বিশেষ প্রতিবেদক :
সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে প্রকাশ্যে লেনদেন হচ্ছে ঘুষ। কেনাকাটায় চলছে পুকুর চুরি, পণ্যের নামে চলছে কমিশন ব্যানিজ্য। এখানে বোবা গরু-ছাগল, মহিষ, হাসঁ-মুরগির খাবারের জন্য বরাদ্দ অর্থ পিয়ন থেকে কর্মকর্তারা ভাগভাটোয়ারা করে খেয়ে ফেলে। এরা পশুর চেয়েও অধম। প্রতিষ্ঠানটিতে ৩ কোটি টাকার মেশিন ১৩ কোটি টাকায় কেনা হয়। সক্ষমতা প্রকল্পে ভূয়া বিল-ভাউচার দিয়ে ৫ কোটি টাকা আতœসাতের ঘটনাও ধরা পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর অফিস-মন্ত্রী-সচিবের নাম ভাঙ্গিয়ে এলডিপিপি প্রকল্পের ৫ হাজার কোটি টাকা থেকে প্রনোদনা হিসেবে ১ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা তদন্তে প্রমানিত হয়েছে ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদারের বিরুদ্ধে। এখানে চুনোপুটি থেকে রাগব বোয়ালরা দুর্নীতিতে বেশ স্মার্ট। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক পদে (ডিজি) ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতি আর অনিয়মের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। তদবির ও বিপুল অর্থের মাধ্যমে তিনি সিনিয়রদের ডিঙ্গিয়ে মহাপরিচালকের পদ ভাগিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলে বেড়ান গোপালগঞ্জের সন্তান ও প্রধানমন্ত্রীর ভোটার ও স্নেহধন্য পরিচয় দিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠানটি এক মূর্তিমান আতংক হয়ে ওঠেছেন। কাউকে তিনি তুয়াক্কা করছেন না। তার দাপটে থমথমে অবস্থা প্রতিষ্ঠানটিতে।
প্রয়োজন না থাকলেও জলবল নিয়োগের নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর অফিস-মন্ত্রী-সচিবদের নাম ভাঙ্গিয়ে এলডিপিপি প্রকল্পের ৫ হাজার কোটি টাকা হতে প্রণোদনার ১ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার। তার অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলায় একাধিক কর্মকর্তার গায়ে হাত তুলেছেন। তিনি বিএনপি-জামায়াতের কর্মকর্তাদের পদ-পদন্নতি দিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটি জামায়াত-বিএনপির আখড়ায় পরিণত করছেন। বদলি বানিজ্যে তিনি বেশ পটু। সকল প্রকল্প থেকে তিনি কমিশন নিচ্ছেন। পশুপাখির খাদ্য, ঔষধ-মেশিনারিজ থেকে শুরু সব কেনাকাটায় কমিশন নিচ্ছেন তিনি। প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছেন ডিজির একটি সিন্ডিকেট। অন্যদিকে আওয়ামীপন্থী ভালো কর্মকর্তাদের তিনি আপদ হিসেবে দুর্গম এলাকায় বদলি করে দিচ্ছেন। ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হওয়ার আগে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সক্ষমতা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। তিনি ২০ কোটি টাকার প্রকল্পে আসবাবপত্র, কম্পিউটার, এসি, কোল্ডস্টরেজ কেনার ভূয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে ৫ কোটি টাকা তছরূপ করেন। প্রকল্প শেষে এসব যন্ত্রপাতির কোনো হুদিস পাওয়া যায়নি। ডা: মো: এমদাদুল হক তালুকদার পরিচালক প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা সময়েও তিনি দুর্নীতি ও লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি তার অবসর যাওয়ার কথা। তার দুর্নীতির কথা আকাশে-বাতাসে ছড়াচ্ছে। তাই দুর্নীতির এই গডফাদার প্রায় দেড় কছরে নেতা ধরেও তিনি স্থায়ী পদে বসতে পারেননি।
