ঢাকা ০৮:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
যারা চাঁদাবাজি করতে আসবে তাদের খাম্বার সাথে বেঁধে রাখবেন- মুফতী ফয়জুল করিম টাঙ্গাইলে মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নতুন কমিটি গঠিত সিরাজদিখান প্রেসক্লাবের জরুরী সভা অনুষ্ঠিত  স্টার লাইন বাসের ধাক্কায় মাইক্রোবাস উল্টে নিহত ৪ গণধিকার পরিষদ জাতীয় সরকারকে সমর্থন করে- গাজীপুরে রাশেদ খান পঞ্চগড়ে আট দফা দাবিতে চা চাষীদের মানববন্ধন গাজীপুরে কাউন্সিলরের বাড়ীতে দুর্ধর্ষ ডাকতি মির্জাগঞ্জের বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান পুনর্গঠনের দাবি মেম্বারদের কালিহাতীতে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নব কমিটির সভাপতি মফিদুল, সম্পাদক শফিক ১০ জেলা রেজিস্ট্রার সহ পদোন্নতি পাওয়া ১০ সাব রেজিস্ট্রারকে জেলা রেজিস্ট্রার পদে বদলি
আমলনামা ভয়ংকর:

ঢাকায় ফিরতে মরিয়া নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম!

রোস্তম মল্লিক :

