ফেসবুকে পরিচয়ে বিয়ে করে প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলিং করে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে রাজধানীতে স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন প্রবাসি স্বামী সাইদুর আনোয়ার আদনান (৪৫) নামে এক লোক, ওই মামলায় গ্রেফতার হয়ে নববধু জেল হাজতে।
সুত্রে জানা যায়, রাজধানী মিরপুর-২ নম্বর সেকশনের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর ছেলে আদনান চৌধুরী দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসি, ১৮ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে আসেন, এবং গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে ফেসবুকের মাধ্যমে ফাতেমা আক্তার গাজী (৩২) এক সুন্দরী যুবতীর সাথে পরিচয় হয় ও বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এরপর ভালোবাসার সম্পর্ক গড়াই। তাদের প্রেম ভালোবাসা ১ মাসের মতো হলে ভালোবাসার সুত্র ধরে পারিবারিক ভাবে আলোচনার মাধ্যেমে গত ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ইং তারিখে প্রবাসি আদনান চৌধুরী ও ফাতেমা আক্তার গাজীর ১৫ লাখ টাকা দেন-মোহর ধার্যে এবং ১৩ ভরি স্বর্ণালংকারের মুল্য ১০ লাখ টাকা অশিল দেখিয়ে বিয়ে হয় যা ছিলো ফাতেমা আক্তারের প্রতারণার ফাঁদ।
তথ্যনুসন্ধানে জানা যায়, চাঁদপুর জেলা সদরের নতুন বাজার এলাকার আবুল হাসেম গাজীর মেয়ে ফাতেমা আক্তার গাজী। বর্তমানে বড় বোনের বাসায় ঢাকা মোহাম্মাদপুর শেখেরটেক থাকেন।
বিয়ের ১ মাসের মধ্যে ফাতেমা আক্তারের চরিত্র আদনানের নিকট উম্মাচিত হতে থাকে। বিবাহের পর বিভিন্ন অজুহাতে ৪ লাখ টাকা নেন এবং এর এক সপ্তাহ পর ফাতেমা আক্তার গাজীর বাবা একটা জমি ক্রয় করবেন বলে ১০ লাখ টাকা দাবী করেন, প্রবাসি স্বামী বিশ্বাস করে ফাতেমা আক্তারের বাবকে ২ লাখ টাকা ধার দেন। ১০ লাখ টাকা কেনো দেয়া হলোনা এ নিয়ে স্ত্রী ফাতেমা আক্তার স্বামীর সাথে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকে। এরপর থেকে ফাতেমা আক্তারের বন্ধু পরিচয়ে বাসায় বিভিন্ন লোকজন আসতে থাকে এবং রাতের পর রাত ফাতেমা বিভিন্ন লোকের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বার্তা বলতে থাকে আর বিভিন্ন অজুহাতে স্বামী আদনানের নিকট থেকে টাকা পঁয়সা নিতে থাকে। এ সব নিয়ে আদনানের সাথে ফাতেমা আক্তার বিবাদের সৃষ্টি করে এবং সংসার করবেনা বলে জানিয়ে দেয়।
২২ মার্চ ২০২৫ তারিখে ফাতেমা আক্তারের বড়বোন আয়শা আক্তার বেবী, ভাগ্নি তুলতুল ও দুলাভাই সেলিম বাসায় আসেন এবং ওই জমি কেনার ১০ লাখ টাকা না দেয়াকে কেন্দ্র করে বাসার মধ্যে নতুন করে ঝগড়াঝাটি শুরু করে। ফাতেমা আক্তার ও তার বোন আয়শা আক্তার বেবী, ভাগ্নি তুলতুল ও দুলাভাই সেলিম আদনানকে প্রাণ নাশসহ বিভিন্ন হুমকী প্রদান করেন। বাসাটিতে আদনানের অসুস্থ্য বৃদ্ধা মা থাকেন। ঝগড়াঝাটির কারণে আদনান রাগ করে ২২ মার্চ রাতে বাসা থেকে বের হয়ে যান। ২৩ মার্চ বাসায় এসে দেখেন বাসার মালামাল, টাকা পঁয়সা, বৈদেশিক মুদ্রা, আদনানের পাসপোর্ট, যাতায়াতের পাসপোর্ট, রেসিডেন্ট কার্ড, প্রুফ অব পেয়ার কার্ড, আইফোন ২টি, আদনানের বাবার মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট, ম্যানিব্যাগ, ব্যাংকের চেক বই, সাউথ আফ্রিকার ৩টি ভিসাকার্ড, ব্যাংকের ৩টি ডেবিট কার্ড, নগদ ৩ লাখ টাকা, সাউথ আফ্রিকার মুদ্রা ১০ হাজার রেন, ইউএস ২ হাজার ডলার, স্বর্ণের চেইন, ব্রেসলাইট, ফিঙ্গার রিং সব মিলে ৭ ভরি স্বর্ণ যাহার মুল্য প্রায় ১১ লাখ টাকা। ১০ হাজার রেন, ইউএস ২ হাজার ডলারের সমোপরিমান বাংলাদেশী ১০ লাখ টাকাসহ সব মালামাল চুরি করে পালিয়ে যায়। এবং স্বামী আদনানকে মোবাইল ফোনে জানিয়ে দেয় ফাতেমা আক্তার ঘর সংসার করবেন না। ৩০ লাখ টাকা দিলে তার ওই চোরাইকৃত মালামাল ফেরৎ দিবে। আদনান তার স্ত্রীর ঢাকার ঠিকানা মোহাম্মদপুর শেখেরটেক গেলে সেখানে তাদের খুজে পাননি। তখন প্রবাসি আদনান চৌধুরী বুঝতে পারেন তিনি প্রত্যারকের খপ্পরে পড়েছেন।
এরপর প্রবাসি আদনান গত ২০ এপ্রিল ২০২৫ ইং তারিখে রাজধানী মিরপুর মডেল থানায় হাজির হয়ে ৪ জনকে আসামি করে একটি প্রতারণা ও চুরি মামলা করেন যাহার মামলা নং ৩৯। এরপর মিরপুর মডেল থানা পুলিশ গত ২৩ এপ্রিল রামপুরা বনশ্রীতে অভিযান চালিয়ে আসামী নববধু ফাতেমা আক্তার গাজী ও তার বড় বোন আয়শা আক্তার বেবীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে তারা জেল হাজতে আছেন।