ঢাকা ১২:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
কোটা সংস্কার আন্দোলন: সান্তাহারে ৩ ঘন্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ সিরাজদিখানে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে হেনস্থার শিকার সাংবাদিক রাবি ছাত্রলীগ সভাপতির কক্ষে মিলল পিস্তল, সম্পাদকের কক্ষে ফেন্সিডিল আবু সাঈদের ধারণা ছিলো পুলিশ আমাকে গুলি করবে না মীরপুর গার্লস আইডিয়াল স্কুল থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাট ভাঙ্গায় চেয়ারম্যান গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত  যমুনার পানিতে কালিহাতীতে ৩০ হাজার পানিবন্দি মানুষ, নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত পদ্মায় অবৈধ বালি উত্তোলনে নদীগর্ভে বিলিন ১০টি বাড়িঘর, হুমকিতে শহর রক্ষা বাঁধ স্পীকারের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী সাক্ষাৎ সিরাজদিখানে পুলিশের হামলার আহত সাংবাদিক সালমানকে দেখতে গেলেন ওসি

চিঠিতে লেখা রয়েছে “আজ বৃহস্পতিবার রাত দশটা এক মিনিটে ফাঁসি কার্যকর হবে

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি :

আইনি কোনো বাধা নেই। তাই কোনো বাধা বিপত্তি না থাকলে আজ রাতেই ফাঁসি কার্যকর হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ৪ নম্বর আসামি ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিনের। তবে শেষ মুহুর্তেও তার শতবর্ষী বৃদ্ধা মা সেতারা বেগম জানেন না তার ছেলের ফাঁসির খবর।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, স্বজনদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের সময় নিজেকে ন্যায় বিচার বঞ্চিত দাবি করে স্ত্রীকে দেশের সহায়সম্পত্তি বিক্রি করে সন্তানদের নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যাওয়ার কথা জানান।

ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিনের বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দি গ্রামে। তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার খবরে গ্রামের মানুষও হতবম্ব। একজন সুশিক্ষিত ও ভালো মানুষ হিসেবেই গ্রামবাসী তাকে জানেন।

জান্দি গ্রামে ড. মহিউদ্দিনের পৈত্রিক বাড়িতে বৃদ্ধা মা ব্যতিত তার দুই ভাই, চাচাতো ভাইয়েরা বসবাস করেন। তার শতবর্ষী বৃদ্ধা মা কানে একদমই শুনেন না। তিনি এখনো জানেনই না যে তার ছেলের ফাঁসি হচ্ছে। পরিবারের কেউ তাকে কিছু জানায়নি। বাড়িতে কোনো সংবাদকর্মী বা কোনো আত্মীয়স্বজনের সমাগম দেখলেই তিনি জানতে চাইছেন আগমনের কারণ। গত ১৭ বছর তার সঙ্গে দেখা নেই ছেলের। এমনকি তার ছেলে যে একটি হত্যা মামলার আসামি তাও জানেন না তিনি।

ভাঙ্গার জান্দি গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ মা ও ছোট ভাই আরজু মিয়া ছাড়াও বোন রিনা বেগম এবং দুজন চাচাতো ভাই ছিকু মিয়া ও শাহীন মিয়া বসবাস করেন। বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের লোকজন স্তব্ধ হয়ে আছেন।

চাচাতো ভাই ছিকু মিয়া জানান, ড. মহিউদ্দিনের সঙ্গে তার স্ত্রী, ভাই আরজু মিয়া, বোন রিনা বেগম, ছিকু মিয়া ও আরেক শাহীন মিয়া গত মঙ্গলবার দুপুরে শেষ দেখা করেন।

পরিবারের সঙ্গে দেখা হওয়ার সময় মহিউদ্দিন বলেন, ‘অধ্যাপক তাহের ছিলেন আমার বাবার সমতুল্য। তিনি আমাকে হাতে ধরে মানুষ করেছেন। প্রায়ই আমি তার বাজার করে দিতাম।’

শেষ কথা কি হয়েছে জানতে চাইলে ছিকু মিয়া বলেন, তার চাচাতো ভাই ড. মহিউদ্দিন নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। তিনি ন্যায় বিচার পেলেন না এবং আল্লাহর কাছে এর বিচার দিয়ে গেলাম বলে তাদের বলেছেন। তিনি তার স্ত্রীকে বলেছেন, যেহেতু এদেশে ন্যায় বিচার পেলাম না, তাই জায়গাজমি বিক্রি করে ছেলেমেয়ে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যেও।

