ঢাকা ০৮:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
তরুণদের সম্পৃক্ত করে জলবায়ু অভিযোজন জোরদারের উদ্যোগ রশুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি নেয়াকে কেন্দ্র করে অভিভাবকদের ক্ষোভ নওগাঁয় সাংবাদিকদের ঈদ পুনর্মিলনী সভা অনুষ্ঠিত শাহআলী থানায় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মামলা না নিতে থানা ঘেরাও নওগাঁয় সাড়ে ৩ কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার- ৩ বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে পাট ও পাটজাত পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা ভারতের রূপনগরে বিএনপির বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি: ২০ হাজার নিমগাছ রোপণের উদ্যোগ ঘোষণা আমিনুল হকের দিয়ামনি ই-কমিউনিকেশন এর নতুন অফিস উদ্বোধন মির্জাগঞ্জে ধর্ষণ চেষ্টার মিথ্যা মামলা করায় বাদী কারাগারে মাগুরা জেলা পুলিশের উদ্যোগে হাজীপুর ইউনিয়নে সিসিটি টিভি ক্যামেরা চালু

সান্তাহারে ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নামে টাকা নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা

এমামুল, আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি-

বগুড়ার আদমদীঘিতে সরকারি বিভিন্ন ভাতার কার্ড দেওয়ার নামে টাকা নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র পরিচয়ে প্রতিনিধিরা। উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের মালশন ও সাহেব পাড়া এলাকায় কয়েকদিন ধরে টিসিবি, বয়স্ক, বিধবা ও মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য প্রায় দেড় শতাধিক ব্যক্তিদের থেকে ৩৫০ টাকা করে নিয়েছেন তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আনদোলনের প্রতিনিধির পরিচয়ে আতিক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। আতিক সান্তাহার মালশন গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আতিকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, অভিযোগটি ভিত্তিহীন। এর সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। আদমদীঘি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ফাহাদ এই বিষয়ে অবগত রয়েছে বলে জানান তিনি।

জানা যায়, দেশের জনসাধারণের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করে আসছেন সরকার। বিনামূল্যে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, টিসিবি সহ নানা সুবিধা দিচ্ছেন সুবিধাভোগীদের। পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে প্রাপ্য লোকজনরা আবেদনের ভিত্তিতে এই সুবিধা পেয়ে থাকেন। অথচ কিছু অসাধু ব্যক্তিরা অর্থের বিনিময়ে কার্ড বিক্রি করছেন। ফলে সরকারি এই সুবিধা থেকেও অর্থ অভাবে অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন। এদিকে গত কয়েকদিন আগে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচয় দেওয়া প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে শনিবার বিকেলে উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের মালশন ও সাহেব পড়া এলাকায় সরকারি বিভিন্ন ভাতার কার্ড দেওয়ার নামে ৩৫০ টাকা নেওয়ার বিষয়ে বেশ কিছু ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। এসময় আক্ষেপ করে তারা ঘটনার বিষয়ে উল্লেখ করেন।

ভুক্তভোগী রেহেনা বেওয়া জানান, বিধবা ভাতার কার্ড করে দিবে বলে একদিন বাড়িতে আসেন আতিক ও তার সহপাঠীরা। তারা বলেন উপজেলা বিভিন্ন দপ্তরের লোকের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। এরপর ভোটার আইডির ফটোকপি ও ছবি নিয়ে যান এবং পরিশেষে অনলাইন আবেদন করার জন্য ৩৫০ টাকা নেয়৷

