ঢাকা ১২:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
ওবায়দুল কাদেরের পিএস মতিন গ্রেফতার ফরিদপুরে সাবেক এমপি নিক্সনসহ ৫৯ জনের নামে মামলা মাগুরাতে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিনামূল্যে চক্ষু সেবা ক্যাম্পেইন সিরাজদিখানে নবাগত ইউএনও এর সাথে জামায়াতে ইসলামীর সৌজন্য সাক্ষাৎ গাজীপুরে জামায়াতের মত বিনিময় ও দাওয়াতি সভা অনুষ্ঠিত মহম্মদপুরে ছাত্রদল নেতা তৈয়ব হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন মধুখালীতে স্কুল ছাত্র নির্যাতনের ঘটনায় ২ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য গ্রেফতার মাগুরাতে শহীদ রাব্বির পরিবারের পাশে: তারেক রহমান আদমদীঘিতে পেট্রোল পাম্পে ওজনে কারচুপি, লাখ টাকা জরিমানা করলেন ইউএনও গাজীপুরে মহাসড়ক অবরোধ, বিকল্প পথে গাড়ী

শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য দেশে ফেরত আনতে হবে- মির্জা ফখরুল

রেজাউল করিম, গাজীপুর থেকে-

বহু গণহত্যা মামলার আসামী হওয়ায় শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনতে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মির্জা ফখরুল বলেন, আমি বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের কাছে আহবান জানাব, আপনারা অবিলম্বে গণহত্যাকারী, দেশ ধ্বংসকারী, রাষ্ট্র বিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে বিচারের দাবীতে ভারতের কাছে চিঠি দিন, তাকে ফেরত দেয়ার জন্য।

এসময় তিনি বলেন, আমরা বারবার ভারতের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেছি, আপনারা একজন গণহত্যাকারীকে জায়গা দিবেন না, যে আমাদের বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, মানুষকে খুন করেছে এবং অনেক গণহত্যার আসামী হয়েছে। তারা এখনো কিছু বলেনি।

ফখরুল বলেন, আমরা ভারতকে বলেছি, এমন কাউকে আশ্রয় দেবেন না, যারা বাংলাদেশের ক্ষতি করেছে। আমরা আবারো অনুরোধ জানাচ্ছি, দয়া করে গণহত্যাকারী, মানুষ হত্যকারী খুনী হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। সরকারকে বলছি, শেখ হাসিনা কে দেশে ফেরত আনার যে আইন গত ব্যবস্থা আছে, সেই মত ব্যবস্থা গ্রহন করুন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার বিকালে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবড়ীতে এক শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

গার্মেন্টস শিল্পসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুষ্কৃতিকারীদের প্রতিরোধ, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে গাজীপুর জেলা ও মহানগর শ্রমিক দল এ সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে ফখরুল বলেন, দীর্ঘ ১৪-১৫ বছর শেখ হাসিনা এদেশের মানুষের উপর অত্যাচার নিরযাতন করেছে। বহু মানুষকে হত্যা করেছে। নিজে ক্ষমতায় থাকার জন্য, প্রধানমন্ত্রী থাকার জন্য সে বাংলাদেশের সমস্ত প্রশাসনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। রাষ্ট্রের যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনী, তাদেরকে ব্যবহার করেছে। তারা অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছে, শ্রমিককে হত্যা করেছে, ছাত্রকে হত্যা করেছে, নারীকে হত্যা করেছে। পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করে, গুলি করে মানুষ মেরে, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে নিয়ে অকথ্য অত্যাচার করে বাংলাদেশের মানুষকে একটা ভীতির রাজত্বে নিয়ে গেছে। তাই সে যখন ছাত্র জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পালিয়ে গেছে,এদেশের মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচছে।

ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়েছে, এটা ঠিক, কিন্তু তার যে প্রেতাত্মা, ভুত-সেই ভূতগুলা রয়ে গেছে। তারা ভূলতে পারে না। তারা চুরি, লুটপাট ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাম্রাজ্য তৈরী করেছে, বিরাট বিরাট বাড়ী, খামার তৈরী করেছে,লটু করা পয়সা, তারা এটা ভূলতে পারে না। তারা ভাবে আবার যদি শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আানতে পারতাম, তাহলে আবার লুট করতে পারতাম। সেই জন্য তারা দেশের বিভিন্ন জায়গার, বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে। তারা সবচেয়ে বেশী ষড়যন্ত্র করছে, শিল্প এলাকায়। বিশেষ করে আমাদের পোশাক শিল্প। যেখানে আমাতের মা বোনেরা যে পোশাক কারখানায় কাজ করে। সেখানে তারা ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে যে রফতানী করেছি, তার শতকরা ৮৫ ভাগ আসে এ পোশাক রফতানি থেকে। অর্থাৎ এ শিল্প থেকে আমাদের বছরে আয় হয় ৪৭ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এখানে আমাদের প্রায় ৫০ লাখ ১৭ হাজার শ্রমিক এ খাতে কাজ করে। এ খাতটাকে নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, এখাতকে নিয়ে নানামূখী ষড়যন্ত্র হচ্চে। যারা আমাদের ভালো চায় না, আমাদের এ খাত ক্ষতিগ্রস্থ হলে অন্য যে দেশের লাভ হবে,তারা এ ষড়যন্ত্র করছে।

ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে, তাদের রক্তের বিনিময়ে আজ আমরা হাসিনা মুক্ত হতে পেরেছি। জাতি আজ মুক্ত হতে পেরেছে। এ সময় তিনি প্রশ্ন করেন, এটাকে রক্ষা করার দায়িত্ব কার? উত্তরে জনতা জানায়, আমাদের। তিনি বলেন, আমাদেরকে এটা রক্ষা করতে হবে।

তিনি বলেন, বন্ধুগণ স্বাধীনতা অর্জন করা যেমন বিরাট কাজ, তেমনি এটা রক্ষা করাও বিরাট কাজ। এ সময় তিনি অন্তরবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ ইউনুস এর বিভিন্ন কর্মকান্ডের প্রশংসা করেন। বলেন, তিনি দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সরকার গঠন করেছেন। এই অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি, আপনারা অল্প সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ গত পনেরো বছরে যে জঞ্জাল সৃষ্টি করেছে, এই জন্জাল গুলোকে দূর করে দিয়ে একটা পরিবেশ তৈরি করেন। যেখানে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো, তারা একটা নির্বাচন করতে পারবে এবং একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তিনি (ড. ইউনূস) সেটা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। তাকে আমরা সহযোগিতা করছি।

এ সময় মির্জা ফখরুল দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মানুষের প্রতি শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, ধৈর্য ধরার আহ্বানের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা সেভাবেই কাজ করছি। আমরা আশা করব, সরকার সে অনুযায়ী একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করবে এবং সেই পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমরা সবাই, রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের বক্তব্য আমাদের কথাগুলো নিয়ে আমরা জনগণের কাছে যেতে পারব, জনগণ সেখান থেকে আমাদেরকে বেছে নেবে।

তিনি বলেন, বন্ধুগণ কথাটা খুব পরিষ্কার, আমরা ভোট দিতে চাই। ভোট দিয়ে আমরা আমাদের পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে চাই। আমরা আমাদের সরকার নির্বাচন করতে চাই, আমরা এ কথাটাই বিশ্বাস করি, আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেব। এ সময় তিনি রসিকতা করে বলেন আওয়ামী লীগ এখন কি করেছে যে আমার ভোট আমি দিবো তোমার ভোটও আমি দিব। এমনও করেছে, কখনো ভোট দিতে দেয় নাই।

