ঢাকা ০৯:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
মাগুরা ২ আসনে কাজী কামালের লক্ষ্যাধিক লোকের সমাবেশের প্রস্তুতি শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড নওগাঁর মহাদেবপুরে হোন্ডা কোম্পানি’র সাইন ১০০ মোটরসাইকেলের উদ্বোধন ইটভাটায় গাছ কাটার অভিযোগে অভিযান ট্রাকভর্তি ১১ টন কাঠ জব্দ অবৈধ বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে শ্রমিকদল নেতা নিখোঁজ মিরপুর প্রেসক্লাবের নতুন কমিটি ঘোষণা: সভাপতি আমিরুজ্জামান, সম্পাদক জহিরুল বিএনপি গণঅধিকার পরিষদ জোট হলে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে লড়বে মোঃ ফারুক হোসেন গুরুদাসপুর থেকে দেশের প্রথম ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ফিডিং কর্মসূচি’ উদ্বোধন ভুক্তভোগীকে মামলা না করতে হুমকির অভিযোগ, যুবদল নেতার দাবি- মীমাংসার জন্য বলেছি নওগাঁ-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
ভুয়া মামলার আসামি ছিনতাই মামলায় প্রশ্নবিদ্ধ চার্জশিট :

‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ষড়যন্ত্রমূলক প্রতিবেদন’ দাবি অভিযুক্তদের

