জেলার পাথরঘাটায় যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও উপজেলা শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বরগুনা জেলা শাখা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বরগুনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বরগুনা জেলা শাখা আহুত সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবাদ জানানো হয়। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর বরগুনা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এ সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
জেলা আমীর অধ্যাপক মাওলানা মুহিবুল্লাহ হারুন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায় পহেলা জানুয়ারী একটা অনাকাঙ্খিত হত্যকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। দুটি পক্ষের মধ্যে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মোঃ নাসির নামে এক যুবদল কর্মী হত্যাকান্ডের শিকার হন। যার বাস্তব সাক্ষী এলাকাবাসী এবং পাথরঘাটার স্থানীয় সংবাদকর্মীগণ। তিনি জাতীয়তাবাদী যুবদলের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন,একটি রাজনৈতিক দলের কিছু কর্মী ও নেতৃবৃন্দ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে জামায়াতে ইসলামের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য এই হত্যাকান্ডটি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের উপর চাপিয়ে দেওয়ার ঘৃণ্য চেষ্টা করছে।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তি পুলিশ সুপার বিষয়টি নিয়ে যাচাই বাছাই ছাড়াই উক্ত রাজনৈতিক দলটির নেতা কর্মীদের চাপিয়ে দেয়া অভিযোগের সাথে সুর মিলিয়ে অপরাধীরা ইসলামী ছাত্রশিবির সাথে জড়িত বলে বক্তব্য দিয়েছেন ।যাহা অনভিপ্রেত ।প্রশাসনের কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে এমন একটি অপরাধ সম্পর্কে তদন্ত ছাড়াই ধারণা প্রকাশ করা তাঁদের দায়িত্ব ও পেশাদারিত্বের পরিপন্থি ও বিধি লঙ্ঘনের শামিল বলে মন্তব্য করেন জামায়াতের নেতৃবৃন্দ।
অন্যদিকে উক্ত রাজনৈতিক দলের কয়েকটি অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু নেতা কর্মীদের মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে যে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অভিযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তা কেবল রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত ই নয় বরং স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের দীর্ঘ সহযাত্রীদের প্রতি চরম অকৃতজ্ঞতার শামিল।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমীর অধ্যাপক মাওলানা মুহিবুল্লাহ হারুন বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি আদর্শিক সুশৃঙ্খল শান্তিকামী সংগঠন। আমরা কোন সহিংসতা বা প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। তাই আপনাদের মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বরগুনা জেলা শাখার পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে জানাতে চাই, এই হত্যাকান্ডের সাথে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পাথরঘাটা উপজেলা এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কোন নেতা কর্মী জড়িত নয়।
জামায়াত নেতৃবৃন্দ বলেন, একটা দুর্বৃত্ত শ্রেণি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের পাথরঘাটা থানা দক্ষিণ শাখার সভাপতি হাফেজ মোঃ রাকিব হাসানকে হত্যার উদ্দেশ্যে ন্যাক্কারজনক হামলা করেছে। শিবির সভাপতি মোঃ রাকিব হাসান সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নেতৃবৃন্দ পাথরঘাটা তথা বরগুনার সর্বস্তরের জনগণকে এই ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি এই ঘৃন্য হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনসহ প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনের জামায়াতে ইসলামী নেতৃবৃন্দ সাম্প্রতিক এই ঘটনার বিষয়ে কয়েকটি দাবী তুলে ধরেন-
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বরগুনা জেলা শাখার পক্ষ থেকে এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, পাথরঘাটা উপজেলা শাখা বরগুনা জেলা শাখার পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। ইসলামী ছাত্রশিবির পাথরঘাটা থানা সভাপতি হাফেজ মোঃ রাকিব হাসানের উপর ঘৃণা হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক আইনের আওতায় এনে শান্তির দাবী জানান। জাতীয়তাবাদী দলের নেতা কর্মীদের পক্ষ থেকে এই হত্যাকান্ডের সাথে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরকে জড়িয়ে উদ্দেশ্যমূলক ও শিষ্টাচার বহির্ভূত অভিযোগের চেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি তাঁদের দেয়া মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবী জানান। এই হত্যাকাণ্ড এবং শিবির সভাপতির উপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে অস্থিতিশীলতার হয়েছে তা দূর করার জন্য জাতীয়তাবাদী দলের দায়িত্বশীল মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারী শক্তি যেন এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় ঐক্য এবং জুলাইয়ে অর্জিত বিজয়কে ভুলুষ্ঠিত করার সাহস না পায়।
সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য রাখেন জেলা নায়েবে আমির মাওলানা এসএম আফজালুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি মোঃ আসাদুজ্জামান আল মামুন, জেলা সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাস্টার শামীম আহসান, পাথরঘাটা পৌর আমির মাওলানা বজলুর রহমান, বরগুনা পৌর আমির মাওলানা আব্দুল জলিল প্রমুখ।