সরকারী প্রশাসনে বৈষয়িক উন্নতি এবং নতুন মর্যাদা অর্জনের জন্য আমলাগণ সর্বদাই সচেষ্ট থাকেন। জনজীবনের সমস্যা সম্পর্কে তারা সজাগ খুব একটা থাকেন না। দেশের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো সরকারি দায়িত্বে নিযুক্ত থাকার জন্য সমাজের অন্যান্য অংশের প্রতি আমলাদের তাচ্ছিল্যের মনোভাব গড়ে ওঠে। নিজের পদোন্নতি এবং বৈষয়িক অর্জন তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে। অতিরিক্ত ক্ষমতা চর্চার ফলে আমলাগণ জন-সেবকের পরিবর্তে নিজেদেরকে প্রভুর ভূমিকায় নিয়ে দাঁড় করান। বৈষয়িক অর্জন এবং প্রভুর ভূমিকায় অবতীর্ন এমন ৪ জন কর্মকর্তার আর্থিক অনিয়মের চিত্র এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো।
মোঃ কামাল উদ্দিন বিশ্বাস গণপ্র্জাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব, পরিচিতি নং-৫৯৮১, বর্তমানে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে কর্মরত, শ্যামলী নবী, গণপ্র্জাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন যুগ্ম-সচিব, পরিচিতি নং- ১৫৩০৯ বর্তমানে শিল্প মন্ত্রণালয়ে কর্মরত, কাজী মাহবুবুর রশীদ, গণপ্র্জাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন যুগ্ম-সচিব পরিচিতি নং- ১৫৫২৮ পরিচালক (প্রশাসন) হিসাবে বিসিকে কর্মরত, মোঃ আব্দুল মতিন, গণপ্র্জাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন উপ-সচিব, পরিচিতি নং-১৫৭৯৭ পরিচালক (পুর কৌশল ও প্রকল্প বাস্তবায়ন) হিসাবে বিসিকে কর্মরত । উল্লিখিত চারজন কর্মকর্তাই সরকারের প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে সরকার প্রদত্ত সুদমুক্ত গাড়ী ঋণ সুবিধা গ্রহণকারী ব্যক্তি।
গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা, ২০২০ (সংশোধিত)এর ধারা নং-২, উপধারা (ঘ) এর বিধান অনুযায়ী”গাড়ি রক্ষণা-বেক্ষণ ব্যয়” অর্থ এ নীতিমালার আওতায় সুদমুক্ত ঋণের অর্থে ক্রয়কৃত গাড়ির মেরামত/সংরক্ষণ, জ্বালানী, ড্রাইভারের বেতন, বীমা, ফিটনেস নবায়ন, কর, অন্যান্য ফি ইত্যাদি বাবদ প্রদেয় মাসিক রক্ষণা-বেক্ষণ ব্যয় প্রতিমাসে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) গ্রহণ করার পাশাপাশি বিসিকে তাদের কর্মকালীন সময়ে সার্বক্ষনিক বিসিকের গাড়ী ব্যবহার করেছেন। উক্ত কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষনিক ভাবে বিসিকের গাড়ী ব্যবহার করেছেন মর্মে নিশ্চিত করেছেন বিসিকের উপকরণ শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক তারানা জাহান তানিয়া। একই শাখার ট্রান্সপোর্ট অফিসার জাহাংগীর আলম এবং কামাল উদ্দিন বিশ্বাসের গাড়ী চালক মোঃ ফজলুর রহমান, শ্যামলী নবীর গাড়ী চালক মোঃ দুলাল মিয়া, কাজী মাহবুবুর রশীদ এর গাড়ী চালক নয়ন মিয়া। মোঃ আব্দুল মতিন এর গাড়ীচালক বার বার ফোন করার পরও মোঃ মামুন ফোন রিসিভ করেননি। বিশ্বস্থ সূত্রের বরাতে জানা গেছে সরকারী অর্থ আত্মসাৎকারী মোঃ আব্দুল মতিন, উপ-সচিব হতে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন অতি শীঘ্রই।
একদিকে উল্লিখিত চারজন কর্মকর্তা রক্ষণা-বেক্ষন ব্যয় বাবদ সরকারের নিকট হতে নির্ধারিত ৫০,০০০/- টাকার অর্থ গ্রহণ করেছেন অন্যদিকে তারা গাড়ী চালকসহ সার্বক্ষণিক বিসিকের গাড়ি ব্যবহার করেছেন-যা গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা, ২০২০ (সংশোধিত) এর প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত ঋণ এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা, ২০২০ (সংশোধিত) এর ধারা নং-৪, উপধারা (৩) (খ) এর বিধান সুদমুক্ত ঋণ গ্রহণ পূর্বক গাড়ি ক্রয়ের পর যানবাহন অধিদপ্তরের গাড়ি ব্যবহারের সুবিধা আর বহাল থাকবে না এর সুস্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট লংঘন ও অপকৌশলের মাধ্যমে সরকারী অর্থ আত্মসাতের নামান্তর। সুনির্দিষ্টভাবে তারা প্রত্যেকে বিধি ভংগ করে প্রতিমাসে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকার সরকারী অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা, ২০২০ (সংশোধিত) ধারা নং-১৭, উপধারা (৩) এর বিধান মতে রক্ষনাবেক্ষণ ব্যয় বাবদ ১০০% অর্থ গ্রহনকারী কর্মকর্তাগ্ণ অফিসে যা তায়াত বা অন্যকোন কাজের জন্য কোন ভাবেই কর্মস্থলের গাড়ী ব্যবহার করবেন না। ধারা নং-১৭, উপধারা (৪) এর বিধান হচ্ছে নীতিমালার ১০ (৩), ১৭(৩) অনুসরনে ব্যর্থতা সরকারী কর্মচারী (শৃংখলা ও আপীল) বিঁধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী অসদাচরণ বলে গন্য হবে এবং সংশ্লিষ্ট অর্থ শতকরা ১৫ (পনের) টাকা হারে জরিমানাসহ আদায় যোগ্য হবে।
বে-আইনীভাবে সরকারী অর্থ আত্মসাৎ বিষয়ে জানার জন্য চারজন কর্মকর্তাকে মোবাইলে ফোন করা হলে তাদের মধ্যেমোঃ কামাল উদ্দিন বিশ্বাস, অতিরিক্ত সচিব স্বীকার করেন যে, তিনি সরকার নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে ২৫,০০০/- টাকার অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করেছেন এবং তিনি অতিরিক্ত গ্রহণকৃত টাকা ফেরত প্রদান করবেন। যুগ্ম-সচিব শ্যামলী নবী বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন যে, তার মাসিক বেতন বিল হতে ২৫,০০০/- টাকা কর্তন করা হয়। যুগ্ম-সচিব কাজী মাহবুবুর রশীদ তার মতামত জানাতে গিয়ে বলেন যে, ৫০,০০০/- নয় আমি ২৫,০০০/- টাকার রক্ষনা-বেক্ষন ব্যয় গ্রহণ করি। উপ-সচিব মোঃ আব্দুল মতিনের মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি এমনকি পরবর্তীতেও কোন মতামত জানান নি। প্রাপ্ত তথ্য মতে মোঃ কামাল উদ্দিন বিশ্বাস, শ্যামলী নবী, কাজী মাহবুবুর রশীদ এবং মোঃ আব্দুল মতিন রক্ষণা-বেক্ষন ব্যয় বাবদ প্রতিমাসে ৫০,০০০/- টাকার অর্থ গ্রহণ করেছেন, যার রেকর্ড বিসিকের হিসাব ও অর্থ বিভাগে রক্ষিত আছে। সম্প্রতি অতিরিক্ত অর্থ গ্রহনের মাধ্যমে সরকারী অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর কাজী মাহবুবুর রশীদ এবং মোঃ আব্দুল মতিন ৫০,০০০/- এর পরিবর্তে ২৫,০০০/- টাকা রক্ষনা-বেক্ষন ব্যয় বাবদ গ্রহন করছেন।
সরকারের প্রচলিত বিধান অনুযায়ী সরকারী অথর্ আত্মসাৎকারী চারজন কর্মকর্তার নিকট হতে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী আত্মসাৎকৃত অর্থ জরিমানাসহ আদায় করা এবং সরকারী অর্থ আত্মসাৎ/সরকারী অর্থ তছরূপ কাজে তাদেরকে সহযোগিতা প্রদানকারী বিসিকের উপ-নিয়ন্ত্রক (বিল) মোঃ মারুফ হাসান এবং সহকারী নিয়ন্ত্রক (বিল) মোঃ আরিফ আলমগীর এর বিরুদ্ধে সরকারী অর্থ তছরূপ এবং দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতীব জরুরী। উক্ত দুই জন কর্মকর্তার সরকারী অর্থ তছরূপ কাজে সহযোগিতা প্রদান-সরকারী অর্থ ব্যবস্থাপনা নীতিমালার পরিপš’ী এবং অসদাচারণ মূলক একটি কাজ। যা তাদের অদক্ষতা, অযোগ্যতা এবং সরকারী কার্য সম্পাদনে আন্তরিকতার অভাবের বিষয়টি প্রমাণ করে। উল্লেখ্য বিসিকের অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামোতে সহকারী নিয়ন্ত্রক (বিল) এর অস্তিত্ব না থাকলেও অধঃস্থন পদ হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার পদে দায়িত্বপালন করছেন মোঃ আরিফ আলমগীর, যা রহস্যজনক এবং সরকারী নির্দেশনার সাথে সাংঘর্ষিক। অধঃস্তন পদের কেউ উর্ধতন পদে ভারপ্রাপ্ত পদে দায়িত্ব পালনের বিধান থাকলেও উর্ধতন পদের কেউ অধঃস্তন পদের দায়িত্ব পালনের বিধান নেই।
সরকারী দপ্তর গুলোর নিয়ন্ত্রণকারী সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে স্মরণে রাখা একান্ত প্রয়োজন যে, সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা নীতিমালার যথাযথ প্রয়োগ ও সরকারী অর্থের ব্যবহার শৃংখলার মধ্যে রাখার লক্ষ্যেআর্থিক অনিয়মের শাস্তি দ্রত ও দৃষ্টান্তমূলক হওয়া উচিত। যাতে করে সরকারী অর্থ আত্মসাৎ বা লোপাট এবং তছরূপ কাজের সাথে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ উৎসাহ বোধ করতে না পারে। পাশাপাশি দায়িত্ব পালনকারী সকলে যেন সচেতনার সাথে দায়িত্ব পালন করে। কোন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/অধিদপ্তর/প্রতিষ্ঠানের দূর্নীতিবাজ ব্যক্তির দায়ভার একান্তই তার নিজের।