এস. এম জহিরুল ইসলাম :
সাহসী সাংবাদিক রোস্তম মল্লিক। ৩ দশক ধরে নির্ভিক কলম চালাচ্ছেন। এরশাদ সরকার থেকে শুরু করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আমলেও তিনি দেশ ও জাতির সকল সংকট ও রাষ্ট্রের অনিয়ম -দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অকুতোভয় এক কলম যোদ্ধা। তার লেখা সংবাদগুলো রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের ভীত নড়িয়ে দেয়। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মনে আতংক সৃষ্টি করে। দুর্নীতিবাজ ও ঘুসখোর সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের ঘুম হারাম করে দেয়। ক্ষমতাসীনরাও তটস্থ থাকেন তার লিখনির ভয়ে। তিনি ৮০‘র দশক থেকে ৯০র দশক পর্যন্ত মাগুরায় সাংবাদিকতা করেছেন। এ সময় জাতীয় পার্টি বিএনপি ও আওয়াম লীগ ক্ষমতায় ছিল। তখনও তিনি মাগুরা জেলার সেরা সাংবাদিক ছিলেন। যা দেখতেন তাই লিখতেন। প্রশাসন বা রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন মহলকে তিনি একটুও ভয় পেতেন না। যেখানে অনিংম-দুর্নীতি সেখানেই তিনি কলম চালাতেন। যেখানেই দলীয় সন্ত্রাস বা লুটপাট সেখানেই তিনি স্বোচ্ছার হতেন। এ কারণে দুর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা বার বার তাকে হিট করেছে।
বিএনপি সরকার আমলে তাকে সরকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী কলেজ ক্যাম্পাসে একবার হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু নিজ এলাকার কিছু ছাত্রদল নেতার কারণে প্রাণে বেঁচে যান। সেই আমলেই তিনি সর্বহারা পার্টির সস্ত্রাস,চাদাবাজী,মানুষ অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়,মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে সংবাদ লিখে জেলার মানুষকে সর্বহারা পার্টির গ্রাসমুক্ত করেন। তখন সর্বহারা পার্টির নেতারা তার মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করে বার বার হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু মহান আল্লøাহুতায়লা তার সহায় থাকায় তিনি আজো প্রাণে বেঁচে আছেন।
বিএনপি সরকার আমলে তিনি একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের নানা প্রকার অনিয়ম -দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিক সংবাদ প্রচারের কারণে তার বিরুদ্ধে ৫ টি মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। এমনকি তাকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ( ডিটেনশনে) ৪ মাস বিনা বিচারে কারাগারে আটক রাখা হয়। এসময় তার ওপর পুলিশ দ্বারা চরম শাররীক নির্যাতনও করা হয়। তখন তার গরীব পিতা বাড়ীর গাছ পালা ও গরু ছাগল বিক্রি করে অর্থ জোগাড় অন্তে মহামান্য হাইকোর্টে রীট পিটিশন দায়ের করে রোস্তম মল্লিককে কারাগার মুক্ত করেন।
তার ক্ষুরধার লেখায় মাগুরা জেলা চরমপন্থিদল সর্বহারাপার্টি মুক্ত হয়। নতুন বাজার এলাকা থেকে পতিতালয় উচ্ছেদ হয়। ঘুস দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যায়। এক কথায় একটি দশকধরে কেবল সাহসী লিখনীর মাধ্যমে তিনি মাগুরা জেলাকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত রেখেছিলেন।
পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। চাকুরী নেন বাংলাদেশের সেরা ক্রাইম ম্যাগাজিন পাক্ষিক অপরাধ জগত পত্রিকায়। এই পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসাবে যোগদান করেই তিনি একটার পর একটা দু:সাহসী অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লিখে তোলপাড় সৃষ্টি করেন। যে কারণে দ্রুত তিনি পেশাগত পদন্নোতি এবং একজন জাদরেল ক্রাইম রিপোর্টারের স্বীকৃতি পান। পরবর্তীতে তিনি এই পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক পদে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।
