রোস্তম মল্লিক
রাজউক-এ আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘এলিট কনস্ট্রাকশন’ এর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের একটি পত্রের (স্মারক নং-৪০.০১.০০০০.১০২.৯৯.০০৩.২১.৩০৫) মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির ঠিকাদারী লাইসেন্সের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়। পরবর্তীতে ‘এলিট কনস্ট্রাকশন’ প্রতিষ্ঠানটির জনবল সরবরাহ কাজ পরিচালনার বৈধতা যাচাইকরণের জন্য রাজউক কর্তৃক পত্র প্রেরণের প্রেক্ষিতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এ মর্মে মতামত প্রদান করেন যে, ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ধারা ৩(ক) মোতাবেক এলিট কনস্ট্রকশন প্রতিষ্ঠানটি জনবল সরবরাহের কার্যক্রম পরিচালনা করা আইনগতভাবে বৈধ নয়।’ এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ আগস্ট রাজউক পরিচালক (প্রশাসন) মুহম্মদ কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত একটি আদেশে (স্মারক নং-২৫.৩৯.০০০০.০০৯.১১.০২২(২৮).২১.৩৮৮৭) আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় জনবল সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘এলিট কনস্ট্রাকশন’ প্রতিষ্ঠানকে প্রদত্ত ২টি কাজের কার্যাদেশ এবং সংশ্লিষ্ট চুক্তিদ্বয় বাতিল করা হয়।
লাইসেন্সের বৈধতা না থাকলেও রহস্যজনক কারণে ‘এলিট কনস্ট্রাকশন’ প্রতিষ্ঠানটি কিভাবে এখনো আউটসোর্সিংয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে? সে বিষয়ে রাজউকের সাধারণ ঠিকাদারবৃন্দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। জালিয়াতির দায়ে এলিট কনস্ট্রাকশনের দুটি কার্যাদেশ বাতিল করা হলেও আরও ৫টি কাজ চলমান ছিল। সেগুলোর চুক্তির মেয়াদ শেষপ্রান্তে থাকায় বাতিল প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল হয়ে পড়েছিল। তবে প্রতারক এলিট কনস্ট্রাকশনকে কালো তালিকাভুক্ত না করে এবার পুরস্কৃত করলো রাজউক।
সম্প্রতি রাজউকের আউটসোর্সিং ভিত্তিক (২০২২-২৩) অর্থ বছরে জন্য জনবল নিয়োগের নিমিত্তে আহ্বানকৃত দরপত্রের দুটি কাজের ঘঙঅ (ঘড়ঃরভরপধঃরড়হ ঙভ অধিৎফ) প্রদান করা হয় এলিট কনস্ট্রাকশনকে। অথচ সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছিল আল-আরাফাত সার্ভিসেস (প্রাঃ) লিমিটেড নামের অন্য একটি প্রতিষ্ঠান। এ ব্যাপারে ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ইং তারিখে আল-আরাফাত সার্ভিসেস (প্রাঃ) লিমিটেড এর নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান তোফায়েল রাজউক চেয়ারম্যান (সচিব) বরাবর একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০/১১/২০২২ ইং তারিখে অনুষ্ঠিত রাজউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল সার্কেল-৩) আর আহ্বানকৃত দরপত্র ওহারঃধঃরড়হ জবভ. ঘড়. জধলঁশ/ঈঈ-৩/ওঋঞ-০২/২০২২-২০২৩ এবং জধলঁশ/ঈঈ-৩/ওঋঞ-০৩/২০২২-২০২৩ এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দরপত্রের সিডিউলের সকল শর্তসমূহ পূরণ করে দরপত্র ২টির জন্য প্রস্তাব দাখিল করেন আল-আরাফাত সার্ভিসেস (প্রাঃ) লিমিটেড। উক্ত দরপত্র সকল ঠিকাদার এবং কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সম্মুখে উন্মুক্ত করা হয় এবং কারিগরি মূল্যায়নেও প্রতিষ্ঠানটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কৃতকার্য হয়। পরবর্তীতে দরপত্র আইনে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও দাখিলকৃত আর্থিক প্রস্তাব উন্মুক্তকরণের সময় তাদের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ না করে কারিগরি মূল্যায়নের সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়া সত্ত্বেও বেআইনি ও নিয়মবহির্ভূতভাবে এলিট কনস্ট্রাকশনকে ঘঙঅ প্রদান করে রাজউক।