মহিউদ্দিনের ছোট ভাই আরজু মিয়া বলেন, ‘আমরা আওয়ামী পরিবারের সন্তান। আমার ভাই মামলার ৪ নম্বর আসামি ছিলেন। মামলায় প্রথম ও দ্বিতীয় আসামি খালাস পেল অথচ আমার ভাইয়ের ফাঁসি বহাল থাকল। বড় ভাইয়ের ফাঁসির খবর শুনলে মা স্ট্রোক করতে পারেন এ আশঙ্কায় তাকে কিছুই জানানো হয়নি।’

আরজু আরও বলেন, ‘আমার বড় ভাই নির্দোষ ছিলেন। তাই মামলা সম্পর্কে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বড় ভাই ভেবেছিল যেহুত তিনি অন্যায় করেনি তাই তিনি ইনশাআল্লাহ খালাশ পাবে। আমার ভাই রোষানলে পড়ে ফাঁসি হলো। আমার ভাইয়ের বিচার পরকালে পাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে একটা চিঠি দিয়েছিল। সেই চিঠি বাড়ি নিয়ে খুলতে বলেছিলে। আমরা গাড়ির মধ্যেই চিঠি খুলে দেখেছি। তাতে লেখা রয়েছে “আজ বৃহস্পতিবার রাত দশটা এক মিনিটে ফাঁসি কার্যকর হবে। আমরা লাশ অ্যাম্বুলেন্সে পাঠিয়ে দিব। আপনারা শুধু এম্বুলেন্সের ভাড়া দিয়ে দিয়েন।”

স্বজনরা জানান, জানাযা বাড়ির মসজিদে এবং জুমার নামাজের আগেই দেওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

ওই গ্রামের প্রায় পচাত্তর বছর বয়সি বৃদ্ধা হাসিনা বেগম বলেন, ‘মহিউদ্দিন মিয়াকে আমরা গ্রামে বলি সূর্য মিয়া। তার মত একজন ভদ্র ছেলে আমাদের গ্রামে নাই।’

গ্রামের আরেক যুবক রনি মিয়া বলেন, ‘আমরা শুনেছি মহিউদ্দিন চাচা জাপান, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া থেকে পড়াশুনা করে সোনার মেডেল পেয়েছেন। তিনি একজন বিজ্ঞানি ছিলেন। তার মতো এমন লোক আর আমাদের এলাকায় হবে না।’

ব্যক্তিজীবনে ইয়াফিক ও ইউসি নামে এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক ড. মিয়া মহিউদ্দিন। তার বাবা প্রায়ত আব্দুল মান্নান মিয়া খুলনা জুট মিলে চাকরি করতেন।

মহিউদ্দিন ১৯৮১ সালে তিনি ভাঙ্গা কেএম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব ও খনিবদ্যা বিষয়ে ভর্তি হন। তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

কোটা সংস্কার আন্দোলন: সান্তাহারে ৩ ঘন্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ

চিঠিতে লেখা রয়েছে “আজ বৃহস্পতিবার রাত দশটা এক মিনিটে ফাঁসি কার্যকর হবে

আপডেট টাইম : ০৯:৪১:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুলাই ২০২৩

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি :

আইনি কোনো বাধা নেই। তাই কোনো বাধা বিপত্তি না থাকলে আজ রাতেই ফাঁসি কার্যকর হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ৪ নম্বর আসামি ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিনের। তবে শেষ মুহুর্তেও তার শতবর্ষী বৃদ্ধা মা সেতারা বেগম জানেন না তার ছেলের ফাঁসির খবর।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, স্বজনদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের সময় নিজেকে ন্যায় বিচার বঞ্চিত দাবি করে স্ত্রীকে দেশের সহায়সম্পত্তি বিক্রি করে সন্তানদের নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যাওয়ার কথা জানান।

ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিনের বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দি গ্রামে। তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার খবরে গ্রামের মানুষও হতবম্ব। একজন সুশিক্ষিত ও ভালো মানুষ হিসেবেই গ্রামবাসী তাকে জানেন।

জান্দি গ্রামে ড. মহিউদ্দিনের পৈত্রিক বাড়িতে বৃদ্ধা মা ব্যতিত তার দুই ভাই, চাচাতো ভাইয়েরা বসবাস করেন। তার শতবর্ষী বৃদ্ধা মা কানে একদমই শুনেন না। তিনি এখনো জানেনই না যে তার ছেলের ফাঁসি হচ্ছে। পরিবারের কেউ তাকে কিছু জানায়নি। বাড়িতে কোনো সংবাদকর্মী বা কোনো আত্মীয়স্বজনের সমাগম দেখলেই তিনি জানতে চাইছেন আগমনের কারণ। গত ১৭ বছর তার সঙ্গে দেখা নেই ছেলের। এমনকি তার ছেলে যে একটি হত্যা মামলার আসামি তাও জানেন না তিনি।

ভাঙ্গার জান্দি গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ মা ও ছোট ভাই আরজু মিয়া ছাড়াও বোন রিনা বেগম এবং দুজন চাচাতো ভাই ছিকু মিয়া ও শাহীন মিয়া বসবাস করেন। বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের লোকজন স্তব্ধ হয়ে আছেন।

চাচাতো ভাই ছিকু মিয়া জানান, ড. মহিউদ্দিনের সঙ্গে তার স্ত্রী, ভাই আরজু মিয়া, বোন রিনা বেগম, ছিকু মিয়া ও আরেক শাহীন মিয়া গত মঙ্গলবার দুপুরে শেষ দেখা করেন।

পরিবারের সঙ্গে দেখা হওয়ার সময় মহিউদ্দিন বলেন, ‘অধ্যাপক তাহের ছিলেন আমার বাবার সমতুল্য। তিনি আমাকে হাতে ধরে মানুষ করেছেন। প্রায়ই আমি তার বাজার করে দিতাম।’

শেষ কথা কি হয়েছে জানতে চাইলে ছিকু মিয়া বলেন, তার চাচাতো ভাই ড. মহিউদ্দিন নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। তিনি ন্যায় বিচার পেলেন না এবং আল্লাহর কাছে এর বিচার দিয়ে গেলাম বলে তাদের বলেছেন। তিনি তার স্ত্রীকে বলেছেন, যেহেতু এদেশে ন্যায় বিচার পেলাম না, তাই জায়গাজমি বিক্রি করে ছেলেমেয়ে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যেও।

মহিউদ্দিনের ছোট ভাই আরজু মিয়া বলেন, ‘আমরা আওয়ামী পরিবারের সন্তান। আমার ভাই মামলার ৪ নম্বর আসামি ছিলেন। মামলায় প্রথম ও দ্বিতীয় আসামি খালাস পেল অথচ আমার ভাইয়ের ফাঁসি বহাল থাকল। বড় ভাইয়ের ফাঁসির খবর শুনলে মা স্ট্রোক করতে পারেন এ আশঙ্কায় তাকে কিছুই জানানো হয়নি।’

আরজু আরও বলেন, ‘আমার বড় ভাই নির্দোষ ছিলেন। তাই মামলা সম্পর্কে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বড় ভাই ভেবেছিল যেহুত তিনি অন্যায় করেনি তাই তিনি ইনশাআল্লাহ খালাশ পাবে। আমার ভাই রোষানলে পড়ে ফাঁসি হলো। আমার ভাইয়ের বিচার পরকালে পাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে একটা চিঠি দিয়েছিল। সেই চিঠি বাড়ি নিয়ে খুলতে বলেছিলে। আমরা গাড়ির মধ্যেই চিঠি খুলে দেখেছি। তাতে লেখা রয়েছে “আজ বৃহস্পতিবার রাত দশটা এক মিনিটে ফাঁসি কার্যকর হবে। আমরা লাশ অ্যাম্বুলেন্সে পাঠিয়ে দিব। আপনারা শুধু এম্বুলেন্সের ভাড়া দিয়ে দিয়েন।”

স্বজনরা জানান, জানাযা বাড়ির মসজিদে এবং জুমার নামাজের আগেই দেওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

ওই গ্রামের প্রায় পচাত্তর বছর বয়সি বৃদ্ধা হাসিনা বেগম বলেন, ‘মহিউদ্দিন মিয়াকে আমরা গ্রামে বলি সূর্য মিয়া। তার মত একজন ভদ্র ছেলে আমাদের গ্রামে নাই।’

গ্রামের আরেক যুবক রনি মিয়া বলেন, ‘আমরা শুনেছি মহিউদ্দিন চাচা জাপান, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া থেকে পড়াশুনা করে সোনার মেডেল পেয়েছেন। তিনি একজন বিজ্ঞানি ছিলেন। তার মতো এমন লোক আর আমাদের এলাকায় হবে না।’

ব্যক্তিজীবনে ইয়াফিক ও ইউসি নামে এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক ড. মিয়া মহিউদ্দিন। তার বাবা প্রায়ত আব্দুল মান্নান মিয়া খুলনা জুট মিলে চাকরি করতেন।

মহিউদ্দিন ১৯৮১ সালে তিনি ভাঙ্গা কেএম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব ও খনিবদ্যা বিষয়ে ভর্তি হন। তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে।