শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:২৫ পূর্বাহ্ন

নাদিম হত্যায় অভিযুক্ত কে এই বাবু চেয়ারম্যান?

নাদিম হত্যায় অভিযুক্ত কে এই বাবু চেয়ারম্যান?

অনলাইন ডেস্ক :

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আলোচনায় সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। এই চেয়ারম্যানই খুনের হোতা বলে অভিযোগ করছে নিহতের পরিবার।

জানা গেছে, মাহমুদুল আলম বাবু সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে থেকে পরপর দুবার নৌকার মনোনয়ন নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর গতকাল শুক্রবার তাকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ।এর পরদিন আজ শনিবার পঞ্চগড়ের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সকাল ৭টার দিকে দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের চর তিস্তাপাড়ায় বোনের বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়।

স্থানীয় সাংবাদিক ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, নাদিম মে মাসে অনলাইন পোর্টালে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এর মধ্য ১০ মে ‘দুইবার বিয়ের পরও সন্তান-স্ত্রীকে অস্বীকার করছেন ইউপি চেয়ারম্যান!’, ১৪ মে ‘আমি আমার স্বামী চাই, একসঙ্গে সংসার করতে চাই’ এবং ২০ মে ‘আ.লীগ থেকে স্বামীর বহিষ্কার চেয়ে স্ত্রীর আবেদন’ শিরোনামের সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর জেরেই নাদিমকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একজন ‘নির্মাণ শ্রমিক’ থেকে বাবু ধাপে ধাপে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে এলাকায় নিজের আধিপত্য বিস্তার করেছেন। হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক। একজন প্রভাবশালী নিকটাত্মীয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি এলাকায় নিজের এমন অবস্থান তৈরি করেছেন, ফলে তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষ মুখ খুলতে সাহস পান না।

নাদিমের পরিবারের অভিযোগ, সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বাবুর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই হুমকি পাচ্ছিলেন এই সাংবাদিক। তিনিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন চেয়ারম্যান; যদিও সেই মামলা খারিজ করে দেয় আদালত।

মামলা খারিজের পরই হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানান স্থানীয় সাংবাদিক আল মোজাহিদ বাবু। নাদিমের বিরুদ্ধে করা মামলায় মোজাহিদকে ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছিল।

মোজাহিদ বলেন, ‘চেয়ারম্যান বাবুর ছেলে রিফাত ছিল, রিফাত ইট দিয়ে নাদিম মামার মাথায় আঘাত করে। বাবু চেয়ারম্যান পাশে দাঁড়িয়ে ছিল।’

বাবু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বকশীগঞ্জ থানা ও আদালতে দুটি মামলা রয়েছে। এ দুটি মামলার বাদী সাবিনা ইয়াসমীন নামের এক নারী। মামলায় তিনি নিজেকে বাবু চেয়ারম্যানের দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেছেন; যদিও সেই স্বীকৃতি তিনি পাননি বলে জানান।

সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, ‘মাহমুদুল আলম বাবু একসময় সাধুরপাড়া ইউনিয়নের নিজ গ্রাম কামালের বার্ত্তিতে ছোট্ট মুদির দোকান চালাত। মুদির দোকান চালিয়ে কোনো রকমে দিনাতিপাত করেছে। অগ্নিকাণ্ডে দোকান পুড়ে গেলে এরপর চাচাতো এক ভাইয়ের সহযোগিতায় বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার নির্মাণ কাজে রাজমিস্ত্রির কাজ করে।’

সাবিনার বক্তব্য অনুযায়ী, ছাত্রজীবনে জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজ করলেও পরে বিএনপিতে ভিড়েছিলেন বাবু। ওয়ান-ইলেভেনের সময় ভোল পাল্টে রাজনীতি ছেড়ে নিরপেক্ষতার ভান ধরেন। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগে যুক্ত হন বাবু। আওয়ামী লীগে ভিড়েই সাধুরপাড়া ইউপি নির্বাচনে অংশ নেন।

সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, ‘নির্বাচনে ফেল করার পর ২০১৪ সালে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেয়। ২০১৬ ও ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে সক্ষম হয় বাবু।’

বাবুর ক্ষমতার উৎস নিয়ে সাবিনা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক এক বড় কর্মকর্তা তার আত্মীয়। সেটাকে ব্যবহার করে সব জায়গায় নিজের ক্ষমতা দেখাতে থাকে। সাধুরপাড়া ইউনিয়নে অঘোষিত সম্রাট বনে যায়।’

সাবিনার দাবি, বাবু তাকে দুবার বিয়ে করেন। দ্বিতীয়বার বিয়ের পর তাদের একটি সন্তান হয়। কিন্তু তিনি বিয়ে ও সন্তানকে অস্বীকার করেন।

এ ব্যাপারে বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয় বলেন, ‘মাহমুদুল আলম বাবু এক সময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। আওয়ামী লীগে ঢোকার পর তিনি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।’

উল্লেখ্য, গত ১৪ জুন রাত ১০টার দিকে কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার সময় বকশীগঞ্জের পাথাটিয়া এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম। পরে ময়মনসিংসহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকালে তার মৃত্যু হয়। তিনি বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোরের জামালপুর প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.




© All rights reserved 2018-2022 khoborbangladesh.com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com