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ বিশেষ স্থাপনা সমূহের রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রকল্পের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বর্তমানে রাজশাহী ডিভিশনে কর্মরত আছেন। সেখান থেকে ফের ইএম ডিভিশন -৪ ( সচিবালয়) বা ইএম ডিভিশন- ৭ (সংসদ ভবন) পোস্টিং পেতে জোর তদবিরে নেমেছেন বলে খবর জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গণপূর্তের মাফিয়া নির্বাহী প্রকৌশলীদের তালিকায় এক নম্বরে ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের প্রয়োজনে হয়ে যেতেন আইন প্রণেতা।
তারই অংশ হিসেবে জয়েতি প্রকল্প সাব ডিভিশন ই পরিবর্তন করে ফেলেন জাহাঙ্গীর আলম।
সাব ডিভিশন- ৩ এর প্রকল্পের কিছু অংশ কার্যাদেশ দিয়েছিলেন সাব ডিভিশন ৪ এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সজলকে। যেমন: রোজগার্ডেনের কিছু অংশসহ বেঙ্গলি স্টুডিও’র দায়িত্বে আছে উপবিভাগ ৪। অথচ নিয়ম অনুযায়ী সাইট পরিবর্তনের ক্ষমতা রয়েছে প্রধান প্রকৌশলীর ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ হচ্ছে, হিসাব শাখা তদন্ত করলে দেখা যাবে অধিকাংশ বিল ভাউচার উপসহকারী প্রকৌশলী কিংবা বিভাগীয় প্রকৌশলীর স্বাক্ষর বাকী রেখে বিল প্রদান করা হয়েছে। তথ্যমতে, রায়ের বাজার বদ্ধভূমি উপকেন্দ্র সহ আনুষঙ্গিক কাজের বিল ও জিগাতলা ২৮৮ ফ্ল্যাট ১০০০ বর্গফুট ২টি ভবনের ৮ কোটি টাকার কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারকে প্রদান করা হয়েছে। এরকম অসংখ্য বিল নিজ ক্ষমতা বলে প্রদান করেছেন বলে ডিভিশনে গুঞ্জন আছে।
অভিযোগে আরো জানা যায়, ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট, পাম্প অপারেটর, লিফট অপারেটর, সিসি ক্যামেরা অপারেটর, বড় বাবু বা হিসাব সহকারী, জেনারেটর অপারেটর পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অসংখ্য লোকজন। ই/এম বিভাগ- ২ এর অধীনে উপ বিভাগ ৩ ও ৪ এর লোকবল অধিকাংশই রাজশাহীর যা জাহাঙ্গীর আলমের আত্মীয়-স্বজন। এরা আর্থিক লেনদেনে নিয়োগ প্রাপ্ত । এর মধ্যে কিছু লোকবল কোন প্রয়োজন ছাড়াই নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তাদের বেতন ছিল দ্বিগুণ , এমনকি ঠিকাদারের অধীনস্থ লোকবল দিয়ে চালিয়েছেন বড়বাবুর/সেকশন প্রধানের দায়িত্ব, ব্যক্তিগত কাজেও ব্যবহার করতেন তাদেরকে। রাষ্ট্রের অর্থ খরচে লোকবল নিয়োগ দিয়ে করাতেন বিল ভাউচার। যদিও বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী যোগদানের পরে কয়েকজন অপ্রয়োজনীয় লোকবল চাকুরীচ্যুত করেছেন। তবে বিষয় গুলো জানার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী রাজু আহমেদকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
জাহাঙ্গীর আলম এর উপর ক্ষিপ্ত গণপূর্তি’র অধিকাংশ ঠিকাদার। জানা যায়, কোন ছোটখাটো ঠিকাদার জাহাঙ্গীর এর কাছে ভীড়তে পারতেন না। ছোটখাটো কোন ফিগারও তিনি নিতেননা। এই জন্যই ছোট ঠিকাদারের স্থান ছিল না তার কাছে। জাহাঙ্গীর আলম এর রেট ছিলো কমপক্ষে ১০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পর সবাইকে কাজ দিতেন এমনও নয়। হাতে গোনা দশ থেকে বিশ জন ঠিকাদারকে কাজ দিতেন। বাকি ঠিকাদারের কাছ থেকে নেয়া টাকা ওই পোস্টিং এ শোধ করতে পারতেন না। কারণ হিসেবে জানা যায়, এরকম অসংখ্য ঠিকাদার থেকে একই ফিগার নিতেন। সেক্ষেত্রে সবার টাকা কম কম করে শোধ করতেন। যার ফলে সব ঠিকাদারের ভেতরে ভেতরে জাহাঙ্গীর আলম এর উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম এর অধীনস্হ প্রায় একশ’ ঠিকাদার ছিলেন। এদের মধ্যে মাত্র দশ থেকে বিশ জন ঠিকাদার ছিলেন তার বাধ্যগত। এই গুটিকয়েক দুর্নীতিবাজ, নারী সাপ্লাই ঠিকাদারেরাই রুম দখল করে রাখতেন সব সময়। তার অফিস কক্ষের দরজা খোলার দায়িত্বে রাখতেন একাধিক লাঠিয়াল অফিস কর্মচারী। হাজার টাকা বকশিশ দিয়েও কেউ ভেতরে ঢোকার অনুমতি পেতেন না। সাধারণ, সৎ ও যোগ্যতা সম্পন্ন ঠিকাদাররা জাহাঙ্গীর এর রেট মোতাবেক টাকা খরচ করতে না পারায় বঞ্চিত হয়েছেন কাজ থেকে ।
গণপূর্তের দুর্নীতিবাজ নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম তার বদলির আদেশটি বাতিল করার চেষ্টা করে অবশেষে ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েননি এখনো। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অত্যাচারে অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব সহ সবাই তার উপর চরমভাবে বিরক্ত এবং ক্ষিপ্ত। কিন্তু জাহাঙ্গীর আলম নির্লজ্জের মতো বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরপাক খাচ্ছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর নিয়ে জানা যায়, তিনি ২০১২ সালে বিআইডব্লিটিএ সহকারী প্রকৌশলী ছিলেন। সেখানেও তিনি বেপরোয়া ছিলেন। সেখান থেকে সরকারি বিধি ভেঙ্গে উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই ঢাকার বিশেষ বিশেষ স্থানে ব্যক্তিগত চাহিদা পালন সহ নির্বাহী প্রকৌশলী পদায়নের দায়িত্ব পান। বিশেষ করে ইএম বিভাগ-২ মন্ত্রী পাড়ার আওতাধীন হওয়ায় জাহাঙ্গীর আলম এর দাম্ভিকতা ও অহংকার বেড়ে যায়। মন্ত্রীদের সাথে তার উঠা বসা থাকায় তিনি কাউকে তোয়াক্কা করতেন না। এই বাড়ায় তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান বিচারপতির বাসায় উঠাকালীন সময়ে কাজের গাফিলতির কারনে এবং সঠিক মানের মালামাল সরবরাহ না করায় প্রধান বিচারপতি তার প্রতি ভিষণ ক্ষিপ্ত হন। বাসযোগ্য উপযোগী না হওয়ায় এবং কাজের গুণগত মান নিম্নমানের হওয়ায় প্রধান বিচারপতি সঠিক সময়ে বাসায় উঠতে পারেননি। মূলত: প্রধান বিচারপতির ইশারায়ই এই দুর্নীতিবাজ ও নারী লোভী জাহাঙ্গীর আলমকে বদলী করা হয়।
অনুসন্ধানে আরো খবর জানা যায়, তার অধিনস্ত উপ সহকারী প্রকৌশলীদের মধ্যে দুই একজন তার কাছের ছিলেন। অন্য সব প্রকৌশলীরা তার বেপরোয়া চলাফেরা, আচরণ এবং সীমাহীন দুর্নীতি সহ্য করতেন না বলেই তাদের সামান্য ত্রুটি বিচ্যুতি খুঁজে বের করে বা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বদলির চিঠি দিতেন। এমনকি তিনি সফলও হতেন। সেই ভয়ে অন্য প্রকৌশলীরা তার অন্যায় নিরবে সহ্য করতেন। জাহাঙ্গীর আলম এর অধীনস্হ দুই জন মাত্র উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী। একজন নারী, আরেক জন পুরুষ। মন্ত্রী পাড়া জুড়িডেকশনে পুরুষ এবং দুর্বল জুড়িডেকশনে নারী প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, নারী প্রকৌশলীর এই জায়গায় দুই বছরে চারজন উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী নারীকে বদলী করা হয়। এর কারণ অনুসন্ধান করে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম এর কু-প্রস্তাব বা অন্যায় এবং দুর্নীতির কাজে রাজি না হওয়ায় তারা নিজ চেষ্টায় অন্যত্র বদলী হয়ে চলে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি উপ বিভাগ তিন এ জয়ন্তী নামের প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ পর্যায়ে প্রত্যাশি সংস্থাকে বুঝিয়ে দেয়ার পূর্বে সকল বিল সমাপ্ত করার সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ বিভাগীয় প্রকৌশলীকে যে সকল কাজ হয়নি সে সকল কাজের বিল দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে উক্ত প্রকল্পের উপ সহকারী প্রকৌশলী ও উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী থেকে দায়িত্ব বদল করে উপ বিভাগ-৪ কে হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে তিনি তার টার্গেট ফিলাপ করেন। যা গণপূর্ত’র বিধানে সাইড ডিস্টিভিশন করার এখতিয়ার শুধু মাত্র পারেন প্রধান প্রকৌশলী। বিষয়টি অনুসন্ধানে উঠে আসে যে, উপ বিভাগ চার এর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলীর সাথে তার ছিলো সখ্যতা এবং সব কাজের ভাগাভাগি সম্পর্ক। এমনকি অধিকাংশ কাজেই তাদের দুজনের ঠিকাদার ছিলো নামে মাত্র। পূর্ত ভবন বেইলি রোডের ভবনের কাজ উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী নিজেই করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
খবর নিয়ে আরো জানা যায়, যেকোন কাজের বিল দেয়ার আগে দায়িত্বরত প্রকৌশলীদের সাথে জাহাঙ্গীর আলম এর বনিবোনা না হলে তার পছন্দের প্রকৌশলীকে অর্ডার করে বিল প্রস্তাবের নির্দেশ দিতেন। সময়ের ব্যবধানে দায়িত্ব বদল করতে না পারলে দায়িত্বরত প্রকৌশলীর স্বাক্ষর বাকী রেখেই নিজ ক্ষমতা বলে ঠিকাদারকে বিল প্রদান করতেন। তার প্রমাণ হিসেবে রায়ের বাজার বধ্যভূমির উপকেন্দ্র সহ আনুষাঙ্গিক চতুর্থ আর/ এ বিলের উপ প্রকৌশলীর স্বাক্ষর বাকী রেখে ও ঝিগাতলা প্রকল্পের উপ সহকারী প্রকৌশলী এবং উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর স্বাক্ষর বাকী রেখেই বিল প্রদান করা হয়েছে। এরকম অসংখ্য বিলই দায়িত্বগত কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর ছাড়াই প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিল দুটো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তারিখ পরিবর্তন সহ বিলে সই করার পায়তারা করছেন জাহাঙ্গীর আলম।

অনুসন্ধানে আরো বেরিয়ে আসে, দুর্নীতিবাজ জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘ নয় বছর সরকারের বিশেষ বিশেষ স্থাপনা পরিচালনা করতেন উপর মহল ঠিক রেখে। ওই মহলকে ঠিক রাখতে খরচ করতে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এই অর্থ আসতো ভূয়া প্রাক্কলন এবং ভূয়া বিলের মাধ্যমে। অথচ ভবনের সমস্যা সমস্যাই থেকে যেতো। বিল প্রদান করার জন্য হিসাব শাখাটি ছিলো তার আনুগত্য। তাদের খুশি রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতেন তিনি। চেষ্টার অংশ হিসেবে হাজার হাজার ভূয়া ভাউচারে লাখ লাখ টাকার সুবিধা দিয়েছেন। এমনকি একাউন্ট শাখার কর্মচারীদের বাসায় এসির ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন এই দুর্নীতিবাজ নির্বাহী প্রকৌশলী। কাজ শেষ হবার আগেই ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশ করে নিজের ক্ষমতা বলে বিল দিয়েছেন। এছাড়াও নারী সহকর্মীরা তার সাথে কাজ করতে নিরাপদ নয় এমন অভিযোগও আছে। জাহাঙ্গীর এর ক্ষমতার দাপটে অফিসের সকাল কর্মকর্তা কর্মচারী মুখ বন্ধ করে কাজ করতেন। তার অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মতো কেউ না থাকায় একতছত্র কায়েম করে ছিলেন তিনি।

একটি বদলির আদেশ থেকে জানাগেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি গণপূর্ত ইএম বিভাগ-২, ঢাকা থেকে ইএম পিএন্ডডি বিভাগ, রাজশাহীতে পোস্টিং দেয়া হয়েছে।

এদিকে জাহাঙ্গীর আলমের ঢাকায় ফের বদলীর খবরে গণপূর্তের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। জাহাঙ্গীর আলম এর অত্যাচারে ডিভিশনের কেউ শান্তি মতো কাজ করতে পারেনি। তাকে ছাড়া ডিভিশনের সবাই ক্ষতিগ্রস্থ। একমাত্র তিনি এবং তার দুই আনুগত্য অফিসার লাভবান হয়েছেন। তিনি ছিলেন একক আধিপত্য’র অধিকারী।
গণপূর্ত’র ইএম বিভাগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাত্র চার মাস আগে জাহাঙ্গীর আলমকে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে বদলির অন্যতম কারণ ছিলো প্রধান বিচারপতির বাস ভবনে কাজের গাফিলতি এবং নারী সহকর্মীরা তার সাথে কাজ করতে নিরাপদ নয়। তবে ঢাকায় আলাদিনের চেরাগ থাকায় নাছরবান্দা জাহাঙ্গীর মোটা টাকা খরচ করে হলেও সচিবালয় ৪ বা ইএম ৭ ডিভিশনে পোস্টিং পেতে মরিয়া। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর দপ্তর সহ সম্ভাব্য সব জায়গায় আবারো তদবির শুরু করেছেন। সবার প্রশ্ন, মাত্র চার মাস আগে বদলি করা হয়েছে, কিভাবে সম্ভব ফের ঢাকায় বদলি!
অভিযোগে আরো জানা যায়, পিডব্লিউডির ইএম-২ ডিভিশনে চাকরি করে জাহাঙ্গীর আলম শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তিনি কাউকে তোয়াক্কা করেন না। তার ইচ্ছেমতো বা মনমতো কোন কর্মকর্তা না হলে তাদের বিরূদ্ধে বেনামে অভিযোগ দায়ের করে পত্রিকায় খবর প্রকাশ করিয়ে ফায়দা লুঠতেন। জিগাতলা প্রকল্পের এক হাজার বর্গফুট এর দুই টি ভবনের ৮ কোটি টাকার কাজের বিল ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশ করে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। ওই কাজের মেয়াদ শেষ হলেও মাহবুব কনস্ট্রাকশন এখনো কাজ বুঝিয়ে দিতে পারেনি। একই ভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্লাস টাওয়ারের লাইট এর মূল্য তিন গুণ বেশি দেখিয়ে এনার্জি প্লাস এর সাথে যোগসাজশ করে সেখানেও ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই কর্মকর্তা। এরকম অসংখ্য কাজ ঠিকাদারকে দিয়ে কখনো অর্ধেক আবার কখনো কাজ না করিয়েই বিল উত্তলন করেছেন অহরহ। মাত্র নয় বছর পিডাব্লিউতে চাকরি করে সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন করে জাহাঙ্গীর আলম এখন শত কোটি টাকার মালিক।
গণপূর্ত’র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম এর বিরুদ্ধে ডিভিশনে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং নারী সহকর্মীরা তার সাথে কাজ করতে নিরাপদ নয় এরকম বেশ কিছু ইস্যু নিয়ে তদন্ত চলছে। গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেলে বিষয় টি দুদক পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিআইডব্লউটিতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল নাগাদ বিডব্লিউডিতে ডিউটি না করে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে বেতন তুলেছেন বলে অভিযোগও আছে। আলাদিনের চেরাগের মতো প্রমোশনের পাশাপাশি শত কোটি টাকার ধন সম্পদের মালিকও হয়েছেন দুর্নীতিবাজ এই নির্বাহী প্রকৌশলী ।
জাহাঙ্গীর আলম ধন সম্পদ এর খবর নিয়ে জানা যায়, ঢাকার মোহাম্মদপুরে আলিশান বাড়ি, কুয়াকাটায় ও কক্সবাজারে রিসোর্ট এবং ফ্ল্যাট রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে বিঘা বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। তার সহকর্মীদের মুখ থেকে শোনা যায়, জাহাঙ্গীর এর নিজ এলাকায় এমন কোন জমির খতিয়ান নাই যে, তার জমি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম বিলাসীতা জীবন যাপন সম্পর্কে খবর নিয়ে জানা যায়, উচ্চবিলাসী এবং মনোরঞ্জনে অভ্যস্ত ব্যক্তি। সরকারি ছুটির দিন তার জন্য ঈদ। ঢাকায় থাকা অবস্থায় একেক ঠিকাদার একেক রিসোর্টে সুন্দরী, রমনী দিয়ে আনন্দ ও মনোরঞ্জন করাতেন। তিনি বোড ক্লাবে দশ লাখ টাকা খরচ করে মেম্বারশিপ নিয়েছেন এমন খবরও শোনা গেছে।
হিসাব শাখার সুবিধা বঞ্চিত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের বাধ্যগত একজন প্রকৌশলী যে পরিমাণ আর্থিক সুবিধা পেয়েছে তার ১০ গুন সুবিধা দিয়েছে হিসাব শাখার একজন কর্মচারীকে । তদন্তে এর কিছু নজিরও পাওয়া গেছে। কিন্তু বিন্দুমাত্র তথ্য্ও প্রদান করতে রাজি নয় সংঘবদ্ধ দুর্নীতিবাজ চক্র। দুর্নীতিবাজ জাহাঙ্গীর আলমের ডিভিশনে দুই জন এস্টিমেটরের পদ থাকলেও দায়িত্বে ছিল একজন। তার অতিরিক্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে যাওয়াতে উপ বিভাগ ৪ এর দায়িত্ব প্রদান করেন উক্ত উপবিভাগের সেকশনে নিয়োজিত জুনিয়র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ ফারুক হোসেন। এতে সুবিধা হয়েছে যে, সাইটে প্রাকলন প্রস্তুত করেন তিনি এবং তিনিই চেক করেন যাতে করে বেশি পরিমাণ দুর্নীতি করা যায় ।
গণপূর্ত অধিদপ্তরে খোজ নিয়ে জানা যায়, অসংখ্য নির্বাহী প্রকৌশলী আছেন এ দপ্তরে । কিন্তু কারো অফিস কক্ষের সামনে এত পরিমান ঠিকাদার অপেক্ষমান থাকতে দেখা যায়নি, যা জাহাঙ্গীর আলম এর সময় দেখা গেছে। অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর কক্ষের সামনেও এভাবে ভিড় জমাতেন না ঠিকাদাররা।

নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম এর বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে তার মুঠো ফোনে একাধিক বার কল করেও কোন জবাব মিলেনি। তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মেসেজ লিখে উত্তর জানতে চেয়েও কোন সাড়া দেননি।
জাহাঙ্গীর আলমের সাথে অনেক চেষ্টা করলেও তিনি মুখ খোলেননি। এসব বিষয়ে তিনি জড়িত কিনা সে বিষয়ে শত চেষ্টা করেও তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

যারা চাঁদাবাজি করতে আসবে তাদের খাম্বার সাথে বেঁধে রাখবেন- মুফতী ফয়জুল করিম

আমলনামা ভয়ংকর:

ঢাকায় ফিরতে মরিয়া নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম!

