ঢাকা ১২:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে চরফ্যাশন ও মনপুরা আসছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল ইসলাম নয়ন রূপনগর–পল্লবী থানা কমিটি: ত্যাগীদের বঞ্চনা, বিতর্কিতদের দাপট জুলাই হত্যা মামলার আসামিকে প্রত্যায়ন দিলেন জামায়াতের আমির মাগুরা মহম্মদপুরে শিক্ষক আ. হান্নানের বিরুদ্ধে শিশু যৌন নিপীড়নের অভিযোগে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন নারী সাংবাদিকতার এক আলোকবর্তিকা শেখ হাসিনাকে কোনো দেশ গ্রহণ করেননি ভারত করেছে : আলতাফ হোসেন চৌধুরী গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হালিমের পাহাড় সমান দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে না কেন? সিরাজদিখানে রাতের অধারে সরকারি গাছ কাটার অভিযোগ বরগুনায় বিভিন্ন দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত ‘মব-সন্ত্রাস’ বন্ধসহ চার দাবিতে গাইবান্ধায় সিপিবির বিক্ষোভ

নওগাঁয় স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদন্ড

নাদিম আহমেদ অনিক-

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় স্ত্রীকে হত্যা মামলায় স্বামী সালাউদ্দিন ওরফে টনির (৩৫) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত । একই সঙ্গে তাঁকে ৫০ হাজার টাকার অর্থদন্ডের রায় প্রদান করা হয়েছে।

সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে নওগাঁর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু শামীম আজাদ এ রায় দেন।

মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের আজিজার রহমানের ছেলে। রায় ঘোষণার সময় সালাউদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আব্দুল খালেক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আদালত ও মামলার এজহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে নিয়ামতপুর উপজেলার ধানসা গ্রামের আবু কালামের মেয়ে তুকাজ্জেবার (২৪) সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের সালাউদ্দিনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই সালাউদ্দিন তুকাজ্জেবার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন । ২০২০ সালের ২৯ জুন তুকাজ্জেবা স্বামী সালাউদ্দিনকে নিয়ে বাবার বাড়ি নিয়ামতপুরের ধানসা গ্রামে বেড়াতে আসেন। পারিবারিক কলহের জেরে শ্বশুড়বাড়িতে থাকা অবস্থায় ১ জুলাই সালাউদ্দিন তাঁর স্ত্রী তুকাজ্জেবার গলায় কাঁচি দিয়ে খুঁচিয়ে গুরুত্বরভাবে জখম করে। ওই দিন সকাল সাড়ে ৫টার দিকে তুকাজ্জেবা ও সালাউদ্দিনের ঘর থেকে চিৎকারের শব্দ পেয়ে তুকাজ্জেবার বাবা ও মা বাইরে থেকে ঘরের দরজা খোলার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে প্রতিবেশি রবিউল ইসলাম লাথি মেরে দরজা ভেঙ্গে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে তুকাজ্জেবাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায়। এ সময় সালাউদ্দিনের হাতে কাপড় কাটার কাঁচি দেখতে পায় তাঁরা। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তুকাজ্জেবাকে নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। স্ত্রীকে আহত করে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন সালাউদ্দিনকে আটক করে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।

এ ঘটনায় নিহত তুকাজ্জেবার বাবা আবু কালাম বাদীয় হয়ে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে নিয়ামতপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা ২০২২ সালের ২২ জুন আদালতে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন। রাষ্ট্রপক্ষের মোট ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালতে ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের দীর্ঘ সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় দোষী নওগাঁর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু শামীম আজাদ আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন। একই সঙ্গে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি শুনানি করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আব্দুল খালেক এবং আসামিপক্ষে মামলাটি শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আতিকুর রহমান।

সরকারি কৌঁসুলি আব্দুল খালেক বলেন, সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করেছেন। রায়ে হাইকোর্ট বিভাগে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা সাপেক্ষে আসামি সালাউদ্দিনকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। এ রায় হত্যা মামলার ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করেন এই আইনজীবী।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে চরফ্যাশন ও মনপুরা আসছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল ইসলাম নয়ন

নওগাঁয় স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদন্ড

আপডেট টাইম : ০৪:১০:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪

নাদিম আহমেদ অনিক-

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় স্ত্রীকে হত্যা মামলায় স্বামী সালাউদ্দিন ওরফে টনির (৩৫) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত । একই সঙ্গে তাঁকে ৫০ হাজার টাকার অর্থদন্ডের রায় প্রদান করা হয়েছে।

সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে নওগাঁর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু শামীম আজাদ এ রায় দেন।

মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের আজিজার রহমানের ছেলে। রায় ঘোষণার সময় সালাউদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আব্দুল খালেক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আদালত ও মামলার এজহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে নিয়ামতপুর উপজেলার ধানসা গ্রামের আবু কালামের মেয়ে তুকাজ্জেবার (২৪) সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের সালাউদ্দিনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই সালাউদ্দিন তুকাজ্জেবার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন । ২০২০ সালের ২৯ জুন তুকাজ্জেবা স্বামী সালাউদ্দিনকে নিয়ে বাবার বাড়ি নিয়ামতপুরের ধানসা গ্রামে বেড়াতে আসেন। পারিবারিক কলহের জেরে শ্বশুড়বাড়িতে থাকা অবস্থায় ১ জুলাই সালাউদ্দিন তাঁর স্ত্রী তুকাজ্জেবার গলায় কাঁচি দিয়ে খুঁচিয়ে গুরুত্বরভাবে জখম করে। ওই দিন সকাল সাড়ে ৫টার দিকে তুকাজ্জেবা ও সালাউদ্দিনের ঘর থেকে চিৎকারের শব্দ পেয়ে তুকাজ্জেবার বাবা ও মা বাইরে থেকে ঘরের দরজা খোলার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে প্রতিবেশি রবিউল ইসলাম লাথি মেরে দরজা ভেঙ্গে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে তুকাজ্জেবাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায়। এ সময় সালাউদ্দিনের হাতে কাপড় কাটার কাঁচি দেখতে পায় তাঁরা। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তুকাজ্জেবাকে নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। স্ত্রীকে আহত করে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন সালাউদ্দিনকে আটক করে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।

এ ঘটনায় নিহত তুকাজ্জেবার বাবা আবু কালাম বাদীয় হয়ে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে নিয়ামতপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা ২০২২ সালের ২২ জুন আদালতে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন। রাষ্ট্রপক্ষের মোট ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালতে ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের দীর্ঘ সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় দোষী নওগাঁর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু শামীম আজাদ আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন। একই সঙ্গে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি শুনানি করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আব্দুল খালেক এবং আসামিপক্ষে মামলাটি শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আতিকুর রহমান।

সরকারি কৌঁসুলি আব্দুল খালেক বলেন, সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করেছেন। রায়ে হাইকোর্ট বিভাগে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা সাপেক্ষে আসামি সালাউদ্দিনকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। এ রায় হত্যা মামলার ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করেন এই আইনজীবী।