ঢাকা ১২:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ জুলাই ২০২৪, ৫ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
কোটা সংস্কার আন্দোলন: সান্তাহারে ৩ ঘন্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ সিরাজদিখানে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে হেনস্থার শিকার সাংবাদিক রাবি ছাত্রলীগ সভাপতির কক্ষে মিলল পিস্তল, সম্পাদকের কক্ষে ফেন্সিডিল আবু সাঈদের ধারণা ছিলো পুলিশ আমাকে গুলি করবে না মীরপুর গার্লস আইডিয়াল স্কুল থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাট ভাঙ্গায় চেয়ারম্যান গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত  যমুনার পানিতে কালিহাতীতে ৩০ হাজার পানিবন্দি মানুষ, নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত পদ্মায় অবৈধ বালি উত্তোলনে নদীগর্ভে বিলিন ১০টি বাড়িঘর, হুমকিতে শহর রক্ষা বাঁধ স্পীকারের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী সাক্ষাৎ সিরাজদিখানে পুলিশের হামলার আহত সাংবাদিক সালমানকে দেখতে গেলেন ওসি

চাকুরী বিধি ভঙ্গ করে ঠিকাদারী ব্যবসা: ইন্সট্রাক্টর মেহেদী হাসান এর অপকর্মে ডুবছে চট্টগ্রাম ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট

বিশেষ প্রতিবেদক :

সরকারী চাকরিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় নামে-বেনামে বা পারিবারিক লোকজনের নামে ব্যবসায়ীক লাইসেন্স নিয়ে ঠিকাদারী ব্যবসা করা গুরুতর শাস্তি যোগ্য অপরাধ হলেও সেই কাজটি অবলীলায় করে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট‘র ইন্সট্রাক্টর মেহেদী হাসান। রংপুর,বরিশাল মেরিন একাডেমি, চট্টগ্রাম ও মাদারীপুর ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট সহ আরো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সাপ্লাই এর কাজ নিজে প্রত্যক্ষভাবে তদারকি করে থাকেন এবং গুনগত মান ভালো দেওয়ার পরিবর্তে ত্রুটিযুক্ত মালামাল দিয়ে সরবরাহকৃত আইটেমের মূল্যায়ন তুলনামূলক বাজারদর থেকে অনেক বেশি দেখিয়ে টেন্ডার অনুমোদন করিয়ে সরকারী টাকা লুটে নিচ্ছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে তিনি তার মায়ের নামে একটি ঠিকাদারী লাইসেন্স করে নিয়েছেন। এবং এই লাইসেন্সের অনুকুলে লক্ষ লক্ষ টাকার কাজ বাগিয়ে নিচ্ছেন। সম্প্রতি এরকম একটি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে। ওই অভিযোগের বর্ণনায় জানাগেছে, এনএমআই চট্টগ্রাম শাখায় ছাত্রদের খাবার ডাইনিং পরিচালনা পূর্বে তৎকালীন প্রিন্সিপালের নেতৃত্বে কর্মচারীদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হত। ছাত্রদের প্রতিনিধিরা খাবারের মান নিয়ন্ত্রণ দেখভাল করতে পারতো। কিন্তু গত দুই ব্যাচ ধরে অর্থাৎ বর্তমান প্রিন্সিপাল দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ডাইনিং একটি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এই কাজের দায়িত্ব “ইন্টারন্যাশনাল মেরিন কর্পোরেশন” কে দেয়া হয়েছে যার মালিক চট্টগ্রাম ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট‘র ইন্সট্রাক্টর মেহেদী হাসানের মাতা জাহানারা খাতুন। এমতাবস্থায় খাবারের মানও আশঙ্কাজনক ভাবে নিম্নমুখী হয়েছে। কিন্তু তার প্রত্যক্ষ প্রভাবের কারণে এই সমস্যার প্রতিকার করা যাচ্ছেনা। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারিদের সরাসরি এই কাজে ব্যবহার করেন এবং সরকারি গ্যাস ও বিদ্যুত বিনা বাধায় ব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত এই নিয়ম বহির্ভূত ব্যবসায়ীক কাজ করে যাচ্ছেন।

