ঢাকা ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
একটা গ্রহণযোগ্য সময়ে সংষ্কারের মাধ্যমে আমরা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাই: মিয়া গোলাম পরোয়ার দেশের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে আ.লীগ: মির্জা ফখরুল মিরপুরে শীতার্ত মানুষের পাশে বিএনপি নেতা আমিনুল হক কালিহাতীতে উপজেলা প্রশাসনের সাথে ৮টি বণিক সমিতির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত সিরাজদিখানে গণঅধিকার পরিষদের শীতবস্ত্র বিতরণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে : আমিনুল হক কালিহাতীতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি বিএনপির শেখ হাসিনার ভারতীয় ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি, কিছু করার নেই বাংলাদেশের: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা পঞ্চগড়ে প্রায় ৫৫ লাখ টাকার কোকেন ও হেরোইন উদ্ধার সিরাজদিখানে ছাত্রদল নেতার ফোনকল ভাইরাল: রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ীর সংবাদ সম্মেলন

প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের পিডি‘র বিরুদ্ধে ১৩৫ কেটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ!

বিশেষ প্রতিনিধি :
২৬টি অডিট আপত্তিতে ১৩৫ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ, শত শত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে, প্রকল্পের জন্য কেনা যানবাহনের কোন হদিস নেই। লাগামহীন অনিয়ম আর দুর্নীতিতে নিমজ্জিত প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প। গত চার আর্থিক বছরে একটি নিরীক্ষা কেন্দ্রিক কার্যক্রমে এ প্রকল্প নিয়ে মোট ২৮টি আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি আপত্তি খারিজ হলেও বাকি ২৬টি বিচারাধীন রয়েছে। এ ২৬টি অডিট আপত্তিতে ১৩৫ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রানিসম্পদ ও ডেইরি বিভাগের উন্নয়নের জন্য কেনা শত শত কোটি টাকার বিপুল পরিমাণ যন্ত্রপাতি এখনো ব্যবহার হচ্ছে না। এগুলো অব্যবহৃত পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া প্রকল্পের জন্য কেনা গাড়ির অস্তিত্ব না পাওয়া, নিয়োগ বাণিজ্য, কাজের ধীরগতি এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করে এ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি। জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের জন্য একটি ফোর হুইলার, পাঁচটি ডাবল কেবিন পিকআপ, একটি মাইক্রোবাস এবং ৪১৮টি মোটরসাইকেল কেনা হয়েছে। কিন্তু এসব গাড়ি শুধু কাগজেই, বাস্তবে গাড়িগুলোর কোনো অস্তিত্বও খুঁজে পায়নি সংসদীয় কমিটি। এ ছাড়া প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শুরুর আগেই বিভিন্ন খাতে কেনাকাটায় অস্বাভাবিক ব্যয়ের অভিযোগ ওঠে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রীর কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান কমিটির সদস্যরা। মন্ত্রীও তাৎক্ষণিকভাবে একটা জবাব উপস্থাপন করেন। তবে জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেনি স্থায়ী কমিটি। পরের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে করণীয় নির্ধারণ করা হবে তখন ঠিক করা হয়। এদিকে এ প্রকল্পের গাড়িচালক পদে (মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক চালানোর জন্য) নিয়োগ দেওয়া ৩৬০ জনের মধ্যে ১৮০ জনই মন্ত্রণালয়ের তদবিরে নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে।
প্রকল্পের মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৪ হাজার ২৮০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিল ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু মেয়াদ প্রায় শেষ হতে চললেও প্রকল্পের অর্ধেকও বাস্তবায়ন হয়নি। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের মাত্র ৪৮ শতাংশ কাজ হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ১০৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩৮৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আর মেয়াদকাল ২২ মাস বাড়িয়ে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের বেশিরভাগ অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. আবদুর রহিম গতকাল দৈনিক বাংলাদেশকে বলেন, প্রকল্প ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এটি এখনো একনেকে অনুমোদন হয়নি। এ ছাড়া প্রকল্পের অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবির) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি প্রকল্পে চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়ার প্রবণতা অনেক পুরোনো। এতে নিজেদের ইচ্ছামতো অর্থ খরচ করার সুযোগ পাওয়া যায়। এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবের নথি ঘেঁটে দেখা যায়, চার বছরে প্রকল্পের ব্যয় হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৩৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। নতুন করে প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ১০৯ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা মোট ব্যয়ের ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, চার বছরে যেখানে মাত্র ৩৬ শতাংশের মতো খরচ হয়েছে সেখানে নতুন করে ২৫ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা থাকতে পারে না।