এ সময় জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে, অভিযোগ করে তিনি বলেন, এখন আমাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা যে গত ১৫-১৬ বছর লড়াই সংগ্রাম করেছি, আন্দোলন করেছি, ঐক্যবদ্ধ হয়ে করেছি। আমরা বারবার জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছি, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় ঐকের আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা সকল রাজনৈতিক দলগুলো একসাথে যোগ্পৎ লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি। তিনি বলেন, আমাদের সেই ঐক্য ধরে রাখতে হবে।

এ সময় তিনি উপস্থিত জনতার কাছে জানতে চান, আবারো আওয়ামী লীগ আসতে দিবেন নাকি? জবাবে জনতা বলেন, না। তখন মির্জা ফখরুল বলেন, এজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে এবং সবচেয়ে বড় যে কথাটা, আমাদের দেশের সব প্রতিষ্ঠান সম্পদকে রক্ষা করতে হবে।

মির্জা ফখরুল তার বক্তব্যে প্রাণ-আরএফএল এর উদাহরণ দিয়ে বলেন, মালিকপক্ষ আমাদের কাছে এসেছিল, তারা জানালো যে, তাদের এখানে ষড়যন্ত্র করে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি করা হচ্ছে। এগুলি নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা কোন প্রটেকশন পাচ্ছি না। এজন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, টাস্ক ফোর্স গঠন করে এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান করুন। আমাদের দেশের সম্পদ রক্ষায় আমাদের কাজ করতে হবে।

শিল্প কারখানায় যাতে কোনো প্রকার অসন্তোষ তৈরি না হয়, সেজন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের পাহারা দেয়ার পাশাপাশি সরকার মালিক শ্রমিকদের সাথে বসে সংকট নিরসনের দাবি জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ফখলুল বলেন, আজকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার কথা আসছে। এজন্য আমরা ২ বছরআগেই ৩১ দফা দিয়েছিলাম।চমাৎকার একটা প্রশান ব্যবস্থা, চমৎকার একটা বিচার ব্যবস্থা, চমাৎকার একটা পুলিশ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এজন্য আমাদের সজাগ থাকতে হবে, ঐকবদ্ধ হতে হবে। তিনি সকল রাজনৈতিক দলগুলোকেও ঐকবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।

গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি ডিগ্রি কলেজ মাঠে বাংলাদেশ শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে আয়োজিত সমাবেশ সঞ্চালনা করেন শ্রমিক নেতা মোঃ হুমায়ুন কবীর।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডাঃ জাহিদ হোসেন, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস এবং গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক মিলন, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মো: শওকত হোসেন সরকার । সমাবেশে মহানগর ও জেলার শ্রমিক দল এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

ওবায়দুল কাদেরের পিএস মতিন গ্রেফতার

শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য দেশে ফেরত আনতে হবে- মির্জা ফখরুল

আপডেট টাইম : ০৩:১০:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রেজাউল করিম, গাজীপুর থেকে-

বহু গণহত্যা মামলার আসামী হওয়ায় শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনতে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মির্জা ফখরুল বলেন, আমি বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের কাছে আহবান জানাব, আপনারা অবিলম্বে গণহত্যাকারী, দেশ ধ্বংসকারী, রাষ্ট্র বিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে বিচারের দাবীতে ভারতের কাছে চিঠি দিন, তাকে ফেরত দেয়ার জন্য।

এসময় তিনি বলেন, আমরা বারবার ভারতের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেছি, আপনারা একজন গণহত্যাকারীকে জায়গা দিবেন না, যে আমাদের বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, মানুষকে খুন করেছে এবং অনেক গণহত্যার আসামী হয়েছে। তারা এখনো কিছু বলেনি।

ফখরুল বলেন, আমরা ভারতকে বলেছি, এমন কাউকে আশ্রয় দেবেন না, যারা বাংলাদেশের ক্ষতি করেছে। আমরা আবারো অনুরোধ জানাচ্ছি, দয়া করে গণহত্যাকারী, মানুষ হত্যকারী খুনী হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। সরকারকে বলছি, শেখ হাসিনা কে দেশে ফেরত আনার যে আইন গত ব্যবস্থা আছে, সেই মত ব্যবস্থা গ্রহন করুন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার বিকালে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবড়ীতে এক শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