এছাড়া ও ছাত্রদের ট্রেইনিং ব্লকে তিনি একটি দোকান খুলেছেন। ডাইনিং থেকে পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়ায় ছাত্ররা তার দোকান থেকে খাবার কিনতে বাধ্য হচ্ছে। একজন সরকারি কর্মচারী কিভাবে সরকারি সম্পদ ব্যবহার করে নিজ ক্যাম্পাসে দোকান খুলতে পারেন তা তদন্ত করার দাবি উঠেছে। উপরন্তু তার দোকান থেকে ছাত্ররা বিনা বাধায় সিগারেট কিনছে এবং সমগ্র ক্যাম্পাসকে স্মোকিং জোনে পরিনত করেছে। এটি ছাত্রদের কোড অফ কন্ডাক্ট এর পরিপন্থী। ফলে রেজিমেন্টাল ট্রেনিং ব্যাহত হচ্ছে। সুত্রমতে, ইন্সটিটিউটের ট্রেনিং লেক (পুকুর) তিনি ব্যাক্তিগত ব্যবসায়ীক কাজে ব্যবহার করছেন। প্রিন্সিপাল এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে তিনি সেখানে বাণিজ্যিক ভাবে মাছের চাষ করছেন। তিনি NMI চট্টগ্রামে এর TEC এবং TOC কমিটির সদস্য। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি তার নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল মেরিন কর্পোরেশনকে বারবার কাজ পাইয়ে দিয়েছেন যা সরকারী নিয়ম পরিপন্থী। অথচ কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি কারো সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত নেই মমের্ স্বাক্ষর করার পরেও এই অনিয়ম করে যাচ্ছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তার ব্যবসায়িক পন্যের উৎপাদন কাজে তিনি NMI চট্টগ্রাম এর গ্যাস, বিদ্যুৎ এমন কি ছাত্রদেরকেও ব্যবহার করেছেন।বিশেষত তার ব্যবসায়িক পন্য “ক্যাপ্টেন টয়লেট ক্লিনার” এর সম্পুনর্ উৎপাদন তিনি NMI চট্টগ্রাম ক্যাম্পাস এ সরকারি গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং ছাত্রদেরকে ব্যবহার করে বাজারজাত ও প্রস্তুত করেছেন। গত আড়াই বছরে তিনি তার ব্যবসায়িক কাজে বারবার বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেছেন এবং তার জন্যে অফিস থেকে ঠুনকো কারণ দেখিয়ে প্রিন্সিপালের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও স্বাক্ষরে টিএ/ডিএ ও ভোগ করে আসছেন।
এভাবে নিজ কাজে সরকারি অথর্ নষ্ট করার ঘটনা খতিয়ে দেখার জোর দাবি তোলা হয়েছে। সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করেই জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে তাকে বিভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত করার মাধ্যমে বর্তমান প্রিন্সিপাল তাকে বারবার অনিয়ম করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। এই উপায়েই তিনি ঘগও মাদারীপুর প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে যান এবং সেখানে তদারকির নামে ঠিকাদারি শুরু করেন। অথচ চট্টগ্রাম ক্যাম্পাসে তার চেয়ে জ্যেষ্ঠ অফিসার থাকা সত্ত্বেও সেই অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। উল্লেখ্য, সম্প্রতি NMI মাদারিপুর প্রকল্পে অনেক অনিয়ম করেছেন। এতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছেন বর্তমান প্রিন্সিপাল ক্যাপ্টেন আতাউর রহমান । মেহেদী হাসান ঘগও মাদারিপুর