বিশেষ প্রতিনিধি :
দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন কালোবাজারি, মাদক, নকল ভোগ্যপণ্য, জাল টাকা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে অবস্থান নিয়েছেন ঠিক তখনই রাজধানীতে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের ডন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে তিনি। জাল টাকা তৈরি ও বাজারজাতকরন, মাদক সরবরাহ ও বিক্রয়, নকল খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ সহ নানারকম দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক বনে গেছেন মাদারীপুরের লিটন তালুকদার।
২০১৫ ইংরেজী সালের মাঝামঝি সময় থেকে জাল টাকা তৈরি, মাদক সরবরাহ ও পাইকারী-খুচরা বিক্রয়, দেশি বিদেশি বিভিন্ন প্রসিদ্ধ ব্র্যান্ডের নামে অবৈধভাবে ভেজাল খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ সহ নানাবিধ দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে বিপুল পরিমান অবৈধ সম্পত্তি উপার্জন শুরু করেন তিনি। অবৈধ পন্থায় উপার্জিত টাকা লেনদেন হয় একাধিক ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে । তার এই অবৈধ ব্যবসার ট্রানজিট হচ্ছে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম রুটে। যা তার পরিচালিত ব্যাংক একাউন্টসমুহের লেনদেনের স্টেটমেন্ট দেখলেই স্পস্ট প্রতীয়মান হবে। সে এই অবৈধ অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে ঢাকা ও মাদারীপুরে নামে-বেনামে অনেক সম্পদের মালিক। রয়েছে দামী ব্রান্ডের গাড়ি সহ ঢাকার ভাষানটেক থানার দেওয়ান পাড়াতে একাধিক প্লট সহ আলীশান বাড়ি।
তার একমাত্র বৈধ ব্যাবসা বলতে মিরপুর সাড়ে এগার,পল্লবী বাসস্ট্যান্ডে আহসান’স হট কেক নামে একটি ছোট পরিসরের কেক বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। তার এই কেকের দোকান থেকে সর্বাধিক কত টাকা মুনাফা করা সম্ভব তা এই ছোট মাপের দোকানটি সরেজমিন দেখলেই বুঝা যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র মতে জানা যায় , সে এই কেকের ব্যবসার আড়ালে জাল টাকা তৈরি ও জাল টাকা সরবরাহ, ঢাকা ও চট্টগ্রামে জাল টাকার একটি সিন্ডিকেটও তিনি পরিচালনা করেন। যা অনেকেই জানেন।
চট্টগাম ও সীমান্ত এলাকা থেকে মাদকের চালান (ইয়াবা) তার এই খাদ্য সামগ্রী ব্যবসার আড়ালে রাজধানীতে আনেন ও তা মাঠ পর্যায়ে পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করেন, এই কাজেও তার একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। এই অবৈধ কাজের সাথে সাথে তিনি দেশের রাষ্ট্রইয়ত্ত প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটা, আড়ং, রেডকাউ, গোয়ালিনী, পাবনা ডেইরী, প্রাণ, প্রিন্স ইত্যাদী সহ প্রসিদ্ধ অনেক কোম্পানীর বাটার ও ঘি সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনুমোদনহীন ভাবে পামওয়েল, নিম্নমানের মারজারীন, ফ্লেভার ও রঙ মিশ্রনের মাধ্যমে ভাষমান ভাবে তৈরি করে তা নিজ মালিকানার একাধিক সরবরহকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন। লিটন তালুকদার নিম্নউল্লেখিত নিজ মালিকাধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ভেজাল খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ করেন।
১) শাহী ট্রেডারস, ২/১০ পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা। ২) শাহী ট্রেডারস, ১০/১০ পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা। ৩) আলম এন্টারপ্রাইজ, ১৮৫/১ মাটিকাটা, দেওয়ানপাড়া, ভাষানটেক, ঢাকা। ৪) খান এন্টারপ্রাইজ, ১০/১০ পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা, ছাড়াও লিটন তালুকদারের পরিচালনাধীন আরও বহু ভূয়া প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
দুদকের অভিযোগপত্র অনুসন্ধানে এসব অনৈতিক কর্মকান্ড ছাড়াও জানা যায়, তিনি বাটার ও ঘি সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনুমোদনহীন ভাবে পামওয়েল, নিম্নমানের মারজারীন, ফ্লেভার ও রঙ মিশ্রনের মাধ্যমে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভাষমান ফ্যাক্টরিতে তৈরি করতেন, এসকল নিম্নমানের কাঁচামাল তিনি প্রায়শঃ নিম্নবর্ণিত দোকন থেকে ক্রয় করে থাকেন। এসব দোকানের সামগ্রীর মান সরেজমিন দেখলেই বুঝা যাবে, কতটা নিম্নমানের ছিলো।
১) ম্যাক ফুড প্রোডাক্টস, ডাগইর, উত্তর সানারপাড়, ডেমরা, ঢাকা। ২) প্যাসিফিক ইন্টারলিংক, বাড়ী-৫, রোড-৯/বি, সেক্টর-৭, উত্তরা, ঢাকা ১২৩০। ৩) এইচএনএন এন্টারপ্রাইজ, ১১/২ পুরানাপল্টন লেন, ঢাকা ১০০০।
এছাড়াও জানা-অজানা আরও প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা তদন্ত করলেই বের হয়ে স্বচ্ছ আয়নার মত বেরিয়ে আসবে।
লিটন তালুকদার এসব নিম্নমানের ভেজাল খাদ্য উৎপাদন করে তিনি যে সকল প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
১) ফুলকলি, বাকুলিয়া, চট্টগ্রাম।
২) ফ্লেভারস, অলংকার, চট্টগ্রাম।
৩) রিদিশা ফুড এন্ড বেভারেজ, ঢাকা।
৪) ইফাদ ফুড প্রোডাক্টস, ঢাকা।
৫) রানী ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ঢাকা।
এছাড়াও আরও প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তা সঠিক তদন্ত করলেই জানা যাবে। লিটন তালুকদারের এসব অনৈতিক ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিষয় দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদর দপ্তরে একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।
জাল টাকা তৈরি ও সরবরাহ সহ অবৈধ ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী অপরাধের ডন লিটন তালুকদার অবৈধ অর্থ লেনদেনের ব্যাংক হিসাব সহ আরো সবিস্তারে তথ্য থাকবে প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে। চলবে……।
শিরোনাম :
জাল টাকা মাদক ব্যবসা ও ভেজাল পণ্য উৎপাদনের ডন লিটনের সম্পদের পাহাড়!
- খবর বাংলাদেশ ডেস্ক :
- আপডেট টাইম : ০৭:১০:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ এপ্রিল ২০২২
- ৯৭৮ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