শ্রীপুর ( মাগুরা) প্রতিনিধি :
মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাদিরপাড়া ইউনিয়নের কাদিরপাড়া সরকারী প্রাইমারী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালমা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম -দুর্নীতি ও রেজুলেশন খাতার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে প্রধান শিক্ষকের সুয়োগ সুবিধা ভোগসহ বিদ্যালয়ের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হলেও তাকে চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত বা অন্যত্র বদলী করা হয়নি। বরং লঘুদন্ড প্রদান করে তাকে দুর্নীতিতে আরো উতসাহিত করা হয়েছে। আর এই মহত কাজটি করেছেন খুলনা বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের বিভাগীয় উপ পরিচালক মো: মোসলেম উদ্দিন। অভিযোগ উঠেছে যে তিনি প্রধান শিক্ষক সালমা ইয়াসমিনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুস খেয়ে এই লঘুদন্ড প্রদান করেছেন। যার স্মারক নং ৩৮.০১.৪০০০.০০০.৪৯.০০১.১৯-৬১২ তারিখ: ১৯/০৭/২০২৩ইং। উল্লেখ্য যে,গত ২০১৩/১৪ সালে দিকে তিনি স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি (ইউএনও) এর স্বাক্ষর জাল করে রেজুলেশ তৈরী অন্তে সেটি শিক্ষা অফিসে ও প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডে জমা দিয়ে প্রধান শিক্ষকের সুবিধা ভোগ করেন। যার প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত করা হয়। তদন্তে তিনি দোষী প্রমাণিত হলে তার (প্রধান শিক্ষকের) বেতন ৫ বছরের বন্ধ ছিলো। এছাড়া ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে ভুল বুঝিয়ে ২টি ব্ল্যাং চেকে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। অত:পর গত ০১/১২/২০২২ তারিখে ওই চেক ২টি জমা দিয়ে সোনালী ব্যাংক থেকে ১,৩২.৮০০/- (এক লক্ষ বত্রিশ হাজার আটশত) টাকা এবং জনতা ব্যাংক থেকে ৭১০০০/-(্একাত্তোর হাজার) টাকা তুলে নেন। বিষয়টি জানতে পেরে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা তার কাছে এই টাকা কোন কোন খাতে খরচ করা হয়েছে জানতে চান। তখন প্রধান শিক্ষক সালমা ইয়াসমিন বলেন, তিনি কাউকে হিসাব দিতে বাধ্য নন। তিনি স্কুলের দায়িত্ব ও কর্তব্যে পালনেও সব সময় অবহেলা করে থাকেন। নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থাকেন না। আবার কখনো কখনো ছুঁটি না নিয়েই মামলা মোকর্দমার কাজে মাগুরা ফৌজদারী আদালতে উপস্থিত থাকেন অথচ: হাজিরা খাতায় উপস্থিতির স্বাক্ষর দিয়ে রাখেন। তিনি স্কুলের ছাত্র ছাত্রী ও শিক্ষকদের সাথে প্রায় রুঢ় আচরণ করেন। এমন কি অভিবাবকদের সাথেও অসাদাচরণ করেন। তিনি এই স্কুলে কোন জাতীয় দিবস পালন করেন না। যেমন.বিজয় দিবস,স্বাধীনতা দিবস,আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস ইত্যাদি। এসব দিবস পালনে সরকারি নির্দেশনা ও বাজেট থাকলেও তিনি সে সব দিবস পালন না করেই বরাদ্দকৃত টাকা তুলে নেন। এমন কি জাতীয় সংগীতও সঠিকভাবে প্যারেড করান না। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। তার এহেন অশিক্ষকসুলভ আচরণ এলাকার অভিভাবকদের ভাবিয়ে তুলেছে। আরো জানাগেছে , এই প্রধান শিক্ষক স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম ছেড়ে এখন মামলা মোর্কদ্দমা নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকছেন। তিনি প্রায়ই (কর্মদিবসে) মাগুরায় অবস্থান করেন। মামলা মোর্কদ্দমার তদবীরে ছুঁটে বেড়ান এ কোর্ট থেকে ও কোর্টে। এতে করে কাদিরপাড়া সরকারী প্রাইমারী বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান সর্বনিন্ম পর্যায়ে পৌছেছে। বিষয়টি শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে জানানো হলে তিনি সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলামকে তদন্তে পাঠান। তিনি বিদ্যালয় পরিদর্শনে গেলে তাকেও নানা প্রকার অপমান জনক কথা বলে তাড়িয়ে দেন। এখানেই শেষ নয় ,এই প্রধান শিক্ষকের অসাদাচরণের কারণে কোন ভাল শিক্ষক এই বিদ্যালয়ে এসে বেশিদিন চাকুরী করতে পারেন না। তিনি সহকারী শিক্ষকদের সাথে জঘন্য প্রকৃতির দুর্ব্যবহার করেন। এ বিষয়ে কথা বললে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুঠোফোনে বলেন, প্রধান শিক্ষক সালমা ইয়াসমিন আমাকে ভুল বুঝিয়ে ২ টি ব্ল্যাং চেকে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন। বলেছেন স্কুলের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য তিনি মাত্র ৪০ হাজার টাকা তুলবেন। পরবর্তীতে তিনি প্রতারণা ও বিশ^াসঘাতকতা করে ২ টি চেক জমা দিয়ে সোনালী ব্যাংক থেকে ১ লক্ষ ৩২ হাজার ৮শত টাকা ও জনতা ব্যাংক থেকে ৭১ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। আমরা এই টাকা ব্যায়ের হিসাব চাইলে হিসাব না দিয়ে তিনি মাস্তানসুলভ আচরণ করছেন। আমরা এ বিষয়ে আমরা মাগুরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে তিনি তদন্তের নির্দেশ দেন। আদেশ প্রাপ্তি হয়ে শ্রীপুর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলাম সরেজমিন অভিযোগটি তদন্ত করেন এবং অভিযোগ সত্য মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। উক্ত তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে বিভাগীয় শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মাগুরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নথিপত্র খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ে প্রেরণ করেন। খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করে গত ১৯/০৭/২০২৩ইং তারিখে স্মারক নং ৩৮.০১.৪০০০.০০০.৪৯.০০১.১৯-৬১২ মুলে প্রধান শিক্ষক সালমা ইয়াসমিনকে দোষী সাব্যস্ত করে তার বেতন অবনমিতকরণ করত: ২০,৪০০/-টাকা থেকে কমিয়ে ১৮,৫৫০/-টাকা নির্দ্ধারণ করে লঘুদন্ড প্রদানের আদেশ দেন। খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালকের এই নামমাত্র বিভাগীয় শাস্তিকে শাস্তির নামে প্রহসন বলে দাবী করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অভিযোগকারী এলাকাবাসী। তারা বলেন ,আমরা চেয়েছিলাম প্রধান শিক্ষকের বরখাস্ত ও বদলী। কিন্ত তার কোনটিই না করে খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক এলাকাবাসীর দাবী উপেক্ষা করেছেন। আমরা কাংখীত বিচার পাইনি। তাই এ বিষয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদক্ষেপ কামনা করছি। তিনিও যদি বিচার করতে ব্যর্থ হন তবে আমরা শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও সচিব মহোদ্বয়ের কাছে যাবো। এলাকাবাসী অতি সত্তর এই প্রধান শিক্ষকের যাবতীয় অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদক্ষেপ কামনা করেছেন।