একই সুরে মোছাঃ খোতেজা নামের আরেক ভুক্তভোগী জানান, আমার স্বামী পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। কয়েকটা ছেলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবার সঙ্গে ভাতার কার্ডের কথা বলছিলো। এসময় সরকারি সুবিধা পেতে তাদের কথায় রাজি হই। তখন আমার স্বামীর ভোটার আইডি দেখে বলেন বয়স্ক ভাতার কার্ড করা সম্ভব। এটা এতদিনেও করেননি কেনো? পরে ভাতার কার্ড করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ৩৫০ টাকা খরচ নেন। এদিকে ৬৩ বছর বয়সি আজিবর হোসেন জানান, বর্তমানে বেকার হয়ে বাড়িতে আছি। সংসারের বিষয়টি ছেলেরা দেখছেন। এখন আগের মতো আর কোথায় কাজকর্মে যেতে পারিনা। এরআগে বয়স্ক ভাতার জন্য পৌরসভার গিয়েছিলাম বয়স কম থাকায় কার্ড করা সম্ভব হয়নি। গত পরশু হঠাৎ এলাকায় কিছু ছেলেরা আমার বাড়িতে এসে আমাকে দেখে বলেন বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিবে। তখন তাদের কথায় আমি অত্যান্ত খুশি হয়। তারা বলেন আপনি বেকার আছেন আপনার অগ্রাধিকার বেশি। তখন আমার থেকে ভোটার আইডি ও ছবি নেন। আর কিছু খরচের কথা বলেন। তখন তাদের বলি টাকা কি কোথাও দিতে হবে উত্তরে তারা বলেন এটা উপর মহলে খরচ লাগবে। এরপর তাদের চাহিদামতো টাকা দেই।

সচেতন নাগরিক রাকিবুল হাসান ও শাহজাহান আলম স্বপন জানান, বেশ কয়েকদিন ধরে এলাকায় কিছু ছেলেরা সরকারি বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দেওয়ার জন্য বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। মনে করলাম সরকার থেকে হয়তো তাদের কোন দায়িত্ব দিয়েছে। এরপর তাদের পরিচয় জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি পরিচয় বলেন। পরে এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে দেখলাম প্রায় দেড় শতাধিক লোকজনের থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ৩৫০ টাকা করে নিয়েছেন। বিষয়টি শুনে অবাক হলাম। অনলাইন করতে কি ৩৫০ টাকা লাগে প্রথম শুনালাম। এরআগে স্থানীয় প্রতিনিধিরা ৬০/৭০ টাকার মধ্যে আবেদন করে দিয়েছে। অনেক অসহায় মানুষের থেকে যে ৩৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে। যাদের ৩৫০ টাকায় একবেলা খাবার যোগান হয়। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবী জানিয়ে প্রশাসনের নিকট হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আল ফাহাদ জানান, আতিক নামের ব্যক্তি কে আমার জানা নাই। কোন অবস্থায় সরকারি ভাতা আবেদন প্রতি ৩৫০ টাকা নেওয়া যাবেনা। আমার নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা নেওয়াটা অপরাধ। বিষয়ে আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি।

আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজ জানান, সরকারি কোন সুবিধা পেতে কোন টাকার প্রয়োজন নাই। বিশেষ করে যেকোন ভাতা সংক্রান্ত। এ বিষয়ে খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগস

তরুণদের সম্পৃক্ত করে জলবায়ু অভিযোজন জোরদারের উদ্যোগ

সান্তাহারে ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নামে টাকা নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা

আপডেট টাইম : ০২:২৯:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫

এমামুল, আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি-

বগুড়ার আদমদীঘিতে সরকারি বিভিন্ন ভাতার কার্ড দেওয়ার নামে টাকা নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র পরিচয়ে প্রতিনিধিরা। উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের মালশন ও সাহেব পাড়া এলাকায় কয়েকদিন ধরে টিসিবি, বয়স্ক, বিধবা ও মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য প্রায় দেড় শতাধিক ব্যক্তিদের থেকে ৩৫০ টাকা করে নিয়েছেন তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আনদোলনের প্রতিনিধির পরিচয়ে আতিক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। আতিক সান্তাহার মালশন গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আতিকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, অভিযোগটি ভিত্তিহীন। এর সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। আদমদীঘি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ফাহাদ এই বিষয়ে অবগত রয়েছে বলে জানান তিনি।

জানা যায়, দেশের জনসাধারণের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করে আসছেন সরকার। বিনামূল্যে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, টিসিবি সহ নানা সুবিধা দিচ্ছেন সুবিধাভোগীদের। পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে প্রাপ্য লোকজনরা আবেদনের ভিত্তিতে এই সুবিধা পেয়ে থাকেন। অথচ কিছু অসাধু ব্যক্তিরা অর্থের বিনিময়ে কার্ড বিক্রি করছেন। ফলে সরকারি এই সুবিধা থেকেও অর্থ অভাবে অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন। এদিকে গত কয়েকদিন আগে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচয় দেওয়া প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে শনিবার বিকেলে উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের মালশন ও সাহেব পড়া এলাকায় সরকারি বিভিন্ন ভাতার কার্ড দেওয়ার নামে ৩৫০ টাকা নেওয়ার বিষয়ে বেশ কিছু ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। এসময় আক্ষেপ করে তারা ঘটনার বিষয়ে উল্লেখ করেন।