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায় গত ১২ মার্চ পুলিশের ওপর হামলা ও আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। তবে অভিযুক্তরা সবাই দাবি করেছেন এ মামলায় মিথ্যা তথ্য, বিকৃত সাক্ষ্য এবং ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে তাদের নাম জড়ানো হয়েছে। ঘটনাটিকে ঘিরে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও তার অংশীদারদের নিয়ে। একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনের সময় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে ছাত্র হত্যার মামলার আসামি গোলাম মোস্তফাকে ছিনিয়ে নেওয়ার নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুর রহমান সোহাগ। চার্জশিটে তার সঙ্গে আরও ১৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা ও হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। মোহাম্মদপুর থানার এসআই মোঃ সহিদুল ওসমানের দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ চার্জশিট দাখিল করে। তবে এখনো কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ চার্জশিট এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অংশীদার খান মোঃ আক্তারুজ্জামানের প্রত্যক্ষ প্রভাব ও ষড়যন্ত্রে প্রস্তুত করা হয়েছে। ২ নম্বর আসামি মোঃ আনিসুর রহমান সোহাগ দাবি করেছেন, ঘটনার দিন (১২ মার্চ) তিনি এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে অভিভাবক মিটিং পরিচালনা করছিলেন। তার ভাষায়, “ওই সময় আমি সম্পূর্ণভাবে স্কুলের অভ্যন্তরে মিটিংয়ে
ব্যস্ত ছিলাম। স্কুলের ভেতর ও বাহিরে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে তা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত। তদন্তে উল্লেখিত সময়ের সম্পূর্ণ ফুটেজ বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে আমার উপস্থিতির কোনো দৃশ্য নেই।”
একাধিক অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, ঘটনার সময় সোহাগ ভবনের ভেতরে ছিলেন এবং বাইরে সংঘটিত কোনো ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল না। ২ নম্বর আসামি মোঃ আনিসুর রহমান সোহাগ আরও জানান যে, তিনি এবং তার সহযোগীরা ২০২৪ সালের জুলাই মাসের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে প্রকাশ্যে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। তার ভাষায়, “আমরা ২৪-এর ছাত্র ও
গণআন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছি। ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই থেকে আমাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আন্দোলনের পক্ষে ধারাবাহিকভাবে প্রচারণা চালিয়ে আসছি। শুধু অনলাইন প্রচারণাই নয়, আমরা উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের জন্য ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক, খাবার, পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেছি। এসব কর্মকাণ্ডের প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন বহু সহযোদ্ধা, এবং এর প্রমাণ আজও আমাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সংরক্ষিত আছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, খান মোঃ আক্তারুজ্জামান ও তার সহযোগীরা তাদের এই ন্যায়সংগত ভূমিকা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং বিভিন্ন থানায় মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে এই মামলায় তাকে ও অন্যদের জড়ানোর অপচেষ্টা চালিয়েছেন। এছাড়া চার্জশিটে সাক্ষী হিসেবে যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে— তাদের মধ্যে মোশারফ হোসাইন ও মোঃ নবী হোসাইন ফোনে যোগাযোগে সাক্ষ্য প্রদানের বিষয়টি অস্বীকার
করেছেন বলে জানা গেছে। সাক্ষী মোশারফ হোসাইন পবিত্র কুরআনের আয়াত উল্লেখ করে এ ঘটনাকে “মিথ্যা ও অন্যায্য অপপ্রচার” বলে অভিহিত করেছেন এবং ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কয়েকজন জানিয়েছেন, ঘটনার পরপরই তারা মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এবং তেজগাঁও বিভাগের ডিসি (ডেপুটি কমিশনার)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন এবং উভয় কর্মকর্তাই ন্যায্য তদন্ত ও সঠিক আইনি ব্যবস্থার আশ্বাস দেন।
৩ নং আসামি আরিফুল ইসলাম মীর সাগর জানিয়েছেন, ঘটনার দিন (১২ মার্চ) তিনি তার মায়ের ব্রেইন স্ট্রোকের কারণে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে হাসপাতালে অবস্থান করছিলেন। তিনি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা প্রমাণপত্র সংবাদমাধ্যমে জমা দিয়েছেন, যেখানে তার সেইদিনের হাসপাতাল উপস্থিতির তথ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। ৪ নং আসামি মোঃ সোহেল শাহরিয়ার জানিয়েছেন, সেদিন তিনি স্কুলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে অভিভাবক মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, এবং স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজেও তার কোনো উপস্থিতি ঘটনার স্থানে পাওয়া যায়নি।
একইভাবে আসামি আসাদুজ্জামান আসাদ জানিয়েছেন, তিনি ওইদিন ছুটিতে ছিলেন এবং ঘটনার সময় স্কুল প্রাঙ্গণে বা আশেপাশেও উপস্থিত ছিলেন না। চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত বেশ কয়েকজন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী দাবি করেছেন, ঘটনার দিন তারা স্কুলে উপস্থিতই ছিলেন না। তারা অভিযোগ করেন— “আমরা দরিদ্র মানুষ, এই চাকরিই আমাদের পরিবারের একমাত্র জীবিকার উৎস। অথচ কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের নাম মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। আক্তারুজ্জামান ও তার প্রভাবশালী সহযোগীরা আমাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন জান-মালের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।” ভুক্তভোগী এসব কর্মচারীরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমরা নিরপরাধ। আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি।
সরকারের কাছে অনুরোধ— এই মিথ্যা মামলা থেকে যেন আমাদের মুক্তি দেওয়া হয়, এবং যারা এমন মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” অভিযুক্তদের পক্ষের অভিযোগ, খান মোঃ আক্তারুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে পতিত আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক প্রভাব খাটিয়ে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করে আসছেন। তাদের দাবি, তিনি বৈষম্যবিরোধী জুলাই আন্দোলনের সময় তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের
সহযোগী হিসেবে সক্রিয় ছিলেন এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে খুন, অর্থপাচার, জমি দখল ও মিথ্যা মামলার মাধ্যমে নিরীহ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন ও গণমাধ্যম সূত্রে আরও জানা যায়, তার নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি ও বিদেশে অর্থ পাচারে জড়িত, মিরপুরের একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের আসামি, ওয়াসি টাওয়ারে নির্যাতনকেন্দ্র পরিচালনার অভিযোগে অভিযুক্ত এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তাধীন ব্যক্তি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি হিসেবে ছয় মাস কারাভোগের পর সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছেন আক্তারুজ্জামান, কিন্তু অভিযুক্তদের দাবি— মুক্তির পরও তিনি নিরীহ মানুষ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ওপর হামলা, ভয়ভীতি ও মিথ্যা মামলার মাধ্যমে প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। একাধিক মানবাধিকার সংগঠন ও আইনজীবী মহল মনে করছে, যখন আইনি প্রক্রিয়া রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহৃত হয়, তখন তা ন্যায়বিচারকে বিপন্ন করে। তাদের মতে, এই মামলার ক্ষেত্রে সিসিটিভি ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য ও বাস্তব প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হলে প্রকৃত সত্য প্রকাশ পাবে। মানবাধিকার কর্মীরা বলেছেন, “ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীন তদন্তই রাষ্ট্রের নৈতিক দায়।” তারা জোর দাবি জানিয়েছেন— মামলাটি পুনরায় খতিয়ে
দেখা হোক, যাতে নির্দোষ কেউ হয়রানির শিকার না হন এবং প্রকৃত অপরাধীরা আইনের আওতায় আসে।
এই মামলাকে ঘিরে এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে বিরোধ নতুন মাত্রা পেয়েছে। একপক্ষের দাবি, এটি ফ্যাসিস্ট শাসনের অবশিষ্ট প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতিফলন, অন্যপক্ষ বলছে— এটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্বাভাবিক আইনি পদক্ষেপ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ন্যায়বিচারের স্বার্থে এখন প্রয়োজন নিরপেক্ষ তদন্ত, সিসিটিভি ও ডিজিটাল প্রমাণ যাচাই, এবং সাক্ষীদের স্বাধীনভাবে সাক্ষ্য প্রদানের নিশ্চয়তা।