আপডেট টাইম : ০২:০১:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০২৪

রোস্তম মল্লিক :

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ বিশেষ স্থাপনা সমূহের রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রকল্পের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বর্তমানে রাজশাহী ডিভিশনে কর্মরত আছেন। সেখান থেকে ফের ইএম ডিভিশন -৪ ( সচিবালয়) বা ইএম ডিভিশন- ৭ (সংসদ ভবন) পোস্টিং পেতে জোর তদবিরে নেমেছেন বলে খবর জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গণপূর্তের মাফিয়া নির্বাহী প্রকৌশলীদের তালিকায় এক নম্বরে ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের প্রয়োজনে হয়ে যেতেন আইন প্রণেতা।
তারই অংশ হিসেবে জয়েতি প্রকল্প সাব ডিভিশন ই পরিবর্তন করে ফেলেন জাহাঙ্গীর আলম।
সাব ডিভিশন- ৩ এর প্রকল্পের কিছু অংশ কার্যাদেশ দিয়েছিলেন সাব ডিভিশন ৪ এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সজলকে। যেমন: রোজগার্ডেনের কিছু অংশসহ বেঙ্গলি স্টুডিও’র দায়িত্বে আছে উপবিভাগ ৪। অথচ নিয়ম অনুযায়ী সাইট পরিবর্তনের ক্ষমতা রয়েছে প্রধান প্রকৌশলীর ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ হচ্ছে, হিসাব শাখা তদন্ত করলে দেখা যাবে অধিকাংশ বিল ভাউচার উপসহকারী প্রকৌশলী কিংবা বিভাগীয় প্রকৌশলীর স্বাক্ষর বাকী রেখে বিল প্রদান করা হয়েছে। তথ্যমতে, রায়ের বাজার বদ্ধভূমি উপকেন্দ্র সহ আনুষঙ্গিক কাজের বিল ও জিগাতলা ২৮৮ ফ্ল্যাট ১০০০ বর্গফুট ২টি ভবনের ৮ কোটি টাকার কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারকে প্রদান করা হয়েছে। এরকম অসংখ্য বিল নিজ ক্ষমতা বলে প্রদান করেছেন বলে ডিভিশনে গুঞ্জন আছে।
অভিযোগে আরো জানা যায়, ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট, পাম্প অপারেটর, লিফট অপারেটর, সিসি ক্যামেরা অপারেটর, বড় বাবু বা হিসাব সহকারী, জেনারেটর অপারেটর পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অসংখ্য লোকজন। ই/এম বিভাগ- ২ এর অধীনে উপ বিভাগ ৩ ও ৪ এর লোকবল অধিকাংশই রাজশাহীর যা জাহাঙ্গীর আলমের আত্মীয়-স্বজন। এরা আর্থিক লেনদেনে নিয়োগ প্রাপ্ত । এর মধ্যে কিছু লোকবল কোন প্রয়োজন ছাড়াই নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তাদের বেতন ছিল দ্বিগুণ , এমনকি ঠিকাদারের অধীনস্থ লোকবল দিয়ে চালিয়েছেন বড়বাবুর/সেকশন প্রধানের দায়িত্ব, ব্যক্তিগত কাজেও ব্যবহার করতেন তাদেরকে। রাষ্ট্রের অর্থ খরচে লোকবল নিয়োগ দিয়ে করাতেন বিল ভাউচার। যদিও বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী যোগদানের পরে কয়েকজন অপ্রয়োজনীয় লোকবল চাকুরীচ্যুত করেছেন। তবে বিষয় গুলো জানার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী রাজু আহমেদকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
জাহাঙ্গীর আলম এর উপর ক্ষিপ্ত গণপূর্তি’র অধিকাংশ ঠিকাদার। জানা যায়, কোন ছোটখাটো ঠিকাদার জাহাঙ্গীর এর কাছে ভীড়তে পারতেন না। ছোটখাটো কোন ফিগারও তিনি নিতেননা। এই জন্যই ছোট ঠিকাদারের স্থান ছিল না তার কাছে। জাহাঙ্গীর আলম এর রেট ছিলো কমপক্ষে ১০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পর সবাইকে কাজ দিতেন এমনও নয়। হাতে গোনা দশ থেকে বিশ জন ঠিকাদারকে কাজ দিতেন। বাকি ঠিকাদারের কাছ থেকে নেয়া টাকা ওই পোস্টিং এ শোধ করতে পারতেন না। কারণ হিসেবে জানা যায়, এরকম অসংখ্য ঠিকাদার থেকে একই ফিগার নিতেন। সেক্ষেত্রে সবার টাকা কম কম করে শোধ করতেন। যার ফলে সব ঠিকাদারের ভেতরে ভেতরে জাহাঙ্গীর আলম এর উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম এর অধীনস্হ প্রায় একশ’ ঠিকাদার ছিলেন। এদের মধ্যে মাত্র দশ থেকে বিশ জন ঠিকাদার ছিলেন তার বাধ্যগত। এই গুটিকয়েক দুর্নীতিবাজ, নারী সাপ্লাই ঠিকাদারেরাই রুম দখল করে রাখতেন সব সময়। তার অফিস কক্ষের দরজা খোলার দায়িত্বে রাখতেন একাধিক লাঠিয়াল অফিস কর্মচারী। হাজার টাকা বকশিশ দিয়েও কেউ ভেতরে ঢোকার অনুমতি পেতেন না। সাধারণ, সৎ ও যোগ্যতা সম্পন্ন ঠিকাদাররা জাহাঙ্গীর এর রেট মোতাবেক টাকা খরচ করতে না পারায় বঞ্চিত হয়েছেন কাজ থেকে ।
গণপূর্তের দুর্নীতিবাজ নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম তার বদলির আদেশটি বাতিল করার চেষ্টা করে অবশেষে ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েননি এখনো। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অত্যাচারে অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব সহ সবাই তার উপর চরমভাবে বিরক্ত এবং ক্ষিপ্ত। কিন্তু জাহাঙ্গীর আলম নির্লজ্জের মতো বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরপাক খাচ্ছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর নিয়ে জানা যায়, তিনি ২০১২ সালে বিআইডব্লিটিএ সহকারী প্রকৌশলী ছিলেন। সেখানেও তিনি বেপরোয়া ছিলেন। সেখান থেকে সরকারি বিধি ভেঙ্গে উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই ঢাকার বিশেষ বিশেষ স্থানে ব্যক্তিগত চাহিদা পালন সহ নির্বাহী প্রকৌশলী পদায়নের দায়িত্ব পান। বিশেষ করে ইএম বিভাগ-২ মন্ত্রী পাড়ার আওতাধীন হওয়ায় জাহাঙ্গীর আলম এর দাম্ভিকতা ও অহংকার বেড়ে যায়। মন্ত্রীদের সাথে তার উঠা বসা থাকায় তিনি কাউকে তোয়াক্কা করতেন না। এই বাড়ায় তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান বিচারপতির বাসায় উঠাকালীন সময়ে কাজের গাফিলতির কারনে এবং সঠিক মানের মালামাল সরবরাহ না করায় প্রধান বিচারপতি তার প্রতি ভিষণ ক্ষিপ্ত হন। বাসযোগ্য উপযোগী না হওয়ায় এবং কাজের গুণগত মান নিম্নমানের হওয়ায় প্রধান বিচারপতি সঠিক সময়ে বাসায় উঠতে পারেননি। মূলত: প্রধান বিচারপতির ইশারায়ই এই দুর্নীতিবাজ ও নারী লোভী জাহাঙ্গীর আলমকে বদলী করা হয়।
অনুসন্ধানে আরো খবর জানা যায়, তার অধিনস্ত উপ সহকারী প্রকৌশলীদের মধ্যে দুই একজন তার কাছের ছিলেন। অন্য সব প্রকৌশলীরা তার বেপরোয়া চলাফেরা, আচরণ এবং সীমাহীন দুর্নীতি সহ্য করতেন না বলেই তাদের সামান্য ত্রুটি বিচ্যুতি খুঁজে বের করে বা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বদলির চিঠি দিতেন। এমনকি তিনি সফলও হতেন। সেই ভয়ে অন্য প্রকৌশলীরা তার অন্যায় নিরবে সহ্য করতেন। জাহাঙ্গীর আলম এর অধীনস্হ দুই জন মাত্র উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী। একজন নারী, আরেক জন পুরুষ। মন্ত্রী পাড়া জুড়িডেকশনে পুরুষ এবং দুর্বল জুড়িডেকশনে নারী প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, নারী প্রকৌশলীর এই জায়গায় দুই বছরে চারজন উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী নারীকে বদলী করা হয়। এর কারণ অনুসন্ধান করে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম এর কু-প্রস্তাব বা অন্যায় এবং দুর্নীতির কাজে রাজি না হওয়ায় তারা নিজ চেষ্টায় অন্যত্র বদলী হয়ে চলে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি উপ বিভাগ তিন এ জয়ন্তী নামের প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ পর্যায়ে প্রত্যাশি সংস্থাকে বুঝিয়ে দেয়ার পূর্বে সকল বিল সমাপ্ত করার সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ বিভাগীয় প্রকৌশলীকে যে সকল কাজ হয়নি সে সকল কাজের বিল দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে উক্ত প্রকল্পের উপ সহকারী প্রকৌশলী ও উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী থেকে দায়িত্ব বদল করে উপ বিভাগ-৪ কে হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে তিনি তার টার্গেট ফিলাপ করেন। যা গণপূর্ত’র বিধানে সাইড ডিস্টিভিশন করার এখতিয়ার শুধু মাত্র পারেন প্রধান প্রকৌশলী। বিষয়টি অনুসন্ধানে উঠে আসে যে, উপ বিভাগ চার এর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলীর সাথে তার ছিলো সখ্যতা এবং সব কাজের ভাগাভাগি সম্পর্ক। এমনকি অধিকাংশ কাজেই তাদের দুজনের ঠিকাদার ছিলো নামে মাত্র। পূর্ত ভবন বেইলি রোডের ভবনের কাজ উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী নিজেই করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
খবর নিয়ে আরো জানা যায়, যেকোন কাজের বিল দেয়ার আগে দায়িত্বরত প্রকৌশলীদের সাথে জাহাঙ্গীর আলম এর বনিবোনা না হলে তার পছন্দের প্রকৌশলীকে অর্ডার করে বিল প্রস্তাবের নির্দেশ দিতেন। সময়ের ব্যবধানে দায়িত্ব বদল করতে না পারলে দায়িত্বরত প্রকৌশলীর স্বাক্ষর বাকী রেখেই নিজ ক্ষমতা বলে ঠিকাদারকে বিল প্রদান করতেন। তার প্রমাণ হিসেবে রায়ের বাজার বধ্যভূমির উপকেন্দ্র সহ আনুষাঙ্গিক চতুর্থ আর/ এ বিলের উপ প্রকৌশলীর স্বাক্ষর বাকী রেখে ও ঝিগাতলা প্রকল্পের উপ সহকারী প্রকৌশলী এবং উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর স্বাক্ষর বাকী রেখেই বিল প্রদান করা হয়েছে। এরকম অসংখ্য বিলই দায়িত্বগত কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর ছাড়াই প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিল দুটো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তারিখ পরিবর্তন সহ বিলে সই করার পায়তারা করছেন জাহাঙ্গীর আলম।

অনুসন্ধানে আরো বেরিয়ে আসে, দুর্নীতিবাজ জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘ নয় বছর সরকারের বিশেষ বিশেষ স্থাপনা পরিচালনা করতেন উপর মহল ঠিক রেখে। ওই মহলকে ঠিক রাখতে খরচ করতে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এই অর্থ আসতো ভূয়া প্রাক্কলন এবং ভূয়া বিলের মাধ্যমে। অথচ ভবনের সমস্যা সমস্যাই থেকে যেতো। বিল প্রদান করার জন্য হিসাব শাখাটি ছিলো তার আনুগত্য। তাদের খুশি রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতেন তিনি। চেষ্টার অংশ হিসেবে হাজার হাজার ভূয়া ভাউচারে লাখ লাখ টাকার সুবিধা দিয়েছেন। এমনকি একাউন্ট শাখার কর্মচারীদের বাসায় এসির ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন এই দুর্নীতিবাজ নির্বাহী প্রকৌশলী। কাজ শেষ হবার আগেই ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশ করে নিজের ক্ষমতা বলে বিল দিয়েছেন। এছাড়াও নারী সহকর্মীরা তার সাথে কাজ করতে নিরাপদ নয় এমন অভিযোগও আছে। জাহাঙ্গীর এর ক্ষমতার দাপটে অফিসের সকাল কর্মকর্তা কর্মচারী মুখ বন্ধ করে কাজ করতেন। তার অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মতো কেউ না থাকায় একতছত্র কায়েম করে ছিলেন তিনি।

একটি বদলির আদেশ থেকে জানাগেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি গণপূর্ত ইএম বিভাগ-২, ঢাকা থেকে ইএম পিএন্ডডি বিভাগ, রাজশাহীতে পোস্টিং দেয়া হয়েছে।

