মোহাম্মদ বাবুল হোসেন, পঞ্চগড়-
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার আজিজনগরের আফসার আলী (৬৫) দাবি করেছেন, স্যার আইজ্যাক নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র ও গতিসূত্রের মধ্যে তৃতীয় সূত্র আসলে কাল্পনিক। তার মতে, প্রথম সূত্র আংশিক সঠিক, দ্বিতীয় সূত্র পুরোপুরি সঠিক হলেও তৃতীয় সূত্রের স্থলে আসা উচিত ঘর্ষণ, বাধা ও প্রতিক্রিয়ার ব্যাখ্যা।
প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি নিজস্ব আবিষ্কার নিয়ে পরীক্ষা চালালেও কোনো প্রতিষ্ঠান তা যাচাই করেনি। আফসার আলীর ভাষায়, “প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে”—এ সূত্র কেবল যুক্তি, বাস্তব নয়। আসল সূত্র হওয়া উচিত—প্রত্যেক ক্রিয়ার ঘর্ষণ, বাধা ও প্রতিক্রিয়া আছে; ঘর্ষণ ও বাধা সমান হলে বস্তু স্থির থাকে, বাধাহীন পথে বস্তু জড়তার কারণে চলতে থাকে।
১৯৯৬ সালে ইঞ্জিন চলাচলের একটি নতুন সূত্র আবিষ্কারের দাবি করেন তিনি। গবেষণার অংশ হিসেবে একটি ইউ-আকৃতির সিলিন্ডার তৈরি করে তাতে পানি ঢেলে বায়ুচাপের মাধ্যমে শক্তি উৎপাদনের চেষ্টা করেন। ওই শক্তি দিয়ে জ্বালানি বা বিদ্যুৎ ছাড়াই ইঞ্জিন চালানোর প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন। নিজের অর্থে একাধিক ছোট ডিজেল ইঞ্জিন কিনে পরীক্ষা চালাতে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তিনি।
প্রায় ত্রিশ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তার গবেষণার ফল যাচাইয়ের অনুরোধ করলেও কোনো সাড়া পাননি। আফসার আলী বিশ্বাস করেন, তার সূত্র প্রমাণিত হলে বিশ্বে অভিনব প্রযুক্তি উদ্ভাবন সম্ভব হবে।
১৯৭৫ সালে জগদল হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৮ সালে ঠাকুরগাঁও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে টেকনিক্যাল কোর্স শেষ করে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএডিসি) চাকরি শুরু করেন তিনি; ২০০৯ সালে অবসরে যান। এর বাইরে তিনি বহু প্রবন্ধ ও বই লিখেছেন, তবে সুযোগের অভাবে প্রকাশ করতে পারেননি।
তেঁতুলিয়া আজিজনগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন বলেন, “আফসার আলী দীর্ঘদিন ধরে নিউটনের তৃতীয় সূত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বিজ্ঞানে প্রমাণ ছাড়া কিছু গ্রহণযোগ্য নয়। যদি তিনি তার দাবির পক্ষে প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।” তিনি আরও মনে করেন, “আন্তরিকভাবে গবেষণা চালিয়ে যাওয়ায় তাকে সরকারি বা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।”