ঢাকা ০৭:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
নতুন ব্যাগ নিয়ে বিদ্যালয়ে হাজির ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের চমকে দিলেন ইউএনও আড়পাড়া ডিগ্রি কলেজে নিয়োগ বাণিজ্য ও স্বাক্ষর জালিয়াতি  গভর্নিং বডি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ বিশেষ চুক্তিতে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে রেটকোট ফাঁস করেছেন পিডি মঞ্জুরুল হক! ঢাকাই চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী আনোয়ারার সঙ্গে দিয়ামনি ই-কমিউনিকেশনের সৌজন্য সাক্ষাৎ বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে মাসুদ রানা ও নান্নুর ভয়ংকর সিন্ডিকেট! ষড়যন্ত্রকারী যত চেষ্টাই করুক; সফল হবে না, জনগণের সরকারই আগামী নির্বাচনে প্রতিষ্ঠিত হবে – আমিনুল হক নির্দিষ্ট কোন অভিযোগ ছাড়াই ১৬ প্রতিষ্ঠান সিলগালা করল বেবিচক মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ৭ মাস বয়সী দুই যজম কন্যা শিশুকে হত্যার অভিযোগ পালিয়ে থাকা আইন মন্ত্রণালয়ের সেই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত ৬৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রে ফাঁসলেন রাজউক উপপরিচালক ও তার স্ত্রী
বিসিআইসির বাফার ৩৪ গুদাম নির্মাণ প্রকল্পে ভয়াবহ দুর্নীতি:

বিশেষ চুক্তিতে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে রেটকোট ফাঁস করেছেন পিডি মঞ্জুরুল হক!

প্রবাদ আছে যে,কয়লা শতবার ধুলেও তার ময়লা ছাড়ে না। ঠিক তেমনটিই পরিলক্ষিত হচ্ছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসির) একটি বৃহত্তর প্রকল্পের পিডির ক্ষেত্রে। এই প্রকল্প পরিচালক প্রায় এক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতি করে বারবার সংবাদপত্রের শিরোনাম হলেও তিনি নিজেকে শুধরাচ্ছেন না। বরং দিনদিন তার দুর্নীতির মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিব ও বিসিআইসি চেয়ারম্যানের নিরবতাও সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে। এমন একজন আওয়ামী ঘরাণার পিডিকে কেন আজঅব্দি এই প্রকল্পের পিডি রাখা হয়েছে তারও কোন জবাব মিলছে না। এই পিডির নাম মো: মঞ্জুরুল হক। তিনি বাফার ৩৪ সার গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক।

