস্টেম রেন্ট—এ—কার, মেসার্স কুইক এন্টাপ্রাইজসহ বেশ কয়েকটি থেকে গাড়ি ভাড়ার নামে খালি ভাউচার দিয়ে লুটে হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। গত জুলাই মাসের মেসার্স অহনা এন্টারপ্রাইজ থেকে দৈনিক ৪ হাজার ৭০০টাকা করে মাসের ৩০দিনে মোট ১ লাখ ৪১ হাজার টাকার একটি কার ভাড়া ও দৈনিক ৪ হাজার ১০০টাকা করে ২৪ দিন একটি মাইক্রো বাস ভাড়া বাবদ ৯৮ হাজার ৪০০টাকাসহ মোট ২ লক্ষ ৩৯ হাজার ৪ শত টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলে দেখানো হয়। তবে তথ্য মতে গত বছর জুলাই মাসে যাতায়তের বাস্তব কোনো তথ্য বিসিআইসি অফিসে নেই বলে জানা যায়। তার পরেও সরকারী কাজে মাসের ৩০দিন কমর্রত থাকার নজির শিল্প মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ বিসিআইসি ছাড়া পাওয়া সম্ভব নয়।
এছাড়াও প্রতি মাসে এফসি এবং ও.টি ভাতার নামে নেওয়া হয় লক্ষ লক্ষ টাকা। সরেজমিনে তদন্তে দেখা যায় গত ডিসেম্বর মাসে এফসি ও ও.টি বিল বাবদ তোলা হয় ৩১ হাজার ৭ শত ৯৫ টাকা। কিন্তু বিসিআইসির ১৩টি বাফার গোডাউন নির্মাণ প্রকল্পের কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী অতিরিক্ত সময় কর্মস্থলে ছিলেন না। তারা প্রতি মাসের ২০ তারিখের পর এফসি ও ও.টি হাজিরা বহিতে স্বাক্ষর করেন বলেন গোপন সুত্রে জানা যায়।
শিল্প মন্ত্রনালয়ের অধিনস্থ বিসিআইসির এ প্রকল্পের সকল অনিয়মের মাস্টার মাইন্ড সহকারী প্রধান হিসাব রক্ষক মোঃ আবুল কালাম। প্রকল্প পরিচালককে এ সকল অনিয়মের সকল পরিকল্পনা প্রদান করেন মোঃ আবুল কালাম। আর এ সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য অফিস সহকারী সিবিএ’র নেতা আলমগীর হোসেন ও কম্পিউটার অপারেটর মুস্তাফিজকে ব্যবহার করেন। অধিকাংশ খালি ভাউচার মুস্তাফিজ, সিবিএ নেতা আলমগীর ও হিসাব রক্ষক মোঃ আবুল কালামের হাতে লেখা। সিবিএ নেতা হওয়ায় অফিস সহকারী আলমগীর সবার ধরা ছোয়ার বাইরে। শিল্পমন্ত্রনালয়ের অধিনস্থ বিসিআইসির ১৩ জেলায় বাফার গোডাউন নিমার্ণ প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে শুরু হয়। যা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ করে হস্তান্তর করার কথা। কিন্তু ১৩ টি জেলার মধ্যে এখনো গোপালগঞ্জ জেলার প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

সরকারি নথি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে: ভূমি উপদেষ্টা

বিসিআইসির বাফার গোডাউন নির্মাণ প্রকল্পে লুটপাটের মহাযজ্ঞ!

