ফরিদপুর প্রতিনিধি :
ফরিদপুর শহরের বাইপাস সড়কের পাশে মুরারিদহ ও কবিরপুর গ্রামে মাদক ব্যবসা, চুরি ও অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত নান্নু দেওয়ানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ও মানববন্ধন করেছেন গ্রামবাসী।
সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে মুরারিদহ হালিম সরদারের মোড়ে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে মুরারিদহ ও কবিরপুর গ্রামের কয়েকশো নারী-পুরুষ অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে তারা নান্নু দেওয়ানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এর আগে এ বিষয়ে শতাধিক গ্রামবাসী স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়। ফরিদপুর পুলিশ সুপার ও র্যাবের কার্যালয়ে।
গ্রামবাসী তাদের অভিযোগে বলেন, কবিরপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহিম দেওয়ানের ছেলে নান্নু দেওয়ান (৩৬) ও তার স্ত্রী সম্পা বেগমের সহযোগে দীর্ঘদিন মাদক ব্যবসা, চুরি সহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত। বর্তমানে তারা কবিরপুর হতে বিতাড়িত হয়ে পাশে মুরারিদহ বটতলায় সরকারি হালটে ঘর তুলে সেখানে বসবাস করেন। দোকান ঘরের মতো তুলে তারা সেখানে অপরাধী ও মাদকসেবিদের আস্তানা গেড়েছেন। আশেপাশে নির্জন ওই এলাকায় তাদের নিকট থেকে মাদক কিনতে অপরিচিত লোকজনের সমাগম ঘটে। এছাড়াও গভীর রাতেও তাদের কাছে অপরিচিত লোকদের আনাগোনা দেখা যায়।
এদিকে কবিরপুরের বাসিন্দা রাসেল শেখ (২৫) এক যুবক বলেন, মাসখানেক আগে নান্নু দেওয়ান তার সহযোগী আরো ৬/৭ জনকে নিয়ে তার বাড়িতে ডাকাতি করতে যায়। তার ও তার স্ত্রীর হাতপা বেধে তারা গলার চেইন সহ মালামাল নিয়ে যায়। এসময় তারা দাত দিয়ে হাতের বাধন খুলে বাইরে এসে আত্মীয়স্বজনদের সহায়তায় নান্নু দেওয়ানকে আটক করেন। পরে তার লোকজন এসে নান্নু দেওয়ানকে ছাড়িয়ে নেয়।
রাসেলের বোন সালমা বলেন, রাইত ৩টা কুড়ি মিনিটের দিকে আমার ভাইয়ের বাড়িতে নান্নু দেওয়ান ডাকাতি করতে ঢুকে। রাত ৪টার দিকে বের হয়ে। আমার ভাইর বউয়ের হাত-পা ও মুখ বাঁধছে। তিনি বলেন, ঘরে ঢুকছিলো ৬ জন। বাইরে আরো কয়েকজন ছিলো। পরে নান্নু বাইরে উপুড় হয়ে পড়লে আমরা সেখানে নান্নুর বউয়ের ওড়না দেখি। পরে বেরিয়ে এসে দেখি নান্নু সেই কালো ট্রাউজার পরে খালি গায়ে বসা। তখনো সে ঘামছিলো। সালমা বলেন, গভীর রাতে বাইরে থেকে লোকজন এনে সে এলাকায় এসব করে বেড়াচ্ছে।
নান্নুর আপন চাচাতো ভাই পান্নু দেওয়ান বলেন, নান্নু অনেক অপকর্মের সাথে জড়িত। সে বাইরে থেকে অপরাধী সহযোগীদের এনে মাদকের ব্যবসা করে। এলাকার আক্কাস নামে আমাদের একজন প্রবীণ ব্যক্তি এর প্রতিবাদ করায় সে উল্টো তার বিরুদ্ধে হয়রানিমুলক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। গত চার পাঁচ বছর ধরে তাকে হয়রানি করছে। সে ইদানীং চৃরির সাথেও জড়িত আছে।
নান্নুর চাচি ডলি (৪৫) বলেন, রাতদুপুরে নান্নু অপরিচিত লোকদের নিয়ে তার বাড়ির উপর দিয়ে চলাফেরা করেন। তারা এর প্রতিবাদ করার পরে সে কবিরপুর থেকে এখন বটতলা এসে ঘাটি গাড়ছে। আমরা ওর উৎপাতে এলাকায় বসবাস করতে পারছিনা।
ফরিদপুর পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক স্থানীয় কাউন্সিলর আমীর হোসেন মাসুদ বলেন, আমাদের এই কবিরপুর ও মুরারিদহ গ্রামে মাদকের ব্যবসা ছড়িয়ে দিয়ে নান্নু দেওয়ান এলাকার যুবসমাজকে ধ্বংস করছে। গত প্রায় ৫/৬ বছরযাবত সে এই অপরাধ করে যাচ্ছে। আমরা তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে গেলে সে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে উল্টো আমাদের হয়রানি করে। রাতের বেলায় বাসাবাড়িতে সে চুরিও করে। গ্রামবাসী ওর অপতৎপরতায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। আমরা আজ বাধ্য হয়ে তার বিরুদ্ধে মানববন্ধনে নেমেছি। প্রশাসনের নিকট জোর দাবি এই মাদক ব্যবসায়ী নান্নু দেওয়ানকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
মানববন্ধন শেষে বিষয়টি জানতে মুরারিদহ চকের নির্জন এলাকায় অবস্থিত বটতলায় নান্নু দেওয়ানের ওই ঘরে যেয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। এসময় তার স্ত্রী সম্পাকে এসব বিষয়ে জানতে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো রাসেলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন। এসময় সেখানে হাজির হন পাশের কবিরপুর গ্রামের আমনা বেগম (৫৫) সহ আরো প্রায় অর্ধশত নারীপুরুষ ও যুবকেরা। তারা নান্নুর বিরুদ্ধে এসব অসামাজিক কার্যকলাপের নানা ফিরিস্তি তুলে ধরে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানান।