বিশেষ প্রতিবেদক
চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ!
সরকারি গেজেটেকে তোয়াক্কা না করেই নৌপরিবহন অধিদপ্তরে অবৈধভাবে পানামা সিডিসি (নাবিকের সনদ) বিক্রি করে লাগামহীন দুর্নীতির মাধ্যমে চীফ নটিক্যাল অফিসার মো: গিয়াস উদ্দিন আহমেদ মাসে ৩০ লক্ষ টাকা অবৈধ আয় করছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নৌমন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। একই সঙ্গে পানামা সিডিসি (নাবিকের সনদ) বিক্রি বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সুত্র মতে ৪০০ জনের মধ্যে ৮৮ জন অপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নাবিককে এনওসি প্রদান করে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮৮ লাখ টাকা নিয়েছেন মহাপরিচালক এবং ২ কোটি ৬৪ লাখ নিয়েছেন ক্যাপ্টেন মোঃ গিসাসউদ্দিন আহমেদ। তাদের দুজনের নামে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে এবং বাকি ৩১২ জনের এনওসি প্রদানের কাজ চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার গ্যাজেট নং- ০০৩.২১.৪৯৭ সরকারি ও বেসরকারি মেরিটাইম প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণার্থী নাবিক (রেটিং) ভর্তি সমন্বিত পরীক্ষা নীতিমালা ২০২২, অনুযায়ী নাবিক ভর্তি ও প্রশিক্ষণের পর দেশীয় সিডিসি প্রদান করার বিধান সুনিদির্ষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কমডোর মো. নিজামুল হক ও চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন মো.গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ গেজেটের নীতিমালা অনুসরণ না করে নাবিক হওয়ার স্বপ্ন বিভোর ক্যাডেটদের কাছ ধেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাবেক মহাপরিচালক অনুমোদনক্রমে অপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত (সাধারণ নাগরিক) নাবিক হিসেবে বৈদেশিক জাহাজে চাকরি করার লক্ষ্যে নির্ধারিত ট্রেডের সিডিসি প্রদান করার নিমিত্তে নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদকে আহবায়ক ও ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শীপ সার্ভেয়ার এন্ড এক্সিমিনার মো. আবুল বাশার, কো-অর্ডিনেটর মিথুন কুমার চাকীর সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি মনগড়া কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটির আহবায়ক ক্যাপ্টেন মোঃ গিয়াসউদ্দিন আহমেদ কমিটির অপর দুই সদস্যদেরকে পাশ কাটিয়ে সিডিসি প্রদানের জন্য একক ভাবে নো- অবজেকশন সার্টিফিকেট প্রদান করে সিডিসির প্রতিটি সার্টিফিকেট থেকে ৪ লাখ টাকা ঘুস নিয়েছেন। এই টাকার মধ্যে ১ লাখ টাকা নিয়েছেন সাবেক মহাপরিচালক আর বাকি তিন লাখ ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ।
গত এপ্রিল মাসে ৪০০ জনের মধ্যে ৮৮ জন থেকে ৮৮ লাখ মহাপরিচালক ও ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ অবৈধভাবে আয় করেছেন। বাকি ৩১২ জনকে এনওসি প্রদানের কাজ চলমান রয়েছে। তবে ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব কন্ট্রোলার অফ মেরিটাইম এডুকেশন, নৌ পরিবহন অধিদপ্তর সকল মেরিটাইম প্রশিক্ষণ তার মাধ্যমে হবার কথা কিন্তু তাকে বাইপাস করে ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ অবৈধ টাকার বিনিময়ে এককভাবে সিডিসি দিচ্ছেন।
সুত্রগুলো জানায়, সিডিসির এনওসি প্রদানের পর তাদের সাবেক মহাপরিচালক কমডোর মো. নিজামুল হক ও চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মনোনীত মেরিটাইম প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সাথে সিডিসি প্রতি ১ লাখ টাকা চুক্তিতে তিন মাসের রেটিং প্রশিক্ষণ করা হয়। প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করার পর সিডিসি প্রাপ্তির জন্য সব শিপিং মাস্টার জাকির হোসেনকে সিডিসি প্রতি আরও অবৈধভাবে এক লাখ টাকা প্রদান করলে দেশীয় সিডিসি প্রদান করে যা সরকারী ও বেসরকারি মেরিটাইম প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহ হতে প্রশিক্ষিত নাবিকদের বঞ্চিত করে অপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত (সাধারণ নাগরিক) নাবিকগনের চাকরি বাজার খুলে দিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। উক্ত বিষয়ে সভাপতি (আরিফ) বাংলাদেশ সি-ফেয়ারার ইউনিয়ন হাইকোর্টে পানামা সিডিসি নিয়ে একটি রিট আবেদন করেছেন । এরপরও সাবেক মহাপরিচালক ও চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার বিষয়টি আমলে নেননি।
বাংলাদেশের নাবিকদের ৯৫ শতাংশ বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে চাকরি করে। এসব যোগ্যতা বিহীন লোকজন বিদেশি জাহাজে চাকরি করতে গিয়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। ফলে বাংলাদেশী নাবিকদের চাকুরীর বাজার হুমকির মুখে পড়বে।
এছাড়াও এসব যোগ্যতাবিহীন লোকদের সিডিসি প্রদানের ফলে বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের সাদা তালিকা থেকে বের করে দেয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। সাদা তালিকা থেকে বের করে দিলে বাংলাদেশের সনদ আন্তর্জাতিক মর্যাদা হারাবে এবং বাংলাদেশী কোন মেরিনার আর বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে চাকরি করতে পারবেনা।
এ বিষয়ে নৌ মন্ত্রণালয়ের জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছেন।
জানতে চাইলে চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে অবৈধভাবে পানামা সিডিসি (নাবিকের সনদ) বিক্রি করা হয়নি। মেরিটাইম প্রশিক্ষণ সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে। আরো বিস্তারিত পরবর্তী সংখ্যায় দেখুন……।