ঢাকা ০২:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
সরকারি নথি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে: ভূমি উপদেষ্টা সিরাজদিখানে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিল মুন্সীগঞ্জে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি ও সাবেক নেত্রীবৃন্দের স্বরণে দোয়া ও আলোচনা সভা টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে মুক্তিযোদ্ধা দলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন গাজীপুরে চাঁদার দাবিতে বাড়ি ঘর ভাংচুরের অভিযোগ গোপালগঞ্জের হালিমের কথায় চলছে নন্দী পাড়া ভুমি অফিস গাজীপুরে StepUp অ্যাপ- এর প্রশিক্ষণ এবং কর্মশালা অনুষ্ঠিত আদমদীঘিতে মাদকসেবনের দায়ে চার জনকে ভ্রাম্যমাণ দিল ইউএনও আগরতলায় হাইকমিশনে হামলায় বাংলাদেশের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া গাজীপুরে অনুর্ধ ১৭ ফুটবল খেলায় বিকেএসপি ২-১ গোলে হারালো গাজীপুরকে
যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন প্রস্তাব

রাজনীতিতে সংলাপের আবহ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন সংলাপের প্রস্তাবে নমনীয় দেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন সংলাপে সরকারের আপত্তি নেই বলে মন্তব্য করেছেন। তবে কার সঙ্গে সংলাপ হবে সে বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলে জানান। একই বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, বিএনপি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই চিঠির বিষয়ে জানাবে।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত ও দলটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মাশরুর মাওলা বলেছেন, সংলাপ হলে জাতীয় পার্টি যোগ দেবে। তবে সংলাপের উদ্যোগটি সরকারকেই নিতে হবে।

সোমবার আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়ে শর্তহীন সংলাপের বসার আহ্বান জানায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তার চিঠি ঢাকার মার্কিন দূতাবাস দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেয়।

মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শর্তহীন সংলাপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানের বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাওয়া হয় তার কাছে। জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সংলাপে আপত্তি নেই। আমরা গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চাই না। গণতন্ত্র সমুন্নত করতে যা যা করা দরকার আমরা তাই করব। সেখানে যদি সংলাপের প্রয়োজন হয় আমরা সেটা করব। কিন্তু কার সঙ্গে করব, সেটা বিবেচনার বিষয় আছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ সময় সংলাপ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ট্রাম্প সাহেব আর বাইডেন সাহেব যদি সংলাপ করেন, আমিও রাজি।

বন্ধু দেশগুলো কোনো ভালো পরামর্শ দিলে সরকার সেটাকে আমলে নেয় জানিয়ে মোমেন বলেন, সবাই নিজ নিজ মতামত দিচ্ছেন। আমরা এটা মাইন্ড করছি না। আমাদের বন্ধু দেশ যদি আমাদের কোনো পরামর্শ দেয় আমরা ওটাকে খুব ভালোভাবে নেই, সেটাকে মূল্যায়ন করি। দেশের মঙ্গলের জন্য আমরা সেটাকে গ্রহণ করি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ রকম পরামর্শ বহু আসে। আসুক, আমরা দেখি পরামর্শ যেগুলো আসে সেগুলো প্রয়োগ করা যায় কিনা, বাস্তবতা দেখতে হবে। ডিএসএ’র (ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন) ক্ষেত্রে বিদেশিরা বলেছেন, আমরা ওটা গ্রহণ করেছি। আমরা খুব বাস্তবসম্মত দেশ, খুব বাস্তববাদী সরকার। মানুষের সত্যিকারের কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা আমরা গ্রহণের চেষ্টা করি।

দেশের তিন রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সমঝোতার উদ্যোগ নিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ওদের জিজ্ঞেস করেন। তারা কি কারণে করেছে তাদের জিজ্ঞেস করেন। তারা ভালো উত্তর দিতে পারবেন। আওয়ামী লীগ দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে চায়। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যেন কোথাও বিঘিœত না হয়। আগেও বিএনপি সরকার এবং তাদের উত্তরসূরিরা মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকার নষ্ট করেছে।

সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ভলকার টুর্কের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উনাকে বলেন উনার দেশে বন্দিকে, অপরাধীকে, দণ্ডিত অপরাধীকে অন্য দেশে পাঠায় কিনা?

দেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দলের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বানকে গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছে বিএনপি। এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই চিঠির বিষয়ে জানাবে। সেটি তাদের চিঠির মাধ্যমেই হোক, আর যেভাবেই হোক।

তিনি বলেন, ওরা (মার্কিনিরা) চেষ্টা করছে বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে। মনে হচ্ছে এটা তাদের এই মুহূর্তের উদ্দেশ্য। দলের এই অন্যতম নীতিনির্ধারক বলেন, যা-ই হোক, বিএনপি সব সময়ই সংলাপ পছন্দ করে। কিন্তু সেই সংলাপ হতে হবে যৌক্তিক তথা রিলেভেন্ট বিষয় নিয়ে। আর সেজন্য একটা উপযোগী পরিবেশও দরকার। আমাদের দলের পক্ষ থেকে যারা কথা বলবেন কিংবা সংলাপে অংশ নেবেন তারা প্রায় সবাই কারান্তরীণ। বেশিরভাগ সিনিয়র নেতাকর্মীকেই বর্তমানে মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। কারাগারের ভেতরেও তাদের অত্যন্ত মানবেতরভাবে রাখা হয়েছে। সারা দেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর ‘ক্র্যাকডাউন’ চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যাওয়ার পর এখনো পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীর কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এমন একটা শ্বাস-রুদ্ধকর অবস্থায় সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কারাগারে বন্দি করে রেখে একটি একতরফা নির্বাচনের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এজন্য তারা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণারও পাঁয়তারা করছে। এই অবস্থায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলাপ-আলোচনা শেষে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এটুকু বলা যায়, বিএনপি এ ব্যাপারে জানাবে।

তবে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সংলাপের বিষয়ে তারাও ইতিবাচক। তার আগে কারাগারে থাকা সিনিয়র নেতাদের মুক্তি চায় দলটি। একইসঙ্গে যেসব দাবিতে চলমান আন্দোলন চলছে তা-ও বাস্তবায়ন চায়। দলটি এসব দাবিকে শর্ত হিসাবে মনে করে না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বানের বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত ও দলটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মাশরুর মাওলা যুগান্তরকে বলেন, সংলাপ আমরা অবশ্যই চাই। আমরা এতে যোগও দেব। কিন্তু সংলাপের উদ্যোগটি নিতে হবে সরকারকে।

এদিকে শর্তহীন সংলাপ করতে হলে বিএনপিকে সরকার পতনের একদফা প্রত্যাহার করতে হবে বলে উল্লে­খ করেছেন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা রাশেদ খান মেনন। তিনি আরও বলেছেন, বিএনপিকে একদফা প্রত্যাহারের পাশাপাশি সহিংসতা পরিত্যাগ করতে হবে। মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ১৪ দলীয় জোট আয়োজিত ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ সমাবেশে এসব কথা বলেন রাশেদ খান মেনন।

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র সোমবার বলেছেন, রাষ্ট্রদূত (পিটার) হাস আসন্ন নির্বাচনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অনুধাবনের লক্ষ্যে বৈঠকে বসার জন্য তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা সব পক্ষকে সহিংসতা পরিহার এবং সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান।

সংলাপের সঙ্গে তফশিলের কোনো সম্পর্ক নেই- অ্যাটর্নি জেনারেল : দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার সঙ্গে সংলাপের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার মতে, সংলাপ যে কোনো সময় হতে পারে। মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে তফশিল ঘোষণা করা। সংলাপের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাজ হচ্ছে নির্বাচন পরিচালনা করা, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা। সংবিধান অনুযায়ী জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে হবে সে অনুযায়ী তাদের নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করতে হবে। কোনো কারণে যদি একটা বা দুটো উপনির্বাচন করতে হয় সে কারণে তাদের হাতে সময় রাখতে হবে। সেটাও এ সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। এ কারণে হাতে কয়েকদিন সময় রেখে এটা করতে হবে।