এদিকে জাহাঙ্গীর আলমের ঢাকায় ফের বদলীর খবরে গণপূর্তের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। জাহাঙ্গীর আলম এর অত্যাচারে ডিভিশনের কেউ শান্তি মতো কাজ করতে পারেনি। তাকে ছাড়া ডিভিশনের সবাই ক্ষতিগ্রস্থ। একমাত্র তিনি এবং তার দুই আনুগত্য অফিসার লাভবান হয়েছেন। তিনি ছিলেন একক আধিপত্য’র অধিকারী।
গণপূর্ত’র ইএম বিভাগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাত্র চার মাস আগে জাহাঙ্গীর আলমকে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে বদলির অন্যতম কারণ ছিলো প্রধান বিচারপতির বাস ভবনে কাজের গাফিলতি এবং নারী সহকর্মীরা তার সাথে কাজ করতে নিরাপদ নয়। তবে ঢাকায় আলাদিনের চেরাগ থাকায় নাছরবান্দা জাহাঙ্গীর মোটা টাকা খরচ করে হলেও সচিবালয় ৪ বা ইএম ৭ ডিভিশনে পোস্টিং পেতে মরিয়া। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর দপ্তর সহ সম্ভাব্য সব জায়গায় আবারো তদবির শুরু করেছেন। সবার প্রশ্ন, মাত্র চার মাস আগে বদলি করা হয়েছে, কিভাবে সম্ভব ফের ঢাকায় বদলি!
অভিযোগে আরো জানা যায়, পিডব্লিউডির ইএম-২ ডিভিশনে চাকরি করে জাহাঙ্গীর আলম শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তিনি কাউকে তোয়াক্কা করেন না। তার ইচ্ছেমতো বা মনমতো কোন কর্মকর্তা না হলে তাদের বিরূদ্ধে বেনামে অভিযোগ দায়ের করে পত্রিকায় খবর প্রকাশ করিয়ে ফায়দা লুঠতেন। জিগাতলা প্রকল্পের এক হাজার বর্গফুট এর দুই টি ভবনের ৮ কোটি টাকার কাজের বিল ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশ করে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। ওই কাজের মেয়াদ শেষ হলেও মাহবুব কনস্ট্রাকশন এখনো কাজ বুঝিয়ে দিতে পারেনি। একই ভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্লাস টাওয়ারের লাইট এর মূল্য তিন গুণ বেশি দেখিয়ে এনার্জি প্লাস এর সাথে যোগসাজশ করে সেখানেও ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই কর্মকর্তা। এরকম অসংখ্য কাজ ঠিকাদারকে দিয়ে কখনো অর্ধেক আবার কখনো কাজ না করিয়েই বিল উত্তলন করেছেন অহরহ। মাত্র নয় বছর পিডাব্লিউতে চাকরি করে সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন করে জাহাঙ্গীর আলম এখন শত কোটি টাকার মালিক।
গণপূর্ত’র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম এর বিরুদ্ধে ডিভিশনে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং নারী সহকর্মীরা তার সাথে কাজ করতে নিরাপদ নয় এরকম বেশ কিছু ইস্যু নিয়ে তদন্ত চলছে। গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেলে বিষয় টি দুদক পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিআইডব্লউটিতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল নাগাদ বিডব্লিউডিতে ডিউটি না করে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে বেতন তুলেছেন বলে অভিযোগও আছে। আলাদিনের চেরাগের মতো প্রমোশনের পাশাপাশি শত কোটি টাকার ধন সম্পদের মালিকও হয়েছেন দুর্নীতিবাজ এই নির্বাহী প্রকৌশলী ।
জাহাঙ্গীর আলম ধন সম্পদ এর খবর নিয়ে জানা যায়, ঢাকার মোহাম্মদপুরে আলিশান বাড়ি, কুয়াকাটায় ও কক্সবাজারে রিসোর্ট এবং ফ্ল্যাট রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে বিঘা বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। তার সহকর্মীদের মুখ থেকে শোনা যায়, জাহাঙ্গীর এর নিজ এলাকায় এমন কোন জমির খতিয়ান নাই যে, তার জমি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম বিলাসীতা জীবন যাপন সম্পর্কে খবর নিয়ে জানা যায়, উচ্চবিলাসী এবং মনোরঞ্জনে অভ্যস্ত ব্যক্তি। সরকারি ছুটির দিন তার জন্য ঈদ। ঢাকায় থাকা অবস্থায় একেক ঠিকাদার একেক রিসোর্টে সুন্দরী, রমনী দিয়ে আনন্দ ও মনোরঞ্জন করাতেন। তিনি বোড ক্লাবে দশ লাখ টাকা খরচ করে মেম্বারশিপ নিয়েছেন এমন খবরও শোনা গেছে।
হিসাব শাখার সুবিধা বঞ্চিত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের বাধ্যগত একজন প্রকৌশলী যে পরিমাণ আর্থিক সুবিধা পেয়েছে তার ১০ গুন সুবিধা দিয়েছে হিসাব শাখার একজন কর্মচারীকে । তদন্তে এর কিছু নজিরও পাওয়া গেছে। কিন্তু বিন্দুমাত্র তথ্য্ও প্রদান করতে রাজি নয় সংঘবদ্ধ দুর্নীতিবাজ চক্র। দুর্নীতিবাজ জাহাঙ্গীর আলমের ডিভিশনে দুই জন এস্টিমেটরের পদ থাকলেও দায়িত্বে ছিল একজন। তার অতিরিক্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে যাওয়াতে উপ বিভাগ ৪ এর দায়িত্ব প্রদান করেন উক্ত উপবিভাগের সেকশনে নিয়োজিত জুনিয়র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ ফারুক হোসেন। এতে সুবিধা হয়েছে যে, সাইটে প্রাকলন প্রস্তুত করেন তিনি এবং তিনিই চেক করেন যাতে করে বেশি পরিমাণ দুর্নীতি করা যায় ।
গণপূর্ত অধিদপ্তরে খোজ নিয়ে জানা যায়, অসংখ্য নির্বাহী প্রকৌশলী আছেন এ দপ্তরে । কিন্তু কারো অফিস কক্ষের সামনে এত পরিমান ঠিকাদার অপেক্ষমান থাকতে দেখা যায়নি, যা জাহাঙ্গীর আলম এর সময় দেখা গেছে। অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর কক্ষের সামনেও এভাবে ভিড় জমাতেন না ঠিকাদাররা।

নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম এর বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে তার মুঠো ফোনে একাধিক বার কল করেও কোন জবাব মিলেনি। তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মেসেজ লিখে উত্তর জানতে চেয়েও কোন সাড়া দেননি।
জাহাঙ্গীর আলমের সাথে অনেক চেষ্টা করলেও তিনি মুখ খোলেননি। এসব বিষয়ে তিনি জড়িত কিনা সে বিষয়ে শত চেষ্টা করেও তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।