প্রকল্পের মূল ডিপিপিতে সাড়ে ৫ হাজার ফার্মার্স ফিল্ড স্কুল (এফএফএস) স্থাপনের জন্য ৪৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এতে প্রতিটি এফএফএসের জন্য গড় ব্যয় ছিল ৮৩ হাজার টাকা। সংশোধিত ডিপিপিতে সাড়ে ৬ হাজার এফএফএসের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এতে প্রতিটির গড় ব্যয় হবে ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ আরডিপিপিতে অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ১২ হাজার টাকা, যা মূল ব্যয়ের চেয়ে ৪৯৬ শতাংশ বেশি। চার বছরে মাত্র ৬ কোটি ৪ লাখ টাকা খরচ করতে পারলেও এফএমডি অ্যান্ড এলএসডি ভ্যাকসিনেশন খাতে ৫৮৪ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল ডিপিপিতে যেখানে এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা, সেখানে সংশোধিত প্রস্তাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ খাতে ৩৬ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দেওয়া ঠিক হবে না।
এ প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে বিতরণের জন্য মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলিতে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার পর থেকে দুই বছর পেরিয়ে গেছে। অথচ এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ সরঞ্জাম অব্যবহৃত রয়ে গেছে। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত লোকবলের অভাবে এমনটি হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ও সরকারি কোষাগারের অর্থায়নে প্রকল্পের আওতায় ২৬ ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতির পাশাপাশি কীটনাশকের মতো রাসায়নিক পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) প্রকাশিত একটি গভীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাঠ পর্যায়ে সরবরাহ করা সরঞ্জামগুলি প্রশিক্ষণের অভাব এবং অন্যান্য কারণে এখনো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। ২০২১ সাল থেকে সারা দেশে ডিএলএস ফিল্ড অফিসগুলিকে মোট ৩৬০টি আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন, ৪৬৫টি ডিপ ফ্রিজার এবং ১,৫০০টি ক্রিম সেপারেটর মেশিন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প থেকে মাত্র ৮ শতাংশ কৃষক ক্রিম সেপারেটর মেশিন পেয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রশিক্ষণের অভাবে মেশিনটি ব্যবহার করতে পারেননি।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

একটা গ্রহণযোগ্য সময়ে সংষ্কারের মাধ্যমে আমরা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাই: মিয়া গোলাম পরোয়ার

প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের পিডি‘র বিরুদ্ধে ১৩৫ কেটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ!

আপডেট টাইম : ০৬:৫০:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অগাস্ট ২০২৩

