নাদিম আহমেদ অনিক,নিজস্ব প্রতিনিধি-
বগুড়ার আদমদীঘিতে সমালোচিত থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমানের বদলিতে মিষ্টি বিতরণ করেছেন এলাকাবাসী।
রোববার সন্ধ্যায় উপজেলা বাস স্ট্যান্ড ও সোমবার দুপুরে সান্তাহার বিভিন্ন পয়েন্টে এলাকাবাসীর পক্ষে কিছু যুবকদের মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা যায়।এর আগে মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে একটি বিজ্ঞপ্তিতে আদমদীঘি থানার ওসিকে বদলি করে পাবনা ভাঙ্গুড়া থানায় পদায়ন করা হয়েছে। গত শনিবার (৬ ডিসেম্বর) আদমদীঘি থানায় শেষ কর্মদিবস পালন করেন। রবিবার দুপুরে থানা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেন তিনি।
জানা যায়, আদমদীঘি থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। থানায় দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় নাশকতা মামলার আসামীদের পক্ষপাতমূলক আচরণ, তাদের থেকে সুবিধা নিয়ে রেহাই , ডেভিল হান্টের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়সহ বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ তুলেছেন মামলার বাদী মিজানুর রহমান। গত ২৪ ফেব্রুয়ারী বগুড়া পুলিশ সুপার বরাবর তার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে “আদমদীঘিতে আসামীদের ডেভিল হান্টের ভয় দেখিয়ে টাকা দাবী” একাধিক শিরোনামে বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় তৎকালীন জেলা পুলিশ সুপার জেদান আল মুছা কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় ফলে রাজশাহী ডিআইজি বরাবর একাধিক বিএনপি নেতাকর্মীর স্বাক্ষরিত ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আরেকটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে ওই অভিযোগের ভিত্তিতে আবারও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপরেও ঘটনার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি উর্ধ্বতন পুলিশ কর্তৃপক্ষ। যারফলে ঘটনাটি ধামাচাপায় থেকে যায়।
এরপর গত কয়েকমাস ধরে ছিনতাই, মোটরসাইকেল, গরু, সেচপাম্প, মোবাইল, বৈদ্যুতিক মিটারসহ বেশ কয়েকটি চুরি সংগঠিত হয়েছে। এসব বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েও পুলিশের কাছ থেকে সহায়তা পায় নাই ভুক্তভোগীরা। এমন অভিযোগের বিষয় উল্লেখ করে গত ২১ জুন বিভিন্ন গণমাধ্যমে “আদমদীঘিতে বেড়েছে অপরাধের প্রবণতা” একাধিক শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর গত ৭ এপ্রিল আদমদীঘিতে শামীম পারভেজ সাদ্দামের বসতবাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৭টি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার আড়াই মাস অতিবাহিত হলেও থানায় তার বিরুদ্ধে কোনও মামলা রেকর্ড হয়নি। বিষয়টি সম্প্রতি জানাজানি হলে ওসির বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। এমন সংক্রান্ত বিষয়ে ২৯ জুন গণমাধ্যমে “আদমদীঘিতে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত অস্ত্রে’র মামলা আড়াই মাসেও রুজু করেনি পুলিশ” একাধিক শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ঘটনায় আদৌও পর্যন্ত কোন মামলা দায়ের করেনি পুলিশ। এভাবেই পড়ে রয়েছে।
এরপর ২৯ মার্চ উপজেলার সান্তাহারে হাত-পা বেঁধে স্ত্রী ও সন্তানের উপর বাবার নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের সান্তাহার চাল বাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। স্ত্রী বাদী হয়ে নিকটবর্তী থানায় স্বামী শরিফুল ইসলাম স্বপনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ কোন জোড়ালো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে উল্টো বাদীকে মিমাংসার জন্য একাধিক বার চাপ সৃষ্টি করছেন। ঘটনাটি নিয়ে গত ৭ এপ্রিল বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় “সান্তাহারে হাত-পা বেঁধে স্ত্রী ও সন্তানের উপর নির্যাতন” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় আইনগতভাবে ভুক্তভোগী কোন সুরাহা পায়নি।
শুধু তাই নয় আদমদীঘি তিনি যোগদানের পর থেকে সেবাপ্রত্যাশীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করতেন এবং অনেক অভিযোগের এখনো সমাধানের পথ পায়নি বলে জানান একাধিক ভুক্তভোগী। গোপন সূত্রে থানার বিভিন্ন স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওসি মোস্তাফিজুর যোগদানের পর বিভিন্ন বিত্তশালী মহল ও স্টাফদের নিজদের তহবিল থেকে অর্থ জোগান দিয়ে তার থানার বাসায় আসবাবপত্র ও এয়ারকন্ডিশন (এসি) বন্দবস্তের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বদলির সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো নিয়ে পরবর্তী কর্মস্থল পাবনা ভাঙ্গুড়া থানায় চলে যান। এদিকে থানার উপ-পরিদর্শক ও সহকারী উপ-পরিদর্শকের মধ্যেও দায়িত্বরত ওসির নামে ব্যাপক কানাঘুষা শুরু করতে দেখা যায়। জেলা পুলিশের কোন প্রোগ্রাম বা মার্সিক আয়োজনে অফিসার ভেদে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা দিতে হয় তাদের। এমন অভিযোগ করেন নাম প্রকাশ করা না শর্তে একাধিক দায়িত্বরত অফিসার। ওসির বদলিতে থানার পুলিশ সদস্যসহ এলাকাবাসী স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন এমনটাই বলছেন অনেকেই।
খবর বাংলাদেশ ডেস্ক : 



