ট্যাগস

মাগুরা ২ আসনে কাজী কামালের লক্ষ্যাধিক লোকের সমাবেশের প্রস্তুতি

ভুয়া মামলার আসামি ছিনতাই মামলায় প্রশ্নবিদ্ধ চার্জশিট :

‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ষড়যন্ত্রমূলক প্রতিবেদন’ দাবি অভিযুক্তদের

আপডেট টাইম : ০১:৪৭:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায় গত ১২ মার্চ পুলিশের ওপর হামলা ও আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। তবে অভিযুক্তরা সবাই দাবি করেছেন এ মামলায় মিথ্যা তথ্য, বিকৃত সাক্ষ্য এবং ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে তাদের নাম জড়ানো হয়েছে। ঘটনাটিকে ঘিরে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও তার অংশীদারদের নিয়ে। একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনের সময় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে ছাত্র হত্যার মামলার আসামি গোলাম মোস্তফাকে ছিনিয়ে নেওয়ার নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুর রহমান সোহাগ। চার্জশিটে তার সঙ্গে আরও ১৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা ও হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। মোহাম্মদপুর থানার এসআই মোঃ সহিদুল ওসমানের দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ চার্জশিট দাখিল করে। তবে এখনো কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ চার্জশিট এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অংশীদার খান মোঃ আক্তারুজ্জামানের প্রত্যক্ষ প্রভাব ও ষড়যন্ত্রে প্রস্তুত করা হয়েছে। ২ নম্বর আসামি মোঃ আনিসুর রহমান সোহাগ দাবি করেছেন, ঘটনার দিন (১২ মার্চ) তিনি এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে অভিভাবক মিটিং পরিচালনা করছিলেন। তার ভাষায়, “ওই সময় আমি সম্পূর্ণভাবে স্কুলের অভ্যন্তরে মিটিংয়ে
ব্যস্ত ছিলাম। স্কুলের ভেতর ও বাহিরে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে তা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত। তদন্তে উল্লেখিত সময়ের সম্পূর্ণ ফুটেজ বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে আমার উপস্থিতির কোনো দৃশ্য নেই।”
একাধিক অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, ঘটনার সময় সোহাগ ভবনের ভেতরে ছিলেন এবং বাইরে সংঘটিত কোনো ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল না। ২ নম্বর আসামি মোঃ আনিসুর রহমান সোহাগ আরও জানান যে, তিনি এবং তার সহযোগীরা ২০২৪ সালের জুলাই মাসের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে প্রকাশ্যে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। তার ভাষায়, “আমরা ২৪-এর ছাত্র ও
গণআন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছি। ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই থেকে আমাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আন্দোলনের পক্ষে ধারাবাহিকভাবে প্রচারণা চালিয়ে আসছি। শুধু অনলাইন প্রচারণাই নয়, আমরা উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের জন্য ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক, খাবার, পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেছি। এসব কর্মকাণ্ডের প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন বহু সহযোদ্ধা, এবং এর প্রমাণ আজও আমাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সংরক্ষিত আছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, খান মোঃ আক্তারুজ্জামান ও তার সহযোগীরা তাদের এই ন্যায়সংগত ভূমিকা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং বিভিন্ন থানায় মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে এই মামলায় তাকে ও অন্যদের জড়ানোর অপচেষ্টা চালিয়েছেন। এছাড়া চার্জশিটে সাক্ষী হিসেবে যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে— তাদের মধ্যে মোশারফ হোসাইন ও মোঃ নবী হোসাইন ফোনে যোগাযোগে সাক্ষ্য প্রদানের বিষয়টি অস্বীকার
করেছেন বলে জানা গেছে। সাক্ষী মোশারফ হোসাইন পবিত্র কুরআনের আয়াত উল্লেখ করে এ ঘটনাকে “মিথ্যা ও অন্যায্য অপপ্রচার” বলে অভিহিত করেছেন এবং ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কয়েকজন জানিয়েছেন, ঘটনার পরপরই তারা মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এবং তেজগাঁও বিভাগের ডিসি (ডেপুটি কমিশনার)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন এবং উভয় কর্মকর্তাই ন্যায্য তদন্ত ও সঠিক আইনি ব্যবস্থার আশ্বাস দেন।
