বিশেষ প্রতিবেদক :
নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের বাস্তয়নাধীন ইজিআইএমএনএস প্রকল্পের চারজন কর্মকর্তার ঘুসের টাকা পরিশোধের মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে ২০২০ সালে আত্মহত্যা করেন ইজিআইএমএনএস প্রকল্পের কুয়াকাটা ভূমি উন্নয়ন কাজের ঠিকাদার এস.এম মনিরুজ্জামান।। এর আগে তার কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা অবৈধভাবে আত্মসাৎ করেন নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের ৪ কর্মকর্তা। ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকার আমলে সংঘটিত এই ঘটনাটি তখন চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। এ বিষয়ে তদন্ত ও বিচার চেয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়,স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়,আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় সহ আদালতে বিচার চেয়ে আবেদন করলেও আওয়ামী দোসরদের রাজনৈতিক তদবীরে তদন্তের নামে প্রহসন করা হয়। কোথাও বিচার না পেয়ে নিরব হয়ে যান ঠিকাদার মনিরুজ্জামানের স্ত্রী মারুফা ইয়াসমীন রোজী। ৫ আগষ্ট ছাত্র,জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকারের পতন ঘটান পর তিনি আবারে মানসিক চাপে স্বামী হত্যার বিচার পেতে আশান্বিত হয়ে ওঠেন। সম্প্রতি তিনি এ বিষয়ে অন্তরবর্তীকালীন সরকারের কাছে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করে পুন: আবেদন করেছেন। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) ড. এস এম শাখাওয়াত হোসেন বরাবরে এই আবেদনটি করা হয়েছে। যেটির কপি প্রধান উপদেষ্টা, সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, সচিব, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাপরিচালক, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর, ও প্রকল্প পরিচালক, ইজিআইএমএনএস প্রকল্প, নৌ পরিবহন অধিদপ্তর ঢাকা বরাবরেও প্রেরণ করা হয়েছে।
ইজিআইএমএনএস প্রকল্পের কুয়াকাটা ভূনি উন্নয়ন কাজের ঠিকাদার মরহুম এস.এম মনিরুজ্জামান এর স্ত্রী মারুফা ইয়াসমীন রোজী আবেদনপত্রে জানিয়েছেন যে, আমার স্বামী মরহুম এস.এম মনিরুজ্জামানের কাছ থেকে ইজিআইএমএনএস প্রকল্পের চারজন কর্মকর্তা মো: নাজমুল হোসাইন (টিটু) সহ ক্যাপ্টেন আবু হায়াত আশরাফুল আলম, ক্যাপ্টেন মেজবাহ উদ্দিন ও রিয়াজ উদ্দিন আহমদ দেড় কোটি টাকার উপরে (১,৬২,৮০,০০০/টাকা জোরপূর্বক আত্মসাৎ করেন যা তার স্বহস্তে লিখিত ও স্বাক্ষরিত কপি ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯ খ্রি. তারিখে প্রকল্প পরিচালক ক্যাপ্টেন কে.এম জসীম উদ্দিন সরকার বরাবর প্রেরণ করেন। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও প্রকল্প পরিচালক উল্লেখিত টাকা উদ্ধার করতে পারেন নি। আমরা ঢাকায় অবস্থানকালে আমাদের দুই সন্তান ঢাকায় উচ্চমানের স্কুলে পড়ালেখা করত কিন্তু উল্লেখিত চক্রটির কারণে আমরা চরমভাবে অভাবগ্রন্থ হই। যার কারণে টাকার অভাবে দুই সন্তানের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায় এবং স্বপরিবারে আমরা ঢাকা ত্যাগ করে গ্রামে যেতে বাধ্য হই। তিনি উল্লেখিত টাকা উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যান কিন্তু বারবার বিফল হন। উল্লেখিত চক্রটি ক্যাপ্টেন আবু হায়াত, আশরাফুল আলম, ক্যাপ্টেন মো: মেজবাহ উদ্দিন, মো: নাজমুল হোসাইন (টিটু) ও রিয়াজ উদ্দিন আহমদ কুয়াকাটার ভূমি উন্নয়ের কাজ সম্পন্ন না করে চূড়ান্ত বিল প্রদান করবে বলে পুনরায় অবৈধভাবে ১,২০,০০,০০০/-এক কোটি বিশ লক্ষ টাকা আমার স্বামীর নিকট দাবী করেন।