বিশেষ এলাকার পরিচিয় দিয়ে আবার ডিজি হওয়ার জন্য দৌড়ঝাপ করছেন। চুক্তি ভিক্তিক ডিজি হতে ধর্না দিচ্ছে বিভিন্ন জনের কাছে। উড়াচ্ছেন টাকা। তার বিরুদ্ধে একাধিক মানহানীর মামলাা ও ফৌজদারি মামলা চলমান রয়েছে। তার দুর্নীতির কথা জানার পর বর্তমান প্রভাবশালী মন্ত্রী আব্দুর রহমান ডিজি ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদারকে পূনরায় ডিজি না করার কথা বলে দিয়েছেন- বলে জানা গেছে। জানা যায়, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমে পিএস ড. আবু নাঈম মোহাম্মদ আবদুছ ছুবুর এর ক্ষমতা ব্যবহার করে র্নিদ্বিধায় সব ধরনের অপকর্ম, লুটপাট করেছেন ডা: মো:এমদাদুল হক তালুকদারের। ডিজির বিরুদ্ধে একাধিক সংবাদ মাধ্যম্যে তার অপকর্ম ছাপা হওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তিনি ধরা ছোঁয়ার উপরে উটে গেছেন। তাই প্রতিষ্ঠানটিতে দুর্নীতি মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছে। ডিজির ডান হাত হিসেবে পরিচিত মলয় কুমার সুর পরিচালক (পরিকল্পনা) বার্ষিক কেনাকাটা, নিয়োগ, সকল প্রকল্প থেকে ডিজির নামে কমিশন নিয়েছেন। তিনি কেন্দ্রীয় ঔষাধাগারে দায়িত্ব পালন কালে কোটি কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ রয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা: মো:এমদাদুল হক তালুকদারের স্ত্রী সাবেক শ্রীনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: হাসিনা নার্গিসও দুর্নীতি কম যান না। কর্মচারিদের ৩৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার প্রমাণ পেয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ জন্য তার পেনশনের অর্থ প্রদান বন্ধ রাখা হয়েছে। তখন ডা:মো:এমদাদুল হক একই উপজেলায় ভেটিরিনারী সার্জন হিসাবে কর্মরত ছিলেন। শুধু তার স্ত্রী নয়, তার সন্তানরাও দুর্নীতির অর্থের স্বর্গে বসবাস করছে। ডা: মো:এমদাদুল হক, স্ত্রী, সন্তান ও নিকট আত্বিয়ের নামে-বেনামে কোটি টাকা ব্যাংকে জমা রেখেছেন। তার বাড়ি-গাড়ি-সবই আলিসান। তার অসংখ্য ফ্ল্যাট- প্লট, পুকুর-খামার ও ধানের জমি রয়েছে। সরকারী বিধি ভংগের প্রতিযোগিতা চলছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে। আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে বিধি ভংগ করে নিজের অফিস আদেশে জনবল নিয়োগ দিচ্ছেন মহাপরিচালক নিজেই।
এ ক্ষেত্রে সেবাদানকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ ক্ষুন্ন হলেও সেটি দেখার যেন কেউ নেই। মহাপরিচালকের ইচ্ছানুয়ায়ী জনবল নিয়োগ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছে সেবাদানকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ উঠেছে যে জনপ্রতি ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা হারে ঘুষ নিয়ে মহাপরিচালক অনভিজ্ঞ জনবল নিয়োগ দিয়েছেন। এর মধ্যে ৮০ জন হচ্ছে তার আত্বিয়-স্বজন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়নাধীন ঢাকা, রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ , ফরিদপুর,মাদারীপুর, শরিয়তপুর ও গোপালগঞ্জ জেলায় নদী বিধৌদিত চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন শীষক প্রকল্পের পিডি নিয়োগে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি করার অভিযোগ উঠেছে। পিডি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তিনি পিডি প্রতি এক কোটি করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এটা এখান খামারবাড়ীতে টপ সিক্রেট হয়ে ওঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি সিনিয়র কর্মকর্তারা দুনীর্তিবাজ ডিজির প্রসারণ দাবী করেছেন। এরমধ্যে মহাপরিচালক ডা: মো:এমদাদুল হক তালুকদারের অপসারণ চেয়ে মানববন্ধ ও কর্মবিরতি পালন করেছেন কর্মকর্তারা