ঢাকা ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাংবাদিক কন্যাকে অপহরণ চেষ্টা ও ছুরিকাঘাতের ঘটনায় মামলা

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের সাংবাদিক গাজী মমিন এর কন্যাকে অপহরণের চেষ্টায় ব্যর্থ ও ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করার ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) ফরিদগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা করেন সাংবাদিক গাজী মমিন। ঘটনার শিকার সাংবাদিক কন্যা স্থানীয় শাহজাহান কবির উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

এর আগে রোববার (২৪ নভেম্বর) দিনগত রাতে পৌর এলাকার পূর্ব বড়ালী গ্রামের নিজ ঘরে সাংবাদিকের মেয়েকে ধারালো অস্ত্রের মুখে অপহরণের চেষ্টা করে অজ্ঞাতনামা যুবকরা। ব্যর্থ হয়ে তাকে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়। ধারালো অস্ত্র দ্বারা তার হাতে, মুখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন পরিবারের সদস্যরা।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, রাত আনুমানিক দুইটার পর ঘুমন্ত কন্যাকে মাথায় হাত বুলিয়ে জাগিয়ে তোলা হয়। চোখ মেলতেই তার মুখ চেপে ধরে দুর্বৃত্তরা। তারা সংখ্যায় তিনজন যুবক বলে কন্যা জানিয়েছেন। এসময় তাকে পাকা বসত ঘরের বাইরে যাওয়ার জন্য চাপসৃষ্টি করতে থাকে। ভুক্তভোগী মেয়েটি রাজি না হলে বেশ কিছু সময় তার সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি চলে। এক পর্যায়ে তারা বসত ঘরের বাইরে নিয়ে যায়। ওই সময় পাশের বাড়িতে লোকজন ও পুলিশের উপস্থিতি দেখে অপহরণ চেষ্টা কারীদের দুজন আড়ালে চলে যায়। মুখ চেপে ধরে রাখা অপর একজনের হাতে সজোরে কামড় বসিয়ে দিলে ওই ব্যক্তি তাকে ছাড়তে বাধ্য হয়।

মেয়েটি তাদের কাছ থেকে মুক্ত হয়ে ঘরে গিয়ে মাকে ডেকে তুলেন এবং ঘটনাটি জানান। অপর কক্ষে ঘুমিয়ে থাকা বাবা গাজী মমিনকে ডেকে তুললে তিনি ছুটে গিয়ে বাড়ির অন্যান্যদের ডেকে তুলে বাইরে দুর্বৃত্তদের খোঁজাখুঁজি করেন। তিনি কাউকে পাননি। এরপর তিনি থানা পুলিশকে জানালে উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমজাদ ও খোকন চন্দ্র দাস সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তার বাড়িতে যান ও ঘটনার বর্ণনা শোনেন। পরে গাজী মমিন তার কন্যাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চিকিৎসা দেন।

গাজী মমিনের মেয়ে জানিয়েছেন, ঘরের ভেতরে ৩ জনের একটি দল তাকে জোর করে বাহিরে নিয়ে যেতে চায়। সে চিৎকার দিতে চাইলে তার মুখ চেপে ধরে রাখা হয়। এই সময় তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে এবং তার মাথার চুল কেটে দেয়া হয়।

সে আরও জানায়, গত কয়েকদিন যাবত বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে দুজন যুবক তাকে নানা কটু কথা বলেছে। বাবা মাকে লজ্জায় এসব কথা বলিনি। তবে রাতেই একটি কাগজে পথে উত্যাক্ত করার ঘটনা লিখে রেখেছি মা-বাবার হাতে দেয়ার জন্য। কিন্তু, তার আগেই আমার ওপর নির্যাতন চালানো হলো।

গাজী মমিন ও তার স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে ধারণা করা হচ্ছে- কেউ রাতে ঘরের ভেতরে আগে থেকে অবস্থান করছিলেন। রাত আনুমানিক ৯টার দিক গাজী মমিনের কন্যা ও রাত ১২টার দিকে বাবা মা আলাদা কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। এরপরই এই ঘটনা ঘটে।

গাজী মমিন দৈনিক আজকের পত্রিকার ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি। এ ছাড়াও স্থানীয় দৈনিক চাঁদপুর দর্পণ ও নিউজ ২১ বাংলা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন।

ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্ত করেছি ও খোঁজ খবর নিচ্ছি। এ ছাড়া গাজী মমিন লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে এ ঘটনায় গাজী মমিনের মেয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পূর্ব বড়ালী শাহজাহান কবির উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পরিচালনা পর্ষদ ও পূর্ব বড়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পরিচালনা পর্ষদ, পূর্ব বড়ালী যুব উন্নয়ন সংঘসহ স্থানীয় সচেতন মহলের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেন।

এ ঘটনায় ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা অপরাধীদের খুঁজে দ্রুত আইনের আওতায় নেয়ার জন্য ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশকে অনুরোধ জানিয়েছেন।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

