মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় অধীন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল- জামুকার একজন সদস্য ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা মর্মে অভিযোগ উঠেছে। গুরুতর এই অভিযোগ করেছেন ঝিনাইদহ জেলার ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা, যাদের একজন যুদ্ধকালীন স্থানীয় কমান্ডার। মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর দাখিল করা লিখিত অভিযোগটি তদন্ত করার জন্য এরই মধ্যে জেলা প্রশাসক, ঝিনাইদহকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। অভিযোগের মুখে পড়া জামুকা সদস্য ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার বাসিন্দা।
অভিযোগের বর্ণনামতে জানা যায়, ১১ সদস্যের জামুকায় ১০তম সদস্য খ ম আমীর আলী একজন ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা। একাত্তরে তিনি মুক্তিযোদ্ধার কোন প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন নাই। কাজেই যুদ্ধে অংশ নেয়ারও প্রশ্ন ওঠে না। ২০২১ সালে তখনকার জামুকা সদস্য খান টিপু সুলতানের সহায়তায় তিনি কথিত মুজিব বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভূক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভূক্ত করার কাজ ১৯৭৯ সাল থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সময়ে তাদের ৩টি বড় তালিকা হয়েছে। মন্ত্রণালয় গঠনের পর ২০০২ এবং ২০০৫ সালে মুক্তিযোদ্ধার সরকারী গেজেট প্রকাশ করা হয়। এছাড়া আগে থেকেই রয়েছে মুক্তিযোদ্ধার ভারতীয় তালিকা। কিন্তু কোন তালিকায় আমীর আলীর নাম নেই। এলাকায় তিনি কখনো নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবী করেননি, তালিকাভূক্ত হতে উদ্যোগীও হননি। ঝিনাইদহের কোন মুক্তিযোদ্ধা তাকে মুক্তিযোদ্ধা বলে চেনেন না। অথচ জামুকার সদস্য হয়ে তিনিই এখন মুক্তিযোদ্ধা যাচাই কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।
অভিযোগটি প্রকাশিত হলে জামুকায় বর্তমানে দায়িত্ব পালনরত একাধিক সদস্য বিস্মিত হয়েছেন। জানতে চাইলে তারা বলেন, এটি সত্য হলে বিষয়টি তাদের জন্য বিব্রতকর। একজন সদস্য চরম ক্ষুব্ধ হয়ে জানান, বুঝতে পারছি না- এমন একজন ব্যক্তি কিভাবে জামুকায় ঢুকতে সক্ষম হলো। তিনি বলেন, বিশেষত জামুকা যখন অতীতের ‘ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরীর কারখানা’র বদনাম ঘুচিয়ে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনাক্তের কারখানায় পরিণত হয়েছে, সেই মুহুর্তে জামুকার সদস্য অমুক্তিযোদ্ধা হওয়া অবশ্যই দুর্ভাগ্যজনক। ব্যাপারটা প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারী দেন।
এই অভিযোগ এবং নিজের অবস্থান সম্পর্কে জানতে একাধিকবার তার মুঠোফোন নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আমীর আলীকে জামুকার সদস্য মনোনীত করতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক এক মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা কলকাঠি নেড়েছিলেন। হাই প্রোফাইল মুক্তিযোদ্ধা কমিউনিটিতে আগে থেকে সম্পর্ক থাকায় সেই প্রভাব খাটিয়ে তিনি এ অনৈতিক কাজটি করেছেন। প্রশ্নের জবাবে সূত্রটি বলেন, আমীর আলী জামুকার সদস্য মনোনীত হওয়ায় ওই লোকটির কি স্বার্থ হাসিল হয়েছে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।
এদিকে, আমীর আলীর বিরুদ্ধে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ দায়ের হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়েছে ঝিনাইদহসহ ঢাকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভেতর। ঘটনার আকষ্মিকতায় তারা হতবাগ। সকলেরই প্রশ্ন, এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তি কিভাবে জামুকার মত সংস্থায় ঢোকার সুযোগ পেলেন। বর্তমানে জামুকার কমিটিতে পরীক্ষিত ও সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধাগণ অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের দায়িত্বশীল কাজের মধ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হারানো ইমেজ ফিরে আসছে। সেই মুহুর্তে এমন ঘটনা মোটেই কাঙ্খিত নয়। মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত এর কার্যকর সুরাহা দেখতে চান।