আপডেট টাইম : ০৪:৪৭:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৩

রোস্তম মল্লিক
অনিয়ম ও দুর্নীতিতে চলছে শিল্প মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্টি্রজ কপোরেশনের ১৩ জেলায় সারের বাফার গোডাউন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। কৃষকের সার সংকট দুর করে বেশি ফলনের জন্য দেশের ১৩ জেলায় ৪৮২ কোটি টাকা বাজেটের এ প্রকল্পপটি লুটপাটের মহাযজ্ঞে পরিনত হয়েছে। অথচ: শিল্পমন্ত্রী নরসিংদী—৪ (বেলাব—মনোহরদী) থেকে নির্বাচিত সাংসদ এড. নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন কিছুদিন আগেও শিল্প মন্ত্রনালয়কে অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত রাখার ঘোষনা দেন। এ অনিয়ম ও লুটপাটে বিসিআইসির বাফার গোদাউন নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এ কে এম হাবিবুল্লাহ, সহকারী প্রধান হিসাব রক্ষক মোঃ আবুল কালাম, সহকারী প্রকৌশলী মোঃ ফরহাদ রায়হান ও অফিস সহকারী ও কাম কম্পিউটার অপারেটর আলমগীর হোসেন এবং মুস্তাফিজুর রহমানসহ আরও অনেকে জড়িত।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। টেন্ডার দেওয়া থেকে শুরু করে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে মরিয়া ছিলেন প্রকল্প পরিচালক নিজে। কাজ পাইয়ে দেওয়ার পর অফিসে বসে চলে বাকী সব কাগজপত্র ও ভাউচার মিলানোর কাজ। এসব কাজের সহযোগী হিসেবে প্রকল্প পরিচালকের সাথে সহযোগী হিসেবে রাখেন হিসাবরক্ষক, অফিস সহকারী ও কম্পিউটার অপারেটরকে। গাড়ী ভাড়ার টেন্ডার মেসার্স জয় এন্টারপ্রাাইজকে দেওয়া হয়। কিন্তু মেসার্স জয় এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে টেন্ডার পাইয়ে দিয়েছে পকল্প পরিচালক এমন তথ্যও পাওয়া যায়।
সরেজমিনে তদন্তে দেখা যায়, নির্ধারিত দোকান ছাড়া কোনো মালামাল কেনা হয়নি । আর এসব দোকান থেকে মালামালের ক্রয়ের সময় নেওয়া হয় অতিরিক্ত খালি ভাউচার। এসব খালি ভাউচার অফিসে বসে নিজেদের মত করে বিল লেখা হয়। বিসিআইসির প্রধান কার্যালয় মতিঝিল অফিসে পাওয়া যায় নাইমুল এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আলীমুল এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স শেখ জেনারেল ষ্টোর, ভাইটাল ফুড এন্ড বেভারেজ ইন্ডাস্টি্রজ, গ্রামীণ সুইটমিট বেকারী এন্ড ফুড লিমিটেড, টেক ভ্যালী, গেটওয়ে টেক, বিটস লিমিটেড সহ আরও বেশ কিছু কোম্পানীর পেইড সীল ও দোকান মালিকের স্বাক্ষর দেওয়া খালি ভাউচার। এ সকল ভাউচার নিজেদের মত করে দাম বসিয়ে প্রতিমাসে লূটে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
এ ছাড়াও মেসার্স জয় এন্টারপ্রাইজ, ইউনাইটেড মাল্টি সিস্টেম রেন্ট—এ—কার, মেসার্স কুইক এন্টাপ্রাইজসহ বেশ কয়েকটি থেকে গাড়ি ভাড়ার নামে খালি ভাউচার দিয়ে লুটে হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। গত জুলাই মাসের মেসার্স অহনা এন্টারপ্রাইজ থেকে দৈনিক ৪ হাজার ৭০০টাকা করে মাসের ৩০দিনে মোট ১ লাখ ৪১ হাজার টাকার একটি কার ভাড়া ও দৈনিক ৪ হাজার ১০০টাকা করে ২৪ দিন একটি মাইক্রো বাস ভাড়া বাবদ ৯৮ হাজার ৪০০টাকাসহ মোট ২ লক্ষ ৩৯ হাজার ৪ শত টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলে দেখানো হয়। তবে তথ্য মতে গত বছর জুলাই মাসে যাতায়তের বাস্তব কোনো তথ্য বিসিআইসি অফিসে নেই বলে জানা যায়। তার পরেও সরকারী কাজে মাসের ৩০দিন কমর্রত থাকার নজির শিল্প মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ বিসিআইসি ছাড়া পাওয়া সম্ভব নয়।
এছাড়াও প্রতি মাসে এফসি এবং ও.টি ভাতার নামে নেওয়া হয় লক্ষ লক্ষ টাকা। সরেজমিনে তদন্তে দেখা যায় গত ডিসেম্বর মাসে এফসি ও ও.টি বিল বাবদ তোলা হয় ৩১ হাজার ৭ শত ৯৫ টাকা। কিন্তু বিসিআইসির ১৩টি বাফার গোডাউন নির্মাণ প্রকল্পের কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী অতিরিক্ত সময় কর্মস্থলে ছিলেন না। তারা প্রতি মাসের ২০ তারিখের পর এফসি ও ও.টি হাজিরা বহিতে স্বাক্ষর করেন বলেন গোপন সুত্রে জানা যায়।
শিল্প মন্ত্রনালয়ের অধিনস্থ বিসিআইসির এ প্রকল্পের সকল অনিয়মের মাস্টার মাইন্ড সহকারী প্রধান হিসাব রক্ষক মোঃ আবুল কালাম। প্রকল্প পরিচালককে এ সকল অনিয়মের সকল পরিকল্পনা প্রদান করেন মোঃ আবুল কালাম। আর এ সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য অফিস সহকারী সিবিএ’র নেতা আলমগীর হোসেন ও কম্পিউটার অপারেটর মুস্তাফিজকে ব্যবহার করেন। অধিকাংশ খালি ভাউচার মুস্তাফিজ, সিবিএ নেতা আলমগীর ও হিসাব রক্ষক মোঃ আবুল কালামের হাতে লেখা। সিবিএ নেতা হওয়ায় অফিস সহকারী আলমগীর সবার ধরা ছোয়ার বাইরে। শিল্পমন্ত্রনালয়ের অধিনস্থ বিসিআইসির ১৩ জেলায় বাফার গোডাউন নিমার্ণ প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে শুরু হয়। যা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ করে হস্তান্তর করার কথা। কিন্তু ১৩ টি জেলার মধ্যে এখনো গোপালগঞ্জ জেলার প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি।