ঢাকা ১২:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
ছাত্রদল নেতাকে প্রাণনাশের হুমকি,জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সামরিক হামলায় বাংলাদেশের নিন্দা সিরাজদিখানে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী পালিত ২০০ টাকার জন্য বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন মির্জাগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর ঈদ পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন মনপুরায় আগমনের সময় বাইক দূর্ঘটনায় আহত হন যুবদল নেতা রিপন ভারতে পালানোর সময় গোপালগঞ্জ জেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার মির্জাগঞ্জে “বন্ধু মহল”২০০১ অনুষ্ঠিত দেশে ফিরেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গুম এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে সকল শহীদ পরিবারের পাশে রয়েছে বিএনপি – আমিনুল হক

টাঙ্গাইলে বংশাই নদীর তীরে ঐতিহ্যবাহী ডুবের মেলা অনুষ্ঠিত

শাহ আলম,টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সৈয়দামপুর গ্রামে বংশাই নদীর তীরে দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী ডুবের মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শত বছরের প্রাচীন এই মেলা মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রতিবছর আয়োজিত হয়। স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, গঙ্গাস্নান করলে পাপ মোচন হয় এবং মনের বাসনা পূরণ হয়—এই বিশ্বাস থেকেই দূর-দূরান্তের মানুষ এখানে সমবেত হন।

ভোর থেকেই মেলায় অংশ নিতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসতে শুরু করে। পূণ্যার্থীরা বংশাই নদীতে গঙ্গাস্নান করে এবং পূজা-অর্চনা সম্পন্ন করেন। নারী, পুরুষ ও কিশোর-কিশোরীরা দলে দলে মেলার দিকে ছুটে আসেন। স্নান শেষে অনেকেই নদীর তীরে প্রার্থনা ও মানত করেন।

শান্তি রায়, যিনি টাঙ্গাইল শহর থেকে মেলায় এসেছেন, বলেন,
আমি প্রায় ১০-১২ বছর ধরে এই মেলায় আসছি। এখানে এসে স্নান করলে মন প্রশান্ত হয়। আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি অত্যন্ত পূণ্য লাভের স্থান। প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা এই গঙ্গাস্নান আমাদের সংস্কৃতির একটি বড় অংশ।”

ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু হওয়া মেলা

স্থানীয়দের মতে, ব্রিটিশ শাসনামলে ‘বক্ত সাধু’ নামে পরিচিত মাধব ঠাকুরের মূর্তি প্রতিস্থাপনের পর থেকেই এখানে পূজা শুরু হয়। সেই সময় থেকেই গঙ্গাস্নান এবং মেলাটি নিয়মিত আয়োজিত হয়ে আসছে। ধীরে ধীরে এটি ডুবের মেলা নামে পরিচিতি লাভ করে।

পুরোহিত রবিন্দ্র চক্রবর্তী জানান,
“আমাদের পূর্বপুরুষদের সময় থেকেই এই গঙ্গাস্নান হয়ে আসছে। এটি মূলত মাঘী পূর্ণিমার গঙ্গাস্নান হিসেবে পরিচিত। এবারও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১৫-২০ জন পুরোহিত এসেছেন পূজা-অর্চনা পরিচালনার জন্য।

শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাই নয়, এই মেলাকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা। মিষ্টি বিক্রেতা ফজল আলী, যিনি ৩২ বছর ধরে এই মেলায় আসছেন, বলেন—
“এখানে মিষ্টির বেশ ভালো চাহিদা থাকে। প্রতি বছর ১০-১২ মণ মিষ্টি বিক্রি হয়। এ ছাড়া খেলনা, পোশাক, খাবারসহ নানা ধরনের দোকান বসে, যা মেলার আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয়।

মেলা নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম আল মামুন বলেন,
এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের সময় থেকে চলে আসা একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা। প্রতি বছর হাজারো মানুষ এখানে আসেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে, যাতে সবাই নির্ভয়ে উৎসবে অংশ নিতে পারেন।

