বিশেষ প্রতিবেদক :
বিআইডব্লিউটিএর হিসাব সহকারী মো: আনোয়ার হোসেন অবৈধ পথে কোটি-কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন মর্মে অভিযোগ পাওয়াগেছে। ঢাকা খিলক্ষেত উত্তরপাড়া এলাকায় ৩ কাঠা জমির উপর ১০ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করছেন তিনি। ৪ তলার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ইতিমধ্যে। জানা যায় রুহুল আমিন নামের এক ব্যাক্তির নিকট থেকে গত ডিসেম্বরে ১ কোটি ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এই সম্পত্তি ক্রয় করেন। এ ছাড়াও নামে বেনামে হয়েছেন বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক। হিসাব সহকারী পদে চাকরি করে এতো সম্পদের মালিক হওয়া নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ ভবনে আলোচনার ঝড় উঠেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারিরা এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছেন। আরো জানাগেছে, তিনি নিয়োগের শর্ত ভংগ করে বয়স কম থাকা সত্বেও জাল কাগজপত্রে চাকুরী লাভ করেছেন।
এমন একজন প্রতারক ও জালিয়াত কিভাবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএতে) নিয়োগ পেলো তার ব্যাখ্যা খোদ পরিচালক (প্রশাসন)এর ও জানা নেই। আমাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ সংক্রান্ত অনিয়ম ও আয় বহির্ভূত সম্পদের তথ্য। বাংলাদেশ গেজেট, (অতিরিক্ত) নভেম্বর ৮, ১৯৯০ সালের বিআইডব্লিউটিএ’র গেজেটে প্রকাশিত রয়েছে যে সহকারী পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স ২১ হইতে ২৭ বছর হতে হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে সমমানের পদের কর্মচারীদের মধ্য হইতে পদোন্নতির মাধ্যমে পূরন করিতে হইবে । গত ০৩-১১-১৯৮৭ ইং তারিখে দৈনিক বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সূত্র ধরে মোঃ আনোয়ার হোসেন; পিতা- তাফাজ্জল হোসেন ভূইয়া, বর্তমান ঠিকানাঃ ২৭৬ নং খিলগাঁও সিপাহীবাগ, রওশন ভিলা ২য় তলা, ঢাকা-১৯ এবং স্থায়ী ঠিকানাঃ গ্রাম: খিলবাইদা, থানা ও জেলা লক্ষীপুর সহকারী পদের জন্য বিআইডব্লিউটিএতে আবেদন করেন। উক্ত আবেদনে আবেদনকারী নিজের জন্ম তারিখ ০১/১০/১৯৬৮ উল্লেখ করে এবং আবেদনের দিন তার বয়স ১৯ বছর ০২ দিন উল্লেখ করে।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত ও বিআইডব্লিউটিএ’র চাকুরীর শর্ত অনুযায়ী চাকুরীতে আবেদনের বয়স না হওয়া সত্বেও মোঃ আনোয়ার হোসেন কিভাবে নিয়োগ পেলো তা এখন কোটি টাকা মূল্যের একটি প্রশ্ন। এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক (প্রশাসন) বলেন যে ‘আমি ঐ সময়ে দায়িত্বে ছিলাম না’। সংস্থার পরিচালক (অর্থ) এন.এ. হোসেন সাক্ষরিত ২৬/০১/১৯৮৯ ইং তারিখের দপ্তরাদেশ নং ৬৭/৮৯ এ মো: আনোয়ার হোসেন, পিতা: তাফাজ্জল হক ভূইয়া কে ৮০০-৫০-১৩০০-ইবি-৫৫-১৬৩০ মাসিক ৮০০ টাকা বেতন এবং অন্যান্য স্বীকার্য ভাতাদিসহ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের অর্থ বিভাগে সহকারী পদে যোগদানের তারিখ হইতে নিয়োগ করা হলো। জানা যায়, আনোয়ার হোসেনের নিয়োগকে বৈধ করতে ১ বছর পরে চাকরিতে যোগদান করার জন্য নিয়োগ পত্র প্রদান করা হয়। চাকরিতে প্রবেশের বয়স কম হওয়া সত্বেও সরকারি চাকুরী আইনসিদ্ধ কিনা এ বিষয়ে হিউম্যানিস্ট সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ও আন্তর্জাতিক গবেষক সেলিম রেজাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এটা যদি হয়ে থাকে তাহলে তা সরাসরি দুর্নীতি বলে গন্য হবে।
সরকারি প্রতিষ্ঠনে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হলে তার সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদেরও দুদক আইনে বিচার হওয়া উচিৎ।” সূত্র থেকে আরো জানা যায়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদন করার সর্বশেষ তারিখ ছিল ২১/১১/১৯৮৭ ইং কিন্তু মো: আনোয়ার হোসেন আবেদন করেন ০২/১২/১৯৮৭ ইং। অপরদিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন হতে আবেদনকারীর বি.কম পাশ হতে হবে। কিন্তু তিনি আবেদনের শেষ তারিখ পর্যন্ত বি.কম পাশ করেননি। তিনি বি.কম পাশ করেছেন ১৯৮৮ সালে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কতৃপক্ষের নিয়োগ পত্রের শর্ত অনুযায়ী প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তার নিকট থেকে শারীরিক সুরক্ষার সনদপত্র সংগ্রহসহ যোগদান করার বিষয় টি উল্লেখ থাকলেও তিনি প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তার নিকট থেকে শারীরিক সুরক্ষার সনদপত্র সংগ্রহ না করে যোগদান করেন বলে জানা যায়। এই বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার (অনুসন্ধান) বলেন, “অভিযোগ পেলে আমরা তা অবশ্যই খতিয়ে দেখবো।
যে বা যারাই দুর্নীতি করুক না কেন এবং যেখানেই দুর্নীতি সংঘটিত হোক না কেন; দুদক জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করবে। এক্ষেত্রে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিএর কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, আনোয়ার হোসেনকে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বিআইডব্লিউটিএ হিসাব বিভাগের বিল শাখা হতে সদর ঘাটে বদলি করে কতৃপক্ষ কিন্তু তিনি আবারও অসদ উপায়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর হিসাব বিভাগের বিল শাখায় যোগদান করেন। তার বিরুদ্ধে সদর ঘাটে থাকাকালীন সময়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা হয়। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ থাকার পরেও কর্তৃপক্ষ তাকে আবারও হিসাব বিভাগের বিল শাখার মত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বদলি করে আনেন। এই বদলীর পেছনে মোটা অংকের টাকা লেনদেন হয়েছে বলে তারা মনে করছেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য হিসাব সহকারী আনোয়ার হোসেনের অফিসে গিয়ে তাকে সিটে পাওয়া যায়নি।