গার্মেন্টস শিল্পসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুষ্কৃতিকারীদের প্রতিরোধ, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে গাজীপুর জেলা ও মহানগর শ্রমিক দল এ সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে ফখরুল বলেন, দীর্ঘ ১৪-১৫ বছর শেখ হাসিনা এদেশের মানুষের উপর অত্যাচার নিরযাতন করেছে। বহু মানুষকে হত্যা করেছে। নিজে ক্ষমতায় থাকার জন্য, প্রধানমন্ত্রী থাকার জন্য সে বাংলাদেশের সমস্ত প্রশাসনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। রাষ্ট্রের যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনী, তাদেরকে ব্যবহার করেছে। তারা অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছে, শ্রমিককে হত্যা করেছে, ছাত্রকে হত্যা করেছে, নারীকে হত্যা করেছে। পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করে, গুলি করে মানুষ মেরে, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে নিয়ে অকথ্য অত্যাচার করে বাংলাদেশের মানুষকে একটা ভীতির রাজত্বে নিয়ে গেছে। তাই সে যখন ছাত্র জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পালিয়ে গেছে,এদেশের মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচছে।

ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়েছে, এটা ঠিক, কিন্তু তার যে প্রেতাত্মা, ভুত-সেই ভূতগুলা রয়ে গেছে। তারা ভূলতে পারে না। তারা চুরি, লুটপাট ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাম্রাজ্য তৈরী করেছে, বিরাট বিরাট বাড়ী, খামার তৈরী করেছে,লটু করা পয়সা, তারা এটা ভূলতে পারে না। তারা ভাবে আবার যদি শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আানতে পারতাম, তাহলে আবার লুট করতে পারতাম। সেই জন্য তারা দেশের বিভিন্ন জায়গার, বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে। তারা সবচেয়ে বেশী ষড়যন্ত্র করছে, শিল্প এলাকায়। বিশেষ করে আমাদের পোশাক শিল্প। যেখানে আমাতের মা বোনেরা যে পোশাক কারখানায় কাজ করে। সেখানে তারা ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে যে রফতানী করেছি, তার শতকরা ৮৫ ভাগ আসে এ পোশাক রফতানি থেকে। অর্থাৎ এ শিল্প থেকে আমাদের বছরে আয় হয় ৪৭ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এখানে আমাদের প্রায় ৫০ লাখ ১৭ হাজার শ্রমিক এ খাতে কাজ করে। এ খাতটাকে নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, এখাতকে নিয়ে নানামূখী ষড়যন্ত্র হচ্চে। যারা আমাদের ভালো চায় না, আমাদের এ খাত ক্ষতিগ্রস্থ হলে অন্য যে দেশের লাভ হবে,তারা এ ষড়যন্ত্র করছে।

ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে, তাদের রক্তের বিনিময়ে আজ আমরা হাসিনা মুক্ত হতে পেরেছি। জাতি আজ মুক্ত হতে পেরেছে। এ সময় তিনি প্রশ্ন করেন, এটাকে রক্ষা করার দায়িত্ব কার? উত্তরে জনতা জানায়, আমাদের। তিনি বলেন, আমাদেরকে এটা রক্ষা করতে হবে।

তিনি বলেন, বন্ধুগণ স্বাধীনতা অর্জন করা যেমন বিরাট কাজ, তেমনি এটা রক্ষা করাও বিরাট কাজ। এ সময় তিনি অন্তরবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ ইউনুস এর বিভিন্ন কর্মকান্ডের প্রশংসা করেন। বলেন, তিনি দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সরকার গঠন করেছেন। এই অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি, আপনারা অল্প সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ গত পনেরো বছরে যে জঞ্জাল সৃষ্টি করেছে, এই জন্জাল গুলোকে দূর করে দিয়ে একটা পরিবেশ তৈরি করেন। যেখানে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো, তারা একটা নির্বাচন করতে পারবে এবং একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তিনি (ড. ইউনূস) সেটা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। তাকে আমরা সহযোগিতা করছি।