শতবর্ষী এই ডুবের মেলা কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। যুগ যুগ ধরে টাঙ্গাইলের মানুষ এই মেলাকে সংরক্ষণ করে আসছে, যা বাংলাদেশের লোকজ ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

ছাত্রদল নেতাকে প্রাণনাশের হুমকি,জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি

টাঙ্গাইলে বংশাই নদীর তীরে ঐতিহ্যবাহী ডুবের মেলা অনুষ্ঠিত

আপডেট টাইম : ০২:৩০:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শাহ আলম,টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সৈয়দামপুর গ্রামে বংশাই নদীর তীরে দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী ডুবের মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শত বছরের প্রাচীন এই মেলা মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রতিবছর আয়োজিত হয়। স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, গঙ্গাস্নান করলে পাপ মোচন হয় এবং মনের বাসনা পূরণ হয়—এই বিশ্বাস থেকেই দূর-দূরান্তের মানুষ এখানে সমবেত হন।

ভোর থেকেই মেলায় অংশ নিতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসতে শুরু করে। পূণ্যার্থীরা বংশাই নদীতে গঙ্গাস্নান করে এবং পূজা-অর্চনা সম্পন্ন করেন। নারী, পুরুষ ও কিশোর-কিশোরীরা দলে দলে মেলার দিকে ছুটে আসেন। স্নান শেষে অনেকেই নদীর তীরে প্রার্থনা ও মানত করেন।

শান্তি রায়, যিনি টাঙ্গাইল শহর থেকে মেলায় এসেছেন, বলেন,
আমি প্রায় ১০-১২ বছর ধরে এই মেলায় আসছি। এখানে এসে স্নান করলে মন প্রশান্ত হয়। আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি অত্যন্ত পূণ্য লাভের স্থান। প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা এই গঙ্গাস্নান আমাদের সংস্কৃতির একটি বড় অংশ।”

ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু হওয়া মেলা

স্থানীয়দের মতে, ব্রিটিশ শাসনামলে ‘বক্ত সাধু’ নামে পরিচিত মাধব ঠাকুরের মূর্তি প্রতিস্থাপনের পর থেকেই এখানে পূজা শুরু হয়। সেই সময় থেকেই গঙ্গাস্নান এবং মেলাটি নিয়মিত আয়োজিত হয়ে আসছে। ধীরে ধীরে এটি ডুবের মেলা নামে পরিচিতি লাভ করে।

পুরোহিত রবিন্দ্র চক্রবর্তী জানান,
“আমাদের পূর্বপুরুষদের সময় থেকেই এই গঙ্গাস্নান হয়ে আসছে। এটি মূলত মাঘী পূর্ণিমার গঙ্গাস্নান হিসেবে পরিচিত। এবারও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১৫-২০ জন পুরোহিত এসেছেন পূজা-অর্চনা পরিচালনার জন্য।

শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাই নয়, এই মেলাকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা। মিষ্টি বিক্রেতা ফজল আলী, যিনি ৩২ বছর ধরে এই মেলায় আসছেন, বলেন—
“এখানে মিষ্টির বেশ ভালো চাহিদা থাকে। প্রতি বছর ১০-১২ মণ মিষ্টি বিক্রি হয়। এ ছাড়া খেলনা, পোশাক, খাবারসহ নানা ধরনের দোকান বসে, যা মেলার আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয়।

মেলা নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম আল মামুন বলেন,
এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের সময় থেকে চলে আসা একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা। প্রতি বছর হাজারো মানুষ এখানে আসেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে, যাতে সবাই নির্ভয়ে উৎসবে অংশ নিতে পারেন।

শতবর্ষী এই ডুবের মেলা কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। যুগ যুগ ধরে টাঙ্গাইলের মানুষ এই মেলাকে সংরক্ষণ করে আসছে, যা বাংলাদেশের লোকজ ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন।