চারুলতা
আজ কাল্পনিক কিছু লিখছিনা, লিখছি শৈল্পিক জীবনমুখী দুটি কথা। মূলত সৃষ্টিশীল কিছু বিষয়কে তুলে ধরাই আমার আজকের লিখার ক্ষুদ্র প্রয়াস।
ছোটবেলা থেকে গান-নাচ সাহিত্য, চারুকারু এসবের উপর আমার দখল ছিলো বেশ মজবুত। কিন্তু আজ এই ছোট কোমল মতি শিশুর শৈল্পিক সৌন্দর্যের সামনে আমার মনে হলো আমি কিছুই শিখিনি অথবা যা শিখেছি তা অতি নগন্য, শিশুদের ছোট ছোট হাত দু’খানি দিয়ে তারা যে চিন্তা চেতনার প্রকাশ করেছে তা অনবদ্য। চলুন কথা না বাড়িয়ে একটি ছবি দেখি।
ছবিটি বলে দেয় চারু ও কারুকলা সৃজনশীলতার মূল চাবিকাঠি। প্রকৃতির সাথে যোগসাধন হলেই কেবল মাত্র শিশুদের এই সৃজনশীল শৈল্পিক কর্ম সম্ভব।
সেদিন শুধু বলেছিলাম- রঙ্গিন কাগজ দিয়ে যে যেটা পারো বানিয়ে ফেলো। ওমনি আমার সামনে চারু-কারুর নান্দনিক বিকাশে ঝলমলিয়ে উঠলো ফুল-মাছ-ব্যাং-প্রজাপতি, কাগজের নৌকা, বাক্স ইত্যাদি। ওমা! ব্যাঙগুলো দেখছি লাফও দিচ্ছে একটু টোকা দিলে। বাহ্, কি চমৎকার। মনে হচ্ছে এখনই পানির তলে হারিয়ে যাবে। অন্যদিকে কাগজের কারু মন্ডিত ছোট্ট ছোট্ট বাক্স। বাঙ্গালী মেয়েদের নাকের ফুল, কানের দুল সবই শোভা পাবে ক্ষুদে দক্ষ কারিগরের তৈরি এই কাগজের বাক্সে। আবার কেউ বানিয়েছে গণিতের ত্রিভুজ, বৃত্ত, চর্তুভুজ। কাগজের তৈরি কারু শিল্পের এতো সমারহ। সত্যই বিস্ময়ভরে দেখা যায়, মনের তৃপ্তি পাওয়া যায় তাদের হাস্য উজ্জ্বল মুখ দেখে। হাতের রঙ্গিন প্রজাপতি যেন শিশুমনে পেখম মেলে উড়ছে। কারো পাখার রং টুকটুকে লাল-নীল, কারো গায়ে সোনালী-রূপালী পরাগ মাখা। মনে পড়ছে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি কাজী নজরল ইসলাম কে যার লেখায় একটি সঙ্গিত রচিত হয়েছে এবং স্থান পেয়েছে প্রাথমিক শিক্ষার সংগীত বিষয়ক কারিকুলামে।
“প্রজাপতি প্রজাপতি কোথায় পেলে ভাই এমন রঙ্গিন পাখা টুকটুকে লাল-নীল, ঝিলিমিলি আঁকা বাঁকা।
কবি মনের সেই ব্যাপ্তি আজ প্রস্ফুটিত হয়েছে শিশুদের চোখে-মুখে। প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যতে নান্দনিকতার সঠিক ব্যবহার আজ আমার মনকে বেশ নাড়া দিলো। শিশুমনের সত্য প্রকাশের বিকাশে চারু ও কারু কলার চর্চায় পারে তাদের সৃজনশীলতা উৎপাদন করতে। তাদের বেগ আরো গতিময় করতে আমাদের সোচ্চার হওয়াই বাঞ্চনীয়। শিশুরাই একদিন বাংলাদেশকে আঁকবে। হাতের মুঠোয় নিবে পৃথিবী।
লেখক-
সুমাইয়া শরীফ
সহকারী শিক্ষক
ভবানীপুর, প্রাথমিক বিদ্যালয়, আত্রাই, নওগাঁ।