সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রমালিকানাধীন বণিজ্যিক ব্যাংক তথা সোনালী ব্যাংকে আইটি কর্মকর্তাদের নানা কৌশলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বঞ্চিত করে উদ্দেশ্যমূলক সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে আইটি খাত-কে ভারতীয় পণ্যের বাজারে পরিণত করা হয়েছে।
মূলত: ২০১০ সালে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আইসিটি বিষয়ে গ্রাজুয়েট পোস্ট-গ্রাজুয়েট ডিগ্রীধারীদের নিয়োগের পর হতেই ব্যাংকটির আইটি কর্মকান্ড ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
২০১০ পরবর্তী সময়ে গ্রামের ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শাখাসমূহ কম্পিউটারায়নের মাধ্যমে শহর-গ্রাম নির্বিশেষে দেশের আপামর জনসাধারণের জন্য সনাতন ম্যানুয়েল পদ্ধতির ব্যাংকিং প্রথার পরিবর্তে সফটওয়্যার নির্ভর ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করার জন্য একের পর এক সফটওয়্যার তৈরি, সমগ্র ব্যাংকের আইটি অবকাঠামো নির্মাণ, ডাটা সেন্টার প্রতিষ্ঠা, ডাটাবেজ ব্যবস্থাপনাসহ নানাবিধ আইটি কর্মকান্ড পরিচালনা আইটি কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় সম্পাদন হয়েছে/হচ্ছে। এমনকি, ঘরে বসে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের জন্য আইটি কর্মকর্তাদের তৈরি একাধিক মোবাইল অ্যাপস (e-Wallet, e-Sheba) ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
এছাড়াও, ফরেন রেমিটেন্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, BATCH, CIB, HRMS প্রভৃতিসহ নিত্য ব্যবহার্য অর্ধ-শতাধিক সফটওয়্যার তাদেরই তৈরি। দেশের সর্ববৃহৎ এ বাণিজ্যিক ব্যাংকের আইটি বহির্ভূত অন্যান্য ক্যাটাগরির বিশাল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইটি ভীতি দূর করে আইটির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি, সাইবার সচেতন করা, আইটি বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি প্রভৃতি আইটি কর্মকর্তাদের পরিশ্রমের ফসল। ব্যাংকের আইটি কর্মকর্তাদের তৈরি নানা সফটওয়্যার বিভিন্ন সময়ে প্রশংসিত এমনকি একাধিকবার জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হয়েছে।
আইটি বহির্ভূত অন্যান্য ক্যাটাগরির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশাল সংখ্যার তুলনায় আইটি কর্মকর্তাদের সংখ্যা অতি নগণ্য হওয়ায় বিগত ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকারের দোসররা ব্যাংকটির আইটি খাত-কে ভারতীয় আইটি পণ্যের বাজারে পরিণত করার সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংকের আইটি জনবলের উন্নয়ন এবং আইটি কর্মকর্তাদের প্রাপ্য সুবিধাদি প্রদান না করে উল্টো নানা অপকৌশলে আইটি জনবলের স্বার্থ ক্ষুণ্ণকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
২০১০ সালে আইটি কর্মকর্তাদের নিয়োগের সময় ব্যাংকের অর্গানোগ্রামটি (জনবল কাঠামো) আইটি-কে সমৃদ্ধ ও এর সক্ষমতা উচ্চতর পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রণীত হয়। কিন্তু, পরবর্তীতে ২০১৪ সালে আওয়ামী সরকারের দোসর তৎকালীন এমডি জনাব প্রদীপ কুমার দত্ত ব্যাংকের আইটি খাতকে ধ্বংসের হীন উদ্দেশ্যে আইটি কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত এজিএম সমমানের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট এর ২৬টি পদসহ বিভিন্ন গ্রেডের মোট ৬৪টি পদ বিলুপ্ত করে এবং একইসাথে ভারতীয় কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার আমদানি করে। ফলশ্রুতিতে, আইটির বিভিন্ন গ্রেডের সিংহভাগ কর্মকর্তা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সৃষ্ট সংকটের শিকার হয়ে দীর্ঘ ৬-৯ বছর পদোন্নতি বঞ্চিত হন যা তাঁদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশার সঞ্চার করে। বিদ্যমান পদ বিলুপ্ত করে পদোন্নতিতে জট সৃষ্টির ঘটনা ব্যাংকিং সেক্টরের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
২০২১ সালে পুনরায় অর্গানোগ্রাম হালনাগাদ করা হলেও ২০১৪ সালে সৃষ্ট পদোন্নতি-জট নিরসন না হওয়ায় তাঁদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এমন হঠকারী, বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে ব্যাংকের আইটি কর্মকর্তাদের অনেকেই তাঁদের চেয়ে ৫ বছর পর একই গ্রেডের জেনারেল ক্যাটাগরীতে যোগদানকারী কর্মকর্তাদের চেয়ে জুনিয়রে পরিণত হয়েছেন।
এ সকল প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের শিকার না হলে ২০১০ সালে যোগদানকারী অধিকাংশ আইটি কর্মকর্তারা ২০২২ সালেই ৪র্থ গ্রেডে উন্নীত হতেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতনের পর বৈষম্য বিরোধী সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ফ্যাসিবাদের দোসরদের সৃষ্ট দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত এসব বৈষম্যের অবসান ও প্রাপ্য পদোন্নতি প্রদানের জন্য বঞ্চনার শিকার উক্ত আইটি কর্মকর্তাগন কর্তৃক ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানানো হয়। কিন্তু, ব্যাংক কর্তৃক বিশাল জনগোষ্ঠীর পদোন্নতির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও রহস্যজনকভাবে বঞ্চনার শিকার স্বল্প সংখ্যক আইটি কর্মকর্তাদের বৈষম্য নিরসনে প্রকৃতপক্ষে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি এখনো।
আইটি কর্মকর্তাদের তৈরি সফটওয়্যার নানা সময়ে পুরস্কার অর্জন করে ব্যাংকের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করলেও এসব গৌরবময় অর্জন তাঁদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত বৈষম্যের অবসান ও প্রাপ্য সুবিধাদি প্রাপ্তিতে কোনও কাজে আসেনি। বরং সোনালী ব্যাংকে আইটির প্রতি ফ্যাসিবাদী মনোভাব এবং আইটি কর্মকর্তাদের অবহেলিত, উপেক্ষিত ও বঞ্চিত রেখে ভারতীয় বাজার সৃষ্টির চেষ্টা পূর্বের মতোই অব্যাহত আছে।
ব্যাংকের আইটি খাতে পরনির্ভরতা কমিয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আইটি কর্মকর্তাদের সাথে ২০১০ সাল থেকে এযাবৎ সৃষ্ট নজিরবিহীন প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য নিরসন, হরণকৃত সুবিধাদি প্রদানের জন্য আইটি কর্মকর্তাগণ মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা ও মাননীয় আইসিটি উপদেষ্টার একান্ত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ফ্যাসিস্ট আমলে ৩২ কর্মকর্তা বৈষম্যের শিকার, মৃত্যুর আগে তারা প্রাপ্ত সন্মান ‘পদোন্নতি’ পেতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে গত ১ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে লিখিত অভিযোগ করেন।