নাদিম আহমেদ অনিক :
“সড়কে নিরাপত্তা চাই, বাঁচার মতো বাঁচতে চাই” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে পোষ্টার হাতে নিয়ে নিরাপদ সড়কের দাবীতে নওগাঁয় অবস্থান কর্মসূচী করেছে ফাতেমা আফরিন (ছোঁয়া) নামে ১০ বছর বয়সী স্কুল পড়ুয়া এক শিশু শিক্ষার্থী।
রোববার (২১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ঘন্টাব্যাপী শহরের তাজের মোড় ও ব্রীজের মোড়ে সে এই অবস্থান করে। ওই শিক্ষার্থী নওগাঁ সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী।
এসময় শিক্ষার্থীর হাতে থাকা পোস্টারে লেখা ছিল ‘সড়কে নিরাপত্তা চাই, বাঁচার মতো বাঁচতে চাই, দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রাফিক আইন প্রয়োগ চাই’। এসময় স্থানীয় পথচারীরাও এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
শামীম নামে এক পথচারী বলেন, এই বয়সে এমন শিশুটির এমন সচেতনতাবোধকে শ্রোদ্ধা জানাই। আমরা গর্বিত এমন শিশু আমার শহরে থাকে।
সুরাইয়া নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী জানান, বয়স বড় বিষয় নয়, এই শিশুটির কাছ থেকেও আমার শিখার অনেক কিছু আছে। তার এ পদক্ষেপকে স্বাগতম জানাই।
শিশু শিক্ষার্থী ছোঁয়া বলে, আমি এবং আমার বাবা নওগাঁ-সহ পুরো বাংলাদেশে অসংখ্য সড়ক দুর্ঘটনা দেখেছি। আমার বাবা একজন সচেতন নাগরিক। কয়েকদিন আগে নওগাঁয় ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনায় দুজনার মৃত্যু দেখে আমার খুব কষ্ট হয়েছে। রাস্তায় বের হলে বা স্কুলে যাওয়ার পথে আবার বাড়িতে মা-বাবার কাছে ফিরতে পারবো কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নাই। প্রতিদিন এত মৃত্যুর খবর দেখে খুবই কষ্ট পাই, ভয়ও লাগে। আমি চাই আমার এই কর্মসূচির মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশের মানুষকে সচেতন করার জন্য চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে স্কুল-পড়ুয়া শিশু শিক্ষার্থী ছোঁয়ার বাবা সংগীত শিল্পী খাদেমুল ইসলাম ক্যাপ্টেন বলেন, গত ১৮ এপ্রিল সুনামগঞ্জের ছাতকের সুরমা ব্রিজ এলাকায় জনপ্রিয় গানের গীতিকার, সুরকার শিল্পী মতিউর রহমান হাসান ওরফে পাগল হাসান মারা যান সড়ক দুর্ঘটনায়। পাগল হাসান আমার সহকর্মী ও বন্ধু ছিলেন। এর আগে ১৭ এপ্রিল নওগাঁ শহরের ইয়াদ আলীর মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় এনামুল হক ও বৃষ্টি আক্তার নামের দম্পত্তি। আর বেঁচে যায় তাদের ৫ বছরের শিশু জুনাইদ ইসলাম। এই ঘটনাগুলো আমার মেয়ের মনে মারাত্মকভাবে দাগ কেটে যায়।
মেয়েটি আমার এত মৃত্যুর খবর প্রতিদিন শুনে নিজেকে স্থির রাখতে পারছেনা। যার কারণেই সে বলেছে, আব্বু আমি নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় দাঁড়াতে চাই। মেয়ের এই মহৎ ও যৌক্তিক চাওয়াকে না বলতে পারিনি। তাই পুরো সমর্থন জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আজ আমার ছোট্ট মেয়েটা একাই যেভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিরাপদ সড়কের দাবি করছে ঠিক সেভাবে দেশের সবাই যদি এমন করে সচেতন হতো ও দাবিগুলো তুলে ধরতো, তবে প্রতিদিন এমন প্রাণহানির মত ঘটনা অনেকটাই কমিয়ে আসতো।
মূলত আমার উদ্দেশ্য একটিই সড়কের নিরাপত্তা। বেপরোয়া ড্রাইভ না করে বাংলাদেশ সরকারের ট্রাফিক আইন মেনে চলা। তাছাড়া ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন করতে বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগণ, যানবাহন চালক ও মালিকদের একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
এই বয়সে এমন দাবি ও সচেতনতাবোধের কারণে দেশ জুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে ছোঁয়ার এই কর্মসূচী। ছোঁয়ার এ কর্মকান্ডকে স্বাগত জানিয়ে সবাইকে এক হয়ে সচেতনতা ছড়াতে পারলেই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব বলে মনে করেন নওগাঁর সচেতন মহল।