বিশেষ প্রতিনিধি :
২৬টি অডিট আপত্তিতে ১৩৫ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ, শত শত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে, প্রকল্পের জন্য কেনা যানবাহনের কোন হদিস নেই। লাগামহীন অনিয়ম আর দুর্নীতিতে নিমজ্জিত প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প। গত চার আর্থিক বছরে একটি নিরীক্ষা কেন্দ্রিক কার্যক্রমে এ প্রকল্প নিয়ে মোট ২৮টি আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি আপত্তি খারিজ হলেও বাকি ২৬টি বিচারাধীন রয়েছে। এ ২৬টি অডিট আপত্তিতে ১৩৫ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রানিসম্পদ ও ডেইরি বিভাগের উন্নয়নের জন্য কেনা শত শত কোটি টাকার বিপুল পরিমাণ যন্ত্রপাতি এখনো ব্যবহার হচ্ছে না। এগুলো অব্যবহৃত পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া প্রকল্পের জন্য কেনা গাড়ির অস্তিত্ব না পাওয়া, নিয়োগ বাণিজ্য, কাজের ধীরগতি এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করে এ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি। জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের জন্য একটি ফোর হুইলার, পাঁচটি ডাবল কেবিন পিকআপ, একটি মাইক্রোবাস এবং ৪১৮টি মোটরসাইকেল কেনা হয়েছে। কিন্তু এসব গাড়ি শুধু কাগজেই, বাস্তবে গাড়িগুলোর কোনো অস্তিত্বও খুঁজে পায়নি সংসদীয় কমিটি। এ ছাড়া প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শুরুর আগেই বিভিন্ন খাতে কেনাকাটায় অস্বাভাবিক ব্যয়ের অভিযোগ ওঠে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রীর কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান কমিটির সদস্যরা। মন্ত্রীও তাৎক্ষণিকভাবে একটা জবাব উপস্থাপন করেন। তবে জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেনি স্থায়ী কমিটি। পরের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে করণীয় নির্ধারণ করা হবে তখন ঠিক করা হয়। এদিকে এ প্রকল্পের গাড়িচালক পদে (মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক চালানোর জন্য) নিয়োগ দেওয়া ৩৬০ জনের মধ্যে ১৮০ জনই মন্ত্রণালয়ের তদবিরে নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে।
প্রকল্পের মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৪ হাজার ২৮০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিল ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু মেয়াদ প্রায় শেষ হতে চললেও প্রকল্পের অর্ধেকও বাস্তবায়ন হয়নি। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের মাত্র ৪৮ শতাংশ কাজ হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ১০৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩৮৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আর মেয়াদকাল ২২ মাস বাড়িয়ে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের বেশিরভাগ অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. আবদুর রহিম গতকাল দৈনিক বাংলাদেশকে বলেন, প্রকল্প ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এটি এখনো একনেকে অনুমোদন হয়নি। এ ছাড়া প্রকল্পের অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবির) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি প্রকল্পে চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়ার প্রবণতা অনেক পুরোনো। এতে নিজেদের ইচ্ছামতো অর্থ খরচ করার সুযোগ পাওয়া যায়। এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবের নথি ঘেঁটে দেখা যায়, চার বছরে প্রকল্পের ব্যয় হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৩৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। নতুন করে প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ১০৯ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা মোট ব্যয়ের ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, চার বছরে যেখানে মাত্র ৩৬ শতাংশের মতো খরচ হয়েছে সেখানে নতুন করে ২৫ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা থাকতে পারে না।

প্রকল্পের মূল ডিপিপিতে সাড়ে ৫ হাজার ফার্মার্স ফিল্ড স্কুল (এফএফএস) স্থাপনের জন্য ৪৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এতে প্রতিটি এফএফএসের জন্য গড় ব্যয় ছিল ৮৩ হাজার টাকা। সংশোধিত ডিপিপিতে সাড়ে ৬ হাজার এফএফএসের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এতে প্রতিটির গড় ব্যয় হবে ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ আরডিপিপিতে অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ১২ হাজার টাকা, যা মূল ব্যয়ের চেয়ে ৪৯৬ শতাংশ বেশি। চার বছরে মাত্র ৬ কোটি ৪ লাখ টাকা খরচ করতে পারলেও এফএমডি অ্যান্ড এলএসডি ভ্যাকসিনেশন খাতে ৫৮৪ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল ডিপিপিতে যেখানে এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা, সেখানে সংশোধিত প্রস্তাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ খাতে ৩৬ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দেওয়া ঠিক হবে না।
এ প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে বিতরণের জন্য মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলিতে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার পর থেকে দুই বছর পেরিয়ে গেছে। অথচ এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ সরঞ্জাম অব্যবহৃত রয়ে গেছে। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত লোকবলের অভাবে এমনটি হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ও সরকারি কোষাগারের অর্থায়নে প্রকল্পের আওতায় ২৬ ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতির পাশাপাশি কীটনাশকের মতো রাসায়নিক পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) প্রকাশিত একটি গভীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাঠ পর্যায়ে সরবরাহ করা সরঞ্জামগুলি প্রশিক্ষণের অভাব এবং অন্যান্য কারণে এখনো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। ২০২১ সাল থেকে সারা দেশে ডিএলএস ফিল্ড অফিসগুলিকে মোট ৩৬০টি আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন, ৪৬৫টি ডিপ ফ্রিজার এবং ১,৫০০টি ক্রিম সেপারেটর মেশিন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প থেকে মাত্র ৮ শতাংশ কৃষক ক্রিম সেপারেটর মেশিন পেয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রশিক্ষণের অভাবে মেশিনটি ব্যবহার করতে পারেননি।