এম জাফরান হারুন, নিজস্ব প্রতিবেদক :
হতদরিদ্র ছেলেটির গ্রামের সহায় সম্পত্তি বলতে কিছুই ছিলো নাহ! বিগত প্রায় ২০ বছর পূর্বে ঢাকার মিরপুরে একটি প্রাইভেট কারের ড্রাইভারে সামান্য বেতনে চাকরি করতো! উক্ত ড্রাইভিং চাকরির পর থেকেই অসাধু চক্রের সাথে জড়িত হয়ে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হন জসিম! প্রাইভেট কারের মালিকের গাড়ির একাধিক ডুপ্লিকেট চাবি তৈরি করে চাকরি করবে না মর্মে মালিকের গাড়ি বুঝিয়ে দেন, পরবর্তীতে উক্ত গাড়িটি ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ছিনতাই করেন তিনি!
এভাবে ১০০-১৫০ গাড়ি চুরি করে নিয়ে গিয়ে ডুপ্লিকেট কাগজ তৈরি করে বিক্রি করে! এটাই তার নেশা! জসিম বিভিন্ন ব্যাংক বিমা এনজিও ডাকাতি করে কোটি কোটি টাকা ছিনতাই করে গড়ে তোলেন জসিম বাহিনী। শুধু তাই নয় বিভিন্ন ব্যাবসায়ী ও ব্যাংকাররা ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করলে উক্ত টাকা হোতাচক্র তাদের মারধর করে এমনকি খুন করেও টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়!
এব্যাপারে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, ডেমরা, মিরপুর, সাভার, পল্টন, শাহাবাগসহ প্রায় ১৪-১৫ টি থানায় মামলা হয়! আসামীরা কখনো পুলিশ, কখনো ডিবি, কখনো র্যাবের পোশাক পরিধান করে কোটি কোটি টাকা, দামি দামি গাড়ি ছিনতাই করে!
পটুয়াখালী জেলাধীন দশমিনা উপজেলার বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়ন এর রামবল্লভ গ্রামের কালু হাওলাদারের ছেলে এই কুখ্যাত জসিম হাওলাদার (৪৫)। হঠাৎ কয়েক রাতের আধারে কয়েকশো কোটি টাকার মালিক বনে যান তিনি! তিনি ঢাকা, কুয়াকাটা, পটুয়াখালী, দশমিনা ও ঠাকুরহাটে নির্মাণ করে কয়েক তালা ভবন! এবং গ্রামের বসতঘরে বিল্ডিং ও পাকা মসজিদ তৈরি করেন!
এব্যাপারে ৫০-৬০ বার জেল হাজতে থাকা সত্ত্বেও আইনের ফাক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে তার সাহস বেড়ে গিয়ে আরও বড় ধরনের অপরাধ করতে দ্বিধা বোধ করে না! এমনকি কয়েক বছর পূর্বেও ছিনতাই করতে গিয়ে এক লোককে মার্ডার করেও বড় অংকের টাকার বিনিময়ে বেচে যান তিনি, এবং বড় অংকের টাকা দিয়ে আইনের ফাক ফোকর দিয়ে বের হয়ে যায়! তিনি অর্থের এতো দাপট যে এলাকার কিছু রাজনৈতিক নেতাদের অর্থের মাধ্যমে আয়ত্ত্ব করায় কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না! সুমন সর্দার, জনৈক কাদের মৃধা অত্র অপরাধীর মূল প্রশয়দাতা বলে জানা যায়।
তারই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (২৭ মে) পটুয়াখালী থেকে এই কুখ্যাত জসিম হাওলাদারকে গ্রেফতার করা হয়। যাহা রোববার (২৮ মে) দুপুরে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আসাদুজ্জামান জানান, ৭ই মে রাত ১০টার দিকে ইসলামী ব্যাংকের মার্কেটিং ম্যানেজার মো: হাবিবুর রহমান ও সিকিউরিটি ইনচার্জ নাঈম ইসলাম একটি কালো ব্যাগে নগদ ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়ে ব্যাংকের হেমায়েতপুর শাখায় জমা দেওয়ার জন্য যাচ্ছিলেন। এসময় পথে আল-মকদানী রেস্তোরাঁর সামনে সাদা একটি প্রাইভেটকার তাদের আটকায়। এরপর প্রাইভেটকার থেকে দুষ্কৃতকারীরা বেরিয়ে তাদের সব টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ৮ মে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা করেন ভুক্তভোগীরা।
তিনি আরও জানান, পরবর্তীতে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুদীপ কুমার গোপের নেতৃত্বে সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ২৭শে মে পটুয়াখালী থেকে জসিম উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্য মতে নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে শিমুল ও তাওহিদ ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। সেই সাথে তাদের কাছে থাকা ২৫ লাখের ১১ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয় এবং প্রাইভেটকারটি জব্দ করা হয়।
এসপি বলেন, ছিনতাইয়ের পর আসামিরা ৩ জন এক হয়ে নিজের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি করে। শিমুল জমি-জমা বায়না করে, মো: তাওহিদ ইসলাম তার মায়ের চিকিৎসা করায় ও জসিম উদ্দিন ঘর নির্মানের জন্য টাকা ব্যয় করে। আসামীরা ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। তাদের নামে বিভিন্ন জেলায় মামলা রয়েছে৷ আসামিদের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
শিরোনাম :
কে এই কুখ্যাত জসিম হাওলাদার?
- খবর বাংলাদেশ ডেস্ক :
- আপডেট টাইম : ০৭:০০:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ জুন ২০২৩
- ১৪৪৩ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