তার ৩ দশকের সাংবাদিকতা জীবনে তিনি কেবল সাহসী সাংবাদিকতা করতে গিয়ে বার বার হামলা মামলার শিকার হয়েছেন। প্রায় প্রতিটি সরকার আমলেই মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করেছেন। ক্ষমতাসীন দলের টার্গেটে পরিণত হয়ে কাটিয়েছেন পলাতক জীবন। একবার তাকে আইসিটি আইনে ৩ টি হয়রানীমূলক মামলা দিয়ে আটক করা হয়। পুলিশ ও সিআইড রিমান্ডে নিয়ে প্রান সংহারের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ন্যায় ও সত্যের পথে অবিচল থেকে অত্যন্ত ধর্য্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। কিন্ত তার সাহসী কলম থেমে যায়নি।
সাম্প্রতিক সময়ে এসে তিনি বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে চাকুরী করেন। দৈনিক মুক্তখবরসহ দৈনিক গণতদন্ত,দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ,দৈনিক নয়াদেশ, দৈনিক খবর বাংলাদেশ ও দৈনিক আজকের সংবাদ পত্রিকায় রিপোর্টিং করতে গিয়ে তিনি মাগুরার একটি মাফিয়া গোষ্ঠির চুড়ান্ত টার্গেটে পড়ে যান। এই মাফিয়া গোষ্ঠিটি রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে রোস্তম মল্লিকের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিতে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। কিন্ত সাংবাদিক রোস্তম মল্লিক ঢাকা থেকে মাগুরায় যাওয়া কমিয়ে দিলে তারা তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারছিল না। তারা ফাঁদ পেতে বসে ছিল যে, কবে সাংবাদিক রোস্তম মল্লিক মাগুরা শহরে গমন করেন।
সাংবাদিক রোস্তম মল্লিক কেবল সাংবাকিতাই করেন না তিনি কবিতা লেখেন,গল্প লেখেন.ছড়া লেখেন,নাটক লেখেন, উপন্যাস লেখেন,গান লেখেন, পত্রিকায় কলাম লেখেন। নাটক পরিচালনা করেন। আবার নিজে অভিনয়ও করেন। এককথায় তিনি বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী। দেশে এমন প্রতিভা খুব কমই আছে। ঢাকার বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে এ পর্যন্ত তার ৬খানা কবিতা,গল্প, উপন্যাস গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। টিভি ও ইউটিউব চ্যানেলে ১০/১২ টি নাটক প্রচার হয়েছে। এছাড়া তিনি প্রায় ২ হাজার গান লিখেছেন। কিছু গান বড় বড় অডিও কোম্পানী ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে।
এমন একজন সিনিয়র সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে কেন হত্যা করার চেষ্টা করা হলো? তার হিসাব মেলাতে পারছেন না দেশবাসী। তবে মাগুরা জেলার বেশিরভাগ মানূষের অভিমত; সাংবাদিক রোস্তম মল্লিক মাগুরার একজন সরকার দলীয় এমপি ও তার ৩ ভাই, এক মামা, তার ড্রাইভার, মামাত ভাই এবং তার ভ্যানগার্ড শেখ রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক সংবাদ প্রকাশ করায় এবং সাম্প্রতিক সময়ে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি নিয়ে সংবাদ লেখায় কেন্দ্রে ওই কমিটির অনুমোদন আটকে যায়। পরবর্তীতে ত্যাগী ও আদর্শীক নেতাদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি অনুমোদন পাওয়ায় সাংবাদিক রোস্তম মল্লিকের ওপর ক্ষিপ্ত হন ওই এমপি । আর তার জেরেই রোস্তম মল্লিক এই হামলার শিকার হয়েছেন।
এ ঘটনায় আটককৃত ৭ দুর্বৃত্তের এক দুর্বৃত্ত এ রকম একটি স্বীকারোক্তিও নাকি দিয়েছেন পুলিশের কাছে। এখন মাগুরাবাসী ও সাংবাদিক সমাজের একটাই দাবী কলংকজনক এই ঘটনার সুষ্টু তদন্ত করা হোক। গডফাদারসহ সকল হামলাকারী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাক। আর যেন এমন কোন ঘটনা বাংলাদেশে না ঘটে তার জন্য সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করুক। সাংবাদিক সমাজের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হোক।