ঢাকা ১১:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
মাগুরায় আছিয়ার ধর্ষকের বাড়িতে আগুন দিল বিক্ষুদ্ধ জনতা জয়পুরহাটে দুর্বৃত্তের হামলায় ছাত্রদল নেতা গুরুতরত যখম পুলিশ বাহিনী জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ- আইজিপি গাজীপুরে বিএনপির রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা কর্মশালা গাম্বিয়ার সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো গভীরতর করবে- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কালিহাতী প্রেসক্লাব পুনরুদ্ধার: সাংবাদিক সমাজের ঐক্যবদ্ধ বিজয় মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটি আর নেই মির্জাগঞ্জে শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের আত্মপ্রকাশ ও ইফতার দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উপলক্ষে নওগাঁয় ওরিয়েন্টেশন কর্মশালা যায়যায়দিন পত্রিকার ডিক্লেয়ারেশন বাতিল

প্রমত্তা যমুনার বুকে দেশের দীর্ঘতম রেল সেতু: উদ্বোধনের অপেক্ষা

শাহ আলম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি-

প্রকৃতি ও প্রযুক্তির অনন্য মেলবন্ধনে যমুনার বুকে দেশের দীর্ঘতম রেল সেতু এখন উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে। প্রমত্তা যমুনা নদীর ওপরে নির্মিত এই সেতুটি যমুনা সেতুর মাত্র ৩০০ মিটার দূরত্বে অবস্থিত। প্রায় ৯৮ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে, আর মাত্র ২ শতাংশ কাজ শেষ হলেই আসন্ন ডিসেম্বরেই চালু হতে পারে স্বপ্নের এই রেল সেতুটি।

এই সেতু চালু হলে প্রতি দিন ৮৮টি ট্রেন বিরতিহীনভাবে দ্রুত গতিতে সেতু পারাপার করতে পারবে, ফলে সময় সাশ্রয় হবে ২০ থেকে ৩০ মিনিট। সেতুর পূর্ব প্রান্তে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে এবং পশ্চিম প্রান্তে সিরাজগঞ্জে নতুন রেল স্টেশন নির্মাণের কাজও প্রায় সমাপ্তির পথে। এখন নির্মাণকর্মীরা শেষ মুহূর্তের রঙ-তুলির কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

রেল সেতু প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করার লক্ষ্যে দিন-রাত এক করে কাজ করছেন তারা। ইতিমধ্যে একাধিকবার পরীক্ষামূলক ট্রেন চালিয়ে সেতুর প্রস্তুতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। এই রেল সেতুটি সাধারণ ট্রেনের পাশাপাশি দ্রুতগতির ট্রেন চলাচলের উপযোগী করেই তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ঘণ্টায় সর্বাধিক ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। তবে উদ্বোধনের প্রথম বছর ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার রাখা হবে।

২০১৬ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। পরবর্তীতে এর মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে তা দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ টাকায়। এর মধ্যে দেশীয় অর্থায়ন ২৭.৬০ শতাংশ এবং জাপানের জাইকা ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, যা মোট ব্যয়ের ৭২.৪০ শতাংশ।

এই প্রকল্পে ডুয়েলগেজ এবং ডাবল ট্র্যাকসহ মোট ৪.৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেল সেতুটি নির্মিত হচ্ছে। এর দুই পাশে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট এবং ৭.৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। রেলপথের পাশাপাশি গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলেও ২০০৮ সালে সেতুর গঠনে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে দিনে প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে যমুনা সেতু পারাপার করছে। দীর্ঘদিনের এই সমস্যার সমাধানে নতুন রেল সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় সরকার, যার কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে।

নতুন রেল সেতুর এই প্রকল্পটি দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

মাগুরায় আছিয়ার ধর্ষকের বাড়িতে আগুন দিল বিক্ষুদ্ধ জনতা

প্রমত্তা যমুনার বুকে দেশের দীর্ঘতম রেল সেতু: উদ্বোধনের অপেক্ষা

আপডেট টাইম : ১০:০৫:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪

শাহ আলম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি-

প্রকৃতি ও প্রযুক্তির অনন্য মেলবন্ধনে যমুনার বুকে দেশের দীর্ঘতম রেল সেতু এখন উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে। প্রমত্তা যমুনা নদীর ওপরে নির্মিত এই সেতুটি যমুনা সেতুর মাত্র ৩০০ মিটার দূরত্বে অবস্থিত। প্রায় ৯৮ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে, আর মাত্র ২ শতাংশ কাজ শেষ হলেই আসন্ন ডিসেম্বরেই চালু হতে পারে স্বপ্নের এই রেল সেতুটি।

এই সেতু চালু হলে প্রতি দিন ৮৮টি ট্রেন বিরতিহীনভাবে দ্রুত গতিতে সেতু পারাপার করতে পারবে, ফলে সময় সাশ্রয় হবে ২০ থেকে ৩০ মিনিট। সেতুর পূর্ব প্রান্তে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে এবং পশ্চিম প্রান্তে সিরাজগঞ্জে নতুন রেল স্টেশন নির্মাণের কাজও প্রায় সমাপ্তির পথে। এখন নির্মাণকর্মীরা শেষ মুহূর্তের রঙ-তুলির কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

রেল সেতু প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করার লক্ষ্যে দিন-রাত এক করে কাজ করছেন তারা। ইতিমধ্যে একাধিকবার পরীক্ষামূলক ট্রেন চালিয়ে সেতুর প্রস্তুতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। এই রেল সেতুটি সাধারণ ট্রেনের পাশাপাশি দ্রুতগতির ট্রেন চলাচলের উপযোগী করেই তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ঘণ্টায় সর্বাধিক ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। তবে উদ্বোধনের প্রথম বছর ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার রাখা হবে।

২০১৬ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। পরবর্তীতে এর মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে তা দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ টাকায়। এর মধ্যে দেশীয় অর্থায়ন ২৭.৬০ শতাংশ এবং জাপানের জাইকা ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, যা মোট ব্যয়ের ৭২.৪০ শতাংশ।

এই প্রকল্পে ডুয়েলগেজ এবং ডাবল ট্র্যাকসহ মোট ৪.৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেল সেতুটি নির্মিত হচ্ছে। এর দুই পাশে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট এবং ৭.৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। রেলপথের পাশাপাশি গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলেও ২০০৮ সালে সেতুর গঠনে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে দিনে প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে যমুনা সেতু পারাপার করছে। দীর্ঘদিনের এই সমস্যার সমাধানে নতুন রেল সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় সরকার, যার কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে।

নতুন রেল সেতুর এই প্রকল্পটি দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।