প্রকল্পে তদারকি কর্মকর্তা, টেন্ডার কমিটি মেম্বার এবং সাব কনট্র্যাক্ট নিয়ে ঠিকাদারি ও ট্রেইনিং উপকরণ সাপ্লায়ার ছিলেন। উনার সম্পৃক্ত কাজগুলি নিন্মমানের এবং এটি নিয়ে ওই এলাকার সাংবাদিকরা রিপোর্ট করতে চেয়েছিলেন, পরে তিনি এই বিষয়টাকে অনেক অর্থের বিনিময়ে ধামাচাপা দিয়েছেন। NMI মাদারিপুরে তিনি যে লাইফবোট গুলি সরবরাহ করেছিলেন তা সেখানে রিজেক্ট হয়, এরপর তিনি সেই পুরানো একটি লাইফবোট চট্টগ্রাম ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন এবং এখানে রেখে দেওয়া হয়। এখন জানাগেছে যে, চট্টগ্রামের পরিচালন বাজেট থেকে এই পুরাতন বোটটি ক্রয় করা হবে। কিন্তু প্রশিক্ষণের জন্যে এখানে একটি লাইফবোট অলরেডি রয়েছে। বর্তমান প্রিন্সিপালের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এসব অনিয়ম হচ্ছে।
চাকরির শুরুতেই তিনি মহিলা অফিস সহায়ক হোসনে আরাকে হয়রানি করেন যা পূর্ন তদন্ত না করেই ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। এরপরেও তিনি তার অভ্যাস পরিবর্তন করেননি। ইংরেজি বিষয়ের অতিথি প্রশিক্ষক তাকওয়া সিদ্দিক এর সাথে জনসম্মুখে অনেক মাখামাখি করেন এবং তার অফিস রুম ব্যবহার করে থাকেন। মাঝে মাঝে ওই কক্ষ বন্ধ থাকে এবং অনৈতিক সম্পর্কের আভাস পাওয়া যায়। এ বছরের শুরুতে তিনি অতিথি প্রশিক্ষক ফারজানাকে সিমুলেটর ভবনে যৌন হেনস্থা করেন। পরবর্তীতে এই বিষয় এ তদন্ত না করে তিনি প্রিন্সিপালকে নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে দেন এবং ফারজানাকে ভবিষ্যতে এখানে স্থায়ী চাকুরী দেওয়া হবে বলে চুপ থাকতে বলেন। তার চাকরি শুরু থেকে প্রথম তিন বছরের অঈজ পর্যালোচনা করলে এরকম আরো অনিয়মের তথ্য পাওয়া যাবে। যদিও বর্তমান প্রিন্সিপাল এর দেয়া নাম্বার আগের নাম্বারের সাথে সম্পুর্ন উল্টো। মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর এবং সংস্থায় তিনি নিজেকে সেকেন্ড ইন কমান্ড বলে পরিচয় দেন।
আদতে এটি একটি ভুয়া তথ্য। NMI এর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী তিনি সেকেন্ড ইন কমান্ড নন। একই তথ্য ব্যবহার করে তিনি অনেক সুবিধা আদায় করে থাকেন এবং তার ব্যক্তিগত ব্যবসার মাধ্যমেও অনেক প্রতারণা করেছেন বলে জানাগেছে। তিনি ঘগও ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়মের মাধ্যমে অনেক অথর্ উপার্জন করেছেন যা সুষ্ঠু তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে। প্রতিবারই তিনি দালাল চক্রের মাধ্যমে প্রচুর অথের বিনিময়ে একটি ভর্তিচ্ছুক ছাত্র গ্রুপ তৈরি করেন। সর্বশেষ ঘগও চট্টগ্রাম কতৃক আয়োজিত ভর্তি পরীক্ষায় পরীক্ষার হল রুমে তার গ্রুপের পরীক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন নিয়ে ঢুকার ব্যবস্থা করে দেন। পরে পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়ার সাথে সাথেই ছবি তুলে বাহিরের টিমের কাছে পাঠিয়ে দেন এবং সেখান হতে গঈছ প্রশ্ন উত্তর সমাধান হয়ে প্রার্থীদের মোবাইলে চলে আসে এবং চুক্তি অনুযায়ী তারা সহজেই উত্তির্ণ হয়। ঘগও চট্টগ্রাম এর প্রিন্সিপালের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তিনি এসব কাজ প্রকাশ্যে করে বেড়াচ্ছেন।