অভিযোগ রয়েছে, এলিট কনস্ট্রাকশনের সত্বাধিকারী দিবাকর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) উজ্জল মল্লিক ও বাস্তবায়ন-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কাইছার মল্লিকের বিশেষ সখ্যতা রয়েছে। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটির কাগজপত্রে গলদ থাকলেও তাদের আশির্বাদে অনায়াশেই কাজ পেয়ে যায় এলিট কনস্ট্রাকশন। শুধু তাই নয়, গুলশান-১ এ অবস্থিত প্লট # ৩/এ, ৫/এ, ৭/এ, রোড # ১৭, ১৯, ২০, রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স কাম কার পার্কিংয়ের জায়গার ইজারা নামমাত্র মূল্য বাড়িয়ে চুক্তির মেয়াদ ৩ বছর বাড়ানো হয়েছে। জানা গেছে, বর্তমানের পার্কিংয়ের ঐ ভবনটি নামমাত্র মূল্যে ইজারা নিয়েছিল দিবাকর চন্দ্র রায়। কার পার্কিংয়ের জন্য ভবনটি বরাদ্দ হলেও সম্পূর্ণ অবৈধভাবে অবকাঠামো পরিবর্তন করে ভবনটির নিচতলা এবং দোতলায় ‘এলিট কনস্ট্রাকশন’ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। সেখানে রয়েছে থাকার জন্য রেস্টরুম। রাজউকের নাকের ডগায় কার পার্কিংয়ের জায়গায় অফিস পরিচালনা করে শর্ত ভঙ্গ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেখেও যেন না দেখার ভান করে আছেন। অভিযোগ রয়েছে, কার পার্কিংয়ের আয়ের একটি অংশ মাসোহারা পেয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আরও ভয়াবহ অভিযোগ, ঐ অফিসে প্রায়ই মদের আসর বসে। যেখানে রাজউকের কতিপয় দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীর যাতায়াত রয়েছে বলে সূত্র জানায়। এছাড়াও সেখানে নিয়মিত ইয়াবা সেবন করে দিপুর আপন ছোটভাই জুয়েল। কাগজপত্র জালিয়াতি করে অবৈধ অর্থের জোরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে একের পর এক কাজ বাগিয়ে নিতে থাকে ‘এলিট কনস্ট্রাকশন’-এর সত্বাধিকারী দিবাকর চন্দ্র রায়- এমন অভিযোগ থাকলেও এর প্রতিকারের উদ্যোগ নেয়নি কেউ। আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এলিট কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে চুক্তির চেয়ে কমসংখ্যক জনবল দিয়ে কার্য পরিচালনাসহ শ্রমিকদের চেক নিজের কাছে জোরপূর্বক স্বাক্ষর রেখে কম বেতন দেওয়ারও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে কোন শ্রমিক প্রতিবাদ করলে তাদের ধরে এনে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও এর সত্যতা মিলেছে। তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রত্যেক সিকিউরিটি গার্ডকে ১৭৬১০/- (সতের হাজার ছয়শত দশ) টাকা বেতন থেকে গড়ে ২-৫ হাজার টাকা করে কেটে রাখেন এলিট কনস্ট্রাকশনের মালিক দিবাকর চন্দ্র রায় ওরফে দিপু। জালিয়াতিকে অসমর্থন এবং সহযোগিতা না করার কারণে বাস্তবায়ন-৬ এর সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আব্দুল করিমের বিরুদ্ধে নানা কল্পকাহিনী সাজিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ এমনকি গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরী দায়ের করেন প্রতারক দিবাকর চন্দ্র রায় ওরফে দিপু। রাজউক ও গুলশান থানা পুলিশের তদন্তে এসব অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও একটি বিশেষ মহলকে ‘খুশি’ করার জন্য একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ এনে বিভিন্ন দপ্তরে জমা দিচ্ছে দিবাকর চন্দ্র রায় দিপু। লাইসেন্স জালিয়াতির দায়ে দন্ডিত ‘এলিট কনস্ট্রাকশন’কে কিভাবে আরো ২টি লটের কাজের ঘঙঅ (ঘড়ঃরভরপধঃরড়হ ঙভ অধিৎফ) দিয়েছে রাজউক কর্তৃপক্ষ তা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য রাজউক চেয়ারম্যানের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেছেন রাজউকের দেশ প্রেমিক কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা।
শিরোনাম :
দন্ডিত প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিক!
- খবর বাংলাদেশ ডেস্ক :
- আপডেট টাইম : ০৩:০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
- ৯৫৮ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