কক্সবাজার প্রতিনিধি
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হবে আজ। ওসি প্রদীপের ফাঁসি চেয়ে নির্যাতিত পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয় বাসিন্দারা মানববন্ধন করেছেন। টেকনাফের সর্বস্তরের জনসাধারণের উদ্যোগে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে কক্সবাজার দায়রা জজ আদালত চত্বরে এই মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু হয়।
টেকনাফের সর্বস্তরের জনসাধারণের উদ্যোগে আয়োজিত এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের অভিযোগ, প্রদীপ কুমার দাশ টেকনাফ থানার ওসি থাকাকালে নিরীহ লোকজনকে হয়রানি ও নির্যাতন করেছেন। ক্রসফায়ার দিয়েছেন ১৪৫ জন নিরীহ মানুষকে। আজ মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা আছে। তারা চান প্রদীপ কুমার দাশের ফাঁসি হোক।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া টেকনাফ থানার খোনকার পাড়ার একজন বলেন, বিনা দোষে আমার পরিবারের সদস্যদের নির্যাতন করা হয়েছিল। প্রদীপ টেকনাফে থাকার সময় নানাভাবে আমাদের নির্যাতন করেছেন। প্রদীপের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছি।
মানববন্ধনে ব্যানার নিয়ে প্রদীপের ফাঁসি দাবি করে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের স্থানীয় সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানের মা হালিমা খাতুন। তিনি আদালত চত্বরে বলেন, আমার ছেলেকে ওসি প্রদীপ ছয়টি মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আরও অনেক নিরীহ লোককে হয়রানি নির্যাতন করেছে।
ওসি প্রদীপের নির্যাতনের শিকার টেকনাফ থানার সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য হামজালাল বলেন, ২০১৮ সালে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। প্রদীপের দুই বাহিনী ছিল। ২০১৮ সালে দিন দুপুরে আমার ভাই ইউসুফ জালাল বাহাদুরকে ধরে নিয়ে যায়। রাতে ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যা করে তাকে। আমাকেও ক্রসফায়ারে জন্য নিয়ে গিয়েছিল। সিনিয়র অফিসারের মোবাইলে কল আসার পর ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে আসেন। আজ আমি প্রদীপের ফাঁসির দাবি জানাই।
আজ কক্সবাজার জেলা দায়রা জজ আদালতে সিনহা হত্যা মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে আদালত চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণবিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় অবস্থান করছিলেন তিনি। ওই কাজে তার সঙ্গে ছিলেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।
সিনহা নিহত হওয়ার পর পুলিশ দাবি করেছিল, ‘সিনহা তল্লাশিতে বাধা দেন। এ সময় তিনি পিস্তল বের করলে চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে।’ এসব বিষয় উল্লেখ করে এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয় সিনহার সঙ্গী সিফাতকে। ওই মামলায় সিফাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর পর সিনহা যেখানে অবস্থান করছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকেও পুলিশ আটক করে। নুরকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পরে তারা জামিনে মুক্তি পান।