আমার স্বামী অস্বীকৃতি জানালে তারা ক্যাপ্টেন আবু হায়াত আশরাফুল আলম, ক্যাপ্টেন মোঃ মেজবাহ উদ্দিন, মো: নাজমুল হোসাইন (টিটু) ও রিয়াজ উদ্দিন আহমদ প্রতিনিয়ত রোজ শুক্রবার ও শনিবার বিশেষ করে নাজমুল হোসাইন (টিটু) আমাদের ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসায় টাকার জন্য আসতো এবং মরহুম এস.এম মনিরুজ্জামান এর কাছে প্রতিনিয়ত ভয়ভীতি দেখিয়ে অবৈধ ভাবে টাকা দাবী করত। শুক্রবার টাকা দিলে শনিবার আবার নাজমুল হোসাইন (টিটু) অপর তিনজনকে নিয়ে বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাকত ও মরহম এস.এম মনিরুজ্জামানকে ফোন দিতো এবং টাকার জন্য ভয়ভীতি দেখাতো।
কুয়াকাটা ভূমি উন্নয়ন কাজ চলাকালীন সময় থেকে শেষ অবধি পর্যন্ত আমার স্বামীর কাছে থেকে ও আমার নিজের কাছ থেকে চক্রটি নগদ প্রায় দুই কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছে। চক্রটি অফিসে নিয়েও ভয়ভীতি দেখায় ও বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করত যা আমার স্বামী আমাকে তার আত্মহত্যার পূবের্ বারংবার বলেছিলেন। এ সবের ফলে তার আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় নেই এমন কথাও তিনি বহুবার বলেছেন। আমি তাকে বিভিন্ন ভাবে শান্তনা দেওয়ার চেষ্ঠা করলেও চক্রটির দ্বারা মানসিক অত্যাচারের কাছে আমিও হেরে গিয়েছিলাম। ঘুসের টাকা না দিলে তারা আমার মানসম্মান হানি করবে ও আমার ও আমার ছোট ভাই বোন স্ত্রীর নামে মামলা করবে বলে নানা ভয়ভীতি দেখাতো ও সারাক্ষণ ফোন দিয়েও টাকা চাইত । যা আত্মহত্যার পূবে র্ প্রায় সময় আমার স্বামী বলতেন। চক্রটির আমানসিক ও বিবেকহীন বিবেকের কাছে আমার স্বামী হেরে গিয়ে বাধ্য হয়ে ৭ জুলাই ২০২০ খ্রি. তারিখ, রবিবার ৯.৩০ ঘটিকায় তার ছোট ভাইয়ের বাসায় আত্মহত্যা করেন। যা সব কিছুর স্বাক্ষী আমি নিজেই। তার আত্মহত্যার পর আমরা অনাহারে দিনপার করছি। যেহেতু আমাদের নিকট আমার স্বামী কোন অর্থ রেখে যান নি তাই আমাদের সন্তানদের পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে যায়।
এমতাবস্থায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ খ্রি. আমার অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাটি সুষ্ঠুভাবে তদন্তÍ করার লক্ষ্যে নৌপরিবহন অধিদপ্তর কর্তৃক পৃথক পৃথক ২টি তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও দুর্নীতিবাজ চক্রটি ১০ লক্ষ টাকার আর্থিক উৎকোচের মাধ্যমে তদন্ত রিপোর্টটি ধামাচাপা দিয়েছেন। তৎকালীন পরিচালক (উপসচিব) বদরুল হাসান লিটন ও ফাওজিয়া রহমান সহকারী কেমিস্ট এই অপকর্মটি করেন। আমি আর কোন উপায় না পেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করলে মামলাটি পিআইবির মাধ্যমে তদন্ত করা হলেও (মামলা নং ১৮২/২৩) ফ্যাসিস্ট সরকারের রাজনৈতিক তদবীরে ও নৌপরিবহন অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগনের সহযোগিতায় পিআইবির তদন্ত কর্মকর্তা গভীরভাবে তদন্ত না করেই আসামী পক্ষের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে মামলাটি খারিজ করে দেন। চক্রটির এ ধরনের কর্মকান্ডের কারনে আর যেনো কোন সন্তান তাদের পিতাকে না হারায় এবং কোন অল্প বয়সী মেয়ে বিধবা না হয়, এ ব্যাপারে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনের লক্ষ্যে উল্লেখিত দোষী কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে ন্যায় বিচারের পেলে আমরা কিছুটা হলেও মানসিক শান্তি পাবো। যদিও আমি আর স্বামীকে এবং আমার সন্তানরা তাদের বাবাকে কখনে ফিরে পাবো না।