ভোলার লালমোহনে এক ছাত্রলীগ নেতার বাড়িতে বোমা তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কারখানার কারিগর মনির বয়াতি ওরফে বোমা মনির নামে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তার সহযোগী ফিরোজ ও শাহীন নামের আরও দুই যুবক। বোমা বিস্ফোরণে উড়ে গেছে ঘরের টিনের চালা ও বেড়া। তছনছ হয়ে গেছে বসতঘরটি। সোমবার রাতে উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের জনতা বাজার সংলগ্ন আজহার মাঝির বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। আজহার মাঝির ছোট ছেলে শরিফ হোসেন জয় ওই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওইদিন রাত আনুমানিক ১১টার দিকে হঠাৎ আজহার মাঝির বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিকট শব্দে কেঁপে উঠে পুরো এলাকা। চারিদিক ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে যায়। এরপর আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থল আজহার মাঝির বাড়িতে ছুটে যান।
এ সময় আজহার মাঝির ছেলে ও ছাত্রলীগ নেতা শরিফ হোসেন জয়ের ভাই শাহিন, তার সহযোগী ফিরোজসহ বোমা তৈরির কারিগর মনির বয়াতিকে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ফিরোজ ও মনিরকে ভোলা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। বোমার আঘাতে তাদের মুখমণ্ডলসহ শরীরের প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি ঝলসে গেছে। পরে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের দু’জনকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। বরিশাল নেয়ার পথে ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় মনির বয়াতির মৃত্যু হয়। সঙ্গে থাকা গুরুতর আহত ফিরোজকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে ঢাকায়। শাহিনকে অন্যত্র রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। নিহত মনির ধলীগোরনগর ইউনিয়ন ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তালেব আলীর ছেলে। আহত ফিরোজ একই ইউনিয়নের বাসিন্দা অজিউল্লাহ মাঝির ছেলে।
ধলিগৌরী নগর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন মানবজমিনকে বলেন, নিহত মনির ও তার সহযোগী আহত ফিরোজ, একই এলাকার মানু দালাল (কালা মান্নু), জাফর মাঝি (মোটা জাফু), নসু কামাল, আবুল কালাম, শরীফ রিয়াজ, আবুল কালামসহ কতিপয় ব্যক্তি এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। এদের গডফাদার আজহার মাঝির আরেক ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। তিনি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির কারণে স্থানীয়রা তাদের কোনো কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে পারে না। প্রতিবাদ করলেও নানানভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয়। এছাড়া জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই শরিফ হোসেন জয় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় ওই পরিবারের অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ-ই কথা বলতে সাহস পায় না বলেও জানিয়েছে আলমগীর হোসেন।
এদিকে আজহার মাঝি জানিয়েছেন, পরিবারের লোকজনসহ রাতে ঘুমিয়ে পড়ি। রাত ১১টার দিকে বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে দেখি পুরো ঘর ধোঁয়াচ্ছন্ন। এ সময় আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসা মনির ও ফিরোজকে রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাতে দেখি। তখন তারা জানায়, বাইরে থেকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত আমাদের বসতঘর লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে। পরে ঘরে থাকা আমার ছেলে জাহাঙ্গীর তাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদের বরিশাল পাঠানো হয়। তবে পথিমধ্যে মনির বয়াতি মারা যান। অন্যজনকে ঢাকায় নেয়া হয়েছে। কী জন্য এই বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে তা এখনো বলতে পারছি না। এ ব্যাপারে লালমোহন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাহবুবুল বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি তারা পর্যবেক্ষণ করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। লালমোহন সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. বাবুল আকতার বলেন, খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ সময় ওই ঘর থেকে কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। এ বোমা বিস্ফোরণের কারণ জানতে তদন্ত চলমান রয়েছে।