এ সময় মির্জা ফখরুল দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মানুষের প্রতি শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, ধৈর্য ধরার আহ্বানের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা সেভাবেই কাজ করছি। আমরা আশা করব, সরকার সে অনুযায়ী একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করবে এবং সেই পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমরা সবাই, রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের বক্তব্য আমাদের কথাগুলো নিয়ে আমরা জনগণের কাছে যেতে পারব, জনগণ সেখান থেকে আমাদেরকে বেছে নেবে।

তিনি বলেন, বন্ধুগণ কথাটা খুব পরিষ্কার, আমরা ভোট দিতে চাই। ভোট দিয়ে আমরা আমাদের পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে চাই। আমরা আমাদের সরকার নির্বাচন করতে চাই, আমরা এ কথাটাই বিশ্বাস করি, আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেব। এ সময় তিনি রসিকতা করে বলেন আওয়ামী লীগ এখন কি করেছে যে আমার ভোট আমি দিবো তোমার ভোটও আমি দিব। এমনও করেছে, কখনো ভোট দিতে দেয় নাই।

এ সময় জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে, অভিযোগ করে তিনি বলেন, এখন আমাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা যে গত ১৫-১৬ বছর লড়াই সংগ্রাম করেছি, আন্দোলন করেছি, ঐক্যবদ্ধ হয়ে করেছি। আমরা বারবার জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছি, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় ঐকের আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা সকল রাজনৈতিক দলগুলো একসাথে যোগ্পৎ লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি। তিনি বলেন, আমাদের সেই ঐক্য ধরে রাখতে হবে।

এ সময় তিনি উপস্থিত জনতার কাছে জানতে চান, আবারো আওয়ামী লীগ আসতে দিবেন নাকি? জবাবে জনতা বলেন, না। তখন মির্জা ফখরুল বলেন, এজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে এবং সবচেয়ে বড় যে কথাটা, আমাদের দেশের সব প্রতিষ্ঠান সম্পদকে রক্ষা করতে হবে।

মির্জা ফখরুল তার বক্তব্যে প্রাণ-আরএফএল এর উদাহরণ দিয়ে বলেন, মালিকপক্ষ আমাদের কাছে এসেছিল, তারা জানালো যে, তাদের এখানে ষড়যন্ত্র করে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি করা হচ্ছে। এগুলি নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা কোন প্রটেকশন পাচ্ছি না। এজন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, টাস্ক ফোর্স গঠন করে এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান করুন। আমাদের দেশের সম্পদ রক্ষায় আমাদের কাজ করতে হবে।

শিল্প কারখানায় যাতে কোনো প্রকার অসন্তোষ তৈরি না হয়, সেজন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের পাহারা দেয়ার পাশাপাশি সরকার মালিক শ্রমিকদের সাথে বসে সংকট নিরসনের দাবি জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ফখলুল বলেন, আজকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার কথা আসছে। এজন্য আমরা ২ বছরআগেই ৩১ দফা দিয়েছিলাম।চমাৎকার একটা প্রশান ব্যবস্থা, চমৎকার একটা বিচার ব্যবস্থা, চমাৎকার একটা পুলিশ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এজন্য আমাদের সজাগ থাকতে হবে, ঐকবদ্ধ হতে হবে। তিনি সকল রাজনৈতিক দলগুলোকেও ঐকবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।

গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি ডিগ্রি কলেজ মাঠে বাংলাদেশ শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে আয়োজিত সমাবেশ সঞ্চালনা করেন শ্রমিক নেতা মোঃ হুমায়ুন কবীর।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডাঃ জাহিদ হোসেন, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস এবং গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক মিলন, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মো: শওকত হোসেন সরকার । সমাবেশে মহানগর ও জেলার শ্রমিক দল এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।