তফশিল ঘোষণা অতি সন্নিকটে উলে­খ করে অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন বলেন, আমি মনে করছি খুব শিগগিরই তারা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করবেন। সংলাপের সঙ্গে নির্বাচনের তফশিলের কোনো সম্পর্ক নেই। সংলাপ যে কোনো সময় হতে পারে।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

সরকারি নথি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে: ভূমি উপদেষ্টা

যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন প্রস্তাব

রাজনীতিতে সংলাপের আবহ

আপডেট টাইম : ০৫:৩১:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৩

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন সংলাপের প্রস্তাবে নমনীয় দেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন সংলাপে সরকারের আপত্তি নেই বলে মন্তব্য করেছেন। তবে কার সঙ্গে সংলাপ হবে সে বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলে জানান। একই বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, বিএনপি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই চিঠির বিষয়ে জানাবে।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত ও দলটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মাশরুর মাওলা বলেছেন, সংলাপ হলে জাতীয় পার্টি যোগ দেবে। তবে সংলাপের উদ্যোগটি সরকারকেই নিতে হবে।

সোমবার আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়ে শর্তহীন সংলাপের বসার আহ্বান জানায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তার চিঠি ঢাকার মার্কিন দূতাবাস দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেয়।

মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শর্তহীন সংলাপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানের বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাওয়া হয় তার কাছে। জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সংলাপে আপত্তি নেই। আমরা গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চাই না। গণতন্ত্র সমুন্নত করতে যা যা করা দরকার আমরা তাই করব। সেখানে যদি সংলাপের প্রয়োজন হয় আমরা সেটা করব। কিন্তু কার সঙ্গে করব, সেটা বিবেচনার বিষয় আছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ সময় সংলাপ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ট্রাম্প সাহেব আর বাইডেন সাহেব যদি সংলাপ করেন, আমিও রাজি।

বন্ধু দেশগুলো কোনো ভালো পরামর্শ দিলে সরকার সেটাকে আমলে নেয় জানিয়ে মোমেন বলেন, সবাই নিজ নিজ মতামত দিচ্ছেন। আমরা এটা মাইন্ড করছি না। আমাদের বন্ধু দেশ যদি আমাদের কোনো পরামর্শ দেয় আমরা ওটাকে খুব ভালোভাবে নেই, সেটাকে মূল্যায়ন করি। দেশের মঙ্গলের জন্য আমরা সেটাকে গ্রহণ করি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ রকম পরামর্শ বহু আসে। আসুক, আমরা দেখি পরামর্শ যেগুলো আসে সেগুলো প্রয়োগ করা যায় কিনা, বাস্তবতা দেখতে হবে। ডিএসএ’র (ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন) ক্ষেত্রে বিদেশিরা বলেছেন, আমরা ওটা গ্রহণ করেছি। আমরা খুব বাস্তবসম্মত দেশ, খুব বাস্তববাদী সরকার। মানুষের সত্যিকারের কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা আমরা গ্রহণের চেষ্টা করি।

দেশের তিন রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সমঝোতার উদ্যোগ নিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ওদের জিজ্ঞেস করেন। তারা কি কারণে করেছে তাদের জিজ্ঞেস করেন। তারা ভালো উত্তর দিতে পারবেন। আওয়ামী লীগ দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে চায়। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যেন কোথাও বিঘিœত না হয়। আগেও বিএনপি সরকার এবং তাদের উত্তরসূরিরা মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকার নষ্ট করেছে।

সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ভলকার টুর্কের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উনাকে বলেন উনার দেশে বন্দিকে, অপরাধীকে, দণ্ডিত অপরাধীকে অন্য দেশে পাঠায় কিনা?

দেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দলের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বানকে গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছে বিএনপি। এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই চিঠির বিষয়ে জানাবে। সেটি তাদের চিঠির মাধ্যমেই হোক, আর যেভাবেই হোক।

তিনি বলেন, ওরা (মার্কিনিরা) চেষ্টা করছে বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে। মনে হচ্ছে এটা তাদের এই মুহূর্তের উদ্দেশ্য। দলের এই অন্যতম নীতিনির্ধারক বলেন, যা-ই হোক, বিএনপি সব সময়ই সংলাপ পছন্দ করে। কিন্তু সেই সংলাপ হতে হবে যৌক্তিক তথা রিলেভেন্ট বিষয় নিয়ে। আর সেজন্য একটা উপযোগী পরিবেশও দরকার। আমাদের দলের পক্ষ থেকে যারা কথা বলবেন কিংবা সংলাপে অংশ নেবেন তারা প্রায় সবাই কারান্তরীণ। বেশিরভাগ সিনিয়র নেতাকর্মীকেই বর্তমানে মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। কারাগারের ভেতরেও তাদের অত্যন্ত মানবেতরভাবে রাখা হয়েছে। সারা দেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর ‘ক্র্যাকডাউন’ চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যাওয়ার পর এখনো পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীর কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এমন একটা শ্বাস-রুদ্ধকর অবস্থায় সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কারাগারে বন্দি করে রেখে একটি একতরফা নির্বাচনের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এজন্য তারা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণারও পাঁয়তারা করছে। এই অবস্থায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলাপ-আলোচনা শেষে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এটুকু বলা যায়, বিএনপি এ ব্যাপারে জানাবে।

তবে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সংলাপের বিষয়ে তারাও ইতিবাচক। তার আগে কারাগারে থাকা সিনিয়র নেতাদের মুক্তি চায় দলটি। একইসঙ্গে যেসব দাবিতে চলমান আন্দোলন চলছে তা-ও বাস্তবায়ন চায়। দলটি এসব দাবিকে শর্ত হিসাবে মনে করে না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বানের বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত ও দলটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মাশরুর মাওলা যুগান্তরকে বলেন, সংলাপ আমরা অবশ্যই চাই। আমরা এতে যোগও দেব। কিন্তু সংলাপের উদ্যোগটি নিতে হবে সরকারকে।

এদিকে শর্তহীন সংলাপ করতে হলে বিএনপিকে সরকার পতনের একদফা প্রত্যাহার করতে হবে বলে উল্লে­খ করেছেন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা রাশেদ খান মেনন। তিনি আরও বলেছেন, বিএনপিকে একদফা প্রত্যাহারের পাশাপাশি সহিংসতা পরিত্যাগ করতে হবে। মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ১৪ দলীয় জোট আয়োজিত ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ সমাবেশে এসব কথা বলেন রাশেদ খান মেনন।

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র সোমবার বলেছেন, রাষ্ট্রদূত (পিটার) হাস আসন্ন নির্বাচনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অনুধাবনের লক্ষ্যে বৈঠকে বসার জন্য তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা সব পক্ষকে সহিংসতা পরিহার এবং সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান।

সংলাপের সঙ্গে তফশিলের কোনো সম্পর্ক নেই- অ্যাটর্নি জেনারেল : দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার সঙ্গে সংলাপের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার মতে, সংলাপ যে কোনো সময় হতে পারে। মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে তফশিল ঘোষণা করা। সংলাপের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাজ হচ্ছে নির্বাচন পরিচালনা করা, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা। সংবিধান অনুযায়ী জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে হবে সে অনুযায়ী তাদের নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করতে হবে। কোনো কারণে যদি একটা বা দুটো উপনির্বাচন করতে হয় সে কারণে তাদের হাতে সময় রাখতে হবে। সেটাও এ সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। এ কারণে হাতে কয়েকদিন সময় রেখে এটা করতে হবে।

তফশিল ঘোষণা অতি সন্নিকটে উলে­খ করে অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন বলেন, আমি মনে করছি খুব শিগগিরই তারা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করবেন। সংলাপের সঙ্গে নির্বাচনের তফশিলের কোনো সম্পর্ক নেই। সংলাপ যে কোনো সময় হতে পারে।