সাংবাদিক কন্যাকে অপহরণ চেষ্টা ও ছুরিকাঘাতের ঘটনায় মামলা

আপডেট টাইম : ০৩:৫৭:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের সাংবাদিক গাজী মমিন এর কন্যাকে অপহরণের চেষ্টায় ব্যর্থ ও ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করার ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) ফরিদগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা করেন সাংবাদিক গাজী মমিন। ঘটনার শিকার সাংবাদিক কন্যা স্থানীয় শাহজাহান কবির উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

এর আগে রোববার (২৪ নভেম্বর) দিনগত রাতে পৌর এলাকার পূর্ব বড়ালী গ্রামের নিজ ঘরে সাংবাদিকের মেয়েকে ধারালো অস্ত্রের মুখে অপহরণের চেষ্টা করে অজ্ঞাতনামা যুবকরা। ব্যর্থ হয়ে তাকে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়। ধারালো অস্ত্র দ্বারা তার হাতে, মুখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন পরিবারের সদস্যরা।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, রাত আনুমানিক দুইটার পর ঘুমন্ত কন্যাকে মাথায় হাত বুলিয়ে জাগিয়ে তোলা হয়। চোখ মেলতেই তার মুখ চেপে ধরে দুর্বৃত্তরা। তারা সংখ্যায় তিনজন যুবক বলে কন্যা জানিয়েছেন। এসময় তাকে পাকা বসত ঘরের বাইরে যাওয়ার জন্য চাপসৃষ্টি করতে থাকে। ভুক্তভোগী মেয়েটি রাজি না হলে বেশ কিছু সময় তার সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি চলে। এক পর্যায়ে তারা বসত ঘরের বাইরে নিয়ে যায়। ওই সময় পাশের বাড়িতে লোকজন ও পুলিশের উপস্থিতি দেখে অপহরণ চেষ্টা কারীদের দুজন আড়ালে চলে যায়। মুখ চেপে ধরে রাখা অপর একজনের হাতে সজোরে কামড় বসিয়ে দিলে ওই ব্যক্তি তাকে ছাড়তে বাধ্য হয়।

মেয়েটি তাদের কাছ থেকে মুক্ত হয়ে ঘরে গিয়ে মাকে ডেকে তুলেন এবং ঘটনাটি জানান। অপর কক্ষে ঘুমিয়ে থাকা বাবা গাজী মমিনকে ডেকে তুললে তিনি ছুটে গিয়ে বাড়ির অন্যান্যদের ডেকে তুলে বাইরে দুর্বৃত্তদের খোঁজাখুঁজি করেন। তিনি কাউকে পাননি। এরপর তিনি থানা পুলিশকে জানালে উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমজাদ ও খোকন চন্দ্র দাস সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তার বাড়িতে যান ও ঘটনার বর্ণনা শোনেন। পরে গাজী মমিন তার কন্যাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চিকিৎসা দেন।

গাজী মমিনের মেয়ে জানিয়েছেন, ঘরের ভেতরে ৩ জনের একটি দল তাকে জোর করে বাহিরে নিয়ে যেতে চায়। সে চিৎকার দিতে চাইলে তার মুখ চেপে ধরে রাখা হয়। এই সময় তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে এবং তার মাথার চুল কেটে দেয়া হয়।

সে আরও জানায়, গত কয়েকদিন যাবত বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে দুজন যুবক তাকে নানা কটু কথা বলেছে। বাবা মাকে লজ্জায় এসব কথা বলিনি। তবে রাতেই একটি কাগজে পথে উত্যাক্ত করার ঘটনা লিখে রেখেছি মা-বাবার হাতে দেয়ার জন্য। কিন্তু, তার আগেই আমার ওপর নির্যাতন চালানো হলো।

গাজী মমিন ও তার স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে ধারণা করা হচ্ছে- কেউ রাতে ঘরের ভেতরে আগে থেকে অবস্থান করছিলেন। রাত আনুমানিক ৯টার দিক গাজী মমিনের কন্যা ও রাত ১২টার দিকে বাবা মা আলাদা কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। এরপরই এই ঘটনা ঘটে।

গাজী মমিন দৈনিক আজকের পত্রিকার ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি। এ ছাড়াও স্থানীয় দৈনিক চাঁদপুর দর্পণ ও নিউজ ২১ বাংলা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন।

ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্ত করেছি ও খোঁজ খবর নিচ্ছি। এ ছাড়া গাজী মমিন লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে এ ঘটনায় গাজী মমিনের মেয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পূর্ব বড়ালী শাহজাহান কবির উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পরিচালনা পর্ষদ ও পূর্ব বড়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পরিচালনা পর্ষদ, পূর্ব বড়ালী যুব উন্নয়ন সংঘসহ স্থানীয় সচেতন মহলের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেন।

এ ঘটনায় ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা অপরাধীদের খুঁজে দ্রুত আইনের আওতায় নেয়ার জন্য ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশকে অনুরোধ জানিয়েছেন।