তিনি কর্মস্থলে তেমন উপস্থিত থাকেন না, আর থাকলেও সারাক্ষণ তার কাছে ব্যবসায়ীক লোকজন আসতে থাকে। এতে করে তার মূল দায়িত্ব ব্যাহত হচ্ছে এবং উক্ত কর্মকান্ড সরকারি কর্মচারী আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। তিনি উদ্দোক্তা ডটকম, ইন্টারন্যাশনাল মেরিন কর্পোরেশন, জেব্রা শিপিং, ক্যাপ্টেন গ্রুপ সহ আরো অনেক ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। NMI চট্টগ্রাম এর পূর্বের প্রিন্সিপাল ক্যাপ্টেন ফয়সাল আজিম থাকা কালীন সময়ে মেহেদী হাসানের এ সব অনিয়ম নিয়ে বারংবার সতর্ক করেন। তার বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন খারাপ রিপোটর্ দিয়েছেন এবং বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে মেহেদী হাসান সরকারি চাকরি হতে প্রায়ই বরখাস্ত হওয়ার প্রসেসে ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে প্রিন্সিপাল ক্যাপ্টেন আতাউর রহমান আসার পর থেকে মেহেদী হাসান এর গোপনীয় প্রতিবেদন এ অনেক অনেক ভালো রিপোর্ট দেন এবং তাকে পুনরায় চাকরিতে বহাল রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেন।
বর্তমান প্রিন্সিপালের এরকম উল্টা আচরণে নৌ মন্ত্রণালয় এর নৌ শিক্ষা অধিশাখা সহ সবাই বিস্মিত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে উক্ত শাখায় তদন্ত করলেই সব প্রকৃত রিপোর্ট পাওয়া যাবে। শোনা যাচ্ছে বর্তমান প্রিন্সিপাল ক্যাপ্টেন আতাউর রহমান মেহেদী হাসান এর যাবতীয় ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত এবং তারা দুজনেই ব্যবসায়িক পার্টনার। যার দরুন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও বর্তমান প্রিন্সিপাল বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত মেহেদী হাসান এর বিরুদ্ধে কোনো রূপ পদক্ষেপ নেন না বরং নিয়ম বহির্ভূত অনেক সুবিধা দিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি করার সুযোগ দিচ্ছেন। এ বিষয়ে ক্যাপ্টেন মেহেদী হাসানের সাথে কথা বললে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। কথা বলার জন্য প্রিন্সিপাল ক্যাপ্টেন আতাউর রহমানকে তার সেল ফোনে কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

কোটা সংস্কার আন্দোলন: সান্তাহারে ৩ ঘন্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ

চাকুরী বিধি ভঙ্গ করে ঠিকাদারী ব্যবসা: ইন্সট্রাক্টর মেহেদী হাসান এর অপকর্মে ডুবছে চট্টগ্রাম ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট

আপডেট টাইম : ০৬:৫৫:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৩

বিশেষ প্রতিবেদক :

সরকারী চাকরিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় নামে-বেনামে বা পারিবারিক লোকজনের নামে ব্যবসায়ীক লাইসেন্স নিয়ে ঠিকাদারী ব্যবসা করা গুরুতর শাস্তি যোগ্য অপরাধ হলেও সেই কাজটি অবলীলায় করে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট‘র ইন্সট্রাক্টর মেহেদী হাসান। রংপুর,বরিশাল মেরিন একাডেমি, চট্টগ্রাম ও মাদারীপুর ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট সহ আরো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সাপ্লাই এর কাজ নিজে প্রত্যক্ষভাবে তদারকি করে থাকেন এবং গুনগত মান ভালো দেওয়ার পরিবর্তে ত্রুটিযুক্ত মালামাল দিয়ে সরবরাহকৃত আইটেমের মূল্যায়ন তুলনামূলক বাজারদর থেকে অনেক বেশি দেখিয়ে টেন্ডার অনুমোদন করিয়ে সরকারী টাকা