রেজাউল মোল্লা, গাজীপুর থেকে- গাজীপুরের কালীগঞ্জে স্ত্রীকে কটাক্ষ করায় ফোন করে ডেকে নিয়ে রেক্সি বাবু রোজারিওকে (৪৩) ছুরিকাঘাতে হত্যার পর লাশ ডোবায় ফেলে রাখা হয়। পরে অপহরণের নাটক সাজিয়ে তার বাবার কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবী করে অভিযুক্ত।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) সকালে গাজীপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এসব তথ্য দেন গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম।
ঘটনার প্রায় ৪ মাস পর ডোবা থেকে রেক্সি বাবু রোজারিও গলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার দড়িপাড়া গ্রামের মুকুল রোজারিওর ছেলে। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত লিংকন জন রোজারিওকে (৩৮) গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার লিংকন একই গ্রামের মৃত লিও রোজারিওর ছেলে।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) ভোরে নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর গ্রামের সুলতান উদ্দিনের মালিকানাধীন মাছের ঘের থেকে লিংকন জন রোজারিওকে গ্রেপ্তার করা হয়। গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) জাহাঙ্গীর কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। লিংকন ওই মাছের ঘেরে ভুয়া নাম পরিচয় দিয়ে চাকরি নিয়েছিল।
পরে অভিযুক্তর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা-ভৈরব রেলপথের কালীগঞ্জ উপজেলার দড়িপাড়া গ্রামের রেললাইনের পাশের ডোবা থেকে পুলিশ রেক্সি বাবুর মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহতের বাবা মুকুল রোজারিও জানান, গত ১০ আগস্ট দুপুরে আমার একমাত্র ছেলে রেক্সি বাবু রোজারিওর মোবাইল ফোনে একটি নাম্বার থেকে একটি ফোন আসে। পরে সে তার মা’কে দড়িপাড়া বাজারে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। ওইদিন গভীর রাতেও ছেলে বাড়ি ফিরে না আসায় সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুজি করে রাতেই কালীগঞ্জ থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত সাধারণ ডায়েরি করি।
তিনি আরও জানান, পর্যায়ে আমার ছেলের মোবাইল থেকে ফোন করে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা জানায় ছেলেকে জীবিত পেতে হলে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে গাজীপুর শালবনে আসেন। এরপর থেকে ছেলের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
পরে তার ছেলের পূর্ব পরিচিত লিংকন জন রোজারিওর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন লিংকনসহ তার সহযোগীরা কয়েকজন মিলে রেক্সি বাবু রোজারিওকে কৌশলে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে। অপহরণের এক সপ্তাহ পর তিনি কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তার ছেলেকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ করেন।
পুলিশের অপর একটি সূত্র জানায়, আসামী লিংকন জন রোজারিও একদিন রেক্সি বাবু রোজারিওকে কটাক্ষ করে বলে, তুই হিজড়া। তখন সে বলে, তোর বউকে আমার কাছে একদিনের জন্য দিস, তাকে দেখিয়ে দিবে আমি হিজড়া কি না। এর জেরে ক্ষিপ্ত হয়ে সে রেক্সি বাবু রোজারিকে হত্যা করে মৃতদেহ ডোবায় ফেলে রেখে অপহরণের নাটক সাজায় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।। ঘটনার পর থেকে লিংকন পলাতক ছিল।
গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) জাহাঙ্গীর কবির জানান, বাদী মুকুল রোজারিওর সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করে আসামী লিংকন জন রোজারিওর অবস্থান নিশ্চিত হই। পরে নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর গ্রামের সুলতান উদ্দিনের মালিকানাধীন মাছের ঘেরে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে লিংকন ভিকটিমকে ছুরিকাঘাতে হত্যা এবং লাশের সঙ্গে বালির বস্তা বেঁধে ডোবায় ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করে।