কক্সবাজার প্রতিনিধি :
কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা: শোভন দত্তের বিরুদ্ধে ২০ বছর একই কর্মস্থলে চাকুরী, সরকারী টাকা আত্মসাত,বিদেশে টাকা পাচার, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও একাধিক নারী কেলেংকারীর অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে চকরিয়া এলাকার একজন সচেতন নাগরিক স্বাস্থ্য সচিব সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করে তদন্তের দাবী জানিয়েছেন।
অভিযোগের বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, তিনি প্রথম সহকারী সার্জন হিসাবে ডুলাহাজারা সাব-সেন্টারে যোগদান করেন। পরে চকরিয়া উপাজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসাবে যোগদান করেন। এরপর তিনি একই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসাবে ০৯/০২/২০২২ইং তারিখ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরে বিগত ১০/০২/২০২২ইং তারিখে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা হিসাবে যোগদান করেন অধ্যবদি পর্যন্ত কর্মরত আছেন। তিনি একই কর্মস্থলে ২০ থেকে ২২ বছর পর্যন্ত কর্মরত রয়েছেন।
তিনি বিভিন্ন চকরিয়া উপজেলার বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডেন্টাল ক্লিনিক, প্যাথলজি সেন্টার যাদের কোন লাইসেন্স নেই তাদের কাছ থেকে লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করতে পারার আশ্বাসে, দুইজন ব্যক্তি আরিফুল ইসলাম ও পলাশ এর মাধ্যমে বিভিন্ন অংকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। তিনি একজন এনেস্টেশিয়ান এবং মার্ক্স হাসপাতাল লিঃ এর মালিক। এই হাসপাতালে তিনি আনুমানিক চল্লিশ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
তিনি চকরিয়ার ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ফান্ডের (কনটিজেন্সি ফান্ড) জন্য সরকারী বরাদ্ধকৃত সমস্ত টাকা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহার না করে জনৈক ছৈয়দ হোসেন এর মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন। হাসপাতালে বৃক্ষরোপন টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ না করে নিজের ইচ্ছামত সরকারী নিয়ম অমান্য করে বৃক্ষরোপন করা এবং পরবর্তীতে বৃক্ষরোপন বাবদ লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। চলতি অর্থ বছরে ২ কিস্তিতে যার পরিমাণ কমপক্ষে ৪০ (চল্লিশ) লক্ষ টাকা।
তিনি এনজিও স্বাস্থ্য মহিলা কর্মী, স্বেচ্ছাসেবী, নার্স ও মহিলা ডাক্তারদের ট্রেনিং করার নাম করে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে তাদের সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হন। উক্ত বিষয় ফাঁস করলে তাদের চাকরী হতে অব্যাহতি এবং বিভিন্ন ধরণের হয়রানি করার হুমকি প্রদান করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উক্ত ডাক্তারের সাথে যে সমস্ত স্বাস্থ্য কর্মী, স্বেচ্ছাসেবী, নার্স ও ডাক্তার কাজ করেন তাদেরকে তদন্ত পূর্বক জিজ্ঞাসা করলে সব অপকর্মের ফলাফল বেরিয়ে আসবে।
হাসপাতালের (রিপিয়ারিং) অর্থাৎ উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সরকারি বাজেট প্রায় ৮ (আট) কোটি টাকা। হাসপতালের রিপিয়ারিং, এর কাজ করা যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু না করে শুধু মাত্র লোক দেখানো কাজ করে বাদ বাকি টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন। সামনে গ্রীল ও প্রাচীর এর কাজ তার পছন্দমত করেছেন এবং গ্রীলে লাল রঙ করিয়েই তিনি কাজ শেষ করেছেন। এখানে বাজেট ছিল প্রায় ৬ (ছয়) কোটি টাকা। তার মধ্যে কাজ হয়েছে আনুমানিক ৩ (তিন) কোটি টাকার মত। ডিএসকে এনজিওর মাধ্যমে ড্রেইনের উপরের স্লাব স্থাপন করেছেন এবং বাহিরের প্রাচির টেন্ডারের মাধ্যমে করলেও মাত্র ১০ ইঞ্চি ভেঙ্গে ঢালাই দিয়ে পুরো প্রাচীরের টাকা তুলে নেন।
তিনি ১৫ই আগষ্ট সরকারি ছুঁটি থাকা স্বত্বেও সরকারি গাড়ী ব্যবহার করে ব্যক্তিগত কাজে যাওয়ায় উক্ত গাড়ী দুর্বৃত্তদের কবলে পড়ে ভাংচুর হয়। যার আনুমানিক সরকারি ক্ষতি হয় প্রায় ৮ (আট) কোটি টাকার মত। এছাড়াও গাড়ীতে সরকারী নিময় বর্হিভুত গ্যাস সিলিন্ডার স্থাপন করেছেন।
কভিড-১৯ এ স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরির্দশক, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও টিকাদানকারীদের ১২ (বার) লক্ষ টাকা না দিয়ে ছৈয়দ আলীর মাধ্যমে নিজে আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও জাতীয় টিকা দিবস, জাতীয় টিভামিন দিবস, এইচ দিবস ও ইপিআই থেকেও অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
তিনি গত ২০/০২/২০২২ইং তারিখ থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত কোন বেতন পাননি। অথচ ৮০ (আশি) লক্ষ টাকা দিয়ে চকরিয়ায় ১০ (দশ) শতক জমি কিনেছেন। এছাড়াও ভারতে চারতলা বিল্ডিং বাড়ী নির্মাণ করেছেন। কিভাবে তিনি এই বাড়ী নির্মাণ করলেন সেটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তিনি দীর্ঘ ২০/২২ বছর একই কর্মস্থলে থাকার কারণে নিজেই একটি সিন্ডিকেট গ্রুপ তৈরি করে ফেলছেন। যার কারণে হাসপাতালে রোগীর সেবার মান যেমন কমে গেছে তেমনি রোগী ও রোগির আত্মীয় স্বজন প্রতি নিয়ত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছেন।
সরকারী অডিটের মাধ্যমে এসব অভিযোগ তদন্ত করার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী,স্বাস্থ্য সচিব, ডিজি হেলথ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের পদক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বললে ডা: শোভন দত্ত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কোন প্রকার দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিইনা। ভারতে আমার কোন বাড়ীও নেই।