৩ নং আসামি আরিফুল ইসলাম মীর সাগর জানিয়েছেন, ঘটনার দিন (১২ মার্চ) তিনি তার মায়ের ব্রেইন স্ট্রোকের কারণে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে হাসপাতালে অবস্থান করছিলেন। তিনি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা প্রমাণপত্র সংবাদমাধ্যমে জমা দিয়েছেন, যেখানে তার সেইদিনের হাসপাতাল উপস্থিতির তথ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। ৪ নং আসামি মোঃ সোহেল শাহরিয়ার জানিয়েছেন, সেদিন তিনি স্কুলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে অভিভাবক মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, এবং স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজেও তার কোনো উপস্থিতি ঘটনার স্থানে পাওয়া যায়নি।
একইভাবে আসামি আসাদুজ্জামান আসাদ জানিয়েছেন, তিনি ওইদিন ছুটিতে ছিলেন এবং ঘটনার সময় স্কুল প্রাঙ্গণে বা আশেপাশেও উপস্থিত ছিলেন না। চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত বেশ কয়েকজন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী দাবি করেছেন, ঘটনার দিন তারা স্কুলে উপস্থিতই ছিলেন না। তারা অভিযোগ করেন— “আমরা দরিদ্র মানুষ, এই চাকরিই আমাদের পরিবারের একমাত্র জীবিকার উৎস। অথচ কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের নাম মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। আক্তারুজ্জামান ও তার প্রভাবশালী সহযোগীরা আমাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন জান-মালের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।” ভুক্তভোগী এসব কর্মচারীরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমরা নিরপরাধ। আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি।
সরকারের কাছে অনুরোধ— এই মিথ্যা মামলা থেকে যেন আমাদের মুক্তি দেওয়া হয়, এবং যারা এমন মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” অভিযুক্তদের পক্ষের অভিযোগ, খান মোঃ আক্তারুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে পতিত আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক প্রভাব খাটিয়ে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করে আসছেন। তাদের দাবি, তিনি বৈষম্যবিরোধী জুলাই আন্দোলনের সময় তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের
সহযোগী হিসেবে সক্রিয় ছিলেন এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে খুন, অর্থপাচার, জমি দখল ও মিথ্যা মামলার মাধ্যমে নিরীহ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন ও গণমাধ্যম সূত্রে আরও জানা যায়, তার নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি ও বিদেশে অর্থ পাচারে জড়িত, মিরপুরের একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের আসামি, ওয়াসি টাওয়ারে নির্যাতনকেন্দ্র পরিচালনার অভিযোগে অভিযুক্ত এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তাধীন ব্যক্তি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি হিসেবে ছয় মাস কারাভোগের পর সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছেন আক্তারুজ্জামান, কিন্তু অভিযুক্তদের দাবি— মুক্তির পরও তিনি নিরীহ মানুষ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ওপর হামলা, ভয়ভীতি ও মিথ্যা মামলার মাধ্যমে প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। একাধিক মানবাধিকার সংগঠন ও আইনজীবী মহল মনে করছে, যখন আইনি প্রক্রিয়া রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহৃত হয়, তখন তা ন্যায়বিচারকে বিপন্ন করে। তাদের মতে, এই মামলার ক্ষেত্রে সিসিটিভি ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য ও বাস্তব প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হলে প্রকৃত সত্য প্রকাশ পাবে। মানবাধিকার কর্মীরা বলেছেন, “ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীন তদন্তই রাষ্ট্রের নৈতিক দায়।” তারা জোর দাবি জানিয়েছেন— মামলাটি পুনরায় খতিয়ে
দেখা হোক, যাতে নির্দোষ কেউ হয়রানির শিকার না হন এবং প্রকৃত অপরাধীরা আইনের আওতায় আসে।
এই মামলাকে ঘিরে এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে বিরোধ নতুন মাত্রা পেয়েছে। একপক্ষের দাবি, এটি ফ্যাসিস্ট শাসনের অবশিষ্ট প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতিফলন, অন্যপক্ষ বলছে— এটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্বাভাবিক আইনি পদক্ষেপ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ন্যায়বিচারের স্বার্থে এখন প্রয়োজন নিরপেক্ষ তদন্ত, সিসিটিভি ও ডিজিটাল প্রমাণ যাচাই, এবং সাক্ষীদের স্বাধীনভাবে সাক্ষ্য প্রদানের নিশ্চয়তা।