ভুক্তভোগী রেহেনা বেওয়া জানান, বিধবা ভাতার কার্ড করে দিবে বলে একদিন বাড়িতে আসেন আতিক ও তার সহপাঠীরা। তারা বলেন উপজেলা বিভিন্ন দপ্তরের লোকের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। এরপর ভোটার আইডির ফটোকপি ও ছবি নিয়ে যান এবং পরিশেষে অনলাইন আবেদন করার জন্য ৩৫০ টাকা নেয়৷

একই সুরে মোছাঃ খোতেজা নামের আরেক ভুক্তভোগী জানান, আমার স্বামী পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। কয়েকটা ছেলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবার সঙ্গে ভাতার কার্ডের কথা বলছিলো। এসময় সরকারি সুবিধা পেতে তাদের কথায় রাজি হই। তখন আমার স্বামীর ভোটার আইডি দেখে বলেন বয়স্ক ভাতার কার্ড করা সম্ভব। এটা এতদিনেও করেননি কেনো? পরে ভাতার কার্ড করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ৩৫০ টাকা খরচ নেন। এদিকে ৬৩ বছর বয়সি আজিবর হোসেন জানান, বর্তমানে বেকার হয়ে বাড়িতে আছি। সংসারের বিষয়টি ছেলেরা দেখছেন। এখন আগের মতো আর কোথায় কাজকর্মে যেতে পারিনা। এরআগে বয়স্ক ভাতার জন্য পৌরসভার গিয়েছিলাম বয়স কম থাকায় কার্ড করা সম্ভব হয়নি। গত পরশু হঠাৎ এলাকায় কিছু ছেলেরা আমার বাড়িতে এসে আমাকে দেখে বলেন বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিবে। তখন তাদের কথায় আমি অত্যান্ত খুশি হয়। তারা বলেন আপনি বেকার আছেন আপনার অগ্রাধিকার বেশি। তখন আমার থেকে ভোটার আইডি ও ছবি নেন। আর কিছু খরচের কথা বলেন। তখন তাদের বলি টাকা কি কোথাও দিতে হবে উত্তরে তারা বলেন এটা উপর মহলে খরচ লাগবে। এরপর তাদের চাহিদামতো টাকা দেই।

সচেতন নাগরিক রাকিবুল হাসান ও শাহজাহান আলম স্বপন জানান, বেশ কয়েকদিন ধরে এলাকায় কিছু ছেলেরা সরকারি বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দেওয়ার জন্য বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। মনে করলাম সরকার থেকে হয়তো তাদের কোন দায়িত্ব দিয়েছে। এরপর তাদের পরিচয় জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি পরিচয় বলেন। পরে এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে দেখলাম প্রায় দেড় শতাধিক লোকজনের থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ৩৫০ টাকা করে নিয়েছেন। বিষয়টি শুনে অবাক হলাম। অনলাইন করতে কি ৩৫০ টাকা লাগে প্রথম শুনালাম। এরআগে স্থানীয় প্রতিনিধিরা ৬০/৭০ টাকার মধ্যে আবেদন করে দিয়েছে। অনেক অসহায় মানুষের থেকে যে ৩৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে। যাদের ৩৫০ টাকায় একবেলা খাবার যোগান হয়। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবী জানিয়ে প্রশাসনের নিকট হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আল ফাহাদ জানান, আতিক নামের ব্যক্তি কে আমার জানা নাই। কোন অবস্থায় সরকারি ভাতা আবেদন প্রতি ৩৫০ টাকা নেওয়া যাবেনা। আমার নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা নেওয়াটা অপরাধ। বিষয়ে আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি।

আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজ জানান, সরকারি কোন সুবিধা পেতে কোন টাকার প্রয়োজন নাই। বিশেষ করে যেকোন ভাতা সংক্রান্ত। এ বিষয়ে খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।