সম্প্রতি এই পিডি বাফার ৩৪ সার গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের টেন্ডারে ভয়ংকর দুর্নীতি করেছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে। । তিনি বিশেষ চুক্তিতে ৪ টি ঠিকাদারী ফার্মকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য ওই ৪ টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে রেটকোট ফাঁস করে দিয়েছেন । ফলে তার পছন্দের ঠিকাদারী ফার্মগুলো সর্বনিন্ম দরদাতা হিসাবে কাজগুলো পেতে যাচ্ছে। কাজগুলো হলো: ১ম প্যাকেজ,লট নং ০৩,কুমিল্লা সাইট। ৫ম প্যাকেজ,লট নং ০১,সাতক্ষীরা সাইট এবং খুলনা ও বাগেরহাট সাইট।
সুত্রমতে,৩ নং লটের কুমিল্লা সাইটের কাজ পেতে যাচ্ছেন এমবিএল নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এই কাজে মোট ৫ টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করেছিল। ০১ নং লটের সাতক্ষীরা সাইটের কাজ পেতে যাচ্ছে এসএস রহমান নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এই দরপত্রে মোট ৬ টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করেছিল। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের সাথে বিশেষ চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে পিডি মো: মঞ্জুরুল হক রেটকোট ফাঁস করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন অন্যান্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
আরো একটি গুরুতর তথ্য পাওয়াগেছে যে, অদ্য ১০/০৭/২০২৫ তারিখ বেলা ৩ টার সময় খুলনা ও বাগেরহাট জেলার টেন্ডার ওপেন করা হবে। এই টেন্ডারের ক্ষেত্রেও পিডি মো: মঞ্জুরুল হক দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে বিশেষ চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে তাদের কাছেও রেটকোট ফাঁস করে দিয়েছেন। সেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুটির নাম: এনডিই এবং এআইএল। ফলে খুলনার কাজটি পেতে যাচ্ছে এনডিই এবং বাগেরহাটের কাজটি পেতে যাচ্ছে এআইএল ঠিকাদারী ফার্ম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৪ সালে আওয়ামী সরকার আমলে প্রকল্প পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় আওয়ামী সুবিধাভোগী প্রকৌশলী মনজুরুল হককে। তিনি একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বাফার গুদাম নির্মাণ করার মতো তার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। তিনি বিসিআইসি ভবনে আওয়ামী লীগ সরকারের একজন ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। তার বাড়ি বরিশাল শহরে। মনজুরুল হক ৫ আগস্টের আগে নিজেকে শুধু ছাত্রলীগ করা নেতা হিসাবে পরিচিতই করেননি, হাসনাত আবদুল্লাহর আত্মীয়ও বলতেন। সাবেক মন্ত্রীর কমিশন বাণিজ্য নির্বিঘœ করতে ‘দলীয় কর্মকর্তা’ বিবেচনায় তাকে প্রকল্প পরিচালক করা হয়। এর আগে মনজুরুল হক ২০২২ সালে আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের জিএম থাকাবস্থায় যন্ত্রাংশ ক্রয়ের নামে ৪টি প্যাকেজে ২শ কোটি টাকা কাজের টেন্ডার করেন। অভিযোগ আছে, এ ৪টি প্যাকেজ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুস নিয়ে মেসার্স সাইফ পাওয়ার টেককে কাজ পাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপর দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ্যে এলে কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। এ নিয়ে প্রকল্প পরিচালক মঞ্জুরুল হকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দেওয়া হয়। ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আরএডিপি (রিভাইজড অ্যানুয়াল ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান বা সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পিডব্লিউডির রেট শিডিউল দিয়ে নির্মাণকাজের প্রাক্কলন করতে হবে। সেই শর্তে পিডব্লিউডি শিডিউল অনুযায়ী বাফার গুদাম নির্মাণে ২নং প্যাকেজে ৫নং লটে খুলনা সাইটের প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয় ৪৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অভিযোগ আছে, প্রকল্প পরিচালক মো. মনজুরুল হক ব্যক্তিগত সুবিধা আদায় করে দরপত্র প্রাক্কলনের নথিপত্রে দেখানো হয় ৫৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। এই টেন্ডারে ১২ কোটি টাকার বেশি দেখানো হয়েছে। কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারের সঙ্গে ওই ১২ কোটি টাকা ভাগাভাগি করতে টেন্ডারের নথিপত্র জালিয়াতি করা হয়।
এ ছাড়া ৩নং প্যাকেজের আওতায় সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, জয়পুরহাটসহ ৪টি সাইট মিলে অফিশিয়াল এস্টিমেট ২৬৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। মাজেদ সন্স কনস্ট্রাকশন লি. নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২৬৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকায় একমাত্র অংশগ্রহণকারী হিসাবে দরপত্র দাখিল করেন। এখানে অন্য কাউকে দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, ম্যানুয়েল পদ্ধতির দরপত্রে প্রথমবার সিঙ্গেল টেন্ডারে কার্যাদেশ দেওয়া পিপিআর পরিপন্থি। গত বছরের ৯ জুন বড় অঙ্কের টাকা কমিশনের বিনিময়ে মাজেদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।
সালাম কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের মালিক সালামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। শেখ সেলিমের আত্মীয় পরিচয়ে বিগত সরকারের আমলে প্রভাব দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার কাজ নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রভাবে টেন্ডারবাজি করেছে মেসার্স এরোনাস ইন্টারন্যাশনাল লি. নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকও। এ দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেসামরিক বিমানবন্দর ঢাকা, সিলেট, কক্সবাজার নির্মাণকাজে শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকীসহ ৮১২ কোটি টাকা দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪টি মামলা দুদকে চলমান। প্রকল্প পরিচালক মো. মনজুরুল হক বিষয়টি জানার পরও ঘুসের বিনিময়ে ওই ২টি কোম্পানিকে মাগুরা-চাঁদপুর, যশোর-নড়াইল, ময়মনসিং-নেত্রকোনায় ৩টি লটে ৪শ কোটি টাকার গুদাম নির্মাণের কাজ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
এছাড়াও ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লি. (এনডিই) আওয়ামী আমলে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ করে। প্রথমে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় এনডিইকে ৪নং প্যাকেজের ১নং লটের আওতায় ভোলা-বরগুনা, ২নং লটের রাজশাহী-গাইবান্ধা, ৩নং লটের মেহেরপুরের দরপত্র বাতিল করা হয়। পরে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কমিশনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর এনডিইকে মানিকগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জে ১২৮ কোটি টাকার কাজ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পিডি মঞ্জুরুল হককে তার সেল ফোনে কয়েকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।
এমন একজন মহদুর্নীতিবাজ,আওয়ামী ঘরাণার প্রকৌশলীকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমলেও কেন এতোবড় একটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক পদে রাখা হয়েছে এবং তার দ্বারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সেটাই কারো বেধগম্য নয়।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

