আরিফ হোসেন মোল্লা বরগুনা থেকে :
বরগুনায় মামলা তুলে নেয়ার হুমকির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ধর্ষণের শিকার মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর পরিবার।
দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ধর্ষক সাগর ওরফে মহিবুল্লাহ, তার অভিভাবক এবং আত্মীয়-স্বজনরা ধর্ষণের শিকার মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে প্রাণে শেষ করে দেবে, বসতবাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে, চুরি-ডাকাতি, ঘর পোড়া, গুম, হাইজ্যাক ইত্যাদি মিথ্যা মামলায় জড়াবে, আগামী দশ দিনের মধ্যে মামলা তুলে না নিলে পরিবারসহ সকলকে নিঃশেষ করে ফেলবে ইত্যাদি হুমকির প্রতিবাদে বুধবার বেলা ১২টায় বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে ধর্ষণের শিকার মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, তার বাবা-মা ও এলাকার লোকজন।
ধর্ষণের শিকার মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর বাবা মোঃ নিজাম উদ্দিন মোল্লা সংবাদ সম্মেলনে জানান, বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার আরপাংগাসিয়া ইউনিয়নের গোপখালি গ্রামের মাসুম খার পুত্র সাগর ওরফে মহিবুল্লাহ (২৫) তার চৌদ্দ বছর বয়সী মাদ্রাসা শিক্ষার্থী কন্যাকে চলতি বছরের ২৭ জুন সন্ধ্যা ৭টার দিকে অভিযুক্ত সাগর ওরফে মহিবুল্লাহ ও তার কতিপয় সহযোগী মিলে মোটরসাইকেলযোগে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গায় অনেক খোঁজাখুঁজি করেও নাবালক শিক্ষার্থী কন্যাকে না পেয়ে পরের দিন বিষয়টি থানায় অভিহিত করতে যাওয়ার পথে ধর্ষকের আত্মীয়-স্বজনরা ধর্ষণের শিকার নারীর বাবাকে জানায়, আজকের দিনের ভিতর তোমার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দেব। থানায় যাওয়ার দরকার নেই।
পরের দিন ভোররাত্রে ধর্ষণের শিকার নারীকে তাদের বাড়ির দরজায় অজ্ঞানরত অবস্থায় পাওয়া যায়। সেখান থেকে তাকে আমতলী হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ জানান, একে উপর্যপুরী ধর্ষণ এবং হত্যার উদ্দেশ্যে কীটনাশক পান করানো হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য আমতলীর কর্তব্যরত ডাক্তার ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে পটুয়াখালী হাসপাতালে রেফার করেন। পটুয়াখালীতে ওই নারী তিন দিন যাবত অজ্ঞানরত অবস্থায় থাকাকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। বরিশালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ধর্ষণের শিকার ওই নারীর জ্ঞান ফিরে এলে সে তার মাকে ধর্ষণের ঘটনা খুলে বলে। ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থী জানায়, সাগর ওরফে মহিবুল্লাহ এবং মহিবুল্লার কয়েকজন সহযোগী ছেলেদের নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে তাকে জোর করে মুখের ভিতরে গামছা দিয়ে সাগরের দাদার উত্তর ভিটির খালি বসত ঘরে নিয়ে যায়। তারপর সাগর একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করে এবং তার সহযোগীরা ঘরের চতুর্পাশে পাহারা দেয়। ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে হত্যার উদ্দেশ্যে সাগর বোতলের বিষ ভরে নিয়ে পান করায়।
ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে বরিশালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে তার বাবা স্থানীয় ইউপি সদস্য ইদ্রিস হাওলাদার, সাবেক ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন তালুকদার, গ্রাম পুলিশ তৈয়বুর রহমানকে জানালে তারা অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তারএলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে বিষয়টি জানালে তারা ধর্ষকসহ তার অভিভাবকদের বিষয়টি জানান। এতে ধর্ষক ও তার অভিভাবকরা উত্তেজিত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ নানাবিধ হুমকি ধামকি দেয়।
ধর্ষণের শিকার ওই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর বাবা আরো জানান, গত ৬ জুলাই ২০২৩ তারিখে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নাম ৩৩১/২০২৩। ‘আদালতে মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তার অভিভাবকরা আমাকে খুন জখমের হুমকি দেয়। আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রানে শেষ করে দেবে। আমার বসত ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেবে। আমার বিরুদ্ধে চুরি-ডাকাতি, ঘর পোড়া, গুম, হাইজ্যাক, খুন ইত্যাদি মিথ্যা মামলা দিবে। অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তার অভিভাবক বলে যে ১০ দিনের ভেতর মামলা তুলে আনবি তা না হলে তোর পরিবার শেষ করে ফেলব। আমার ও আমার পরিবারের কারো জীবনে এখন কোন নিরাপত্তা নাই।’
ধর্ষণের শিকার ওই নারীর বাবা মোঃ নিজাম উদ্দিন মোল্লা ৭ আগস্ট ২০২৩ তারিখে তার বিরুদ্ধে হুমকি ধামকি ও জীবনী নিরাপত্তা দাবি করে বোনা পুলিশ সুপার বরাবরে একটি আবেদন করেছেন।