প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে আদালতে অপহরণ মামলা দায়েরের পর নিজের অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে গভীর রাতে বিবাদীর (মেয়ের প্রেমিক) বাড়িতে রেখে আসার অভিযোগ উঠেছে এক বাবার বিরুদ্ধে। মেয়ের স্বীকারোক্তি ও স্থানীয়দের সহায়তায় বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় এলাকায় শত শত মানুষ জড়ো হয়। খবর পেয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে আদালতের মাধ্যমে নিরাপদ আবাসনে (সেইফ হোম) পাঠিয়েছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের উত্তর ছৈলাবুনিয়া গ্রামে
স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, একই গ্রামের দুই তরুণ-তরুণী ইমরান ও মোসাদ্দিকা স্থানীয় ঝাটিবুনিয়া মোজাফ্ফর ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখা-পড়া করতো, একই সাথে আসা-যাওয়া, পরে ভালো লাগা থেকে প্রেমের সর্ম্পক তৈরি হয়। দুজনই অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া সত্বেও পরিবারের অমতে বাড়ি থেকে পালিয়ে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করেন তারা। কিন্তু সামাজিক ভাবে এ বিয়ে স্বীকৃতি পায়নি। পরে স্থানীয় শালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক আইনজীবির মাধ্যমে মেয়েকে তার বাবার জিম্মায় দেয়া হয়। বাবা রফিকুল ইসলাম মেয়ের বয়স ১৮ হলে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দিবেন বলে অঙ্গিকার নামায় স্বাক্ষর করেন।
ছেলে পক্ষের অভিযোগ, ১০ মে শুক্রবার রাত দুইটার দিকে মেয়ে মোসাদ্দিকাকে তার প্রেমিক ইমরানের বাড়িতে দিয়ে বাবা রফিকুল ইসলাম। এর আগে গত ৫মে আদালতে ইমরানের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন মেয়ের বাবা রফিকুল ইসলাম।
ইমরানের মা লাইজু বেগম বলেন, সেই মামলার ফাঁসাতেই মেয়ের বাবা রফিকুল ইসলাম তার মেয়েকে আমাদের বাড়িতে রেখে গেছেন। ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে । আমরা অপেক্ষায় ছিলাম বয়স হলে উভয়ের পরিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ওদের বিয়ে দিবো। শালিশ বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত আমরা সবাই মেনে নিলেও এ ঘটনার আগে রফিকুল ইসলাম আমার ছেলের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়েছিল। গত ৭ মে জামিনে ইমরান বাড়িতে ফিরে আসলে আবার তাকে মিথ্যা মামলায় ফাসাতে চাইছেন মেয়ের বাবা।
যদিও বিষয়টি অস্বীকার করে মেয়ের বাবা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার মেয়ের বিয়ের বয়স হয়নি। সে আমার জিম্মায় আমাদের বাড়িতেই ছিলো। শুক্রবার রাতে আমার মেয়েকে ওরা তুলে নিয়ে গেছে। মেয়ে ওই ছেলের ( ইমরানের) প্রতি দুর্বল। ওরা যা শিখিয়ে দেয় আমার মেয়ে তাই বলে। ৫ তারিখে আদালতে অপহরণ মামলার বিষয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
এদিকে মেয়ে মোসাদ্দিকা খবর বাংলাদেশকে বলেন, আমার বাবা ইমরানের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা প্রমাণ করতে রাতে তিনি নিজে জোর করে আমাকে এই বাড়ির সামনে রেখে গেছেন। তিনি আরো বলেন, আমরা দুজনে একে অপরকে ভালোবাসি। কিন্তু আমাদের পরিবার মেনে না নেয়ায় আমরা নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে পালিয়ে বিয়ে করি। জন্ম তারিখ অনুযায়ি আমার বয়স ১৭+ । কথা ছিলো আঠারো বছর হলে আনুষ্ঠানিক ভাবে আমাদের বিয়ে দিবেন বাবা কিন্তু তা না করে ইমরানকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে চাইছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল আউয়াল মৃধা খবর বাংলাদেশকে বলেন, এরা দুইজন একে অপরকে ভালোবাসে। এর আগে কয়েকবার মেয়েটি ছেলের বাড়িতে পালিয়ে এসেছে। সর্বশেষ এক শালিশ বৈঠকের মাধ্যমে মেয়েকে তার বাবার জিম্মায় দেয়া হয়েছিল কিন্তু গতরাতে মেয়েটিকে ছেলের বাড়ির সামনে দিয়ে যায় তার বাবা। এ ঘটনায় ওই বাড়ির সামনে শতশত মানুষ জড়ো হয়ে যায়।
ছেলে পক্ষের আইনজীবি মো. আলিম মল্লিক বলেন, ছেলে মেয়ের বয়স আঠারো ছুই ছুই। ওদের প্রেমের সম্পর্ক পরিবারের কেউ মেনে না নেয়ায় তারা পালিয়ে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করেন। কিন্তু সমাজ এ বিয়ের স্বীকৃতি না দেয়ায় উভয় পরিবারের মতামতের ভিত্তিতে মেয়েকে তার বাবার জিম্মায় রাখা হয়। কিন্তু ছেলেকে ( প্রেমিক ইমরান) ফাঁসাতে গত ৫তারিখ আদালতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন মেয়ের বাবা। এই মামলা প্রমাণ করতেই তিনি রাতে মেয়েকে ওই ছেলের বাড়িতে রেখে আসেন।
মির্জাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: শামীম হাওলাদার খবর বাংলাদেশকে বলেন, শুক্রবার রাতে ছেলে পক্ষের মাধ্যমে মুঠো ফোনে সংবাদ পেয়ে মেয়েটিকে ছেলের বাড়ির সামনে থেকে উদ্ধার করা হয়। মেয়েটিকে আদালতের মাধ্যমে নিরাপদ আবাসনে ( সেইফ হোমে ) পাঠানো হয়েছে। তবে ৫ মে তারিখে আদালতে দায়ের করা অপহরণ মামলার কপি হাতে পাইনি। পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।