নতুন ব্যাগ নিয়ে বিদ্যালয়ে হাজির ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের চমকে দিলেন ইউএনও

বিসিআইসির বাফার ৩৪ গুদাম নির্মাণ প্রকল্পে ভয়াবহ দুর্নীতি:

বিশেষ চুক্তিতে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে রেটকোট ফাঁস করেছেন পিডি মঞ্জুরুল হক!

আপডেট টাইম : ০৬:৪৫:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

প্রবাদ আছে যে,কয়লা শতবার ধুলেও তার ময়লা ছাড়ে না। ঠিক তেমনটিই পরিলক্ষিত হচ্ছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসির) একটি বৃহত্তর প্রকল্পের পিডির ক্ষেত্রে। এই প্রকল্প পরিচালক প্রায় এক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতি করে বারবার সংবাদপত্রের শিরোনাম হলেও তিনি নিজেকে শুধরাচ্ছেন না। বরং দিনদিন তার দুর্নীতির মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিব ও বিসিআইসি চেয়ারম্যানের নিরবতাও সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে। এমন একজন আওয়ামী ঘরাণার পিডিকে কেন আজঅব্দি এই প্রকল্পের পিডি রাখা হয়েছে তারও কোন জবাব মিলছে না। এই পিডির নাম মো: মঞ্জুরুল হক। তিনি বাফার ৩৪ সার গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক।

