ফরিদপুর প্রতিনিধি :
মোবাইলে আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইলিং করে দিনের পর দিন এক কিশোরীকে একাধিক যুবকের ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় চলছে মধুখালীতে। দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে প্রভাবশালী মহল বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করলেও বিষয়টি মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ঘটনার ১১ দিন পর পাঁচজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে থানায়। তবে মামলা রুজুর দু’দিন পরেও মেয়েটিকে হেফাজতে নিয়ে তার ফরেনসিক টেস্ট কিংবা জবানবন্দি কিছুই নেয়া হচ্ছেনা এখনো। পুলিশ বলছে, মামলা হলেও মেয়েটিকে পাওয়া যাচ্ছেনা তার ঠিকানায়। অন্যদিকে, পাঁচ যুবককে মামলার আসামি করা হলেও এখনো তাদের গ্রেফতার করা যায়নি। মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এসে ওষুধ কোম্পানির দুই প্রতিনিধির খপ্পড়ে পড়ে মেয়েটি সংঘবদ্ধ এই ধর্ষণের শিকার; এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় উত্তাপ ছড়িয়েছে উপজেলার হাসপাতাল এলাকাতেও।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মে রাতে ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোরীকে উপজেলার মরিচ বাজারের একটি বাড়িতে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। এরপর মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. ইমরান হোসাইন বলেন, সেদিন রাত তিনটার পরে মেয়েটি হাসপাতালে আসে। সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পরিতোষ তখন ডিউটিতে ছিলেন। মেয়েটি প্রথমে জানায় তার পেটে ব্যাথা হয়েছে। পরে সে ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে জানালে পরিতোষ পাশের রুমে যেয়ে আমাকে ডেকে তুলে। আমি তখন মেয়েটির কাছে যেয়ে তার সমস্যা জানতে চাইলে মেয়েটি আবারো জানায়, সে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তখন আমি আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর ব্যবস্থা না থাকায় তাকে ফরিদপুরে বিএসএমএমসি হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠিয়ে দেই।
তবে মেয়েটি আর রাতে হাসপাতাল ছেড়ে ফরিদপুরে যেতে পারেনি। পরেরদিন তার হাসপাতালে অবস্থানের খবর পেয়ে তোড়জোড় শুরু হয় প্রভাবশালী মহলের। তারা তিনদিন মেয়েটিকে তাদের হেফাজতে নিয়ে সুস্থ করে তুলে। এর মাধ্যমে আলামত নষ্টেরও সুযোগ করে দেয়া হয়। তবে এরইমাঝে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে একপর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে হৈচৈ শুরু হয়। এরপর মেয়েটির এক চাচার মাধ্যমে দেড় লাখ টাকায় বিষয়টি দফারফা করা হয়। এরমধ্যে এক লাখ টাকা মেয়েটির পরিবার এবং ৪৫ হাজার টাকা মিডিয়াম্যানদের দেয়া হয়। এসময় সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদে মেয়ের পরিবার তার ধর্ষণের বিষয়টি বেমালুম চেপে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। মেয়েটির চাচা বাবুল দাবি করে, তার ভাতিজি দাদা বাড়ি গিয়েছিলো। তিনদিন পরে সে বাড়ি ফিরেছে। তবে তার সাথে ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটেনি। অন্যদিকে, মেয়েটি সাংবাদিকদের নিকট ভিডিও সাক্ষাৎকারে তাকে ধর্ষণের কথা জানালে পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসকের বক্তব্য প্রকাশ্যে এলে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। বিষয়টি গোয়েন্দাদের কানেও পৌছে। এরপর অনেকটা আইনি জটিলতা এড়াতেই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ওই কিশোরীর বাবা আছিরউদ্দিন। গত ১১ জুন রাতে মামলাটি নথিভুক্ত হয়। মামলা নং-১২।
এব্যাপারে জানতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি গতকাল পর্যন্ত মামলার কোন কার্যক্রম শুরু করতে পারেননি জানিয়ে বলেন, অন্য একটি মামলার সাক্ষী দিতে তিনি এখন বাইরে রয়েছেন। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না। মামলার কোন নথিও তিনি হাতে পাননি। তিনি এব্যাপারে থানার ওসির সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
জানতে চাইলে মধুখালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মিরাজ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, গত ১১ জুন ভুক্তভোগীর পিতা বাদী হয়ে এ ঘটনায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। পরবর্তীতে নারী ও শিশু আইনে ৫ জনকে আসামী করে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে।