মোঃ বাবুল হোসেন, পঞ্চগড়-
গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে খোঁজ নেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটির। সেই কষ্টেই ভাসছেন পরিবারের সবাই। তাদের আহাজারি আর দীর্ঘশ্বাসে ভারি হয়ে আছে চারপাশ। এ সবের কোনো কিছুই স্পর্শ করছে না শিশু আফরিন আক্তারকে। চার বছরের অবুঝ শিশু চারপাশে শুধু খুঁজে ফিরছে বাবার মুখ। অব্যক্ত বেদনায় ভরা চোখের ভাষায় সে যেন বলতে চাইছে, বাবা কোথায়? কখন ফিরবে বাবা?
আফরিনের বাবা আল আমিন পেশায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালক। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। সেদিনের পর থেকে তিনি বাড়ি ফেরেননি। বিভিন্ন স্থানে সন্ধান করেও খোঁজ না পেয়ে দিশেহারা তার পরিবার।
পরিবার জানায়, গত ৫ আগস্ট (সোমবার) আল আমিন ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। যান পঞ্চগড় শহরের দিকে। সেদিন পরিবারকে না বলেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। দুপুরে স্ত্রী সুমি আক্তারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন তিনি। এরপর থেকেই আল আমিনের সন্ধান মিলছে না।
নিখোঁজ আল আমিন পঞ্চগড় পৌরশহরের দর্জিপাড়া গ্রামের মনু মিয়ার ছেলে। মা-বাবা, স্ত্রী ও চার বছরের সন্তান আফরিন আক্তারকে নিয়েই তার সংসার। বাবা মনু মিয়া অসুস্থ্য হওয়ায় পরিবারটির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আল আমিন। তার মা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন আল আমিন বলে জানিয়েছে পরিবার
নিখোঁজ আল আমিনের স্ত্রী সুমি আক্তার বলেন, ‘৫ আগস্ট দুপুরের পর থেকে আমার স্বামীর কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে বলেছিল, সে আন্দোলনে গেছে। সেদিন বিকেলে একটি আন্দোলনের ছবি পেয়েছি। আমার স্বামী আন্দোলনে গিয়েছিল। এখন তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা বিভিন্ন স্থানে অভিযোগসহ থানায় জানিয়েছি। বিষয়টি কেউ গুরুত্বসহকারে দেখছে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার ছোট মেয়েটি গত একমাস ধরে তার বাবাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। বারবার কান্না করছে। বাবা বেঁছে আছে নাকি মারা গেছে সে কথা তো ওকে বলতে পারছি না। আমি এখন কী করবো বুঝতে পারছি না। আমি (সরকার ও প্রশাসন) সহায়তা কামনা করছি, তারা যেন আমাদের পাশে দাঁড়ান। তারা যেন আমার স্বামীকে জীবিত বা মৃত ফিরিয়ে এনে দেন।’
আল আমিনের বাবা মনু মিয়া বলেন, ‘আমার একমাত্র সন্তান সে। তাকে কোনোভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ বলছে, বিষয়টি দেখছি, কিন্তু একমাস পার হয়ে গেছে। আমরা খুব কষ্টে দিন পার করছি।’
এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন আল আমিনের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মা রুনা বেগম। তিনি সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ করছিলেন বারবার।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার রায় বলেন, ‘এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’