সম্প্রতি এই পিডি বাফার ৩৪ সার গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের টেন্ডারে ভয়ংকর দুর্নীতি করেছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে। । তিনি বিশেষ চুক্তিতে ৪ টি ঠিকাদারী ফার্মকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য ওই ৪ টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে রেটকোট ফাঁস করে দিয়েছেন । ফলে তার পছন্দের ঠিকাদারী ফার্মগুলো সর্বনিন্ম দরদাতা হিসাবে কাজগুলো পেতে যাচ্ছে। কাজগুলো হলো: ১ম প্যাকেজ,লট নং ০৩,কুমিল্লা সাইট। ৫ম প্যাকেজ,লট নং ০১,সাতক্ষীরা সাইট এবং খুলনা ও বাগেরহাট সাইট।
সুত্রমতে,৩ নং লটের কুমিল্লা সাইটের কাজ পেতে যাচ্ছেন এমবিএল নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এই কাজে মোট ৫ টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করেছিল। ০১ নং লটের সাতক্ষীরা সাইটের কাজ পেতে যাচ্ছে এসএস রহমান নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এই দরপত্রে মোট ৬ টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করেছিল। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের সাথে বিশেষ চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে পিডি মো: মঞ্জুরুল হক রেটকোট ফাঁস করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন অন্যান্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
আরো একটি গুরুতর তথ্য পাওয়াগেছে যে, অদ্য ১০/০৭/২০২৫ তারিখ বেলা ৩ টার সময় খুলনা ও বাগেরহাট জেলার টেন্ডার ওপেন করা হবে। এই টেন্ডারের ক্ষেত্রেও পিডি মো: মঞ্জুরুল হক দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে বিশেষ চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে তাদের কাছেও রেটকোট ফাঁস করে দিয়েছেন। সেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুটির নাম: এনডিই এবং এআইএল। ফলে খুলনার কাজটি পেতে যাচ্ছে এনডিই এবং বাগেরহাটের কাজটি পেতে যাচ্ছে এআইএল ঠিকাদারী ফার্ম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৪ সালে আওয়ামী সরকার আমলে প্রকল্প পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় আওয়ামী সুবিধাভোগী প্রকৌশলী মনজুরুল হককে। তিনি একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বাফার গুদাম নির্মাণ করার মতো তার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। তিনি বিসিআইসি ভবনে আওয়ামী লীগ সরকারের একজন ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। তার বাড়ি বরিশাল শহরে। মনজুরুল হক ৫ আগস্টের আগে নিজেকে শুধু ছাত্রলীগ করা নেতা হিসাবে পরিচিতই করেননি, হাসনাত আবদুল্লাহর আত্মীয়ও বলতেন। সাবেক মন্ত্রীর কমিশন বাণিজ্য নির্বিঘœ করতে ‘দলীয় কর্মকর্তা’ বিবেচনায় তাকে প্রকল্প পরিচালক করা হয়। এর আগে মনজুরুল হক ২০২২ সালে আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের জিএম থাকাবস্থায় যন্ত্রাংশ ক্রয়ের নামে ৪টি প্যাকেজে ২শ কোটি টাকা কাজের টেন্ডার করেন। অভিযোগ আছে, এ ৪টি প্যাকেজ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুস নিয়ে মেসার্স সাইফ পাওয়ার টেককে কাজ পাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপর দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ্যে এলে কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। এ নিয়ে প্রকল্প পরিচালক মঞ্জুরুল হকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দেওয়া হয়। ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আরএডিপি (রিভাইজড অ্যানুয়াল ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান বা সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পিডব্লিউডির রেট শিডিউল দিয়ে নির্মাণকাজের প্রাক্কলন করতে হবে। সেই শর্তে পিডব্লিউডি শিডিউল অনুযায়ী বাফার গুদাম নির্মাণে ২নং প্যাকেজে ৫নং লটে খুলনা সাইটের প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয় ৪৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অভিযোগ আছে, প্রকল্প পরিচালক মো. মনজুরুল হক ব্যক্তিগত সুবিধা আদায় করে দরপত্র প্রাক্কলনের নথিপত্রে দেখানো হয় ৫৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। এই টেন্ডারে ১২ কোটি টাকার বেশি দেখানো হয়েছে। কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারের সঙ্গে ওই ১২ কোটি টাকা ভাগাভাগি করতে টেন্ডারের নথিপত্র জালিয়াতি করা হয়।
এ ছাড়া ৩নং প্যাকেজের আওতায় সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, জয়পুরহাটসহ ৪টি সাইট মিলে অফিশিয়াল এস্টিমেট ২৬৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। মাজেদ সন্স কনস্ট্রাকশন লি. নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২৬৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকায় একমাত্র অংশগ্রহণকারী হিসাবে দরপত্র দাখিল করেন। এখানে অন্য কাউকে দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, ম্যানুয়েল পদ্ধতির দরপত্রে প্রথমবার সিঙ্গেল টেন্ডারে কার্যাদেশ দেওয়া পিপিআর পরিপন্থি। গত বছরের ৯ জুন বড় অঙ্কের টাকা কমিশনের বিনিময়ে মাজেদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।
সালাম কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের মালিক সালামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। শেখ সেলিমের আত্মীয় পরিচয়ে বিগত সরকারের আমলে প্রভাব দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার কাজ নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রভাবে টেন্ডারবাজি করেছে মেসার্স এরোনাস ইন্টারন্যাশনাল লি. নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকও। এ দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেসামরিক বিমানবন্দর ঢাকা, সিলেট, কক্সবাজার নির্মাণকাজে শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকীসহ ৮১২ কোটি টাকা দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪টি মামলা দুদকে চলমান। প্রকল্প পরিচালক মো. মনজুরুল হক বিষয়টি জানার পরও ঘুসের বিনিময়ে ওই ২টি কোম্পানিকে মাগুরা-চাঁদপুর, যশোর-নড়াইল, ময়মনসিং-নেত্রকোনায় ৩টি লটে ৪শ কোটি টাকার গুদাম নির্মাণের কাজ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
এছাড়াও ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লি. (এনডিই) আওয়ামী আমলে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ করে। প্রথমে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় এনডিইকে ৪নং প্যাকেজের ১নং লটের আওতায় ভোলা-বরগুনা, ২নং লটের রাজশাহী-গাইবান্ধা, ৩নং লটের মেহেরপুরের দরপত্র বাতিল করা হয়। পরে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কমিশনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর এনডিইকে মানিকগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জে ১২৮ কোটি টাকার কাজ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পিডি মঞ্জুরুল হককে তার সেল ফোনে কয়েকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।
এমন একজন মহদুর্নীতিবাজ,আওয়ামী ঘরাণার প্রকৌশলীকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমলেও কেন এতোবড় একটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক পদে রাখা হয়েছে এবং তার দ্বারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সেটাই কারো বেধগম্য নয়।