নিজস্ব প্রতিনিধি :
বীর মুক্তিযুদ্ধার মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশ সনদ জালিয়াতি করে, একই পরিবারের চারজন সরকারি চাকরি করছেন বলে জানা যায়। ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুর সদর উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের পেয়ারপুর গ্রামো একই পরিবারের চারজন হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধা লাল খানের মেয়ের জামাই আলি ইসলাম ওরফে আসলাম (হলফনামায় করছেন নাতিন) তার আপন ছোট ভাই আসাদুজ্জামান (হলফনামায় করছেন নাতিন)। আর দুজন হল মুক্তিযোদ্ধা লাল খানের ছেলে মৃত নজরুল ইসলামের বউ জেসমিন ইসলাম ও রহিমা খাতুন।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আব্দুল আহাদ চৌধুরীর স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধা সনদ সুত্রে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ লাল খান, পিতা-মৃত মোঃ খান্দু খান, মাতা-বনা বিবি গ্রাম-আদমপুর ডাকঘর-পেয়ারপুর, উপজেলা-মাদারীপুর সদর,জেলা-মাদারীপুর। মুক্তিযোদ্ধা সনদ নাং-৩৭১৮৮, তারিখ-৬ ডিসেম্বর ২০০০ইং।
মুক্তিযোদ্ধা লাল খান এর মৃত্যুর পর গত ১৮-১২- ২০২২ ইংরেজি তারিখে, পেয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মাহফুজুর রহমান ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার তাজনেহার স্বাক্ষরিত ওয়ারিশ সনদে দেখা যায়, আমেনা বেগম তার স্ত্রী, লুৎফা বেগম কন্যা, মোঃ দেলোয়ার হোসেন পুত্র, মৃত মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম খান পুত্র, নাজমা আক্তার কন্যা, মোঃ শহিদুল ইসলাম পুত্র, মনিরুজ্জামান পুত্র, মোছাঃ অনিতা আক্তার সালমা কন্যা, মোছা মনিকা কন্যা ও মো রকিবুল ইসলাম ইসলাম পুত্র। ওই দশজনকে ওয়ারিশ হিসাবে দেখানো হয়েছে ।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান সাহেবের সাথে কথা বললে, তিনি সত্যতা নিশ্চিত করেন ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা লাল খানের অষ্টম সন্তান মোছাঃ মনিকার সাথে বিয়ে হয় একই গ্রামের আলী ইসলাম ওরফে আসলাম পিতা-মৃত সিদ্দিক মুন্সী, মাতা-তাছলিমা খাতুন নামের একজনের সঙ্গে। সেই আলী ইসলাম ওরফে আসলাম ১৩-০৮-২০১৮ সালে আইনজীবী অহিদুজ্জামান (বোরহান) এর মাধ্যমে সিনিয়র জজ আতিকুল ইসলাম এর আদালতে জালিয়াতি করে এফিডেভিট করে নিজের মা তাছলিমা কে বানিয়েছেন তার মৃত শশুর মুক্তিযোদ্ধা লাল খানের মেয়ে, তিনি হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার নাতিন এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বর্তমানে আয়কর অফিসের ভৈরব কিশোরগঞ্জে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ।
আলী ইসলাম ওরফে আসলাম এর আপন ছোট ভাই আসাদুজ্জামান ও নকল ওয়ারিশ সনদের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় মাদারীপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত ।
এ বিষয়ে আলী ইসলাম ওরফে আসলামের নিকট কিভাবে চাকরি করেন জানতে চাইলে, বলেন আমার মামা সবই জানে, আসাদুজ্জামান তার ছোট ভাই নয় বলে জানায় ।
আসাদুজ্জামানের কাছে চাকরি বিষয় জানতে চাইলে বলেন যে,সে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি করে, কিন্তু কিভাবে কি হয়েছে সে কিছু বলতে পারে না, তার ও ইঙ্গিত একই মামার দিকে ।
দশ জন ওয়ারিশ ছাড়াও বীর মুক্তিযোদ্ধা লাল খানের তৃতীয় পুত্র মৃত নজরুল ইসলাম খানের দুইজন স্ত্রী লাল খানের মেয়ে পরিচয়ে ওয়ারিশ সনদ ও সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে চাকরি করেছেন । তারা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরিতে কর্মরত । মৃত নজরুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী মোছাঃ রহিমা আক্তার যাহার এনআইডি নাম্বার ১ ৯ ৮ ৩ ৯ ১ ৯ ৬ ২ ১ ২ ২ ৪ ২ ৯ ৫ ৪ পরিচয় গোপন করে বর্তমানে পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত । তার জাতীয় পরিচয় পত্রে পিতার নাম- লালা খান লেখা আছে ।
মৃত নজরুল ইসলাম খানের দ্বিতীয় স্ত্রীঃ মোছাঃ জেসমিন ইসলাম স্বামী মৃত নজরুল ইসলাম, মাতাঃ মোছাঃ পেয়ারা হক জন্মতারিখ ২১ শে মার্চ ১৯৭০, আইডি নাম্বার ৫ ৪ ১ ৫৪ ৮ ৩ ৩ ৫ ০ ৫ ৮ ৫
মোছাঃ জেসমিন ইসলাম পরিচয় গোপন করে নকল ওয়ারিশ সনদ তৈরী করে গত ১৩-৮-১৮ সালে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা লাল খানের মেয়ে পরিচয় দিয়ে ওয়ারিশ সনদ তৈরি করেন । এবং বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় এনবিআর এর অধীন পেনশন ক্লোজিং সেকশনে অফিস সহকারী হিসেবে চাকুরীরত ।
জেসমিন ইসলাম শুধু ওয়ারিশ সনদ জালিয়াতি করেনি, তার এসএসসির সার্টিফিকেট প্রতিনিধির হাতে এসে পৌঁছেছে, সেখানে দেখা যায়, তার নাম-জেসমিন আক্তার পিতার নাম- মৃত লাল খান
মাতার নাম-আমেনা বেগম
সার্টিফিকেট এ তো জন্ম তারিখ ১/১/১৯৮৮ সাল দেওয়া, অথচ তার এনআইডি তে দেওয়া ২১/০৩/১৯৭০ সাল ।
মুক্তিযোদ্ধা লাল খানের দ্বিতীয় পুত্র,
স্বামী-নজরুল ইসলামের ঠিকানায় জাতীয় পরিচয় পত্র থাকলেও, কিভাবে সে বেতন তুলতে পারে এ বিষয়টি সত্যি ভাবনার জন্ম দেয় ।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, সব মিলিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তাদের পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনের ভিতর ১৩/১৪ জন চাকরি করে ।
এবার আমাদের অনুসন্ধান কে সে মামা আর কয়জনে বা চাকরি করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায়।