লুটে নিচ্ছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে তিনি তার মায়ের নামে একটি ঠিকাদারী লাইসেন্স করে নিয়েছেন। এবং এই লাইসেন্সের অনুকুলে লক্ষ লক্ষ টাকার কাজ বাগিয়ে নিচ্ছেন। সম্প্রতি এরকম একটি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে। ওই অভিযোগের বর্ণনায় জানাগেছে, এনএমআই চট্টগ্রাম শাখায় ছাত্রদের খাবার ডাইনিং পরিচালনা পূর্বে তৎকালীন প্রিন্সিপালের নেতৃত্বে কর্মচারীদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হত। ছাত্রদের প্রতিনিধিরা খাবারের মান নিয়ন্ত্রণ দেখভাল করতে পারতো। কিন্তু গত দুই ব্যাচ ধরে অর্থাৎ বর্তমান প্রিন্সিপাল দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ডাইনিং একটি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এই কাজের দায়িত্ব “ইন্টারন্যাশনাল মেরিন কর্পোরেশন” কে দেয়া হয়েছে যার মালিক চট্টগ্রাম ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট‘র ইন্সট্রাক্টর মেহেদী হাসানের মাতা জাহানারা খাতুন। এমতাবস্থায় খাবারের মানও আশঙ্কাজনক ভাবে নিম্নমুখী হয়েছে। কিন্তু তার প্রত্যক্ষ প্রভাবের কারণে এই সমস্যার প্রতিকার করা যাচ্ছেনা। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারিদের সরাসরি এই কাজে ব্যবহার করেন এবং সরকারি গ্যাস ও বিদ্যুত বিনা বাধায় ব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত এই নিয়ম বহির্ভূত ব্যবসায়ীক কাজ করে যাচ্ছেন।

এছাড়া ও ছাত্রদের ট্রেইনিং ব্লকে তিনি একটি দোকান খুলেছেন। ডাইনিং থেকে পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়ায় ছাত্ররা তার দোকান থেকে খাবার কিনতে বাধ্য হচ্ছে। একজন সরকারি কর্মচারী কিভাবে সরকারি সম্পদ ব্যবহার করে নিজ ক্যাম্পাসে দোকান খুলতে পারেন তা তদন্ত করার দাবি উঠেছে। উপরন্তু তার দোকান থেকে ছাত্ররা বিনা বাধায় সিগারেট কিনছে এবং সমগ্র ক্যাম্পাসকে স্মোকিং জোনে পরিনত করেছে। এটি ছাত্রদের কোড অফ কন্ডাক্ট এর পরিপন্থী। ফলে রেজিমেন্টাল ট্রেনিং ব্যাহত হচ্ছে। সুত্রমতে, ইন্সটিটিউটের ট্রেনিং লেক (পুকুর) তিনি ব্যাক্তিগত ব্যবসায়ীক কাজে ব্যবহার করছেন। প্রিন্সিপাল এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে তিনি সেখানে বাণিজ্যিক ভাবে মাছের চাষ করছেন। তিনি NMI চট্টগ্রামে এর TEC এবং TOC কমিটির সদস্য। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি তার নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল মেরিন কর্পোরেশনকে বারবার কাজ পাইয়ে দিয়েছেন যা সরকারী নিয়ম পরিপন্থী। অথচ কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি কারো সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত নেই মমের্ স্বাক্ষর করার পরেও এই অনিয়ম করে যাচ্ছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তার ব্যবসায়িক পন্যের উৎপাদন কাজে তিনি NMI চট্টগ্রাম এর গ্যাস, বিদ্যুৎ এমন কি ছাত্রদেরকেও ব্যবহার করেছেন।বিশেষত তার ব্যবসায়িক পন্য “ক্যাপ্টেন টয়লেট ক্লিনার” এর সম্পুনর্ উৎপাদন তিনি NMI চট্টগ্রাম ক্যাম্পাস এ সরকারি গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং ছাত্রদেরকে ব্যবহার করে বাজারজাত ও প্রস্তুত করেছেন। গত আড়াই বছরে তিনি তার ব্যবসায়িক কাজে বারবার বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেছেন এবং তার জন্যে অফিস থেকে ঠুনকো কারণ দেখিয়ে প্রিন্সিপালের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও স্বাক্ষরে টিএ/ডিএ ও ভোগ করে আসছেন।
এভাবে নিজ কাজে সরকারি অথর্ নষ্ট করার ঘটনা খতিয়ে দেখার জোর দাবি তোলা হয়েছে। সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করেই জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে তাকে বিভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত করার মাধ্যমে বর্তমান প্রিন্সিপাল তাকে বারবার অনিয়ম করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। এই উপায়েই তিনি ঘগও মাদারীপুর প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে যান এবং সেখানে তদারকির নামে ঠিকাদারি শুরু করেন। অথচ চট্টগ্রাম ক্যাম্পাসে তার চেয়ে জ্যেষ্ঠ অফিসার থাকা সত্ত্বেও সেই অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। উল্লেখ্য, সম্প্রতি NMI মাদারিপুর প্রকল্পে অনেক অনিয়ম করেছেন। এতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছেন বর্তমান প্রিন্সিপাল ক্যাপ্টেন আতাউর রহমান । মেহেদী হাসান ঘগও মাদারিপুর প্রকল্পে তদারকি কর্মকর্তা, টেন্ডার কমিটি মেম্বার এবং সাব কনট্র্যাক্ট নিয়ে ঠিকাদারি ও ট্রেইনিং উপকরণ সাপ্লায়ার ছিলেন। উনার সম্পৃক্ত কাজগুলি নিন্মমানের এবং এটি নিয়ে ওই এলাকার সাংবাদিকরা রিপোর্ট করতে চেয়েছিলেন, পরে তিনি এই বিষয়টাকে অনেক অর্থের বিনিময়ে ধামাচাপা দিয়েছেন। NMI মাদারিপুরে তিনি যে লাইফবোট গুলি সরবরাহ করেছিলেন তা সেখানে রিজেক্ট হয়, এরপর তিনি সেই পুরানো একটি লাইফবোট চট্টগ্রাম ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন এবং এখানে রেখে দেওয়া হয়। এখন জানাগেছে যে, চট্টগ্রামের পরিচালন বাজেট থেকে এই পুরাতন বোটটি ক্রয় করা হবে। কিন্তু প্রশিক্ষণের জন্যে এখানে একটি লাইফবোট অলরেডি রয়েছে। বর্তমান প্রিন্সিপালের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এসব অনিয়ম হচ্ছে।
চাকরির শুরুতেই তিনি মহিলা অফিস সহায়ক হোসনে আরাকে হয়রানি করেন যা পূর্ন তদন্ত না করেই ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। এরপরেও তিনি তার অভ্যাস পরিবর্তন করেননি। ইংরেজি বিষয়ের অতিথি প্রশিক্ষক তাকওয়া সিদ্দিক এর সাথে জনসম্মুখে অনেক মাখামাখি করেন এবং তার অফিস রুম ব্যবহার করে থাকেন। মাঝে মাঝে ওই কক্ষ বন্ধ থাকে এবং অনৈতিক সম্পর্কের আভাস পাওয়া যায়। এ বছরের শুরুতে তিনি অতিথি প্রশিক্ষক ফারজানাকে সিমুলেটর ভবনে যৌন হেনস্থা করেন। পরবর্তীতে এই বিষয় এ তদন্ত না করে তিনি প্রিন্সিপালকে নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে দেন এবং ফারজানাকে ভবিষ্যতে এখানে স্থায়ী চাকুরী দেওয়া হবে বলে চুপ থাকতে বলেন। তার চাকরি শুরু থেকে প্রথম তিন বছরের অঈজ পর্যালোচনা করলে এরকম আরো অনিয়মের তথ্য পাওয়া যাবে। যদিও বর্তমান প্রিন্সিপাল এর দেয়া নাম্বার আগের নাম্বারের সাথে সম্পুর্ন উল্টো। মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর এবং সংস্থায় তিনি নিজেকে সেকেন্ড ইন কমান্ড বলে পরিচয় দেন।
