ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তবে এখনো এই বৈঠকের এজেন্ডা চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এই বৈঠকে অংশ নিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির নেতৃত্বে ঢাকা সফরে আসছে ভারতীয় প্রতিনিধি দল। বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমরা (ঢাকা-দিল্লি) স্বাভাবিক সম্পর্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছি এবং এফওসি হবে দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক উন্নয়নের প্রথম পদক্ষেপ এবং ঢাকা ও নয়াদিল্লি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে বাস্তবসম্মতভাবেই এগিয়ে যেতে পারে।
এফওসি বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তৌফিক হাসান বলেন, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বাংলাদেশ-ভারত এফওসি অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে একটি আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠক হয়। এফওসি গত বছর ভারতে হয়েছিল, এবার ঢাকায় হবে। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সকল বিষয় নিয়েই আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখনো সুনির্দিষ্ট ভাবে এজেন্ডা নিয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
ভারত বাংলাদেশ (এফওসিতে ) শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি এখনো কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেনি, এছাড়া এফওসি বৈঠকের আরো সময় বাকী আছে সুতরাং এ বিষয়ে এখনই চূড়ান্তভাবে কিছু জানানো যাচ্ছে না।
ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম বাংলাদেশ নিয়ে চলমান বিভিন্ন অপপ্রচারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনে জানানো হয়েছে। ভারতকে আমরা আরো জানিয়েছি, এটি কোনো ভাবেই কাম্য নয়।
ভারতের ভিসা চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে তারা মেডিক্যাল এবং স্টুডেন্ট ভিসা ইস্যুর প্রক্রিয়া চালু আছে। তবে অন্যান্য ভিসা ইস্যুর ব্যাপারে আমরা তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।
ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে নির্দিষ্ট সময়সীমা ভিত্তিক পরিকল্পনা করতে সব অংশীজনের সমন্বয়ে ২০২৫ সালে একটি উচ্চ পর্যায়ের কনফারেন্স আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রেজ্যুলেশনে। আশা করি আগামী বছরের শুরুর দিকে জাতিসংঘের উদ্যোগে নিউইয়র্কে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন ইস্যুতে অনেক ঘটনা চলমান রয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক দৃষ্টি থেকে রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে যেন হারিয়ে না যায় এজন্য আমরা আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি।
রাজনৈতিক দল হিসাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে কোন রাষ্ট্র থেকে সুপারিশ এসেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো দেশের পক্ষ থেকে বা কোন রাষ্ট্রের থেকে এখনো পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোন চিঠি পায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ১৬ ও ১৭ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট বাংলাদেশ সফর করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর যুক্তরাজ্যের সরকারি উচ্চ পর্যায়ের এটিই প্রথম কোন সফর। সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে তার সৌজন্য সাক্ষাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাক্ষাতে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত সংস্কার পদক্ষেপসমূহে যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে সব ধরণের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করা হয়। এছাড়াও, যুক্তরাজ্যের শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে দক্ষতার পারস্পরিক স্বীকৃতির ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যকে আহবান জানানো হয়। বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ-সম্পদ পুনরুদ্ধারে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা কামনা করা হলে ক্যাথরিন ওয়েস্ট এ বিষয়ে সব ধরণের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন। এছাড়াও, যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা এবং কক্সবাজারের স্থানীয় ও দুর্যোগ প্রবণ জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা হিসেবে ১০.৩ মিলিয়ন পাউন্ড অনুদানের ঘোষণা করা হয়।