আদতে এটি একটি ভুয়া তথ্য। NMI এর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী তিনি সেকেন্ড ইন কমান্ড নন। একই তথ্য ব্যবহার করে তিনি অনেক সুবিধা আদায় করে থাকেন এবং তার ব্যক্তিগত ব্যবসার মাধ্যমেও অনেক প্রতারণা করেছেন বলে জানাগেছে। তিনি ঘগও ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়মের মাধ্যমে অনেক অথর্ উপার্জন করেছেন যা সুষ্ঠু তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে। প্রতিবারই তিনি দালাল চক্রের মাধ্যমে প্রচুর অথের বিনিময়ে একটি ভর্তিচ্ছুক ছাত্র গ্রুপ তৈরি করেন। সর্বশেষ ঘগও চট্টগ্রাম কতৃক আয়োজিত ভর্তি পরীক্ষায় পরীক্ষার হল রুমে তার গ্রুপের পরীক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন নিয়ে ঢুকার ব্যবস্থা করে দেন। পরে পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়ার সাথে সাথেই ছবি তুলে বাহিরের টিমের কাছে পাঠিয়ে দেন এবং সেখান হতে গঈছ প্রশ্ন উত্তর সমাধান হয়ে প্রার্থীদের মোবাইলে চলে আসে এবং চুক্তি অনুযায়ী তারা সহজেই উত্তির্ণ হয়। ঘগও চট্টগ্রাম এর প্রিন্সিপালের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তিনি এসব কাজ প্রকাশ্যে করে বেড়াচ্ছেন।
তিনি কর্মস্থলে তেমন উপস্থিত থাকেন না, আর থাকলেও সারাক্ষণ তার কাছে ব্যবসায়ীক লোকজন আসতে থাকে। এতে করে তার মূল দায়িত্ব ব্যাহত হচ্ছে এবং উক্ত কর্মকান্ড সরকারি কর্মচারী আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। তিনি উদ্দোক্তা ডটকম, ইন্টারন্যাশনাল মেরিন কর্পোরেশন, জেব্রা শিপিং, ক্যাপ্টেন গ্রুপ সহ আরো অনেক ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। NMI চট্টগ্রাম এর পূর্বের প্রিন্সিপাল ক্যাপ্টেন ফয়সাল আজিম থাকা কালীন সময়ে মেহেদী হাসানের এ সব অনিয়ম নিয়ে বারংবার সতর্ক করেন। তার বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন খারাপ রিপোটর্ দিয়েছেন এবং বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে মেহেদী হাসান সরকারি চাকরি হতে প্রায়ই বরখাস্ত হওয়ার প্রসেসে ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে প্রিন্সিপাল ক্যাপ্টেন আতাউর রহমান আসার পর থেকে মেহেদী হাসান এর গোপনীয় প্রতিবেদন এ অনেক অনেক ভালো রিপোর্ট দেন এবং তাকে পুনরায় চাকরিতে বহাল রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেন।
বর্তমান প্রিন্সিপালের এরকম উল্টা আচরণে নৌ মন্ত্রণালয় এর নৌ শিক্ষা অধিশাখা সহ সবাই বিস্মিত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে উক্ত শাখায় তদন্ত করলেই সব প্রকৃত রিপোর্ট পাওয়া যাবে। শোনা যাচ্ছে বর্তমান প্রিন্সিপাল ক্যাপ্টেন আতাউর রহমান মেহেদী হাসান এর যাবতীয় ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত এবং তারা দুজনেই ব্যবসায়িক পার্টনার। যার দরুন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও বর্তমান প্রিন্সিপাল বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত মেহেদী হাসান এর বিরুদ্ধে কোনো রূপ পদক্ষেপ নেন না বরং নিয়ম বহির্ভূত অনেক সুবিধা দিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি করার সুযোগ দিচ্ছেন। এ বিষয়ে ক্যাপ্টেন মেহেদী হাসানের সাথে কথা বললে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। কথা বলার জন্য প্রিন্সিপাল ক্যাপ্টেন আতাউর রহমানকে তার সেল ফোনে কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।